গল্প অসম প্রেম আফছানা খানম অথৈ

0

অসম প্রেম

আফছানা খানম অথৈ

আরমান লন্ডন থেকে উচ্চতর ডিগ্রী শেষ করে বাংলাদেশে ফিরেছে।বাবা আফজাল চৌধুরী একমাত্র ছেলের হাতে ব্যবসা বাণিজ্য বুঝিয়ে দিলেন।তিনি যে একেবারে ব্যবসার হাল ছেড়ে দিয়েছেন তানা, মাঝে মাঝে তিনিও অফিসে বসেন।আরমানের ইচ্ছা তাদের গ্রামের উন্নয়ন করবে, গ্রামে একটা ফ্যাক্টরী করবে,যাতে গ্রামের বেকার ছেলে-মেয়েরা কাজের সুযোগ পায়।এতে বাবা আফজাল চৌধুরী সাপোর্ট করেন এবং ছেলেকে গ্রামে পাঠানোর বন্দোবস্ত করেন।আরমানের অনেক বছর পর গ্রামে আসা।সেই ছোট বেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে একবার গ্রামে এসেছিল।আজ এত বছর পর আবার আসা।তাকে দেখে তার আত্নীয়-স্বজন’রা খুব খুশি।আরমান সবাইকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে দেখল।পছন্দ মতো কিছু জায়গা ন্যায্য দামে কিনে নিলো।ফ্যাক্টরী উদ্ভোধন করে ফেরার পথে সে শুনতে পেল একটা মেয়েলি কণ্ঠে গাওয়া একটা নজরুল সংগীত,
পথ ও চলিতে কভু চৌকিতে
তবু দেখা হয় পরানও প্রিয়।
…………………………………..।
আরমান যদিও বিদেশ থেকে ডিগ্রী অর্জন করেছে তবুও বাঙালি কৃষ্টিকালচার্ড পছন্দ,বাংলা গান,বাংলা ভাষা,বাংলা সংস্কৃতি এসব তার খুব পছন্দ।তাই সে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছে বাঙালি জাতির ভাগ্য উন্নয়নের জন্য।এই গ্রামে এমন মধুর কণ্ঠ কে গাইছে গান তা শুনার জন্য সে থমকে দাঁড়ালো,গানের সুর ফলো করে আস্তে আস্তে এগিয়ে চলল।
হুম! একি দেখল এক অপরুপ রুপসী মেয়ে পুকুর পাড়ের গাছ তলাতে বসে বসে আপন নিয়মে গান গেয়ে চলেছে।ঢোল সানাই,তবলা,হারমোনিয়াম কিছুই নেই তবুও যেন অসম গাইছে।আরমান কোনকিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার গান শুনছে।মেয়েটি গান গাওয়া শেষ উঠে দাঁড়ালো,তখনি আরমান বলল,
অপূর্ব আপনার কণ্ঠ।থ্যাংকস।
মেয়েটি চমকে উঠে বলল,
আপনি কে?আর এখানে বা কি চান?
আপনি ভয় পাবেন না।আমি পরিচয় দিচ্ছি।আমি চৌধুরী বাড়ির নাতি আরমান চৌধুরী।শহর থেকে এসেছি গ্রামে একটা ফ্যাক্টরী করবো।ফ্যাক্টরী উদ্ভোধন করে ফেরার পথে আপনার মধুর কণ্ঠ শুনে থমকে দাঁড়ালাম।আপনার নাম?
আমি লীজা।
কিসে পড়েন?
অনার্স ফাস্ট ইয়ার।
আপনাদের ফ্যামিলিতে আর কে কে আছে?
আমার ছোট ভাই আর মা-বাবা।
আপনার বাবা কি করেন?
আমার বাবা একজন টেক্সির ড্রাইভার।
ওকে ভালো থাকবেন।চলি আবার দেখা হবে।
আরমান লীজার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরে আসল।তারপর লীজাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলো।পরদিন সকাল বেলা আরমান লীজাদের বাড়িতে গেল।লীজার বাবা গরীব হলেও ছোট-খাটো বাড়িটা খুব সুন্দর করে গাছে গাছে সাজানো গোছানো, পরিপাটি করে রেখেছেন।ঘরের সামনে ছোট্ট একটা ফুলের বাগান।লীজা লাগিয়েছে এই ফুলের গাছগুলো।সে ফুল গাছের খুব যত্ন করে রোজ সকালে পানি দেয়।আজ ও প্রতিদিনের মতো ফুল গাছে পানি দিচ্ছে লীজা।ঠিক তখনি আরমান তার কাছা কাছি গিয়ে বলল,
