আহলে হাদীস বনাম হানাফী মাযহাব: কোনটি মানবো (পর্ব ৩)

0

আহলে হাদীস বনাম হানাফী মাযহাব: কোনটি মানবো (পর্ব ৩)

বলে রাখা ভালো, আমাদের দৃষ্টিতে হানাফী, মালেকী, শাফে’ঈ, হাম্বলী সকল মাযহাবই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তবুও কেন আপনি অন্যান্য মাযহাব রেখে হানাফী মাযহাবই মানবেন সে কারণটাই বলার প্রয়াস পাবো আজকের পর্বে।

সিরিজের সবগুলো লেখা-

 

প্রথমে আমরা আলোচনা করবো, মাযহাব মানা জায়েয কিনা। কারণ, অনেকে মনে করেন মাযহাব মানাই শির্ক আর হানাফী মাযহাব মানা তো অনেক পরের কথা।

কিন্তু আমরা বলবো, মাযহাব মানা কেবল জায়েয নয় বরং বড়ো বড়ো ইমামগণও মাযহাব মানতেন। যদি মাযহাব মানা জায়েয না হতো এবং শির্ক হতো তাহলে বড়ো বড়ো ইমামগণ কেন মাযহাব মানতেন?

সূচিপত্র

📗 বড়ো বড়ো ইমামগণও মাযহাব মানতেন

সৌদি আরবের স্বনামধন্য মুফতী ও প্রখ্যাত আলেম শায়খ সালেহ আল-ফাওযান বলেন “হাদীসের বড় বড় ইমামগণও মাযহাব অনুসারী ছিলেন।”

১. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. ও ইবনুল কায়্যিম রাহ. হাম্বলী অনুসারী ছিলেন।

২. ইমাম নাবাবী রাহ. ও ইবনে হাজার আসকালানি রাহ. শাফেয়ী অনুসারী ছিলেন।

৩. ইমাম তাহাবী (ও আল্লামা বদরুদ্দীন আয়নী) রাহ. হানাফী অনুসারী ছিলেন।

৪. ইমাম ইবনি আব্দিল বার রাহ. মালেকি মাজহাবের অনুসারী ছিলেন।

তারপর শায়খ বলেন— চার মাজহবের কোন এক মাজহাবের অনুসারী হওয়া মানে পথভ্রষ্টতা নয় যে, তাকে তিরস্কার করা হবে। বরং, যিনি মুজতাহিদে মুতলাক্ব (স্বতন্ত্র গবেষক) হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না ; অথচ গ্রহণযোগ্য ফকীহদের কথা থেকে বের হয়ে যান, তাহলে তাকে পথভ্রষ্ট ও বিচ্ছিন্নবাদী হিসেবে গণ্য করা হবে”।

সূত্র: শায়খ এর গ্রন্থ ‘ইয়ানাতুল মুসতাফিদ বিশারহে কিতাবিত তাওহিদ: ১।

📗 মাযহাব বিষয়ে ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. এর বক্তব্য

আহলে হাদীসদের বড়োই আস্থাভাজন ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন “কেউ কেউ বলে, চার মাযহাব রাসুল সা. এর যুগে ছিলো না, সাহাবায়ে কেরাম রা. এর যুগে ছিলো না। যদি এই কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হয়, তারা রাসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম রা. এর হাদীস এর বাহিরে গিয়েছেন বা রাসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম রা. এর বক্তব্য তরক করেছেন এবং তারা বিদ’আতী পথ বেচে নিয়েছেন, তাহলে এটা হবে ডাহা মিথ্যা কথা। কেননা তারা সাহাবায়ে কেরাম রা. এর নীতিমালার বাইরে কোনো বিষয়ে একমত হননি! বরং তারা সাহাবায়ে কেরাম ও তাদের অনুসৃত পথের অনুসারী ছিলেন। [মিনহাজুস সুন্নাহ: ৩/৪০৯]

📗 দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তীদের মাযহাব অনুসরণ করতে হবে

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা রহিমাহুল্লাহ আরো বলেন, যে ব্যক্তি ধারণা করে সাহাবায়ে কেরামদের অনুসরণ আর তাদের অনুসৃত পথ বাদ দিয়ে কুরআন এবং সুন্নাহর বুঝ গ্রহণ করবো, তাহলে ওই ব্যক্তি বিদআতীদের অন্তর্ভুক্ত। [মুখতাসার ফাতাওয়া আল মিসরিয়্যাহ: ৫৫৬]

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ’র উক্ত কথা থেকে বোঝা গেল যে, কুরআন হাদীস এক বিষয় আর কুরআন হাদীসের সঠিক বুঝ আরেক বিষয়। নইলে কুরআন থাকা সত্ত্বেও সাহাবায়ে কেরামের বুঝ কেন গ্রহণ করতে হবে? সরাসরি কুরআনের বুঝ গ্রহণ করলেই তো চলতো! আবার হাদীস থাকা সত্ত্বেও সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত পথ বাদ দিয়ে কেন সুন্নাহ বোঝা যাবে না? সরাসরি হাদিস মানলেই তো চলতো! কিন্তু না, তিনি বলছেন, কুরআন হাদীস বোঝার ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামের বুঝ/মাযহাব গ্রহণ করতে হবে এবং তাদের অনুসৃত পথেই চলতে হবে।

যদিও তিনি এখানে কেবল সাহাবায়ে কেরামের কথা বলেছেন কিন্তু বিষয়টি ব্যাপক।

📗 দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করতে হবে স্বয়ং রাসূলের আদেশ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমার সুন্নাহ ও আমার সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরো।

এখানে একটা প্রশ্ন আসে যে, রাসূলের সুন্নাহ কি অসম্পূর্ণ ছিলো যে সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহ আকড়ে ধরার মাধ্যমে তার পূর্ণতা পাবে? বা সাহাবায়ে কেরামের সেই সুন্নাহ কী যা রাসূল থেকে পাওয়া যায় না?

সাহাবায়ে কেরাম যা-ই করবেন তা তো রাসূলের দেখানো পথ এবং সুন্নাহ অনুযায়ীই করবেন তাই না? নাকি সাহাবায়ে কেরাম রাসুলের সুন্নাহ বাদ দিয়ে নতুন কোনো সুন্নাহ তৈরি করবেন? অবশ্যই না। জানা কথা হচ্ছে, সাহাবায়ে কেরাম রাসুলের সুন্নাহ বাদ দিয়ে নতুন কোনো সুন্নাহ তৈরি করবেন না। তো সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহ আঁকড়ে ধরার মানে কী? মূলত সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহ আঁকড়ে ধরার মানে হচ্ছে, সাহাবায়ে কেরাম থেকে রাসূলের সুন্নাহের বুঝ/মাযহাব গ্রহণ করতে হবে।

একইভাবে ইমামগণের ক্ষেত্রেও এ কথাটি প্রযোজ্য। সাহাবায়ে কেরাম থেকে যে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সমাধান পাওয়া যায় না কিংবা যখন তাঁদের কথাও ব্যাখ্যাসাপেক্ষ হয় তখন এ সব বিষয়ে ইমামগণের বুঝ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হবে। আর এটাকেই মাযহাব মানা বলে।

📒 দুটি আপত্তি ও এর জবাব

📗 কুরআন হাদিস থাকতে মাযহাব মানবো কেন?

অনেকেই এটিকে খুবই শক্তিশালী যুক্তি মনে করেন। অথচ এটি অত্যন্ত অর্থহীন ও সস্তা বুলি মাত্র। সামান্য জ্ঞান খরচ করলেই বিষয়টি বুঝে এসে যাবে। অথচ মানুষ জ্ঞান খরচ করতে চায় না।

তো যারা এমন প্রশ্ন করেন, তাদের প্রতি আমার পাল্টা প্রশ্ন থাকলো, পাঠ্যপুস্তক বা টেক্সটবুক থাকতে ছাত্ররা গাইডবুক পড়ে কেন? হয়তো বলবেন, ছাত্ররা গাইডবুক পড়ে পাঠ্যপুস্তক ভালোভাবে বোঝার জন্য। তো আমিও বলবো- কুরআন-হাদিস থাকতে মাযহাবও মানা হয় কুরআন হাদিসকে ভালো করে বোঝা ও মানার জন্য। গাইডবুক পড়া মানে যেমন পাঠ্যপুস্তককে বাদ দিয়ে দেওয়া নয়, একইভাবে মাযহাব মানা মানেও কুরআন হাদিসকে বাদ দিয়ে দেওয়া নয়।

যেভাবে গাইডবুক পড়া হয় পাঠ্যপুস্তক বা মূলগ্রন্থ ভালো করে বোঝার জন্য একইভাবে আমরাও মাযহাব অনুসরণ করি কুরআন হাদিসকে ভালো করে বোঝা ও সঠিকভাবে মানার জন্য। কুরআন হাদিসকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয়।

এক কথায়, কুরআন হাদিস হলো আমাদের টেক্সটবুক বা মূলগ্রন্থ আর মাযহাব হচ্ছে তার গাইডবুক বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ। আমরা গাইডবুকের সাহায্যে টেক্সটবুক মেনে চলি।

📗 আল্লাহ এক, নবী এক, মাযহাব চারটি কেন?

এটিও একটি অন্তঃসারশূন্য প্রশ্ন। মানুষ এসব প্রশ্ন জ্ঞান থেকে করে না বরং বিদ্বেষ থেকে করে।

তো এর জবাব হলো, সাধারণত দেখা যায় একটা টেক্সটবুকের একাধিক গাইডবুক বাজারে প্রচলিত থাকে। বিভিন্ন নামিদামি প্রকাশনী এসব গাইডবুক প্রকাশ করে থাকে। ছাত্ররাও প্রয়োজনমতো এ সব গাইডবুক থেকে উপকৃত হয়।

খোদ সহীহ বুখারীর কথাই ধরুন। সহীহ বুখারী একটি অথচ এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ বহু। উমদাতুল কারী, ফাতহুল বারী, ফয়জুল বারী, কাশফুল বারী ইত্যাদি। তো এ ক্ষেত্রে তারা প্রশ্ন করে না কেন যে সহীহ বুখারী একটি, ব্যাখ্যাগ্রন্থ এতগুলো কেন?

স্বয়ং কুরআনের দিকেই তাকান, কুরআন মাজিদ একটি অথচ এই কুরআনের তাফসীর গ্রন্থ বহু থেকে বহু, হিসাবেরও বাইরে। তো তারা এ ক্ষেত্রেও প্রশ্ন করে না কেন যে, আল্লাহ একজন, রাসূল একজন, কুরআন একটি —কিন্তু তাফসীর গ্রন্থ এতটি কেন?

মূলত এগুলো কোন বিবেকবানের প্রশ্ন নয় বরং বিদ্বেষীদের প্রশ্ন। এসব প্রশ্নের কোন অর্থ নেই। এসব প্রশ্ন মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলার জন্য শয়তানের তৈরি করা।

যাইহোক, উপরিউক্ত আলোচনার ভিত্তিতে আমরা মাযহাব মানার দলিল পেয়ে গেছি। এবং প্রথম পর্বেও চার মাযহাবের যেকোনো একটি মাযহাব মানতে হবে মর্মে ইমামগণের ইজমা উল্লেখ করেছি। এবং এর পক্ষে ১৪ টি দলিলও উপস্থাপন করেছি। আগ্রহীগণ দেখে নিতে পারেন। শুধু এতোটুকু নয় বরং এর পক্ষে আরও অসংখ্য দলিল রয়েছে। যেহেতু এটি একটি সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ সেহেতু আমরা অধিক আলোচনা করছি না।

এখন প্রশ্ন, হচ্ছে বাকি তিন মাযহাব রেখে আপনি কেবল হানাফী মাযহাব কেন মানবেন? আর এটাই হচ্ছে আমাদের আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু।

📗 হানাফী মাযহাবই কেন মানবেন?

মাযহাব মানার ক্ষেত্রে একটি স্বীকৃত নীতি হচ্ছে, আপনি যে দেশ/প্রদেশের বাসিন্দা আপনাকে ঐ দেশ/প্রদেশের প্রচলিত মাযহাবই মানতে হবে। নইলে ফিতনাহ সৃষ্টি হতে পারে। আর ওলামায়ে কেরামের জায়েয মতভেদের কারণে ফিতনাহ সৃষ্টি করা ইসলামে নিষিদ্ধ।

🧧 ১ম দলীল

ইমাম ইবনে আব্দিল বার রহ. (মৃ. ৪৬৩ হি.) বলেন, আমার উস্তাদ আবু ওমর আহমদকে বললাম, আপনি নামাযের শুরু ছাড়া অন্য স্থানে রাফ’উ ইয়াদাইন (উভয় হাত উত্তোলন) করেন না কেন, যাতে আমরাও আপনার অনুসরণে হাত উঠাতাম। তিনি বললেন-

لَا أُخَالِفُ رواية ابن الْقَاسِمِ؛ لِأَنَّ الْجَمَاعَةَ عِنْدَنَا الْيَوْمَ عَلَيْهَا وَمُخَالَفَةُ الْجَمَاعَةِ فِيمَا أُبِيحَ لَنَا لَيْسَتْ مِنْ شِيَمِ الْأَئِمَّةِ.

ইবনুল কাসেম ইমাম মালেক রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন, রাফ’উল ইয়াদাইন শুধু নামাযের সূচনায় হবে। আমাদের এলাকার লোকজন এই বর্ণনা মোতাবেকই আমল করে থাকেন। আর যে বিষয়ে দুই পদ্ধতিই বৈধ, তাতে লোকদের মাঝে প্রচলিত পদ্ধতির বিরোধিতা করা ইমামগণের নীতি ছিলো না। [আল-ইসতিযকার: ৪/১০১]

🧧 ২য় দলীল

সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ বিন বায রহ. বলেন

إذا كان بين أناس لا يرفعون، ولا يجهرون بالتأمين، فالأولى أن لا يفعل تأليفا لقلوبهم،… وهو خلاف مشهور بين أهل العلم، منهم من قال: يجهر، ومنهم من قال: لا يجهر بالتأمين،… وهو شيء مستحب، ويكون تَرَك أمرا مستحبا، فلا يفعل مؤمن مستحبا يفضي إلى انشقاق وخلاف وفتنة، بل يترك المؤمن المستحب، والداعي إلى الله عز وجل، إذا كان يترتب على تركه مصالح أعظم، من ذلك أن النبي  ترك هدم الكعبة، وبناءها على قواعد إبراهيم، قال: لأن قريشا حديثو عهد بكفر، ولهذا تركها على حالها، ولم يغير عليه الصلاة والسلام للمصلحة العامة.

যদি (কোন দেশে) লোকদের মাঝে রাফ’উল ইয়াদাইন না করা এবং আমীন জোরে না বলার প্রচলন থাকে, তবে সেখানে তাদের সম্প্রীতি রক্ষার জন্য এগুলো না করাই উত্তম। এটি আহলে ইলমের মাঝে প্রসিদ্ধ মতানৈক্যপূর্ণ একটি বিষয়। তাদের কেউ আমীন জোরে বলার পক্ষে ছিলেন, আর কেউ ছিলেন আস্তে বলার পক্ষে। এটি তো একটি মুস্তাহাব বিষয়। কাজেই কেউ এটি ছেড়ে দিলে একটি মুস্তাহাব ছেড়ে দিল।

আর কোন মুমিনের জন্য এমন মুস্তাহাব কাজ করা শোভা পায় না, যার দ্বারা মুসলিমদের ঐক্য বিনষ্ট ও বিশৃঙ্খলা হতে পারে। বরং মুমিন ব্যক্তি ও দায়ী এমন মুস্তাহাব কাজ ছেড়ে দিবে, যা ছেড়ে দেয়াতে কোন বিশেষ উপকার থাকে। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বাকে ইবরাহীম আ. এর ভিত্তির উপর গড়েননি। কারণ তাতে কুরাইশের নব মুসলিমদের মাঝে বিভ্রান্তির আশঙ্কা ছিল। [মাজমূ’উ ফাতাওয়া বিন বায: ২৯/২৭৫-৩৭৪]

🧧 ৩য় দলীল

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন

ويُستحب للرجل أن يقصِد إلى تأليف القلوب بترك هذه المستحبات؛ لأن مَصلحة التأليف في الدين أعظم من مَصلحة فعل مثل هذا، كما ترك النبي  تغيير بناء البيت، لمِا في إبقائه من تأليف القلوب، وكما أنكر ابن مسعود  على عثمان  إتمام الصلاة في السفر، ثم صلى خلفه مُتِمّا، وقال: “الخلاف شر”

সারমর্ম: মানুষের জন্য উত্তম হলো, এ সকল মুস্তাহাব বিষয়কে বাদ দিয়ে হলেও তারা যেন একতার দিকে লক্ষ্য রাখে। কেননা ইসলামে ঐক্য-সম্প্রীতি রক্ষা করা মুস্তাহাব পালনের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের একতার দিকে লক্ষ্য করে কা’বা পুনঃনির্মাণ বর্জন করেছেন। এভাবে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. ওসমান রা.-কে সফর অবস্থায় কসর না করার কারণে দোষারোপ করেছিলেন। আবার তিনি নিজেই ওসমান রা. এর পিছনে নামাযকে চার রাকাআত পূর্ণ করে এবং বলেছেন, (ইমামের) বিরোধিতা করা মন্দ কাজ।

[মাজমূউল ফাতাওয়া, ২২/২৩৯, ২৫৪-২৫৫ ও আল-কাওয়ায়িদুন নূরানিয়্যা পৃ. ৪৬]

🧧 ৪র্থ দলীল

ইমাম মালেক রহ. এর আদর্শ

ইবনে সাআদ তার শায়খ ওয়াকিদী থেকে বর্ণনা করেছেন, (বাদশা) আবু জাফর মানসুর ইমাম মালেককে বললেন, আমি সংকল্প করেছি, আপনার রচিত কিতাব মুআত্তার কিছু কপি করে মুসলমানদের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দিব এবং তাদেরকে আদেশ করব, এ কিতাবে যা আছে, তার ওপরেই আমল করবে, অন্য কিছুর উপর আমল করতে পারবে না। এবং অন্যান্য যত নতুন ইলম আছে, তা বর্জন করবে। কারণ আমি দেখছি মূল ইলম হল মদিনার ইলম।

তখন ইমাম মালেক রহ. বললেন,

يا أمير المؤمنين! لا تفعل هذا، فإن الناس قد سبقتْ إليهم أقاويل، وسمعوا أحاديث، ورَوَوْا روايات، وأخذ كل قوم بما سبق إليهم، وعملوا به. ودانوا به من اختلاف الناس وغيرهم، وإنَّ ردَّهم عما قد اعتقدوه شديد، فَدَعِ الناسَ وما هم عليه، وما اختار كلُّ أهل بلد منهم لأنفسهم، فقال: لَعَمْري لو طاوعْتَني على ذلك لأمرت به.

হে আমিরুল মুমিনীন! এমনটা করবেন না। কারণ মানুষের কাছে আগেই অনেক বিধান পৌঁছে গেছে। তারা হাদীস শুনেছে, বর্ণনা করেছে। প্রত্যেক এলাকাবাসী সেটাই গ্রহণ করেছে এবং আমল করছে, যেটা তাদের কাছে আগে পৌঁছেছে। এবং অন্যান্যদের মতানৈক্য ছেড়ে সেটার ওপরেই আমল করেছে। এখন তাদেরকে তা থেকে ফিরিয়ে আনা কঠিন। কাজেই প্রত্যেক শহরবাসী যা গ্রহণ করেছে এবং আমল করছে, তার উপর তাদেরকে ছেড়ে দিন।

তখন মানসূর বললেন, কসম আমার জীবন মালিকের! যদি আপনি আমার কথা মেনে নিতেন, তাহলে আমি এর হুকুম করতাম। [আত-তাবাকাতুল কুবরা: বর্ণনা নং ৪৪০]

ইবনে আবী হাতেমের বর্ণনায় এসেছে, ইমাম মালেক বললেন, আমাকে আবু জাফর মানসূর বললেন,

قد أردتُ أن أجعل هذا العلم علما واحدا، فأَكتُب به إلى أمراء الأجناد وإلى القضاة، فيعلمون به، فمَن خالف ضربتُ عُنقه! فقلت له: يا أمير المؤمنين! أو غير ذلك؟ قلت: إن النبي  كان في هذه الأمة، وكان يبعث السرايا وكان يخرج فلم يفتح من البلاد كثيرا حتى قبضه الله عزوجل، ثم قام أبو بكر  بعده فلم يفتح من البلاد كثيرا، ثم قام عمر  عنه بعدهما فَفُتِحتْ البلاد على يديه، فلم يجد بُدّاً من أن يبعث أصحاب محمد  معلِّمين، فلم يزل يؤخذ عنهم كابرًا عن كابرٍ إلى يومهم هذا، فإن ذهبتَ تُحوِّلهم مِمّا يعرِفون إلى ما لا يعرِفون رأوا ذلك كفرا، ولكن أقِرَّ أهل كل بلدة على ما فيها من العلم، وخذ هذا العلم لنفسك.

আমি এই ইলমকে (মতভিন্নতা দূর করে) এক ইলম করে দিতে চাচ্ছি! আমি তা লিখে সেনা প্রধান ও বিচারকদের নিকট পাঠিয়ে দিব। তারা সকলকে জানিয়ে দিবে। এরপর যে এর বিপরীত করবে, আমি তার ঘাড়ে তলোয়ার মারব!

ইমাম মালেক রহ. তাকে বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন, ওমর রা. এর হাতে বিভিন্ন শহর বিজিত হয়েছে, তখন তিনি বাধ্য হয়ে রাসূলের সাহাবাগণকে সে সব অঞ্চলে শিক্ষক হিসেবে পাঠিয়েছেন। তাদের থেকে আজকের দিন পর্যন্ত লোকেরা ধারাবাহিকভাবে দীন শিক্ষা লাভ করেছে। এখন যদি আপনি তাদেরকে তাদের পরিচিত বিষয় থেকে অপরিচিত কোন বিষয়ের দিকে নিয়ে আসতে চান, তারা সেটাকে অস্বীকার করবে। আপনি প্রত্যেক শহরবাসীকে তাদের জানা ইলমের উপর বহাল রাখুন। আর এই ইলমকে আপনার নিজের জন্য গ্রহণ করুন! [আল-জারহু ওয়াত তাদীল: ১/২৯]

ইমাম ইবনে আব্দিল বার রহ. এর বর্ণনায় এসেছে

وروى ابن عبد البرّ في “الانتقاء”: بسنده إلى إبراهيم بن حماد الزهري أنه قال: سمعت مالكا يقول: قال لي المَهدي: يا أبا عبد الله! ضع لي كتابا أحمِل الأمة عليه، فقلت له: يا أمير المؤمنين! أما هذا السُّقْع – وأشار إلى المغرب – فقد كَفَيتُكه، وأما الشام ففيهم الأوزاعي، وأما أهل العراق فهم أهل العراق.

ইমাম মালেককে বলা হল, আপনি একটি কিতাব লিখেন, যাতে সবাই সে অনুযায়ী আমল করবে। ইমাম মালেক বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! এখানে তথা পশ্চিম প্রান্তে আমিই যথেষ্ট। সিরিয়াতে ইমাম আওযায়ী আছেন। আর ইরাকবাসীর কথা তো বলাবাহুল্য। ইরাকবাসী তো ইরাকবাসীই। (ইরাকবাসী বলে ইমাম আবু হানিফাকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে)। [আল-ইনতিকা: ৮০]

🧧 ৫ম দলীল

হযরত ওমর ইবনে আব্দিল আযীয রহ. ফরমান জারি করেছিলেন যে

لِيَقضِ كُلُّ قَوْمٍ بِمَا اجْتَمَعَ عَلَيهِ فُقَهَاؤُهُمْ.

প্রত্যেক গোত্র যেন স্থানীয় ফকীহণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলে। [সুনানে দারেমী: বর্ণনা নং ৬৫২]

🧧 ৬ষ্ঠ দলীল

ইমাম আবু হানিফা রহ. এর আদর্শ

ইবনে আবীল আওয়াম ফাযায়িলে আবী হানীফা ও ইবনে আব্দিল বার আল-ইনতিকা গ্রন্থে সুফিয়ান ছাওরী রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন

كَانَ أَبُو حَنِيفَةَ… يَأْخُذُ بِالآخَرِ مِنْ فِعْلِ رَسُولِ الله، وَبِمَا أَدْرَكَ عَلَيْهِ عُلَمَاءَ الْكُوفَةِ.

আবু হানীফা রহ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শেষ আমলকে গ্রহণ করার সাথে সাথে যে হাদীসের উপর কূফার ওলামাদের আমল ছিল, তাই তিনি গ্রহণ করতেন। [ফাযাইলু আবী হানীফা: ৯৯। আল ইনতিকা: ২৬২]

অন্য বর্ণনায় হাসান ইবনে ছালেহ রহ. বলেন,

وروى الصَّيْمَري في “أخبار أبي حنيفة” بالسند المتصل إلى الْحسن بن صَالح – أحد الثقات الفقهاء العُبّاد – قَالَ: كَانَ أَبُو حَنِيفَةَ عَارِفًا بِحَدِيث أهل الْكُوفَة وَفقه أهل الْكُوفَة، شَدِيد الِاتِّبَاع لِما كَانَ عَلَيْهِ النَّاس بِبَلَدِهِ.

আবু হানীফা রহ. কূফাবাসীর হাদীস ও ফিকহ সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন এবং যে হাদীসের উপর কূফার লোকদের আমল ছিল, তা তিনি গুরুত্বের সাথে অনুসরণ করতেন। [আখবারু আবী হানীফা, ছায়মারী পৃ. ২৫; মানাকিবু আবী হানীফা, মাক্কী ১/৮৯]

🧧 ৭ম দলীল

শাহ ওলীউল্লাহ দেহলভী রহ. তো বলেছেন, প্রত্যেক আলেমেরই উক্ত নীতি ও আমল ছিলো। তিনি বলেন,

إذا اختلفتْ مذاهب الصحابة والتابعين في مسألة، فالمختار عند كل عالم مذهب أهل بلده وشيوخه…

কোন মাসআলায় যদি সাহাবা ও তাবেয়ীনের মতভেদ থাকে, তখন প্রত্যেক আলেমের নিকট পছন্দনীয় হল, নিজ শহরের লোকদের মাযহাব এবং স্বীয় শায়খদের মাযহাব।[আল-ইনসাফ: ৩]

🧧 ৮ম দলীল

সৌদি আরবের বিশিষ্ট সালাফী শায়খ উসায়মীন রাহিমাহুল্লাহ নিজ দেশের প্রচলিত মাযহাব অনুসরণ এর ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করে বলেন—

لأن فرضك أنت هو التقليد، وأحق من تقلد علماؤك، ولو قلدت من كان خارج بلادك أدى ذلك إلى الفوضى في أمر ليس عليه دليل شرعي. فالعامي يجب عليه أن يقلد علماء بلده الذين يثق بهم.

নিশ্চয়ই তোমার কর্তব্য হলো, তাকলীদ (মাযহাব অনুসরণ) করা। আর তোমার অনুসরণের সবচে বড় হকদার হল তোমার নিজ (দেশের) আলিমগণ/মাযহাব। যদি তুমি তা না করে বাইরের দেশের আলিমদের অনুসরণ করো, তবে তা লাগামহীনতা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে। সুতরাং সাধারণ মানুষের কর্তব্য নিজ দেশের আলিমদের/প্রচলিত মাযহাব অনুসরণ করা। [লিকাআতুল বাবিল মাফতুহ: ১৯/৩২]

🧧 ৯ম দলীল

কাজি আবুল ইয়া‘লা আল হাম্বলী আল বাগদাদী (৩৮০-৪৫৮) বলেন—

إن هذا لا يصلح بك، فإنك إذا كنت في بلدك على مذهب أحمد وباقي أهل البلد على مذهب الشافعي لم تجد أحدا يعبد معك ولا يدارسك، وكنت خليقا أن تثير خصومة وتوقع نزاعا، بل كونك على مذهب الشافعي حيث أهل بلدك على مذهبه أولى.

এরূপ কাজ তোমার জন্য মোটেও সমীচীন নয় যে, যদি তুমি তোমার দেশে হাম্বলি মাযহাবের অনুসারী হও আর তোমার অঞ্চলের অন্যরা শাফে’ঈ মাযহাবের অনুসারী হয়, তবে তুমি এমন কোনো লোককে খুঁজে পাবে না, যে তোমার অনুরূপ ইবাদত করবে, তোমার সাথে বসে ইলম চর্চা করবে। এরূপ অবস্থায় তোমার এ কাজ উম্মতের মধ্যে বিভেদ ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে। কাজেই তোমার দেশের লোকদের অনুসৃত মাযহাবের ওপর অটল থাকাই তোমার জন্য অধিক শ্রেয়। [আল মুসতাদরাক আলা মাজমূ’ইল ফাতাওয়া: ২/২৭৪]

🧧 ১০ম দলীল [আকলী দলীল]

একই রোগের একাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকা সত্ত্বেও আমরা একসাথে সকল ডাক্তারের চিকিৎসা গ্রহণ করি না। বরং কেবল নির্দিষ্ট একজন ডাক্তারেরই চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকি। কারণ, যদি একাধিক ডাক্তারের চিকিৎসা নেওয়া হয় তখন তা রোগীর জন্য প্রাণনাশক। আর মানুষ চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত ঐ ডাক্তারেরই চিকিৎসা গ্রহণ করে যার সাথে রোগীর ব্যক্তিগত পরিচিতি ভালো, যে ডাক্তার রোগীর সার্বিক অবস্থা আগে থেকেই অবগত।

আলহামদুলিল্লাহ। আশা করি আমরা বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, বাংলাদেশ তথা ভারত উপমহাদেশে কেন আপনাকে হানাফী মাযহাবই মানতে হবে। কারণ যুগ যুগ ধরে এই ভারত উপমহাদেশে হানাফি মাযহাব প্রচলিত হয়ে আসছে। এর বাইরে অন্য কোন মাজহাবের সাথে তাদের সম্পর্ক নেই। এখন হঠাৎ করে কেউ যদি অন্য কোন মাযহাবের আমল শুরু করে এতে করে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তি পতিত হবে। এবং এতে করে মারাত্মক ফিতনাহও সৃষ্টি হবে, যেমনটা আজকাল হচ্ছেও। অথচ ইসলামে হালাল বিষয় নিয়ে ফিতনাহ সৃষ্টি করা জায়েয নেই।

এবার আমরা আবারও সেই আহলে হাদিসের দিকে ফিরে যায়। এ কথিত আহলে হাদিসরা মুসলমানদের মাঝে যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই ঐক্য ও সম্প্রীতি নষ্ট করতে শুরু করেছে। তারা এদেশে যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রচলিত মাযহাবের বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের দাবি হানাফিরা নাকি কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী চলে না। তাদের নামায-রোযা কবুল হয় না ইত্যাদি। কাজেই হক্কানী ওলামায়ে কেরামগণ এই মতবাদটাকে ফিতনা মনে করেন। এখন আমরা ব্যাখ্যা করব আহলে হাদিস নামে এই নতুন মতবাদটি ফিতনা কেন।

📗 আহলে হাদীস একটি ফিতনাহ’র নাম

ইসলামের খুঁটিনাটি যত বিষয় আছে —সালাত, সিয়াম (নামাজ, রোজা) হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি সকল বিষয়ে চার মাযহাবের ইমামগণ সুবিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে দিয়ে গেছেন।

অর্থাৎ ইসলাম সংক্রান্ত সকল মৌলিক মাসআলা ও বিধিবিধানেরই সুষ্ঠু সমাধান চার মাযহাবের মাধ্যমে ইতোপূর্বে হয়ে গেছে। অতঃপর এ সব বিষয়ে চার মাযহাবের বাইরে গিয়ে নতুন কোনো মতবাদের প্রয়োজন নেই। যদি কেউ নতুন মতবাদ সৃষ্টি করতে চায় সেটা অবশ্যই ফিতনাহ।

কারণ, দীর্ঘ ১২-১৩ শত বছর পরে এসে নতুন করে মীমাংসিত মাসআলাগুলো নিয়ে আবার বিতর্ক তৈরি করার কারণে অনেক সাধারণ ও অল্প শিক্ষিত মানুষই বিভ্রান্ত হচ্ছে। তারা ভাবছে, তাদের এতদিনের করা ইবাদত বন্দেগী আল্লাহর দরবারে কবুল হয়নি। এবং অন্যদের প্রতিও তাদের অহেতুক ঘৃণা সৃষ্টি হচ্ছে। এই নতুন মতবাদটির কারণে মুসলমানদের পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ্বে ও ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে। অতএব, এই নতুন মতবাদটি অবশ্যই অনেক বড় ফিতনাহ’র অন্তর্ভুক্ত।

তাছাড়া এই আহলে হাদিস মতবাদের অনুসারীরা কঠিনভাবে বিশ্বাস করে যে, হানাফীদের ইবাদত-বন্দেগী সঠিকভাবে পালন হচ্ছে না। এবং তাদের দাবি, হানাফিরা সঠিক পথে নেই। অথচ বাস্তবতা এর বিপরীত।

হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রের বড়ো বড়ো ও বিখ্যাত ইমামগণ বলে গেছেন, “চার মাযহাবের বাইরে কোনো হক্ব ও সত্য নেই।” যেমনটা আমরা প্রথম পর্বেও কিছুটা উল্লেখ করেছি।

শাফেয়ী মাযহাবের বিদগ্ধ ফকীহ আল্লামা যারকাশী রাহ. লিখেন,

وقد وقع الاتفاق بين المسلمين على أن الحق منحصر في هذه الأربعة ، وحينئذ فلا يجوز العمل بغيرها ، فلا يجوز أن يقع الاجتهاد إلا فيها.

এ ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর মাঝে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, হক/সত্য এ চার মাযহাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সুতরাং এ চার মাযহাব ব্যতীত অন্য কোনো মাযহাবের অনুসরণ করা বৈধ নয় এবং এ চার মাযহাবের মধ্যেই কেবল ইজতিহাদ করা যাবে। [আল বাহরুল মুহীত: ৮/২৪০]

রিজাল শাস্ত্রের বিদগ্ধ ইমাম হাফিয যাহাবী রহ. বলেন

لا يكاد يوجد الحق فيما اتفق أئمة الاجتهاد الأربعة على خلافه ، مع اعترافنا بأن اتفاقهم على مسألة لا يكون إجماع الأمة ، ونهاب أن نجزم في مسألة اتفقوا عليها بأن الحق في خلافها

চার ইমাম যে বিষয়ে একমত এর বিপরীতে সঠিক মত পাওয়া যায় না বললেই চলে । যদিও আমরা স্বীকার করি চারজনের ইজমা সরাসরি পুরো উম্মতের ইজমা নয়। তবে তাদের ঐক্যমত হওয়া বিষয়ের বিপরীতে কোনো মাসয়ালায় সঠিক মত আছে এটা জোর দিয়ে বলতে আমরা ভয় করি। [সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা: ৭/১১৭]

উপরিউক্ত দলিলের ভিত্তিতে নিশ্চয়ই পাঠকবর্গ এতক্ষণে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, ইসলামের সকল বিধি-বিধানের সুষ্ঠ ও সঠিক সমাধান ইতোপূর্বে মহান ইমামগণ দিয়ে গেছেন গেছেন। অতএব, এরপরে নতুন যা কিছুই সৃষ্টি হবে সবকিছুই ফিতনাহ ও বিদ’আত।

উল্লেখ্য: প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বস্তুকেই বিদ’আত বলা হয়। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক বিদ’আত (নবাবিষ্কৃত বস্তুই) পথভ্রষ্টতা।

📗 আহলে হাদিসের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলেছেন?

আহলে হাদিসের ব্যাপারে রাসুল সালাম সালাম মূলত কিছুই বলেননি। সে যুগে এই পরিভাষাটিই ছিল না। বরং তিনি সকল উম্মতের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তোমরা কুরআন সুন্নাহের অনুসরণ করো। আর প্রত্যেক মাযহাবের অনুসারীরাই কুরআন সুন্নাহের অনুসরণ করে থাকে। কারণ, কুরআনে আদেশ দেওয়া হয়েছে

وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ

যে আমার অভিমুখী হয়, তোমরা তার পথ অনুসরণ করবে। [সূরা লুকমান: ১৫]

এখন কেউ আল্লাহর অভিমুখী কারো অনুসরণ করার কারণে যদি বলা হয় অমুক লোক কুরআন অনুসরণ করেনি বরং অমুক ব্যক্তির অনুসরণ করেছে তখন তো বরং আপত্তিকারীরা নিজেই কুরআন বিরোধী কথা বলেছে। কারণ আল্লাহ বলেন, তোমরা তার অনুসরণ করো যে আমার অভিমুখী অথচ এরা আল্লাহর অভিমুখী কারো অনুসরণ করলে শির্কের অপবাদ দেয়!

📗 প্রকৃত আহলে হাদীস কারা?

প্রকৃত আহলে হাদিস তো তারাই, যারা হাদিস শাস্ত্রে গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী। অর্থাৎ যারা হাদিসের সনদ ও মতন নিয়ে উসূলভিত্তিক গবেষণা করেন। অনেকে ধারণা করেন হাদিস অনুসরণ করলেই তাকে আহলে হাদিস বলা হয় এটি মূল কথা কারণ এমন কে আছে যে হাদিস অনুসরণ করবে না?

তাইতো ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলসহ অনেক বড় বড় ইমামগণ সাধারণ কোনো মুহাদ্দিসগণকেও আহলে হাদিস বলতেন না, যেমনটা আমরা ২য় পর্বে উল্লেখ করেছি। তার মানে কি তারা হাদিস অনুসরণ করতেন না?

📗 উপসংহার

এটি একটি সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ হিসেবে আমরা অনেক দলিলাদি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও উল্লেখ করতে পারেনি। তবে যতটুকু দলিলাদি উল্লেখ করেছি, আমি মনে করি একজন সত্যসন্ধানীর জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। আর আমাদের লেখালেখি কেবল সত্যসন্ধানীদের জন্য। কোন বিদ্বেষী মনোভাবাপন্ন লোক যতই সত্য কথা জানুক কখনোই সত্য গ্রহণ করার শক্তি পায় না। অতএব আমাদের সকলের আল্লাহর দরবারে দোয়া করা উচিত। যাতে করে আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সত্য গ্রহণ করার তৌফিক দান করেন আমিন।

সমাপ্ত

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply