আখিরাত বা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাসের স্বরূপ

0

 

সাধারণভাবে মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে আখিরাত বলে। তবে আখেরাতের আসল শুরু হবে কিয়ামতের পর থেকে। আখিরাত চিরস্থায়ী; এর শুরু আছে শেষ নেই। দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের শস্যক্ষেত। আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া হচ্ছে সুঁচের আগায় একফোঁটা পানির সমান, আর আখেরাত হচ্ছে বিশাল সমুদ্র। আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখা একজন মুসলমানের জন্য ফরজ। পবিত্র কুরআনের অসংখ্য জায়গায় আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখার কথা বলা হয়েছে।

 

সূচিপত্র

আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখা

আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস না থাকলে কেউ মুসলমানই হতে পারে না। একজন মুসলমানের জন্য যে সাতটি বিষয়ের উপর ঈমান রাখতে হয় তন্মধ্যে একটি হচ্ছে পরকাল বা আখিরাত। এ ব্যাপারে পবিত্র আল-কুরআনের একাধিক জায়গায় মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী বর্ণিত হয়েছে‌। যেমন-

وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ

বাংলা অনুবাদঃ এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ৪)

আরো এসেছে-

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ

বাংলা অনুবাদঃ আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ৮)

অন্যত্র এসেছে-

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَادُوا وَالنَّصَارَىٰ وَالصَّابِئِينَ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

বাংলা অনুবাদঃ নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ৬২)

দুনিয়া খেলাঘর, আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَمَا هَٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ ۚ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ

বাংলা অনুবাদঃ এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক বৈ তো কিছুই নয়। পরকালের গৃহই প্রকৃত জীবন; যদি তারা জানত। (সূরাঃ আল আনকাবুত, আয়াতঃ ৬৪)

সূরা আল আনআমে তিনি আর বলেন-

وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَعِبٌ وَلَهْوٌ ۖ وَلَلدَّارُ الْآخِرَةُ خَيْرٌ لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ

বাংলা অনুবাদঃ পার্থিব জীবন খেল-তামাশা ব্যতীত কিছুই নয়। পরকালের আবাস পরহেযগারদের জন্যে শ্রেষ্টতর। তোমরা কি বুঝো না ? (সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ৩২)

সূরা বাকারায় এসেছে-

أُولَٰئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْآخِرَةِ ۖ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ

বাংলা অনুবাদঃ এরাই পরকালের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন ক্রয় করেছে। অতএব এদের শাস্তি লঘু হবে না এবং এরা সাহায্যও পাবে না। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ৮৬)

অন্য আয়াতে তিনি আরো বলেন-

أُولَٰئِكَ الَّذِينَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَا لَهُمْ مِنْ نَاصِرِينَ

বাংলা অনুবাদঃ এরাই হলো সে লোক যাদের সমগ্র আমল দুনিয়া ও আখেরাত উভয়লোকই বিনষ্ট হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে তাদের কোনো সাহায্যকারীও নেই। (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ২২)

দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও ফায়দা অতি সীমিত

মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন-

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ قِيلَ لَهُمْ كُفُّوا أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْيَةِ اللَّهِ أَوْ أَشَدَّ خَشْيَةً ۚ وَقَالُوا رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَيْنَا الْقِتَالَ لَوْلَا أَخَّرْتَنَا إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ ۗ قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِمَنِ اتَّقَىٰ وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا

বাংলা অনুবাদঃ তুমি কি সেসব লোককে দেখনি, যাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তোমরা নিজেদের হাতকে সংযত রাখ, নামায কায়েম কর এবং যাকাত দিতে থাক? অতঃপর যখন তাদের প্রতি জেহাদের নির্দেশ দেয়া হল, তৎক্ষণাৎ তাদের মধ্যে একদল লোক মানুষকে ভয় করতে আরম্ভ করল, যেমন করে ভয় করা হয় আল্লাহকে। এমন কি তার চেয়েও অধিক ভয়। আর বলতে লাগল, হায় পালনকর্তা, কেন আমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করলে! আমাদেরকে কেন আরও কিছুকাল অবকাশ দান করলে না। ( হে রসূল) তাদেরকে বলে দিন, পার্থিব ফায়দা সীমিত। আর আখেরাত পরহেযগারদের জন্য উত্তম। আর তোমাদের অধিকার একটি সূতা পরিমান ও খর্ব করা হবে না। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৭৭)