হাই গুড মর্নিং লীজা।
লীজা ফের রিপ্লে দিলো,
গুড মর্নিং।আপনি এই সাজ সকালে গরীবের বাড়িতে,?
লীজা এমনভাবে কথা বলছ, মনে হয় গরীব’রা মানুষ না?
ঠিক আছে আর পাম মারতে হবে না।এখন বলুন কেন এসেছেন?
তোমার মধুর কণ্ঠে গান শুনতে এসেছি।শুনাওনা একটা গান?
আরমান সাহেব কথা না বাড়িয়ে চলে যান,এটা গ্রামের পরিবেশ, লোকে দেখলে বদনাম রটে যাবে।
লীজা আমি চলে যাব তবে যাবার আগে একটা সত্য কথা বলে যেতে চাই।
বলুন কি বলবেন?
আমি তোমাকে ভালোবাসি।যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে আমি তোমাকে এক্ষণি বিয়ে করতে চাই।
কি বললেন আরমান সাহেব,চৌধুরী বংশের ছেলে হয়ে ড্রাইভারের মেয়েকে ভালোবাসেন, বিয়ে করবেন আজবতো?
লীজা আজব নয়,সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আরমান সাহেব ভালোবাসা বাজারের পন্য নয়,যে চাইলে পাওয়া যায়।
তা অবশ্য ঠিক বলেছ।তবে সত্যিকারের ভালোবাসা এখনো আছে।
আরমান সাহেব এসব নাটক মুভিতে শোভা পায়,বাস্তবে নয়।
লীজা আমি তোমাকে বিয়ে করে প্রমাণ করবো,এটা সম্পূর্ণ সত্য এবং বাস্তব।
তাদের কথা কাটাকাটির মাঝে উপস্থিত হলো লীজার বাবা শরিফুল ইসলাম।তিনি এগিয়ে এসে বললেন,
লীজা মা মনি কার সঙ্গে কথা বলছিস?
লীজা উত্তর না দিতে আরমান লীজার বাবাকে সম্মানের সহিত সালাম দিয়ে পরিচয় দিলেন।লীজার বাবাতো অবাক চৌধুরী বাড়ির নাতি তার মতো একজন ড্রাইভারের বাড়িতে।তিনি ভদ্রতার সহিত তাকে ঘরে নিয়ে বসতে দিলেন।তারপর বললেন,
লীজা মা মনি আরমান সাহেবের জন্য চা নাস্তা নিয়ে এসো।
জ্বী বাবা আনছি।
চা খেতে খেতে আরমান চৌধুরী বলল,
আংকেল আমি একটা কথা বলতে চাই।যদি অনুমতি দেন?
লীজার বাবা হেসে উঠে বলল,
এতে অনুমতির কি আছে যা বলার নিসংকোচে বলুন।গাড়ি লাগবে, কোথাও যাবেন?
জ্বী না আংকেল এসব কিছু না।আমি আপনার….।
আপনার কি থামলেন কেনো বলুন?
আংকেল সত্য কথা বলতে কি আপনার মেয়েকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।
কি বললে,চৌধুরী বংশের ছেলে হয়ে ড্রাইভারের মেয়েকে বিয়ে,মসকারা করলে মনে হয়।তাছাড়া আপনার বাবা-মা কি কখনো এ বিয়ে মেনে নেবে?
আংকেল তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।সেদিক আমি সামলাব।আপনি বিয়ের ব্যবস্থা করুন।
লীজার বাবা প্রথমে রাজী না হলেও পরে ঠিক রাজী হয়ে গেল।লীজা আরমানের বিয়ে দিয়ে দিলো।
আরমান লীজাকে নিয়ে শহরে মা-বাবার কাছে ফিরে আসল।আরমানের সঙ্গে অপরিচিত মেয়ে তাও আবার বউ বেশে দৃশ্যটা আফজাল চৌধুরীর চোখে পড়তে তিনি কড়া ভাষায় জিজ্ঞেস করলেন,
আরমান তোমার সঙ্গে এই মেয়ে কে?
আরমান নির্ভয়ে উত্তর দিলো,
আমার স্ত্রী।
জানা নেই,শুনা নেই হঠাৎ করে স্ত্রী বলাতে আফজাল চৌধুরীর মেজাজ হাইতে উঠে গেল।তিনি কড়া চোখে তাকিয়ে বললেন,
আরমান কি বলছ, তোমার মাথা ঠিক আছেতো? তুমি বিয়ে করলে কখন?
বাবা আমার মাথা ঠিক আছে।আমি বিয়ে করেছি গতকাল।
মেয়ের ফ্যামিলি স্ট্যাটার্স,বংশ মর্যদা কেমন?
বাবা ওর বাবা একজন টেক্সির ড্রাইভার।
কি বললে তুমি চৌধুরী বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী হয়ে তুমি টেক্সির ড্রাইভারের মেয়েকে বিয়ে করলে?লজ্জা করলো না তোমার, আমার মুখের উপর এ কথাটা বলতে?
জ্বী না বাবা আমি বিয়ে করেছি,পাপ তো করেনি।লজ্জা করবে কেনো?
আফজাল চৌধুরী খিলখিল করে হেসে উঠে বলল,
আরমান এসব আলতু ফালতু মেয়েদের আবার বিয়ে কিসের,এসব মেয়েদের নিয়ে রং তামাসা করা যায়,সময় কাটানো যায়।কিন্তু বিয়ে করা যায় না।না জেনে না হয় ভুল করেছ এবার শুধরে নাও।ওকে তার বাবার কাছে দিয়ে এসো।
সরি বাবা আমি তোমার প্রস্তাবে রাজী হতে পারলাম না।
কেনো কেনো?
কারণ লীজা আমার বিবাহিতা স্ত্রী।তাছাড়া নিজের স্ত্রীকে কেউ কখনো পেলে দিতে পারে না।তুমি কি পারবে তোমার স্ত্রীকে পেলে দিতে?আদৌ না।তাহলে আমাকে বলছ কেনো?
কি বেয়াদব ছেলে বলে কিনা তার মাকে পেলে দিতে।
বাবা আমি ঠিক তাই বলিনি।জাস্ট একটা উদাহরণ দেখিয়েছি।
আরমান আমার মেজাজ এমনিতে হাইতে উঠে গেছে।আর কথা না বাড়িয়ে ওকে যেখান থেকে এনেছ সেখানে দিয়ে আস।
জ্বী না বাবা লীজা এখানে, এ বাসায় আমার সঙ্গে থাকবে।
বাবার কথার উপর কথা বলে আরমান লীজার হাত ধরে টেনে টেনে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে।ঠিক তখনি আফজাল চৌধুরী বলল,
স্টপ আরমান আর এক পাও সামনে এগুবে না।
কেনো বাবা?
আমার মান সম্মান ক্ষুন্ন করে টেক্সির ড্রাইভারের মেয়েকে এ বাড়িতে জায়গা দিতে পারবো না।ছোট জাতের মেয়েরা এমন হয়,এরা টাকার জন্য এসব করে।কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করে দাও।
স্টপ বাবা আমার স্ত্রীর সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা বলবে না।আমি ওকে ভালোবাসি।দেহ থেকে প্রাণ যেমন আলাদা করা যায় না,তেমনি লীজাকেও আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না।লীজা আমার প্রেম,লীজা আমার ভালোবাসা।বাবা এরপর ও যদি তুমি ফোর্স কর তোমার ছেলেকে হারাবে।
আরমান আমিও শেষ বারের মতো বলে দিচ্ছি, যদি এ টেক্সির ড্রাইভারের মেয়েকে ত্যাগ না কর,আমি তোমাকে ত্যাগ করবো এবং সকল সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবো।
ঠিক আছে বাবা তাই কর।তবুও আমি আমার ভালোবাসার লীজাকে ত্যাগ করতে পারবো না।কারণ আমি আল্লাহ পাকের বিধানের নিয়ম অনুযায়ী লীজাকে বিয়ে করেছি।বিনা অপরাধে কারো মন ভাঙলে কঠিন পাপেরর অংশীদার হতে হবে।আমি নিষ্পাপ লীজার উপর এত বড় অবিচার করে কঠিন পাপের অংশীদার হতে পারবো না।বাবা তুমি থাক তোমার সম্পদ নিয়ে, আমি চললাম আমার ভালোবাসার লীজাকে নিয়ে,দেখি কে কত সুখী হয়?
আরমান লীজাকে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলল।পেছন থেকে মা কেঁদে উঠে ডাক দেয়,
আরমান যাসনে বাবা তোর বাবা রাগ করে এসব কথা বলেছে,ফিরে আয় বাবা।
আরমান মায়ের ডাকে পেছন ফিরে তাকাল।তখনি আফজাল চৌধুরী বলল,
স্টপ আর কখনো এ অপদার্থ কুলাঙ্গার ছেলের নাম মুখে আনবে না।ভিতরে এসো।বউকে টেনে হেঁচড়ে ভিতরে এনে দরজায় খিল লাগিয়ে দিলো আফজাল চৌধুরী।
এদিকে আরমান তার বউকে নিয়ে তার এক বন্ধুর বাসায় উঠল।তার দু:খের সবকথা বলল।সবকথা শুনার পর বন্ধু বলল,
ঠিক আছে দোস্ত যতদিন চাকরী না হবে,ততদিন তুই আমার বাসায় থাকবি।
ওকে,দোস্ত তোর ঋন আমি কোনদিন শোধ করতে পারবো না।যেখানে আপন লোকেরা তাড়িয়ে দিয়েছে, সেখানে তুই আমাকে আশ্র‍য় দিয়েছিস।
দোস্ত এসব কথা এখন থাক।আগে চাকরী তারপর বাকী কথা।
আরমান প্রথমে চাকরীর জন্য গেল তার বাবার বন্ধু রাফসান চৌধুরীর অফিসে।তাকে দেখা মাত্রই তিনি বললেন,
আরমান তুমি বস বস।কি খাবে ,চা না কফি?
আংকেল আমি চা কফি কিছুই খাব না।আমি এসেছি একটা চাকরীর জন্য।
হোয়াট!তুমি চাকরী করবে?
জ্বী আংকেল।আমার চাকরীর খুব প্রয়োজন।প্লিজ আমাকে একটা চাকরী দিন।
ওকে শান্ত হও।
ঠিক তখনি আফজাল চৌধুরী টেলিফোন করলো।ক্রিং ক্রিং শব্দ বাজতেই রাফসান চৌধুরী রিসিভার কানে তুলতেই আফজাল চৌধুরী বলল,
হ্যালো বন্ধু কি খবর?
ভালো।তবে একটা দু:সংবাদ আছে।
বলীস কী!দুসংবাদ আমাকে আগে বলীস নি কেন?বল কি হয়েছে,আমাকে কি করতে হবে?
তোকে তেমন কিছু করতে হবে না।শুধু ছোট্ট একটা কাজ করতে হবে।
বল কি করতে হবে?
আরমান একটা ফালতু মেয়ের প্রেমে পড়ে অভিমান করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে।টাকা ছাড়া জীবন চলে না এটাই নিয়ম।সে চাকরীর জন্য হয়তো তোর কাছে যাবে।তুই তো চাকরী দিবি না।বরং বন্ধু মহলের সবাইকে বলে দিবি তাকে চাকরী না দেয়ার জন্য।এটা হলো তাকে ফিরিয়ে আনার ছোট্ট একটা প্ল্যান।যখন কোথাও চাকরী পাবে না, টাকা পাবে না,অর্ধাহারে অনাহারে জীবন কাটাবে তখন এসব ফালতু প্রেম আর মনে থাকবে না।ঠিক বাবা-মায়ের মহলে ফিরে আসবে।
ওকে বন্ধু তাই হবে।এখন রাখি।
রিসিভার রেখে রাফসান চৌধুরী বলল,
সরি আরমান আমি তোমাকে চাকরী দিতে পারলাম না।ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও।
আংকেল আর কিচ্ছু বলেতে হবে না।বাবা কি বলেছে আমি সব শুনেছি।তবে একটা কথা মনে রাখবেন,আমার প্রেম ফালতু নয়, খাটি।বাবা আমার প্রেম মেনে না নেয়া পর্যন্ত আমি মহলে ফিরে যাব না।আমি যত কষ্ট করি তবুও না।চলি আংকেল।
এরপর গেল সে তার বাবার আরেক বন্ধুর অফিসে।তিনি ও কায়দা করে পোস্ট খালী নেই বলে আরমানকে ফিরিয়ে দিলো।তবুও আরমান থেমে নেই একেক দিন একেক অফিসে চাকরীর জন্য ধর্ণা ধরছে।পরিচিত জনেরা তার বাবার ভয়ে চাকরী দিচ্ছে না।আর অপরিচিত জনেরা পোস্ট খালী নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে লীজা প্রেগন্যান্ট তার খরচ পাতি লাগবে,তাছাড়া আর কতদিন বন্ধুর বোঝা হয়ে থাকবে।এসব ভাবনা তাকে খুব টেনশন করে তুলল।ষ্টেশনের এক কোনে একাএকা বসে চোখ মুখ বন্ধ করে খুব ভাবছে।তার দিকে দৃষ্টি পড়লো এক সি এন সি ড্রাইভারের, সে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
ভাইজান আপনার কি হয়েছে,অনেক্ষণ ধরে দেখছি আপনি একাএকা চুপচাপ বসে আছেন।কি হয়েছে ভাইজান কথা বলছেন না কেনো?
এমনিভাবে কয়েকবার লোকটি আরমান চৌধুরীকে ডাকল।অনেক ডাকাডাকির পর আরমান সম্বিত ফিরে পেল।তারপর বলল,
ভাই আমাকে কিছু বলছেন?
জ্বী ভাইজান।
বলুন কি বলবেন?
আপনার কি হয়েছে,অনেক্ষণ ধরে দেখছি বসে আছেন।কোন বিপদ-আপদ নয়তো?
আপনি শুনে কি করবেন?
ভাই বলে দেখুন না,কিছু করতে ওতো পারি।
লোকটির কথা শুনে আরমান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল ঘটনা প্রকাশ করলো।তারপর লোকটি বলল,
ভাইজান আপনার কথা শুনে মনে হলো আপনি খুব বিপদে আছেন।এই মুহূর্তে তো আর চাকরী পাবেন না আপাতত এক কাজ করেন।
বলুন ভাই কি কাজ?
আপনি সি এন সি চালাইতে পারেন?
হুম পারি।
তাহলে আমার সঙ্গে চলুন মালীককে বলে আপনাকে একটা গাড়ি নিয়ে দেব।কি চালাইতে পারবেন না?
হুম পারবো ভাই,চলো।
লোকটি মালীককে বললে,সে আরমানকে একটা সি এন সি ভাড়া চালাইতে দিলো।
যাক প্রথম দিনের পরিশ্রমের টাকায় আরমান বাজার সদাই করে বাসায় ফিরে আসল।লীজা স্বামীর হাতে বাজার সদাই দেখে জিজ্ঞেস করলো,
আরমান এত্ত সদাই, টাকা পেলে কোথায়?
আরমান সি এন সি চালাচ্ছে একথা শুনলে লীজার মন খারাপ হবে তাই হাসি মুখে উত্তর দিলো,
লীজা আর কোন টেনশন নয়,আমি চাকরী পেয়েছি,আমাদের আর কোন অভাব থাকবে না।
সত্যি বলছতো?
হুম বউ সত্যি?
আরমান লীজার সংসারে মোটামুটি স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আসতে শুরু করেছে।আরমান এবার বন্ধুর বাসা ছেড়ে আলাদা ফ্যামিলি বাসা ভাড়া নিয়েছে।লীজা আরমান অট্টালিকায় না থাকলেও তাদের মাঝে আছে অনেক মিল মহব্বত।প্রেম ভালোবাসা যেন উপছে পড়ছে।তাদের মাঝে নেই কোন দ্বন্ধ,হিংসা,হ্রেষাহ্রেষি ঘেষাঘেষি,অমিল।তারা খুব হ্যাপি।লীজা মা হতে চলেছে।আরমান শত ব্যস্ততার পরও তার বেবি যাতে ছহিছালামতে এই পৃথিবীতে আসতে পারে তারজন্য বউ’র খুব টেককেয়ার করে চলেছে।লীজা একটু অসুস্থ হলে সে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়,নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ায়।একদিন লীজা তার স্বামীকে বলল,
আরমান তোমার মতো স্বামী পেয়ে আমি খুবই ধন্য।আমার মনে হয় আমি পৃথিবীর সেরা সুখী রমনী।
আরমান লীজাকে বাহুডোরে বেঁধে আদর করতে করতে বলল,
লীজা তোমার মতো বউ পেয়ে আমিও ধন্য।আমার ও মনে হয় আমি পৃথিবীর সেরা সুখী পুরুষ।
এমনি ভালোবাসার মাঝে কেটে গেল তিন চার মাস।একদিন সি এন সি চালানো অবস্থায় আফজাল চৌধুরী তার ছেলেকে দেখে।চৌধুরী বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী সি এন সি চালাচ্ছে এটাকি সহ্য করা যায়।তার মেজাজ হাইতে উঠে গেল।তিনি বলেন,
এই ফালতু ফুটপাতের একটা মেয়ের জন্য আমার ছেলের আজ এই অবস্থা,সি এন সি চালাচ্ছে, আমার মান সম্মান বলে কিছু আর থাকল না।এই মেয়েকে আমি চিরদিনের জন্য দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেব।
তিনি আর দেরী করলেন না।তার লাইসেন্স করা বন্ধুকটা হাতে করে তার সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।ঘরের দরজায় নক করতে লীজা ভেবেছিল আরমান এসেছে, তাই দরজা খুলে দিলো।কিন্তু আরমানের পরিবর্তে সে একি দেখল, এক দল মুখোশ ধারী লোক হাতে বন্ধুক। লীজার দিকে বন্ধুক তাক করলো।তখনি লীজা কেঁদে কেঁদে বলল,
আপনারা কারা,আমাকে মারবেন না।আমি একা নয়,আমার গর্ভে আমার স্বামীর বংশধর।ওকে আপনারা খুন করবেন না।আমার সন্তানের প্রাণ ভিক্ষা দিন।
এমনিভাবে কেঁদে কেঁদে বুক সে প্রাণ ভিক্ষা চাইছে।তার কান্নার শব্দ আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কাঁপছে তবুও পাষণ্ড আফজাল চৌধুরীর দিল নরম হলো না।তিনি বন্ধুক ফায়ার করলেন।বুলেট বেরিয়ে লীজার বক্ক ভেদ করলো।লীজা লুটিয়ে পড়ে কেঁদে কেঁদে বলে,
ওগো তুমি কোথায়,তাড়াতাড়ি এসো।তোমার সন্তানকে ওরা খুন করে ফেলছে।ওকে বাঁচাও,বাঁচাও।
ঠিক তখনি ছুটে আসল আরমান।স্ত্রী সন্তানকে বাঁচাতে ছুটে গেল,জড়িয়ে ধরল লীজাকে।আফজাল চৌধুরী লীজার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য আবার গুলি ফায়ার করলো।ভাগ্যচক্রে সেই বুলেট আরমানের বক্ক ভেদ করলো।আরমান ও লুটিয়ে পড়ে গেল।দুজনের রক্তের স্রোত বয়ে চলল।আফজাল চৌধুরী আর থেমে থাকতে পারলো না।মুখোশ খুলে চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলল,
এ আমি কি করলাম নিজের হাতে নিজের ছেলেকে খুন করলাম।
আরমান আফজাল চৌধুরীকে দেখে বলল,
বাবা তুমি এত নিষ্ঠুর হতে পারলে,নিজের হাতে নিজের সন্তানকে খুন করতে পারলে?
আরমান বাবা আমি তোকে খুন করতে আসেনি।আমি লীজাকে খুন করতে এসেছি।
উহু!বাবা সেটাতো আর ও জঘন্য। আল্লাহপাক কখনো আন্যায় বরদাস্ত করেন না।একটা প্রবাদ আছে না।অন্যের জন্য ফাঁদ পাতলে সেই ফাঁদে নিজেকে পড়তে হয়।আজ তা সত্যে পরিণত হলো। অন্যের সন্তানকে খুন করতে এসে, নিজের হাতে নিজের সন্তানকে খুন করতে হলো। এটা তোমার অন্যায়ের ফল।যাক বাবা ভালোই করেছ আমাদের দুজনকে এক সঙ্গে খুন করে।কারণ লীজাকে ছাড়া আমি বাঁচতাম না।আমাদের “অসম প্রেম’র” গভীরতা যে কত ব্যাপক তা তুমি বুঝবে না।বিত্তভৈবব ও বিত্তবাসনা তোমাকে অমানুষে পরিণত করে ফেলেছে বাবা।তাই তুমি এত জঘন্য কাজ করতে পারলে।আমায় মাফ…করে…. দিও….বাবা….।
মায়ের দিকে খেয়াল রেখো।
মুহূর্তে দুটো প্রাণ নিস্তেজ হয়ে গেল।পুলিশ খুনের অপরাধে আফজাল চৌধুরীকে ধরে নিয়ে গেল।লীজা ও আরমানের লাশ পোস্ট মর্টেম ছাড়া দাফন করা হলো।
ঃ সমাপ্তঃ


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্পঃ অনুপমার চোখে ১

গল্পঃ অনুপমার চোখে লেখকঃ বকুল রায় Part 01 ঢাকার ব্যস্ত সড়কগুলো আমার কাছে সবসময় যেন এক রঙিন ক্যানভাস। ছোটবেলা থেকে

গল্প সুদ আফছানা খানম অথৈ

গল্প সুদ আফছানা খানম অথৈ এক ব্যবসায়ী বিপদে পড়ে এক ইহুদীর কাছ থেকে সুদের উপর কিছু টাকা কর্জ নিলেন।কথা ছিল

গল্প বখাটে আফছানা খানম অথৈ

বখাটে আফছানা খানম অথৈ ফরিদা সবেমাত্র ইন্টারমিডিয়েট এ ভর্তি হয়েছে।রীতিমতো ক্লাস করছে।ইতোমধ্যে অনেকের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছে।কলেজ লেভেলে পা দিলে

দারোগা বাড়ি (মো.রিমেল)

দারোগা বাড়ি প্রথম পর্ব মো.রিমেল বাড়ি থেকেঅ র্জুন,নিলয়দের আওয়াজ শোনা গেল।নিজেকে রুখতে পারলাম না।দ্রুত একটা গেঞ্জি আর হাফ-প্যান্ট পরে বেরিয়ে

Leave a Reply