উপন্যাস পর্ব নয় মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয় আফছানা খানম অথৈ

0

উপন্যাস পর্ব “নয়”
মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয়
আফছানা খানম অথৈ

বলতে না বলতে এসে গেল ৭ই মার্চ ঝুমার বিয়ের দিন।মইন আহমেদ একজন নামী দামী বিশিষ্ট বড় লোক।তার মেয়ের বিয়ে বলে কথা জাকজমক না হয়ে কি পারে।সাতদিন আগে থেকে বিয়ের কার্যক্রম শুরু।সদর দরজা থেকে শুরু করে অন্ধর মহল পর্যন্ত সমস্ত বাড়ি লাল,নীল ঝিলিক বাতি দিয়ে সাজানো হলো।বরের জন্য সদর দরজা থেকে শুরু করে কয়েক আইটেমের গেট সাজানো হলো।বরের বসার জন্য সাজানো হলো “বর স্টেজ”।আমন্ত্রিত অতিথির আগমনে বাড়িঘর মুখরিত।বর আসার সময় হয়েছে,কিন্তু এখনো আসেনি।আর এই সুযোগে অন্ধর মহলের মহিলারা ছুটে গেল সদর দরজায় গেট,স্টেজ এগুলো দেখার জন্য।সেই সঙ্গে ছুটে গেল কাজের মেয়ে পরী বানু।অমনি তার উপর চোখ পড়লো কাজের লোক হারুন মাঝির।বিয়ে বাড়ির থালা,বাটি ধোয়া মোছার জন্য তাকে নিয়োগ দেয়া হলো।সে লোক হিসেবে ভালো না মন্দ স্বভাবের।ঘরে দু’দুটো বউ তবুও আবার বিয়ে করতে চাই।তাই পরী বানুকে দেখে বলল,
পরী আমারে এক গেলাস পানি খাওয়াতো।খুব তেষ্টা পাইছে।
পরী আর দেরী করলো না।ছুটে গেল ভিতর মহলে।তারপর পানি এনে বলল,
হারুন ভাই এই লন পানি।
পানি হাতে নিয়ে হারুন মাঝি বলল,
পরী তরে এক্কান কথা কইবার চাই।
হারুন ভাই কি কইবেন,তাড়াতাড়ি কইয়া পালান।
এই সেরেছে পরী বানুর অনুমতি পাওয়া মাত্রই হারুন মাঝি বলতে শুরু করলো,
আহারে! পরী তোর চান্দের লাহান শরীরটা এমনভাবে শেষ অইয়া যাইতাছে,আমি সইবার পারতাছি না।
হারুন মাঝির কথায় পরী বানু কিছু একটা বুঝতে পেরে বলল,
হারুন ভাই প্যাঁচাল নাই কইরা কি কইবেন কইয়া পালান।
হারুন মাঝি খুশিতে গদগদ।অমনি বলতে শুরু করলো,
পরী তোরে আমি ভালোবাসি।তুই আমার জান,দুই চোখের হরান।তোরে ছাড়া আমি বাচুম নারে।তোরে আমি বিয়া করবার চাই।
হারুন মাঝির মুখে বিয়ের কথা শুনে পরীর শরীর ঘৃণায় রিরি করে উঠল।হাতের দা দিয়ে হারুন মাঝির কল্লা কেটে ফেলতে মন চাইল।তখনি সে বিদ্রোহী স্বরে বলল,
লম্পট,নষ্ট,বদমায়েশ,কুলাঙ্গার,ঘরে দুইডা বউ থাকতে আবার বিয়া করবার চাস।তুই ক্যান তোর চাইয়া জোয়ান বেড়া পাইলেও আমি বিয়া করুম না।আমি বেডাগো গালে থুথু মারি।ফের যদি এই কথা কস এই দা দিয়া তোর কল্লা কাইট্যা পালামু।তোর বিয়া করনের সাধ চিরদিনের জন্য মিডাইয়া দুমু।তোগো মতন লুইচ্চা বেহায়া বেডাগোরে সাজা না দিলে তোরা মাইয়্যা লোকের সর্বনাশ করবি।
পরী বানুর রাগ দেখে হারুন মাঝি নম্র স্বরে বলল,
পরী তুই রাগতাছস ক্যান।আমি তোর বালার জন্য কথা খান কইলাম।এই ভাবে মাইনষের বাড়িতে কাম না কইরা,বিয়া শাদী কইরা সংসার কর।
পরী কড়া ধমক দিয়ে বলল,
এই হারুন্না চুপ,একদম চুপ।আর একটা কথা কবি না।আমি এক্ষণি খালুজানরে ডাকতাছি।
হারুন মাঝি ভয়ে থত্থর।পরক্ষণে বলল,
পরী উনারে ডাকিস না।আমি আর কখনো তোরে এসব বাজে কথা কমুনা।এই কান ধইরা কইতাছি।
এতক্ষণে পরী বানুর রাগ পরলো।সে বলল,
ঠিক আছে ডাকুম না।
পরী বানু ভিতর মহলে চলে গেল।হারুন মাঝি কাজে মন দিলো।
পরী বানু গরীব হলে বিদ্রোহী সত্বার অধিকারী।কারণ তার জীবনে ঘটে গেছে এক চরম দুর্ঘটনা।ছোট বেলায় তার মা মারা যায়।বাবা আবার বিয়ে করেন।সৎ মায়ের অত্যাচারে তার জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠে।বাবা তাকে বিয়ে দেন।যৌতুক হিসেবে দেয়া হলো নগদ টাকা ও এক ভরি অলঙ্কার।প্রথমে তার দাম্পত্য জীবন সুখের হলেও পরবর্তীতে তা অসুখের হয়ে যায়।দফায় দফায় স্বামী তাকে টাকার জন্য চাপ দেয় এবং বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।পরীর বাবা গরীব বার বার টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই। তাই পরী কদিন থেকে খালী হাতে আবার ফিরে আসে।এমনি ভাবে চলছে তার দিনকাল।একদিন পরী টাকা ছাড়া ফিরে এসেছে শুনে স্বামীর রাগ চরমে উঠে যায়।সে পরীকে খুব মারধর করে।পরী নীরবে সব কিছু হজম করে। ফের সে টাকার জন্য তাকে চাপ দেয় এবং তার বাবার কাছে যেতে বলে।পরী জানে তার বাবার কাছে টাকা নেই।তাই যেতে অস্বীকার করে।আর তখনি চলে তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।সে পরীকে সিরিয়াস ভাবে মারধর করে রক্তাক্ত করলো।।পরী অজ্ঞান হয়ে পড়ে।শুধু তাই নয় সে তাকে তালাক দেয়।এরপর থেকে পুরুষের প্রতি পরীর মনে প্রচণ্ড ঘৃণার জন্ম নেয়।এবং সে বাকী জীবন নি:সঙ্গ কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়।তাই আজ হারুন মাঝিকে উত্তম মধ্যম বকা দিলো আর পুরুষ মানুষের প্রতি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলো।
এদিকে বর আসতেই হুলুস্থুল কান্ড বেঁঁধে গেল।একদল তরুণ গেটে বরের পথ অবরোধ করে দাঁঁড়ালো।যাক সেলামী দিয়ে বর সেখান থেকে বের হয়ে স্টেজের দিকে এগিয়ে আসল।স্টেজে ফিতা টানানো,কেচি হাতে দুজন তরুণী।অবশ্য এরা অন্য কেউ না।কনের ছোট বোন শান্তা আর তার সই রুমা।দুজনের গায়ের রং ফর্সা,সুন্দর ভাবে সাজু-গুজু করা।বরের সঙ্গে আসা ইয়ংম্যানেরা টাসকি.. ।রিফাত আলমের এক বন্ধু মজা করে বলল,
খুব কিউট বেবি।আপু কত টাকা দিতে হবে?
দুজন এক সঙ্গে উত্তর দিলো,
পাঁচ হাজার টাকা।
ওয়াও বলেন কী,এ সামান্য স্টেজের এত দাম।এই নিন টাকা।
তারা মজার সহিত দশ বিশ টাকার কয়েকটা নোট তাদের দিকে এগিয়ে দিলো।অমনি শান্তার রাগ চরমে উঠে গেল।দুপক্ষের মধ্যে তুমুল ঝগড়া।নয়ন বয়সে ছোট হলেও রিফাতের মামা মুরব্বী শ্রেণির লোক।তাই ছুটে এলেন ঝগড়া মিট করতে।সে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
শুন মেয়েরা তোমাদের ডিমান্ড কত?
শান্তা নয়নের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
পাঁচ হাজার টাকা।
নয়ন একি দেখল,এতো অন্য কেউ না,তার ভালোবাসার শান্তা।তবে এখানে এলো কি করে। শান্তার মনে একই ভাবনার উদয় হলো।দুজনের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না।অত:পর একে অপরকে ঠিক চিনল।নয়ন পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে তাদের হাতে দিয়ে বলল,
যাও ভিতরে যাও।
বর পক্ষের লোকজন ফিতা কেটে স্টেজে আসন পেতে বসল।সবাই বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠল।নয়ন বিষন্ন মনে মহলের বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।শান্তা একটা চিরকুট লিখে কাজের ছেলে মন্টুকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলো।নয়ন চিরকুট খুলে দেখল,তাতে লেখা
নয়ন তাড়াতাড়ি চলে এসো।আমি আমাদের পুকুর পাড়ের জাম গাছের নিচে আছি।
ইতি
শান্তা।
পড়া শেষ নয়ন আর দেরী করলো না।ছুটে গেল জাম গাছের নিচে।গিয়ে দেখল শান্তা আনমনা হয়ে বসে আছে।তাকে চমকে দেয়ার জন্য সে আচমকা পেছন থেকে তার চোখ চেপে ধরল।শান্তা জানে কে তাই বলল,
উহু!লাগছেতো নয়ন ছেড়ে দাও।
নয়ন ছেড়ে দিয়ে তার মুখোমুখি হয়ে বলল,
মাই সুইট হার্ট তুমি এখানে?
আমার ওতো একই প্রশ্ন তুমি এখানে?
আরে পাগলী আমি বরের মামা।তুমি?
আমি কনের ছোট বোন।
হোয়াট!সত্যি বলছ তো?
হ্যাঁ সত্যি।
তাহলেতো ভালোই হলো।মামা ভাগ্নে ভায়েরা ভাই।
কী বললে তুমি, বাবা কখনো এ সম্পর্ক মেনে নেবে না।
কেন কেন?
নয়ন সব কেনর উত্তর হয় না।মামা ভাগ্নে কখনো ভায়েরা ভাই হতে পারে না।তুমি আমাকে ভুলে যাও।
শান্তা সম্ভব না।আমি তোমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।
শান্তা তার মুখ চেপে ধরে বলল,
প্লিজ নয়ন স্টপ।সবাই শুনতে পাবে।
ওকে জান এবার বল,আমাকে ভুলে যাবে নাতো?
নয়ন এমন কথা শুনার আগে আমার মরন হলো না কেন?
শান্তা কে জানত আমার ভাগ্নে তোমার বোনকে বিয়ে করবে।
নয়ন প্লিজ আমাকে ক্ষমা কর।আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারব না।
আরে পাগলী ওহ আমার নিজের বোনের ছেলে না,চাচাতো বোনের ছেলে।
তবুও নয়ন বাবা এ সম্পর্ক মেনে নেবে না।সমাজ ভালো চোখে দেখবে না।
কথাগুলো বলতে বলতে শান্তার চোখ থেকে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।সে সহ্য করতে পারলো না মুর্ছিত হয়ে পড়লো।ভাগ্যিস পুকুর কাছে ছিল।নয়ন হাতের কোসে করে পানি এনে নাকে মুখে পানি ছিটা দিলো।যাক আল্লাহপাক তাকে সারিয়ে তুলল।এবার নয়ন তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
শান্তা আমাদের এ সম্পর্ক শরীয়ত সম্মত এবং জায়েজ।তুমি অন্য কারো হবে না,শুধু আমার হবে।একটুও মন খারাপ করবে না।যা করার আমি করব।চলো ঐদিকে এতক্ষণে মনে হয় আমাদেরকে খোঁজা খুঁজি শুরু হয়ে গেছে।
এদিকে বিয়ের কাজ শেষ।দর্শনের জন্য কনেকে রেডি করা হচ্ছে।শান্তা এগিয়ে যেতে রুমা বলল,
শান্তা এতক্ষণ তুই কোথায় ছিলে?
রুমা কোথাও না।একটু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।রুমা এদিকে সব রেডিতো?
ওকে এক্ষণি বর কনের দর্শনের কাজ শুরু হবে।
বলতে না বলতে স্টেজের মধ্যে বর-কনের দর্শনের কাজ শুরু হলো।চারদিকে, ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা পিটিং।বরের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছোটন প্রথম স্টেজে দেখে শান্তাকে পছন্দ করে ফেলেছে।সে বর-কনের পিক না তুলে,শুধু শান্তার পিক তুলছে।শান্তা বুঝতে পেরে আঁড়াল হয়ে গেল।ছোটন কিন্তু থেমে নেই,শান্তার পিছুপিছু গেল।যখনি একটা পিক তুলতে ছোটন প্রস্তুত হলো।তখনি শান্তা বলল,
এই যে সাহেব স্টপ,অনেক পিক তোলা হয়েছে আর নয়।এটা আপনাদের শহরের বেহায়াপনা না,যে ইচ্ছে করলে যার তার সঙ্গে পিক তুলবেন?
প্লিজ আরেকটা পিক।
জ্বি না,হবে না।কেটে পড়ুন।তানা হলে থানায় ইভটিজিং মামলা করব।
ছোটন আর বাড়াবাড়ি করলো না।রিফাতের কাছে ফিরে গেল।দর্শনের কাজ শেষ হলো।জামাই -বউ দুজনে সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো।শান্তা ও নয়ন ঈশারা ইঙ্গিতে একে অপরকে বিদায় জানালো।ছুটে চলল গাড়ি বউ -জামাইকে নিয়ে।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

মাথায় ঢালে ময়লা

মানব জীবন অতি ছোটো কর্ম গুণটা বড়ো, সুবাস ছড়াও ভালো কর্মে তেমন জীবন গড়ো। কর্মের দোষে দেহের থেকে পঁচা গন্ধ

বিকল্প নাই

আযান শুনে নামাজ পড়ো মুসলিম তুমি ভাই। ইসলামী ওই শাসন নীতির বিকল্প যে নাই। প্রভুর প্রতি একিন তোমার ঈমানের ওই

বাঙালির ঐ শক্তি

মুক্তি যোদ্ধা দুঃসাহসের বাঙালির ঐ শক্তি, সমর যুদ্ধে রক্তের বদলা চাই না রক্তের ভক্তি। মুক্তি যোদ্ধা মানে মোদের বঙ্গ দেশের

উল্টায় গেছে দেশ

গুজব ছড়ায় মাতামাতি হাতা-হাতি আর, নিত্য নতুন গুজব দিয়ে দিনটা করে পার। সাগর জলে আগুন জ্বলে পাখির হবে কী, গাছের

Leave a Reply