উপন্যাস পর্ব ” চার”
মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয়
আফছানা খানম অথৈনয়নের মাতা বিলকিছ বেগম সিরিয়াসভাবে অসুস্থ।নয়ন মায়ের চিকিৎসা সেবা নিয়ে খুব ব্যস্ত।প্রায় সপ্তাহ খানেক পার হলো নয়নের মাতা বিলকিছ বেগম মোটামুটি ভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেন।নয়ন এখন ফ্রি তাই শান্তার প্রসঙ্গে বলে,
উহু! অসহ্য শান্তাকে কথা দিয়ে ও রাখতে পারলাম না।কে জানত মা অসুস্থ হবেন।যাক যা হবার হয়েছে এবার তাকে সব সত্য বুঝিয়ে বলে মিট করে ফেলব।এসব ভাবতে ভাবতে ঘর থেকে বের হতে সে প্রস্তুত হলো।তখনি তার ফোনে রিং বেজে উঠল।সে রিসিভ করে বলে,
হ্যালো দোস্ত কি খবর?
দোস্ত খবর ভালো।কাল থেকে বি.এ অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের কলেজ ফাইনাল শুরু হবে?
হোয়াট! সত্যি বলছিস তো?
হ্যাঁ দোস্ত সত্যি।
ঠিক আছে আমি এক্ষণি রওয়ানা করছি।ভালো থাকিস।
নয়ন তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে মায়ের ঘরে গেল।তারপর বলল,
মা আমি চলে যাচ্ছি।
এত তাড়া কেনরে নয়ন?
মা কাল থেকে পরীক্ষা শুরু হবে।শুন মা।
বল নয়ন।
মা ঔষধগুলো নিয়মিত খাবে।প্রেসার কমে গেলে ও ঔষধ বন্ধ দেয়া যাবে না।কারণ এটা ডাক্তারের নির্দেশ।মা ঔষধ শেষ হয়ে গেলে সাজুকে পাঠিয়ে নিয়ে আসবে।আমি ডাক্তার চাচাকে বলে দিয়েছি।কোন সমস্যা হলে সাজুকে দিয়ে উনাকে খবর দেবে।
নয়ন তুই কোন চিন্তা করিস না।আমি সবকিছু ঠিক ঠিক পালন করবো।বাবা নয়ন যাবার বেলায় আমার একটা আদেশ।
বল মা কি তোমার আদেশ?
নয়ন পড়া লেখার পাশা-পাশি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবি,সৎ পথে চলবি।যত বড় বিপদ আসুক তবুও নামাজ পরিত্যাগ ও অসৎ পথে চলবি না।সর্বদা সত্য কথা বলবে,নিজের চরিত্রকে হেফাজত রাখবে।কারণ পবিত্র কোরানে আখলাক বা চরিত্রকে উত্তম রুপে তৈরী করার জন্য আল্লাহপাক নির্দেশ দিয়েছেন।
মা তুমি দোয়া কর আমি যেন তোমার আদেশ যথাযথ ভাবে পালন করতে পারি।
মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নয়ন চলে গেল গন্তব্য স্থলে।প্রায় দুসপ্তাহ ধরে নয়ন পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিল।পরীক্ষা শেষ ফ্রি হলো।বন্ধুদের নিয়ে হৈ হুল্লুডে মেতে উঠল।ঠিক তখনি তার সহকর্মী বান্ধবী রীতা এসে বলল,
নয়ন এদিকে এসো।
নয়ন না শুনার ভান করে এগিয়ে চলল।রীতা কিন্তু থেমে নেই পিছু পিছু এগিয়ে চলল।তাড়াহুড়া করে সে নয়নের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
নয়ন আমি তোমাকে ডাকছি,শুনতে পাচ্ছ না?
রীতা শুনিনি তো,বল কেন ডেকেছিলে?
তোমার সাথে জরুরী কথা ছিল।
রীতা আজ থাক অন্য দিন শুনব।
অন্য দিন কেন, এখন সমস্যা কোথায়?
প্লিজ রীতা তুই রাগছিস কেন, বললাম না আমার তাড়া আছে।
নয়ন পরীক্ষা শেষ এরপর ও তাড়া,বুঝতে পেরেছি আমাকে তুই সহ্য করতে পারিস না এইতো?
রীতা তুই আমাকে ভুল বুঝছিস?
তা মানছি,এবার সত্যি করে বলতো আমার চিঠির জবাব দিলে না কেন?
রীতা তার একটা বিশেষ কারণ আছে।
বলীস কী!বিশেষ কারণ সেটা আবার কি?
বলছি শুন,রীতা তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড,কিন্তু চিঠির ভাষায় যা লিখেছিস তা ভালোবাষার কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল।তাই জবাব দিতে পারিনি।
তাই বলে হ্যাঁ না কিছু বলবে না।
রীতা বলার মতো কিছু থাকলে তো বলতাম।
তার মানে আমি তোমার অযোগ্য?
রীতা তা বলেছে কে?
এই মাত্র তুমিতো বললে।
প্লিজ রীতা তুই বুঝেও না বুঝার ভান করছিস।শুন আমি তোকে ভালোবাসি বন্ধু হিসেবে,প্রেমিকা হিসেব নয়।আমি তোকে একজন ভালো বন্ধু ভাবি,এর বাইরে কিছু না।
রীতা স্পষ্ট বুঝতে পারলো নয়ন তাকে ভালোবাসে না।সরাসরি না শুনার পর তার ভিতরে তোলপাড় শুরু হলো।
সে যে কোন মুল্যে নয়নকে চায়।অত:পর ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
নয়ন তোর কিসের এত অহংকার যে আমাকে এভোয়েড করছিস?
রীতা তুই আমাকে ভুল বুঝছিস,আমার কোন অহংকার নেই।জাস্ট আমি তোকে ভালোবাসতে পারবো না।আমাকে ক্ষমা কর।নয়নের সরাসরি প্রত্যাখান তার মনে ক্রোধের সৃষ্টি করলো।সে রাগের স্বরে বলতে শুরু করলো,
নয়ন আমি ইচ্ছে করলে তোমার চেয়ে আরও সুন্দর ও বিত্তশালী পুরুষকে বিয়ে করতে পারি।কিন্তু আমি তা করছি না।কারণ ভালোলাগা ও ভালোবাসার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ অন্য রকম।মনে যাকে ভালো লাগে তাকে সঙ্গী করতে না পারলে সুখী হওয়া যায় না।কিন্তু তুমি যে এত নিষ্ঠুর হবে জানলে ভালোবাসি কথাটা বলতাম না।নয়ন শেষ মুহূর্তে আর ও কিছু কথা বলি,তুমি শহরে যতদিন থাকবে ততদিন আমার অগোচরে থাকবে।কারণ আমি তোমার পূন: সাক্ষাত কামনা করছি না।আর তোমার এ দেমাগ একদিন ভাঙবেই।চলি খোদা হাফেজ।
রীতা হনহন করে চলে গেল।নয়ন আর দেরী করলো না, মেসে ফিরে গেল।তার ভিতরে সাইক্লোন সমান তীব্র খরস্রোত বয়ে চলল।মানসিক অবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যপ্ত।দুই নারী তার জীবনে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।কাকে রাখবে,কাকে ত্যাগ করবে এটা খুব চিন্তার বিষয়।অনেক ভেবেচিন্তে সে তার ভালো লাগার শান্তাকে চয়েস করলো।আর দেরী করলো না কাগজের পাতায় কলমের তুলিতে কিছু লিখতে বসল।
শান্তা,
আমার হৃদয় মাধুরীতে পরিপূর্ণতায় ভরা ও নীল সাগরের তীর দেশ থেকে আনীত মনি মুক্তা খচিত অপূর্ব ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা তোমার জন্য।জানি না তুমি কেমন আছ?
যাক শান্তা প্রথমে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।জানি তুমি প্রশ্ন করবে কেন?জবাব দিচ্ছি শুন,শান্তা তোমাকে দেয়া প্রথম ওয়াদা ভঙ্গ করার জন্য আমি দু:খিত।হঠাৎ আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন।অসুস্থ হলে কি করতে হয় তা নিশ্চয় জান।ডাক্তার হাসপাতাল ঔষধ পথ্য নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম।তারপর আমার মা সুস্থ হলেন,আমি ফ্রি হলাম।তোমার সঙ্গে দেখা করতে রেড়ি হলাম।তখনি পরীক্ষার খবর পেয়ে ছুটে এলাম গন্তব্য স্থলে।এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছ কেন হ্যানিমন মিস করলাম।শান্তা আমি সরাসরি সত্য কথা বলতে পছন্দ করি।তাই নির্ভেজাল সত্য কথাটা না বলে পারলাম না।শান্তা তোমার কি মনে আছে সেদিনের ঘটে যাওয়া মজার দুর্ঘটনার কথা।আমার কিন্তু ঠিকঠিক মনে আছে।আমি পড়ে যেতে তুমি ম্লান হাসি হেসে আমার দিকে তাকালে,অনুরুপ আমিও তাই করলাম।পুলকে পুলকিত হৃদয়টা কিছুতে তোমাকে ভুলতে পারছে না।কি করবো বল,তোমাকে এক পলক দেখে মনে হলো তুমি পূর্ব পরিচিতা যুগ যুগ ধরে চেনা।গুনী লোকেরা বলেন,মানুষের প্রতি মানুষের মনে যখন ভালোবাসা সৃষ্টি হয়,তখন আল্লাহপাক যেকোন উছিলাতে তাদের সাক্ষাত ঘটান।আমার মনে হয় দুর্ঘটনায়ই আমাদের দুজনের এক করার পথ তৈরী করে দিয়েছেন।তাই তোমার নাম আমার মনের ডায়েরীতে লিখে নিলাম।শান্তা আমার অপূর্ণ হৃদয়টা তোমার ভালোবাসায় পূর্ণ করতে চাই।আমার ঘটে যাওয়া অতীত আমাকে সব শিখিয়ে দিয়েছে আর ও বলেছে তোমাকে ভালোবাসতে ।তাই আমি তোমাকে ভালোবাসি।শুধু যে ভালোবাসি তা নয়, তুমি হবে আমার হৃদয়ের রানী,জীবন সঙ্গীনি।আর বিশেষ কি লিখব।আমি ভালো নেই।তোমার কোমল হাতের আবেগ মাখা পত্রত্তোর হবে আমার ভালো থাকার একমাত্র অবলম্বন।ভালো থেকো।বিদায়।খোদা হাফেজ।
ইতি
তোমারই মনের মানুষ
নয়ন।
চিঠিটা পোস্ট করে নয়ন মেসে ফিরে গেল।
উপন্যাস পর্ব চার মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয় আফছানা খানম অথৈ
0
0