কুরআনের আয়াত অস্বীকার করে ইমাম আ’যমের সমালোচনা: এটাও নাকি জারাহ-তা’দীল
আল্লাহ তা’আলা সকল মানুষকেই ‘ফিতরাত’ অর্থাৎ স্বভাবধর্ম ইসলাম -এর উপর সৃষ্টি করেছেন। কেউই মায়ের গর্ভ থেকে অমুসলিম হয়ে আসে না; বরং তার মাতা-পিতাই তাকে অমুসলিম বা ইয়াহুদি-খ্রিষ্টান বানায়। এ বিষয়টা তো সবাই জানে; তবুও আমি এখানে পাঁচটি দলীল উল্লেখ করছি।
দলীল —১
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا ۚ فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا ۚ لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো। এটাই আল্লাহর ‘ফিতরাত’ —যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। [সূরাহ আর-রূম: ৩০]
দলীল —২
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الفِطْرَةِ ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ ، أَوْ يُنَصِّرَانِهِ ، أَوْ يُمَجِّسَانِهِ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- প্রত্যেক নবজাতককেই ‘ফিতরাত’ (স্বভাবধর্ম ইসলাম) -এর ওপর সৃষ্টি করা হয়। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, খ্রিষ্টান বা অগ্নিপূজক বানায়। [শরহু মুশকিলিল আসার: ১৩৯৩। কানযুল ‘উম্মাল: ১৩০৬। বুখারী: ১৩৮৫। মুসলিম: ২৬৫৮]
দলীল —৩
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلاَّ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- এমন কোনো নবজাতক নেই যাকে ‘ফিতরাত’ (স্বভাবধর্ম ইসলাম) -এর ওপর সৃষ্টি করা হয় না। অতঃপর তার পিতা-মাতাই তাকে ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান বা অগ্নিপূজক বানায়। [কানযুল ‘উম্মাল: ১৩০৮। বুখারী: ৪৭৭৫]
দলীল —৪
ما من مولود إلا يولد على هذه الملة
প্রত্যেক নবজাতককেই ইসলাম ধর্মের ওপর সৃষ্টি করা হয়। [মুসনাদে আহমদ: ৭৪৪৫]
দলীল —৫
وَإِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ وَإِنَّهُمْ أَتَتْهُمُ الشَّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ
নিশ্চয় আমি আমার সকল বান্দাকে একনিষ্ঠ (মুসলিমরূপে) সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের নিকট শয়তানদল এসে তাদেরকে তাদের দ্বীন হতে পথভ্রষ্ট করেছে। [কানযুল ‘উম্মাল: ১১৩০৬। মুসলিম: ২৮৬৫]
আমি এখানে মাত্র পাঁচটি দলীল উল্লেখ করেছি- কিন্তু একই অর্থে হাদীসগ্রন্থসমূহে ভরপুর বর্ণনা রয়েছে।
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক মানুষকে জন্মগতভাবে মুসলিমরূপেই সৃষ্টি করেছেন। তিনি এই ব্যাপারটি খোদ কুরআনেও বলেছেন। অথচ হানাফী-বিদ্বেষীরা নিজেদের কুপ্রবৃত্তির কারণে কুরআনের আয়াতকেও অস্বীকার করে বসেছে। তারা বলে- ইমাম আবূ হানীফাহকে নাকি আল্লাহ তা’আলা মুসলিম রুপে সৃষ্টি করেননি। না’ঊযুবিল্লাহ!
আহমদ বিন হাম্বলের পুত্র আব্দুল্লাহ বিন আহমদ কোনো এক কুরআনের আয়াত অস্বীকারকারীর বক্তব্য নকল করেন, সে বলেছে-
لم يولد أبو حنيفة على الفطرة
আবূ হানীফাহকে ‘ফিতরাত’ (স্বভাবধর্ম ইসলাম) -এর ওপর সৃষ্টি করা হয়নি। [আস-সুন্নাহ: ১/২২]
না’ঊযুবিল্লাহ! যেখানে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন- প্রত্যেক মানুষকেই ‘ফিতরাত’ বা স্বভাবধর্ম ইসলামের ওপর সৃষ্টি করা হয়েছে, সেখানে এই মূর্খরা বলছে- আবূ হানীফাহকে ফিতরাত’ বা স্বভাবধর্ম ইসলামের ওপর সৃষ্টি করা হয়নি। এরা তো দেখি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের কথাতেও সন্তুষ্ট নয়। কী ভয়ঙ্কর!
আর যারা স্বয়ং আল্লাহ ও রাসূলের কথায় সন্তুষ্ট হতে পারে না- তারা ইমাম আ’যম আবূ হানীফাহ’র ওপর কীভাবে সন্তুষ্ট হবে? কারণ, ইমাম আবূ হানীফাহ রহ. তো আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের পক্ষে।
তাছাড়া যেখানে একজন কাফিরের ব্যাপারেও বলা হয়েছে যে- তাকেও আল্লাহ তা’আলা ইসলাম-এর ওপর সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তার মাতা-পিতাই তাকে অমুসলিম বানিয়েছে- সেখানে একজন মহান ইমাম আবূ হানীফাহকে নাকি আল্লাহ ইসলামের ওপর সৃষ্টি করেননি। বিদ্বেষটা কত অন্ধ ও মূর্খতাসূলভ একটু ভেবে দেখুন।
এদের চেয়ে বড় মূর্খ আর বেয়াদব আর কে হতে পারে- যারা সরাসরি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের কথাকে ডিফেন্স করে? এমন মূর্খরাই তো ইমাম আবু হানীফাহ’র সমালোচনা করার পরিপূর্ণ হকদার ও যোগ্য। আর এদের মতো জাহেলরা ইমাম আবূ হানীফাহ’র সমালোচনা করবে না তো কে করবে?
মূলত: ইমাম আবু হানীফাহ’র সমালোচনা করতে হলে আকল-বিবেক-বুদ্ধিহীন হতে হবে। কমনসেন্স ও কুরআন হাদীসের জ্ঞান না থাকতে হবে। সে যুগেও বুদ্ধি ও মস্তিষ্কহীনরাই ইমাম আবূ হানীফাহ’র সমালোচনা করেছে, এ যুগেও জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিবেকশুন্যরাই ইমাম আবূ হানীফাহ’র সমালোচনা করে।
লুবাব হাসান সাফওয়ান
আরো পড়ুন-
- ফাযায়েলে আমাল এর নতুন সংস্করণের উপর আপত্তি ও জবাব
- আহমদ বিন হাম্বল রহ. সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
- সুলতান মাহমুদ গজনবী কি মাযহাব পরিবর্তন করেছেন
- আহলে হাদীস কারা —১
- আহমদ বিন হাম্বল রহ.