এক মেয়ে দু’স্বামী
আফছানা খানম অথৈ
মীম বি এ প্রথম বর্ষের ছাত্রী।তেমন একটা সুন্দরী না,আবার একেবারে খারাপ ও না।গায়ের রং শ্যামলা সিমচাম বডি,হালকা পাতলা,মোটামুটি ভালো।একদিন বাস ষ্টেশনে দেখা হয় রাতুল’র সঙ্গে।রাতুল একই কলেজে পড়ে বি এ ফাইনাল ইয়ারে।কিছু সময়ের মধ্যে দুজনের মাঝে আলাপ পরিচয় হয়।ইতিমধ্যে দুজনের কন্টাক নাম্বার একে অপরের মোবাইলে সেভ করে নেয়া হয়।এরপর দুজনের মাঝে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।রাত জেগে ফোনালাপনের মাঝে কথার ঝাপি খুলে বসেন দুজন।রাত শেষ হয়ে যায় তবুও তাদের কথা শেষ হয় না।শুধু তাই নয় প্রায় সময় দুজন গোপন অভিসারে দেখা সাক্ষাত করেন।দুজন দুজনের প্রেমে একেবারে পাগল।রাতুলের ফাইনাল এক্সাম শেষ।একদিন রাতুল বলল,
জান একটা কথা বলব?
হুম বল।
আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
বারে আমি কী হারিয়ে যাচ্ছি।
যদি কখনো হারিয়ে যাও।তাই বলছিলাম…।
কী বলছিলে থামলে কেনো বলো…।
চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।
মীম হা হা হো হো করে হেসে উঠল।
তার হাসি দেখে রাতুল রাগে লাল হয়ে বলল,
হাসছ কেনো,আমি কী হাসির কথা বলেছি।
তা নয়তো কী।স্টাবলিস্ট না হয়ে কেউ বিয়ে করে।
তা অবশ্যই ঠিক।কিন্তু ততদিনে যদি অন্য জনের সঙ্গে তোমার বিয়ে হয়ে যাই।
তা অবশই ঠিক।কিন্তু এ অবস্থায় বিয়ে করা কী ঠিক হবে।
ঠিক বেঠিক বুঝি না।আমি তোমাকে ভালোবাসি,তাই তোমাকে বিয়ে করতে চাই।আর কথা না বাড়িয়ে চলো কাজি অফিসে।
মীম আর বাড়াবাড়ি না করে রাতুলের সঙ্গে কাজী অফিসে গেল।রীতিনীতি অনুযায়ী তারা বিয়ের কাজ শেষ করে স্ব স্ব বাসায় ফিরে গেল।বিয়ের ব্যাপারটা পরিবারের কাছে দুজনে গোপন রাখল।কিন্তুু দেখা সাক্ষাত বন্ধ নেই।দুজন গোপন অভিসারে মিলিত হয় নিয়মিত।এর ফাঁকে কেটে গেল বছর খানেক।মীম’র বি এ ফাইনাল এক্সাম শেষ হলো।বিয়ের জন্য বাবা-মা তোড়জোড় শুরু করে দিলেন।ঘটক ডেকে পাত্র দেখতে বললেন।বলতে না বলতে ঘটক পছন্দ মতো একটা পাত্রের সন্ধান দিলেন।মীম’র বাবা আমির হোসেন পাত্রের খোঁজ খবর নিয়ে ঘটককে পাকা কথা দিয়ে দিলেন।শুধু তাই নয় বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করলেন।মীম কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে কোন অভিযোগ তুলল না।রাতুলকেও এই ব্যাপারে কিছু জানাল না।নির্দিষ্ট সময়ে বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো।বর মজলিসে আসন পেতে বসল।বিয়ে পড়ানো শেষ,শুধু খাওয়া বাকী।এমন সময় উপস্থিত হলো মীম’র স্বামী রাতুল আহমেদ।সে এসে বরকে উদ্দেশ্য করে বলল,
এই আপনি আমার বউকে বিয়ে করলেন কেনো?
বর চমকে উঠে বলল,
কে আপনার বউ?
কে আবার মীম।
আজবতো এসব কী বলছেন?
