উপন্যাস পর্ব “এগারো”
মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয়
আফছানা খানম অথৈ
ঝুমার বিয়ে হলো প্রায় সপ্তাহ খানেক হলো।স্বামী রিফাত আলম বড় ব্যবসায়ী।বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে ব্যবসার দিকে তেমন খেয়াল দিতে পারেনি।ছোটন একা একা ব্যবসা দেখা শুনা করতে গিয়ে খুব হাঁফিয়ে উঠেছে।তাই রিফাতকে ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বলল।রিফাত আলম বউকে নিয়ে শহরে চলে যাবে।তাই শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে আসল।নতুন জামাইর আগমনে বাড়িঘর আনন্দে মুখরিত।সবাই তার খাতির যত্ন নিয়ে ব্যস্ত।রিফাত আলম নাস্তা খেতে বসে শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞেস করলো,
আম্মু শান্তাকে দেখছি না যে,সে কোথায়?
শান্তা আর নয়নের ব্যাপারটা কিভাবে সরাসরি জামাইকে বলবেন,বললে যদি জামাই ঝুমাকে খোটা দেয়।তাই সত্যটাকে লুকিয়ে হেসে উঠে বললেন,
রিফাত শান্তা তার ঘরে আছে।তোমরা বস।আমি তাকে ডেকে দিচ্ছি।
রাজিয়া বেগম ছুটে গেলেন মেয়ের ঘরে।শান্তার চোখে মুখে চিন্তার রেখা।মন ভালো নেই।মন ভালো করার জন্য এফ.এম রেডিওতে গান শুনছে।তবুও মন যেন ভালো হচ্ছে না।এমন সময় মা ডাকে,
শান্তা মা মনি উঠ,রিফাত ঝুমা এসেছে।
হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনছে তাই মায়ের ডাক তার কানে যাচ্ছে না।এবার মা আলতো করে মেয়েকে ঠেলে দিয়ে বলল,
শান্তা আমি যে ডাকছি কানে যাচ্ছে না?এসব কি কানে লাগিয়ে রেখেছিস,যত্তসব।
কথাগুলো বলতে বলতে তিনি শান্তার কানের হেড ফোন খুলে ফেলে দিলেন।শান্তা এতক্ষণ কিছুই শুনতে পায়নি।তাই মায়ের রাগের ভাবমূর্তি দেখে বলল,
মা এমন করছ কেন, কি হয়েছে?
আমি সেই কখন থেকে তোকে ডাকছি।কানে যাচ্ছে না, না?
কেন মা?
রিফাত আর ঝুমা এসেছে। তাড়াতাড়ি আয়।ওরা নাস্তার টেবিলে বসে আছে।
শান্তা আর কোন কথা বলল না।ছুটে গেল ডাইনিং টেবিলে,বোন ভগ্নিপতির কাছে।তাকে দেখা মাত্রই রিফাত আলম বলল,
কি ব্যাপার শালিকা তুমি এত সময় কোথায় ছিলে?
দুলাভাই সামনে পরীক্ষাতো তাই পড়া নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।
তাই বলে বোন ভগ্নিপতির দেখাভাল করবে না?
সরি দুলাভাই ভুল হয়ে গেছে।আর কথা নয়। নাস্তা খাওয়া শুরু করেন।
নাস্তা রাতের খাবার বোন ভগ্নিপতিকে খুব খাতির করে খাওয়াল শান্তা।যাক রিফাত আলমের মন ফ্রেস হলো।সে শালিকার আপ্যায়নে খুব খুশি হলো।তারপর বলল,
শান্তা তুমি আমাদের সাথে চলো।
কোথায় দুলাভাই?
কোথায় আবার ঢাকায়,বেড়াবে চলো।
সরি দুলাভাই যেতে পারব না।
কোন সমস্যা?