 

ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মাবলম্বীরা আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত

আল্লাহ তা’আলা মানুষের উদ্দেশ্যে সতর্কবাণী অবতীর্ণ করেন-

وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

বাংলা অনুবাদঃ যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ৮৫)

 

আখিরাতে পাপীদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্টতম ও দীর্ঘস্থায়ী শাস্তি

وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي مَنْ أَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِآيَاتِ رَبِّهِ ۚ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَشَدُّ وَأَبْقَىٰ

বাংলা অনুবাদঃ এমনিভাবে আমি তাকে প্রতিফল দেব, যে সীমালঙ্ঘন করে এবং পালনকর্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন না করে। তার পরকালের শাস্তি কঠোরতর এবং অনেক স্থায়ী। (সূরাঃ ত্বোয়া-হা, আয়াতঃ ১২৭)

অন্য আয়াতে তিনি আরো বলেন-

خَالِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ إِلَّا مَا شَاءَ رَبُّكَ ۚ إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِمَا يُرِيد

বাংলা অনুবাদঃ তারা সেখানে চিরকাল থাকবে, যতদিন আসমান ও যমীন বর্তমান থাকবে। তবে তোমার প্রতিপালক অন্য কিছু ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা। নিশ্চয় তোমার পরওয়ারদেগার যা ইচ্ছা করতে পারেন। (সূরাঃ হুদ, আয়াতঃ ১০৭)

সুরা বানী ইসরাইলে এসেছে-

وَأَنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا

বাংলা অনুবাদঃ এবং যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের জন্যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করেছি। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ১০)

অন্যত্র আরো এসেছে-

أُولَٰئِكَ الَّذِينَ لَهُمْ سُوءُ الْعَذَابِ وَهُمْ فِي الْآخِرَةِ هُمُ الْأَخْسَرُونَ

বাংলা অনুবাদঃ তাদের জন্যেই রয়েছে মন্দ শাস্তি এবং তারাই পরকালে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরাঃ নমল, আয়াতঃ ৫)

সূরা আলে ইমরানে তিনি আরো বলেন

فَأَمَّا الَّذِينَ كَفَرُوا فَأُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَا لَهُمْ مِنْ نَاصِرِينَ

বাংলা অনুবাদঃ অতএব যারা কাফের হয়েছে, তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তি দেবো দুনিয়াতে এবং আখেরাতে-তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরাঃ আলে ইমরান, আয়াতঃ ৫৬)

পরকালের জালেমদের শাস্তি সম্পর্কে তিনি বলেন-

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَنْ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَا ۚ أُولَٰئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَنْ يَدْخُلُوهَا إِلَّا خَائِفِينَ ۚ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ

বাংলা অনুবাদঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় যালেম আর কে? এদের পক্ষে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়। ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১১৪)

 

আখিরাত অবিশ্বাসীদের শাস্তি

إِنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ زَيَّنَّا لَهُمْ أَعْمَالَهُمْ فَهُمْ يَعْمَهُونَ

বাংলা অনুবাদঃ যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকান্ডকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতএব, তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। (সূরাঃ নমল, আয়াতঃ ৪)

لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ مَثَلُ السَّوْءِ ۖ وَلِلَّهِ الْمَثَلُ الْأَعْلَىٰ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

বাংলা অনুবাদঃ যারা পরকাল বিশ্বাস করে না, তাদের উদাহরণ নিকৃষ্ট এবং আল্লাহর উদাহরণই মহান, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরাঃ নাহল, আয়াতঃ ৬০)

আখিরাতে অবিশ্বাসীরা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত

وَإِنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ عَنِ الصِّرَاطِ لَنَاكِبُونَ

বাংলা অনুবাদঃ আর যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তারা সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। (সূরাঃ আল মু’মিনূন, আয়াতঃ ৭৪)

 

আখিরাত অবিশ্বাসকারী ও কুরআনের মধ্যে রয়েছে পর্দা

وَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ جَعَلْنَا بَيْنَكَ وَبَيْنَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ حِجَابًا مَسْتُورًا

বাংলা অনুবাদঃ যখন আপনি কুরআন পাঠ করেন, তখন আমি আপনার মধ্যে ও পরকালে অবিশ্বাসীদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন পর্দা ফেলে দিই। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ৪৫)

 

দুনিয়ার তুলনায় আখিরাতই শ্রেষ্ঠ

انْظُرْ كَيْفَ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ ۚ وَلَلْآخِرَةُ أَكْبَرُ دَرَجَاتٍ وَأَكْبَرُ تَفْضِيلًا

বাংলা অনুবাদঃ দেখুন, আমি তাদের একদলকে অপরের উপর কিভাবে শ্রেষ্ঠত্ব দান করলাম। পরকাল তো নিশ্চয়ই মর্তবায় শ্রেষ্ঠ এবং ফযীলতে শ্রেষ্ঠতম। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ২১)

 

আখিরাত বিশ্বাসী মুমিনদের জন্য সুসংবাদ

وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَىٰ لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَٰئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُورًا

বাংলা অনুবাদঃ আর যারা পরকাল কামনা করে এবং মুমিন অবস্থায় তার জন্য যথাযথ চেষ্টা-সাধনা করে, এমন লোকদের চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ১৯)

 

আখিরাতে নেক্কারদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার

وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مَا ظُلِمُوا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً ۖ وَلَأَجْرُ الْآخِرَةِ أَكْبَرُ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ

বাংলা অনুবাদঃ যারা নির্যাতিত হওয়ার পর আল্লাহর জন্যে গৃহত্যাগ করেছে, আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়াতে উত্তম আবাস দেব এবং পরকালের পুরস্কার তো সর্বাধিক; হায়! যদি তারা জানত। (সূরাঃ নাহল, আয়াতঃ ৪১)

 

আখিরাতে বিশ্বাসীদের করণীয়

আখিরাতে বিশ্বাসীদের জন্য প্রধান করণীয় হচ্ছে, বেশি বেশি পূণ্যের কাজ (নেক আমল) করা ও ফরজ বিধি-বিধান মেনে চলা এবং সকল ধরনের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। কারণ, নেক কাজ করলে আখিরাতে মুক্তি মিলবে এবং এর প্রতিদানে জান্নাত পাওয়া যাবে। আর পাপ করলে আখিরাতে এর শাস্তি অবধারিত রয়েছে। দ্বিতীয়ত: আখেরাতে মুক্তির জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করা। এবং আখিরাতের জন্য কল্যাণ কামনা উচিত। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

বাংলা অনুবাদঃ আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে-হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ২০১)

তিনি আরো বলেন-

فَإِذَا قَضَيْتُمْ مَنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَذِكْرِكُمْ آبَاءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا ۗ فَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ

বাংলা অনুবাদঃ আর অতঃপর যখন হজ্জ্বের যাবতীয় অনুষ্ঠানক্রিয়াদি সমাপ্ত করে সারবে, তখন স্মরণ করবে আল্লাহকে, যেমন করে তোমরা স্মরণ করতে নিজেদের বাপ-দাদাদেরকে; বরং তার চেয়েও বেশী স্মরণ করবে। তারপর অনেকে তো বলে যে পরওয়াদেগার! আমাদিগকে দুনিয়াতে দান কর। অথচ তার জন্যে পরকালে কোন অংশ নেই। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ২০০)

 

আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা

وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَىٰ لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَٰئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُورًا

বাংলা অনুবাদঃ আর যারা পরকাল কামনা করে এবং মুমিন অবস্থায় তার জন্য যথাযথ চেষ্টা-সাধনা করে, এমন লোকদের চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ১৯)

 

আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা

আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস না থাকলে কেউ মুসলমানই হতে পারে না। একজন মুসলমানের জন্য যে সাতটি বিষয়ের উপর ঈমান রাখতে হয় তন্মধ্যে একটি হচ্ছে পরকাল বা আখিরাত।

সর্বোপরি: আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস থাকলে মানুষ বিভিন্ন পাপকর্ম ও মানুষের উপর জুলুম-নির্যাতন করা থেকে বেঁচে থাকতে পারে। কারণ, মানুষ যতই পাষাণ হৃদয়ের হোক না কেন, কখনো না কখনো তার মনে এই ভয়টা আসে যে একদিন আমাকে ধরা দিতেই হবে। অতএব সে পরকালের ভয়ে হলেও নিজেকে কিছুটা ক্ষান্ত করে।

 

আখিরাতের জীবন চিত্র

আখেরাত হচ্ছে দুনিয়ার বিপরীত। আখেরাতে দুনিয়ার প্রত্যেকটি কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে। ভালো কাজ করলে এর হিসাব নেওয়া হবে এবং প্রতিদান দেওয়া হবে। আর খারাপ কাজ করলে তারও হিসাব নেওয়া হবে এবং এর বিনিময়ে শাস্তি প্রদান করা হবে।

যে দুনিয়াতে বেশি আনন্দ উপভোগ করবে সে আখিরাতে ঠিক ততটাই নিরানন্দ থাকবে। যে দুনিয়াতে যত বেশি উশৃংখল থাকবে আখিরাতে সে ততই শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকবে। অর্থাৎ তাকে শৃঙ্খলে আটকে রাখা হবে।

তাইতো বলা হয়, দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের শস্যক্ষেত। দুনিয়াতে বীজ লাগাতে হবে আখিরাতে ভোগ করার জন্য। আর আখিরাতের বীজ হচ্ছে এবাদত বন্দেগি। দুনিয়াই ইবাদত বন্দেগী করার একমাত্র স্থান। আখিরাতে ইবাদত বন্দেগী করার কোন সুযোগ নেই। আখিরাতে টাকা পয়সাও কোন কাজে আসবে না। দুনিয়াতে লাখ লাখ টাকার মালিক আখিরাতে হতদরিদ্র। কারণ, আখিরাতের মুদ্রা হচ্ছে নেক আমল।

কেয়ামতের ময়দানে সবাই উলঙ্গ থাকবে। কেউ কারো দিকে তাকানোর সুযোগ পাবে না। হাশরের ময়দানে সূর্য মাথার এক হাত উপরে থাকবে। মানুষ নিজেদের ঘামের সমুদ্রে সাঁতরাতে থাকবে। সেখানে দুর্বল-সবল বলে কিছু নেই। প্রত্যেক নির্যাতিত ব্যক্তি তার নির্যাতক থেকে নিজের প্রতিশোধ গ্রহণ করবে।

 

প্রশ্নোত্তর পর্ব

প্রশ্ন: আখিরাত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কী কী?উত্তর: আখিরাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ২ টি

  • কবরে সুওয়াল-জাওয়াব বা প্রশ্নোত্তর
  • আমলনামা

 

প্রশ্ন: আখিরাতের স্তর কয়টি

উত্তর: আখেরাতের স্তর দশটি

১. কবর

২. কিয়ামত

৩. পুনরুত্থান

৪. হাশর

৫. হাউযে কাউসার

৬. শাফা’আত

৭. মীযান

৮. পুলসিরাত

৯. জান্নাত

১০. জাহান্নাম

 

প্রশ্ন: আখিরাত কাকে বলে?

উত্তর: সাধারণভাবে মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে আখিরাত বলে। তবে আখেরাতের আসল শুরু হবে কিয়ামতের পর থেকে। আখিরাত চিরস্থায়ী; এর শুরু আছে শেষ নেই। দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের শস্যক্ষেত। আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া হচ্ছে সুঁচের আগায় একফোঁটা পানির সমান। আর আখেরাত হচ্ছে বিশাল সমুদ্র।

 

উপস্থাপনায়: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

 


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply