আরবি জানলেই আলেম নয়, তবে আলেম হতে হলে আরবী জানতেই হবে

0

আরবি জানলেই আলেম হয় না, কিন্তু আলেম হতে হলে আরবী জানতেই হয়

 

[ইসলামিক গল্প]

 

নাবিলার কলেজ পড়ুয়া বড় ভাই শাহিদ। ইদানিং যখন তখন সে ইসলামী বিধি-বিধান নিয়ে ঘরের মধ্যে ঝগড়া বাঁধিয়ে চলেছে। সবাই বলে একরকম সে বলে আরেকরকম। শাহিদের মাদ্রাসা পড়ুয়া ছোট বোন, নাবিলা। ইসলামী বিধি বিধান নিয়ে তার অল্পবিস্তর পড়াশোনা রয়েছে। সে বললো, কিরে তুই কি অনেক বড় আলেম হয়ে গেছিস? সুরা ফাতেহাটা শুদ্ধ করে পড়তো দেখি?

 

শাহিদ: “শুধু আরবী শুদ্ধ পড়তে পারলে যদি আলেম হওয়া যায় তবে আবু জাহেলও অনেক বড় আলেম ছিলো”।

 

নাবিলা: হাঁ, একদম ঠিক কথা! অতএব আলেম হওয়ার পথ উন্মুক্ত! যে কেউ- টোকাই, মেথর, মেকার, বেকার সব্বাই আলেম হতে পারে। আরবি জানতে হবে, মাদ্রাসায় পড়তে হবে এমন কোনোই শর্ত নেই! যেমন ডাক্তার হওয়া যায় ডাক্তারি পড়া ছাড়াই! ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছাড়াই!

 

শাহিদ: তুই দেখি আমাকে নিয়ে ইয়ার্কি মারছিস! আমাকে কি তোর কাছে টোকাই আর মেথর মনে হয়? তাছাড়া কথাগুলো আমার না তো- কথাগুলো একজন…

 

নাবিলা: আর বলতে হবে না। কারণ, জানি কথাগুলো বলেছে আহলে হাদীসের এক অল্প শিক্ষিত আলেম আরবি না-জানা এক মূর্খকে আলেম বানানোর জন্য। ছিঃ এদের রুচিবোধটা কেমন জানি! নিজেরা তো কিছু পারে না তাই একটা মূর্খকে ভুয়া শর্তে ‘আলেম’ বানিয়ে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। যাতে করে সত্যপন্থী আলেম সমাজ মূর্খকে ‘মূর্খ’ বলে এড়িয়ে চলে। আর এই সুযোগে বিভ্রান্ত আলেমরা নিজেদের পিঠ বাঁচাতে পারে।

 

শাহিদ: আরে কথা তো তিনি ভুল বলেননি, শুধু আরবী শুদ্ধ জানলেই যদি আলেম হওয়া যায় তবে আবু জাহেল অনেক বড় আলেম ছিলো।

 

নাবিলা: হ্যাঁ, কথাগুলো শুনতে খুব চমকপ্রদ মনে হচ্ছে তাই না? মনে হতেই পারে। যাদের বিদ্যা-বুদ্ধিতে খুব বেশি একটা গভীরতা নাই, হঠাৎ করে নতুন ও আজগুবি কিছু শুনলেই তাদের কাছে চমকপ্রদ মনে হতেই পারে।

 

মূলত এটি একদম সস্তা বুলি। এমন হাজারো সস্তা ও মূর্খতাসূলভ বুলি মানুষ প্রতিনিয়তই আওড়িয়ে চলে, আর ভাবতে থাকে এটা কতইনা জ্ঞানের কথা, কতই না যুক্তির কথা। অথচ বাস্তবে তা কতই না অজ্ঞতাসূলভ ও অর্থহীন এবং অযৌক্তিক কথা। তেমনি একটি অর্থহীন ও অযৌক্তিক বুলি হলো এই কথাটি।

 

শাহিদ: (ঝাঁজালো কন্ঠে বলল) কিভাবে বুঝিয়ে বল, কেবল কিছু কথা বলে দিলেই তো হবে না!

 

নাবিলা: শোন, চক্রান্তকারীরা যদি মানুষের মনে এটা ঢুকিয়ে দিতে পারে যে- “আলেম হতে হলে শুদ্ধভাবে আরবী জানা থাকা লাগে না” তখন আঁদারাম-হাঁদারাম যে কেউ নিজেকে ইসলামিক স্কলার দাবী করতে শুরু করবে, করবে না বরং অলরেডি শুরু করেছেই। হোক না সে যত বড় মূর্খ, এমনকি সে ইসলামী জ্ঞানের প্রাথমিক পর্যায় তথা শুদ্ধভাবে আরবীটাও পড়তে না জানুক। কমপক্ষে কুরআনের প্রথম সূরাহ ‘ফাতিহাহ’টাও শুদ্ধ উচ্চারণে পড়তে না পারুক। আশ্চর্যবোধ করি, তবুও ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের অধিকারী এক দলের কাছে এদের মতো টোকাইরা অনেক বড় আলেম ও শায়খ।

 

এবং এসব টোকাই পর্যায়ের মূর্খরা যখন তখন ইসলামের বিধিবিধান নিয়ে কথা বলবে, কুরআনের বিধিবিধান নিয়ে কথা বলবে, হাদীস শাস্ত্র নিয়ে কথা বলবে। পূর্ববর্তী বিদ্বানগণের ভুল ধরবে। অথচ সে এসব বিষয়ের কিছুই জানে না। তাকে কেউ এ ব্যাপারে প্রশ্নও করতে পারবে না। কারণ উসূল তো তৈরিই আছে, “আলেম হতে হলে আরবী জানা লাগে না। আরবী তো আবু জাহেলও জানে, তাহলে কি সে অনেক বড় আলেম”? এবার বল, তুই এসব লোকদেরকে তুই সাপোর্ট করবি?

 

শাহিদ: সাপোর্ট করবো কি করবো না সেটা আমি পরে ভেবে বলবো, আগে তুই বল আলেম হতে হলে আরবী জানতেই হবে কেনো? আরবি জানলেই কি আলেম হওয়া যায়? আবু জাহেলও তো আরবী জানতো, সেও কি আলেম?

 

নাবিলা: যারা আলেম হওয়ার জন্য শুদ্ধভাবে আরবী জানতে হবে বলে- তাদের কেউ এ কথা বলে না যে, কেবল শুদ্ধভাবে আরবী জানলেই আলেম হয়ে যাবে। বরং আলেম হতে হলে আরো অনেক শর্ত রয়েছে, কিন্তু শুদ্ধভাবে আরবী জানাটা হচ্ছে সে সমস্ত শর্তের প্রথম শর্ত, আর যার ভিতরে প্রথম শর্তই পাওয়া যায় না বাকি শর্তগুলো কিভাবে পাওয়া যাবে। কাজেই মানুষ টোকাই থেকে কথিত ‘আলেম’দের ক্ষেত্রে প্রথমেই শুদ্ধভাবে আরবী জানে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে থাকে। অর্থাৎ প্রথম প্রশ্নেই যদি ফেল হয়ে যায় বাকি প্রশ্নগুলো আর করাই লাগবে না। এই একটা প্রশ্ন করে এর মানে এই নয় যে আর কোন প্রশ্ন নেই।

 

শাহিদ: এটা তো তুই বানিয়ে বলছিস, তারা তো কেবল আরবী না জানার আপত্তিই করে।

 

নাবিলা: দেখ, আবারো বলছি, আরবী জানাটা হচ্ছে প্রথম শর্ত। তাই তারা প্রথম শর্তে আপত্তি করেছে। যদি কেউ প্রথম প্রশ্নে উত্তীর্ণ হয় তবেই তো তাকে দ্বিতীয় প্রশ্ন করা হবে। আর কেউ যদি প্রথম প্রশ্নই উত্তীর্ণ হতে না পারে বাকি প্রশ্ন করাই লাগে না কলেজে পড়ে কি এতটুকুও বুঝিস না! আর তোদের কথিত ‘আলেম’ তো প্রথম প্রশ্নেই উত্তীর্ণ হতে পারলো না বাকি প্রশ্ন কেন করবে বল?

 

আর অভিযোগকারীরা যদি মনে করতো শুদ্ধভাবে আরবী পড়তে জানলেই আলেম হয়ে যায়, তবে তারা তাদের মাদ্রাসার প্রাথমিক লেভেলের ছাত্রগুলোকেও আলেম বলতো। কারণ, তাদের মাদ্রাসাসমূহের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্ররাও শুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারে। অথচ কই! তারা তো তাদের আরবি পড়তে জানা ছাত্রদেরকে আলেম বলে না!

 

(অতঃপর নাবিলা এক গ্লাস পানি খেয়ে আবারো বলতে শুরু করে)

 

অতএব আবু জাহেল আরবী জানার কারণে আলেম হবে- এমন বলাটা চরম মূর্খতা। কারণ শুধু আরবী জানলেই আলেম হওয়া যাবে এমন কথা কেউ বলে না। সোজা কথায় বলতে গেলে, আলেম হতে হলে শুদ্ধভাবে আরবী পড়তে ও বুঝতেই হবে, কিন্তু শুধু আরবী জানলেই আলেম হয়ে যাবে ব্যাপারটি এমন নয়। যেমন- ভালো মানের একজন ডাক্তার হতে হলে তাকে অবশ্যই ভালোভাবে ইংরেজি জানতেই হবে, কিন্তু ভালোভাবে ইংরেজি জানলেই ভালো মানের ডাক্তার হয়ে যাবে এমন কোনো কথা নেই।

 

শাহিদ: দে দে হয়েছে, আমার কাজ আছে আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।

 

নাবিলা: দাঁড়া, সামান্য কিছু কথা বাকি রয়ে গেছে, পরে হয়তো ভুলেও যেতে পারি…

 

শাহিদ: দে দে, জলদি বল। (মন মনে, আসছে আমাকে জ্ঞান দিতে!)

 

নাবিলা: এই অর্থহীন ও অযৌক্তিক কথাটিকে এমন ভাবে প্রচার করা হচ্ছে, এর পর থেকে মানুষ আরবী শিখতেও লজ্জাবোধ করবে। মনে করবে, যে যত বেশি আরবী জানে সে তো তত বড় আবু জাহেল মানে মূর্খ। আর যে আরবীতে যত বড় অজ্ঞ সে তত বড় আলেম।

 

আর এতে করে মূর্খতার দুয়ার খুলে যাবে, যেকোনো মূর্খ- যে কখনো ইসলামী শিক্ষার পাশ দিয়েও হাঁটেনি এবং আরবী বর্ণমালাগুলোও ঠিকমতো বলতে পারে না- সেও যখন তখন মানুষকে ইসলামী বিধিবিধানের জ্ঞান দিতে শুরু করবে। এবং অপব্যাখ্যা করতে শুরু করবে, শুধু করবে না বরং শুরু করেছেও। তাকে থামানোরও পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ, সে বলবে “আলেম হতে হলে আরবী জানতে হবে, মাদ্রাসায় পড়তে হবে এমন কোনো কথা আছে নাকি? আরবী তো আবু জাহেল ও জানতো, সে কি অনেক বড় আলেম”? বলতো তখন তুই তাকে কী উত্তর দিবি?

 

শাহিদ: কী আর উত্তর দিবো, বরং মেনে নেবো, আলেম হওয়ার পথ সবার জন্য উন্মুক্ত! যে কেউ- টোকাই, মেথর, মেকার, বেকার সব্বাই আলেম হয়ে যেতে পারে, সব্বাই ইসলামী বিধিবিধান ব্যাখা-বিশ্লেষণ করতে পারে হা হা হা।

 

নাবিলা শাহিদের ফান বুঝতে পারে হাসতে হাসতে ভিতরে চলে যায়…! আর শাহিদ ফোন টিপতে টিপতে বাইরে চলে আসে, মনে মনে ভাবতে থাকে মানুষ এভাবেই না কত মূর্খতাকে জ্ঞানের কথা ভেবে নিচ্ছে আফসোস! আর তার বোনের অসাধারণ মেধা দেখে বোনকে নিয়ে তার মনে গর্ব হয়, আমি এমন এক বোনের বড় ভাই।

 

লুবাব হাসান সাফওয়ান


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to “আরবি জানলেই আলেম নয়, তবে আলেম হতে হলে আরবী জানতেই হবে”

Leave a Reply