জ্বি হ্যাঁ দুলাভাই।সামনে ফাইনাল পরীক্ষা।এখন যেতে পারব না।
শান্তা কোন সমস্যা নেই, কদিন থেকে চলে এসো।
সরি দুলাভাই এখন যেতে পারব না।আগে পরীক্ষা শেষ হোক তারপর অনেক দিন বেড়াব।
ঠিক আছে মানলাম তখন কিন্তু যেতে হবে।
ওকে দুলাভাই যাব।
দুলাভাইকে কোন রকম ম্যানেজ করলো শান্তা।তারপর নিজ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।আপন মনে বলে,
উফ বাপরে কোন রকমে পরীক্ষার কথা বলে যাওয়াটা মিস করলাম।যদি যেতাম না নিশ্চিত ছোটন সাহেব প্রেমের প্রস্তাব করতো।আপু দুলাভাই ঠিক রাজি হয়ে যেত।শেষে বিয়ে দিয়ে দিত।যাক আল্লাহপাক রক্ষা করেছেন।মিথ্যে বলে কোন রকমে বাঁচলাম। আমি কখনো তার বাসায় বেড়াতে যাবনা।গেলে ছোটন ডিস্টার্ব করবে।এসব বলতে বলতে সে ঘুমিয়ে পড়লো।সকাল হতে সবাই জেগে উঠল।ঝুমা তার স্বামীকে নিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো।বিদায় বেলায় মা-মেয়ের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।ঝুমা একমাত্র আদরের ছোট বোন শান্তাকে ধরে খুব কাঁদল।সবাই তাদেরকে সদর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসল।
রিফাত আলম গন্তব্য স্থলে ফিরে ব্যবসায় মনোযোগ দিলো।কিন্তু অফিসের অনেক কাজ জমে গেছে।এদিকে মাল ডেলিভারী দেয়ার ও সময় হয়ে গেছে।এক গাদা চেকিং ফাইল সাইন করতে করতে একেবারে ক্লান্ত…।একটু দম নিতে বের হতে প্রস্তুত হলো।ছোটনকে কাজের দায়িত্ব বুঝে নিতে সে তার রুমে গেল।ছোটন ইজি চেয়ারে বসে চোখ মুখ বন্ধ করে ঝিমুচ্ছে।দৃশ্যটা রিফাতের চোখে পড়তেই প্রশ্ন করলো,
দোস্ত চোখ বন্ধ করে কি ভাবছিস?
ছোটন চমকে উঠে বলল,
না কিছু না।
বললেই হলো,তোমার চেহারা প্রমাণ করে তুমি কিছু না কিছু ভাবছ।কি সত্যি বলিনি?
হ্যাঁরে দোস্ত তুই ঠিক বলেছিস, সত্যি আমি একজনকে নিয়ে ভেবেছিলাম।
রিফাত আলমের চোখকে ধুলো দেয়া চারটি খানি কথা।এবার বলো কে সে নারী?
তুই শুনে কি করবি?
কি করব মানে দুহাত এক করার ব্যবস্থা করব।
সত্যি পারবিতো?
অবশ্যই পারব।বল তাড়াতাড়ি কে সে?
দোস্ত সে আর অন্য কেউ না।তোর শালিকা শান্তা।
ছোটন সত্যি বলছিস তো?
জ্বী হ্যাঁ আলম ভাই সত্যি আমি শান্তাকে ভালোবাসি।শান্তাকে বিয়ে করতে চাই।
ছোটন তুই কোন চিন্তা করিস না।শান্তাকে তোর সঙ্গে বিয়ে দেয়াটা একশ পার্সেন্ট সত্যি।তবে তোকে অপেক্ষা করতে হবে।
কত সময় পর্যন্ত?
বেশী দিন না।মাত্র কটা মাস।শান্তার ফাইনাল এক্সাম শেষ হওয়া পর্যন্ত।
ওকে দোস্ত সমস্যা নেই।আমি অপেক্ষা করতে পারব।
তাহলেতো কোন সমস্যা নেই।
রিফাত ভাই শান্তার মোবাইল নাম্বারটা দেবে?
শান্তার মোবাইল নেই।বাসার নাম্বারটা নাও।
ছোটন নাম্বারটা সেভ করে নিলো।রাত বারোটার পর কল দিলো।শান্তা ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলে সালাম দিয়ে জানতে চাইল,
কে আপনি?
ছোটন চুপচাপ,কোন কথা বলছে না। শান্তা হ্যালো হ্যালো বলে ফোন কেটে দিলো।পরক্ষণে ছোটন আবার কল দিলো।শান্তা ফোন রিসিভ করে বিরক্তির স্বরে বলল,
হ্যালো কে আপনি, ফোন করে কথা বলছেন না।পরিচয় বলেন, তানা হলে আমি ফোন রেখে দেব।
সত্যি যদি শান্তা ফোন রেখে দেয়।তাই ছটফট ছোটন বলল,
প্লিজ শান্তা রাগ করোনা।আমি তোমার মনের মানুষ।আমাকে চিনতে পারলে না?
কণ্ঠস্বর চেনাচেনা লাগছে,তবুও সে চিনতে পারলো না।তাই বলল,
হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন?
ইয়েস বলুন?
আলতু ফালতু কথা না বলে সত্যি করে বলুন কে আপনি?
বললাম না আমি তোমার মনের মানুষ।
আপনি কিন্তু মিথ্যে বলছেন।
কি করে বুঝলেন?
আমার মনের মানুষের কণ্ঠ আমার চেনা।
ও তাই,আচ্ছা লোকটা কে?
আপনাকে বলতে যাব কেন,তাছাড়া আপনি আমার কে?
শান্তা শুন আমি সত্যি তোমার মনের মানুষ। তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকা অসম্ভব।প্লিজ তুমি না করো না।
শান্তা মহাচিন্তায় পড়লো।নয়নকে ছাড়া সে কাউকে ভালোবাসতে পারবে না।তাছাড়া ওরা দুজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ।কিন্তু এখন উপায়।পরক্ষণে শান্তা বলল,
হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন?
শুনছি বলুন?
সরি আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না।
কেন আমি কি তোমার অযোগ্য?
না তা না।
তাহলে?
প্লিজ আপনি বুঝতে চেষ্টা করুন। একটা হৃদয় বার বার নয়,একবার দিতে হয়।আমি একজনকে ভালোবাসি।
সত্যি বলছেন তো?
জ্বী হ্যাঁ সত্যি।
তাহলে তো আপনার ভগ্নিপতিকে বলে দিতে হয়।
হ্যালো কে আপনি?
আমি রিফাতের বন্ধু ছোটন।
ছোটনের কথাটা শুনা মাত্রই শান্তার বুকের ভিতর ধুকধুক শুরু হয়ে গেল। কারণ গোপন খবরটা এক্ষণি প্রকাশ হয়ে যাবে।যেমন করে হোক ছোটনকে ম্যানেজ করতে হবে।এবার শান্তা কল করে বলল,
হ্যালো ছোটন ভাই আমি মজা করেছিলাম।দুলাভাইকে কিছু বলবেন না।আমি কাউকে ভালোবাসি না।
তাহলে মিথ্যে বললে কেন?
কি আর বলব ছোটন ভাই।ছেলেরা শুধু ডিস্টার্ব করে।তাই বললাম আর কি।
ওকে সুইট হার্ট বলব না।এবার বল আমাকে ভালোবাস কিনা?
সেটা দুলাভা’র উপর ভরসা।তাছাড়া শহরে এত মেয়ে থাকতে আমার মতো গ্রামের গেঁয়ো মেয়েকে ভালোবাসলেন কেন?
শান্তা শহরের মেয়েরা বেশি আনকাচার্ড।এটা আমার পছন্দ না তাই।
ও তাই। ছোটন ভাই ভালো থাকেন। এখন রাখি গুড় নাইট।
পরদিন রিফাত আলম বলল,
ছোটন কি খবর,শান্তার সাথে আলাপ হয়েছে?
জ্বী হ্যাঁ হয়েছে।
কিছু বলেছে?
প্রথম আলাপতো তাই একটু নার্ভাস।আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ওকে আমি ও তাই চাই।কালকে মাল ডেলিভারী দেয়ার কথা সব রেডিতো?
তুমি বস।আমি দেখছি।
ছোটন ছুটে গেল ম্যানেজারের কক্ষে।কিন্তু একি দেখল, ম্যানেজার নেই।পিয়নকে জিজ্ঞেস করতে সে বলল,
সাহেব উনি একজন মেয়ে মানুষ নিয়ে ঘুরতে গেছে।ছোটনের মেজাজ হাইতে উঠে গেল।তার নাকের ডগা বেয়ে তরতর করে ঘাম ঝরছে।পরক্ষণে ম্যানেজার এসে পড়লো।ছোটন প্রশ্ন করলো,
আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?
তিনি চুপচাপ কোন জবাব দিচ্ছেন না।ছোটন আবার বলল,
কি চুপ করে আছেন কেন,বলুন এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?
ম্যানেজার ভ্যাঁ ভোঁ করে বলল,
সাহেব আমি একটু বাইরে গিয়েছিলাম।
মেয়ে মানুষ নিয়ে ফুর্তি করছেন না।ছি: ছি: এ বয়সে এসে ও ফুর্তি। প্রথম বারের মতো ক্ষমা করলাম।দ্বিতীয়বার যদি এমন করেন চাকরী থেকে বরখাস্ত করব।
সরি সাহেব এমন ভুল আর কখনো করবো না।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।আমার চরম শিক্ষা হয়ে গেছে।
ওকে মাল রেডি করে শো রুমে পাঠিয়ে দেবেন।
জ্বী আচ্ছা সাহেব।