ঠিক বলেছি,ভালো চান তো আসন ছেড়ে যান তা না হলে পুলিশ কেচ খাবেন।
রাতুলের কথা শুনে ভরা মজলিসের মানুষ থবনে হারিয়ে গেল।কারো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।সবাই মনোযোগ সহকারে রাতুলের কথা শুনছে।এমন সময় মীম’র বাবা এসে বলল,
এই ছেলে তোমার মাথা ঠিক আছেতো?
জ্বি আব্বাজান ঠিক আছে।
মীম’র বাবা দাম্ভিক ও বদ মেজাজি।তাই আব্বাজান কথাটা শুনা মাত্রই উনার মেজাজ বিগড়ে গেল।তিনি রুক্ক ভাষায় বললেন,
এই ছেলে তুমি কি বলছ তুমি বুঝতে পারছ?
জ্বি আব্বাজান, আমি যা বলেছি বুঝে বলেছি।মীম আমার স্ত্রী আমি মীম’র স্বামী।আমি মীমকে নিয়ে যেতে চাই।
কী বললে তুমি, আর একটা কথা বললে আমি তোমাকে পুলিশে দেব।
আব্বাজান পুলিশের ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই।কাগজ পত্রে মীম আমার স্ত্রী।মীমকে আমার হাতে তুলে দিন।তানা হলে অপমানিত হবেন।
মীম’র বাবা রাগে আগুন হয়ে রাতুলকে মারতে ছুটে গেল।তখনি বিয়ের মজলিসের লোকজন তাকে ধরে ফেললেন এবং পরিবেশ নিয়ন্ত্রনে আনলেন।তারপর মৌলবি সাহেব বললেন,
এই ছেলে মীম যে তোমার স্ত্রী তার কি প্রমাণ আছে?
রাতুল বলল,
মৌলবি সাহেব অনেক প্রমাণ আছে।
দেখাও দেখি।
তখনি রাতুল বিয়ের কাবিন নামা ও বিয়ের কিছু ছবি সবার সামনে এগিয়ে দিলো।ভরা মজলিসের সবাই তা দেখে বলল,
ছিঃ আমির সাহেব ছিঃ বিবাহিতা মেয়েকে আবার বিয়ে দিচ্ছেন।
তখনি মীম’র বাবা বলল,
এই ফালতু ছেলের কথা আপনারা বিশ্বাস করবেন না।বর্তমান ডিজিটাল যুগে কম্পিউটারে এমন হাজারো ছবি বানানো যাই।এটা হচ্ছে ফালতু ছেলেদের প্ল্যান,মেয়েদের নামে বদনাম রটিয়ে টাকা কামানোর ধান্ধা।আপনারা সবাই বসেন।আমি আমার মেয়েকে জিজ্ঞাসা করে আসি।
মীম বাবার ভয়ে আতঙ্ক।বাবা এসে পাশে বসলেন।তারপর কড়া ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
মীম রাতুলের সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?
কোন দ্বিধা দ্বন্ধ ছাড়া মীম এক কথায় উত্তর দিলো,
বাবা ওর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।ও যা বলেছ সব মিথ্যে বলেছে।
তখনি মীম’র বাবা বলল,
আমি বলেছি না ও যা বলেছে মিথ্যে বলেছে।ওর সাথে আমার মেয়ের কোন সম্পর্ক নেই।
তখনি মৌলবি সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সবাই বলল,
আমির সাহেব ওকে পুলিশে দিন।তানা হলে ফালতু ছেলের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাবে।
মীম’র বাবা আর দেরী করলো না।ইভটিজিংর মামলায় ফাঁসাল রাতুলকে।তারপর পুলিশ সুপারের হাতে তুলে দিলো।
এর ফাঁকে বিয়ের কার্যক্রম শেষ হলো।মীম বউ সেজে স্বামীর বাড়িতে চলে গেল।কিন্তু লোকজনের কানাঘুষা শেষ হলো না।আত্মীয়-স্বজন ছাড়া সবাই বলাবলি করছে কি কলির যুগ আইল “এক মেয়ে দুস্বামী”।আমির হোসেন শত চেষ্টা করেও ঘটনাটা ধাপা চাপা দিতে পারলো না।কারণ সত্যে কোন দিন চাপা থাকে না।
ঃসমাপ্তঃ