উপন্যাস পর্ব পনেরো মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয় আফছানা খানম অথৈ

0

উপন্যাস পর্ব “পনেরো”
মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয়
আফছানা খানম অথৈ

সকাল নয়টা নয়ন এখনো ঘুমাচ্ছে।প্রতিদিন সকালে উঠে নয়ন ফজরের নামাজ জামাতে পড়ে। কিন্তু আজ এখনো উঠছে না কেন?মায়ের মনে প্রশ্ন জাগল।তিনি ছেলেকে জাগিয়ে দিয়ে গেলেন।তবুও নয়ন উঠল না আড়মোড় খেয়ে আবারও শুয়ে পড়লো।শুয়ে শুয়ে প্রিয়তমার সঙ্গে কাটানো রোমান্স,স্মরণ করতে লাগল।কল্পনার করিড়োরে সেই স্মৃতিগুলো ভাবছে আর ভাবছে।ভাবতে খুব ভালো লাগছে।মনে হলো শান্তাকে নিয়ে সে এখনো মজার ভুবনে….।
সুখসুখ লাগছে মনের গহীনে।ভুলে বসে আছে সকালের নাস্তার কথা।তখনি ঘরের দরজায় কড়কড় শব্দ হলো।
কয়েকবার বাজনার পর নয়ন আর থেমে থাকতে পারলো না।বিরক্ত হয়ে দরজা খোলে দিলো।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক মধ্যবয়সী লোক।কাঁদে ব্যগ, গাল পুরু দাঁড়ি গোফ,ঢালা ঢিলা পায়জামা পাঞ্চাবী,চেহারায় মলিন ছাপ,কর্মক্লান্ত দেহ এমন একজন লোককে সাজ সকালে ঘরের দরাজায় দেখে নয়নের বিরক্ত হলো।অমনি লোকটির দিকে বিরক্তি চোখে তাকিয়ে রইল।তখনি লোকটি নয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল,
আপনি কি নয়ন রহমান?,
জ্বী হ্যাঁ। কেন বলুনতো?
আমি কাজী অফিসের পিয়ন।আপনার বউ আপনাকে তালাক দিয়েছে।এই নিন তালাক নামার কাগজ পত্র। এখানে একটা সাইন দিন।আমি বিদায় হই।
কথাটা শুনামাত্রই নয়নের কণ্ঠস্বর বন্ধ হয়ে গেল।মাথা ঘুরে উঠল।সমস্ত শরীরর জিনজিন,ক্রমশ শরীর অবশ হয়ে আসছে।মুহূর্তে সে অজ্ঞান হয়ে পড়লো।দরজার আঁড়ালে দাঁড়িয়ে নয়নের মাতা বিলকিছ বেগম সবকিছু দেখলেন।তিনি আর থেমে থাকতে পারলেন না।ছুটে এলেন ছেলের কাছে।তাড়াতাড়ি ছেলেকে পাঁজাকোলা করে খাটের উপর শুয়ে দিলেন।তারপর লোকটিকে কড়া ভাষায় বললেন,
আমার ছেলের কিছু হয়েছেতো আপনি মরেছেন।
লোকটি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বলে,
প্লিজ ম্যাডাম আমার কোন দোষ নেই।আমরা চাকরী করি।আমাদের উপর যখন যা অর্ডার পরে তাই করতে হয়।
আপনি কোথায় চাকরী করেন?
আমি কাজী অফিসের পিয়ন।বসের অর্ডারে আপনার বউয়ের তালাক নামার কাগজপত্র নিয়ে এসেছি সাইন নিতে।বলুন ম্যাডাম এতে আমাদের দোষ কী?
নয়নের মাতা বিলকিছ বেগম আর কিছু বললেন না।পিয়নের হাত থেকে কাগজপত্র নিয়ে পড়ে দেখলেন।তারপর বুঝলেন ছেলের অজ্ঞান হওয়ার কারণ।এই সুযোগে পিয়নের পলায়ন।তিনি আর দেরী করলেন না ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে গেলেন।ডাক্তারকে আগে সবকিছু বুঝিয়ে বললেন।ডাক্তার দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলো।ইঞ্জেকশন স্যালাইন পুস করলেন।প্রায় ঘন্টা খানেক পরে নয়নের জ্ঞান ফিরে আসল।জ্ঞান ফেরার পর নয়ন মাকে পাশে দেখে জানতে চাইল,
মা আমি এখানে এলাম কি করে?
বাবা নয়ন এসব কথা এখন থাক। তুই আগে সুস্থ হও। তারপর সব শুনিস।
নয়ন ফের প্রশ্ন না করে, নিজের জ্ঞান হারাবার বিষয়টা আস্তে আস্তে স্মরণ করতে লাগল।তার সবকথা মনে পড়ে গেল।বিলকিছ বেগম ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিলেন।ডাক্তার বলল,
সমস্যা নেই রোগীকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।তবে সাবধান টেনশন মুলক কিছু বলতে পারবেন না।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেয়ের বাবার সাথে কথা বলে রিলেশন গড়ে তুলুন।ছেলের বউকে ঘরে তোলার ব্যবস্থা করুন।তানা হলে আপনার ছেলের মেন্টাল সমস্যা দেখা দিবে।কারণ ভালোবাসা ও হৃদয় গঠিত ব্যাপার বলে কথা।
বিলকিছ বেগম ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ছেলেকে বাড়ি নিয়ে আসলেন।তারপর জিজ্ঞেস করলেন,
নয়ন শান্তা নামের মেয়েটি কে রে?
মা রিফাত ভাগিনার ছোট শালিকা।
তার সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?
মা আমি ওকে ভালোবাসি।তোমাকে না জানিয়ে আমি গোপনে বিয়ে করেছি।
আর এখন ও তোকে তালাক দিয়েছে এইতো?
বিশ্বাস কর মা শান্তা কখনো আমাকে তালাক দিতে পারে না।এটা ওর বাবার যড়যন্ত্র।নয়ন সত্যি বলছিসতো?
জ্বী হ্যাঁ মা সত্যি।
সে তোকে এখনো ভালোবাসে?
জ্বী হ্যাঁ মা বাসে।
সত্যি?
জ্বী মা সত্যি আর কতবার বলবো।
শুন নয়ন?
মা বলো।
আমি তোদের ভালোবাসা মেনে নিয়েছি।সেই সাথে আমার পুত্রবধুকেও। সে যদি সত্যি তোকে ভালোবেসে বিয়ে করে থাকে।তাহলে তুই যা বলবি তাতো সে শুনবে না কী?
জ্বী হ্যাঁ মা।
তাহলে আমার পুত্রবধুকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা কর।আমি তাকে সসম্মানে বরণ করবো।কারণ এটা শরীয়ত সম্মত ও জায়েজ।
মায়ের অর্ডার পাওয়া মাত্রই নয়ন ছুটে গেল শান্তার খোঁজে কলেজ প্রাঙ্গণে।কলেজ গেটের সামনে একটা দোকানে বসে আছে অধীর আগ্রহে বিষন্ন মনে।কলেজ ছুটি হলো,ছাত্র-ছাত্রীদের বহিরাগমন শুরু হলো।ছেলে মেয়েরা বের হচ্ছে,শান্তার সই রুমা কয়েকজন মেয়ের সঙ্গে বের হলো।শান্তা নেই,নয়ন এগিয়ে গিয়ে রুমাকে বলল,
“এক্সিউজ মি” আপনার পাঁচ মিনিট সময় হবে?
আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না?
আমি নয়ন রহমান।মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ার।
তো আমার কাছে কি চান?
সবার সামনে সবকথা বলা যায় না।প্লিজ আপনি একটু এদিকে আসুন।আমি সব বুঝিয়ে বলছি।
নয়ন রুমাকে ডেকে নিরিবিলি স্থানে নিয়ে গেল।তারপর বলল,
আপনার সই শান্তা কোথায় আছে বলতে পারবেন?
হ্যাঁ পারবো।
সত্যি করে বলুনতো কোথায় আছে?
আমি যতদূর জানি বাড়িতে আছে।তবে শুনেছি খুব অসুস্থ।
দেখতে যাননি?
যাব যাব ভাবছি।পড়ার চাপে যেতে পারিনি।
আচ্ছা একটা সত্য কথা বলবেন?
জ্বী বলুন।
শান্তার সাম্পর্কে এতকিছু জানার মানে কী?তাছাড়া ওর সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক?
শান্তা আমার ভালোবাসা।শুধু তাই নয়, কিছুদিন আগে আমরা গোপনে বিয়ে করেছি।
হোয়াট!সত্যি বলছেন?
হ্যাঁ সত্যি। শান্তা আমার বিয়ে করা বউ।
তো এখন সমস্যা কোথায়?
সমস্যা অনেক,জোর পূর্বক তার বাবা তালাক নামা সাইন করে আমার কাছে পাঠিয়েছে।
উফ!ঘটনাতো খুব সিরিয়াস।
তো আর বলছি কি।এখন আপনার সাহায্য দরকার।
আমি কি সাহায্য করতে পারি?
আমাদের দুজনের দেখা করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
দেখি চেষ্টা করে।
দেখি বললে হবে না।আপনাকে এক্ষণি ওদের বাসায় যেতে হবে।কারণ আমরা কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারবো না।দেহ থেকে প্রাণ যেমন আলাদা করা যায় না।তেমনি আমাদের একজনের কাছ থেকে অন্যজনকে কেউ আলাদা করতে পারবে না।আমি যেমন শান্তাকে ভালোবাসি,সেও তেমনি আমাকে ভালোবাসে।আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না।জানি না ও কেমন আছে?
বলতে না বলতে নয়নের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।নয়নের বিরহ কাতোরক্তি রুমা
সইতে পারলো না।বলল,
প্লিজ নয়ন ভাই কাঁদবেন না।আমি এক্ষণি যাচ্ছি শান্তার কাছে।
নয়নকে কোনমতে শান্ত করে রুমা ছুটে গেল শান্তাদের বাড়িতে।প্রথমে দেখা হলো শান্তার মায়ের সাথে।তাকে সালাম দিতে তিনি সালামের জবাব দিয়ে জানতে চাইলেন,
রুমা কখন এলে,কেমন আছ?
আলহামদুলিল্লাহ খালাম্মা ভালো আছি।এইমাত্র এলাম।শুনলাম শান্তা নাকি খুব অসুস্থ?
না রুমা তেমন কিছু না।ভালো আছে।
খালাম্মা শান্তা এখন কোথায়?
যাও ভিতরে আছে।
রুমা তাড়াহুড়া করে তার রুমে ঢুকে পড়লো।শান্তা চুপচাপ শুয়ে আছে। তার কোন সাড়া শব্দ নেই।রুমা শান্তা শান্তা বলতেই সে জেগে উঠল।তারদিকে তাকাতে মনে হলো প্রতিদিনের হাসিখুশি শান্তা আর হাসিখুশি নেই।চেহারায় ফ্যাকাসে ভাব,চোখের নিচে কালি,রুগ্ন রুগ্ন ভাব।এমন একটা হাসি খুশি প্রাণ বন্ত মেয়ে কদিনে কেমন রোগা হয়ে গেল।রুমা আফসোস করে বলল,
উহু!শান্তা তোর চেহারার একি হাল হয়েছে,নিজেকে এভাবে শেষ করে দেয়ার মানে কি?
দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে শান্তা উত্তর দিলো,
সই বেঁচে থেকে আর লাভ কি?
শান্তা তোকে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না।শক্ত হতে হবে।নয়ন ভাই আমাকে সব বলেছে।
সত্যি।
হ্যাঁ সত্যি।
ওহ কেমন আছেরে?
বলতে না বলতে শান্তার চোখে পানি এসে গেল।রুমা তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
প্লিজ সই কাঁদিস না।নয়ন ভাই তোর জন্য খুব কাঁদছে।তাছাড়া সে তোকে ছাড়া বাঁচবে না বলে দিয়েছে।
আর কি কি বলেছে?
আরও অনেক কথা বলেছে।এসব কথা এখন থাক।
কেঁদে কেঁদে শান্তা বলে,
রুমা আমিও নয়নকে ছাড়া বাঁচব নারে।
বোকা কাঁদলে ভালোবাসা জয়ী হয়?
রুমা কান্না ছাড়া আমার আর কিবা করার আছে।বাবা সব দুয়ার বন্ধ করে রেখেছে।তাছাড়া কিছুতে এ বিয়ে মেনে নেবেন না বলে দিয়েছেন।
তাহলে অভিনয় কর।
কিভাবে?
বলছি শুন,আন্টি আংকেলকে বলবি তুই ওকে ভুলে গেছিস।শুধু তাই নয়,ঘটা করে ওর খুব বদনাম করবি।ব্যস উনারা তোকে বিশ্বাস করে বন্ধ দুয়ার খুলে দেবে।তারপর নিয়মিত কলেজে যাতায়াত,অত:পর সুযোগ বুঝে নয়নের সঙ্গে পলায়ন…।
রুমার পরামর্শ শান্তার মনে আশার আলো সৃষ্টি করলো। শান্তা ম্লান হেসে বলল,
ভেরি থ্যাংকস রুমা, ভেরি থ্যাংকস।
শান্তা আমি এখন চলি।
রুমা খেয়ে যা।
না শান্তা বাড়ি গিয়ে খাব।সাবধান,অভিনয় কিন্তু ভালোভাবে করতে হবে।তবে ভালোবাসা পাশ,অন্যথায় ফেল।
চলি বাই বাই বাই।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

মূল কাঠামো চাও

ন্যায়বিচারের শাসন নীতি মূল কাঠামো চাও, সত্যের বিধান ধারকগণের সুযোগ তবে দাও। বিধান মতে রাজ কায়েমে দিলে সবাই মত, জাতি

আক্রোশ গন্ধ

আক্রোশ গন্ধ মোঃ রুহুল আমিন বঙ্গ দেশেই ছিল একটা স্বৈরাচারী রাজা, জনের দিতো নির্মম ভাবে কঠিনতম সাজা। শিকল বেড়ি ডান্ডা

মাথায় ঢালে ময়লা

মানব জীবন অতি ছোটো কর্ম গুণটা বড়ো, সুবাস ছড়াও ভালো কর্মে তেমন জীবন গড়ো। কর্মের দোষে দেহের থেকে পঁচা গন্ধ

বিকল্প নাই

আযান শুনে নামাজ পড়ো মুসলিম তুমি ভাই। ইসলামী ওই শাসন নীতির বিকল্প যে নাই। প্রভুর প্রতি একিন তোমার ঈমানের ওই

Leave a Reply