গল্প কন্যা সন্তানের জন্য মা দায়ী নয় আফছানা খানম অথৈ

0

কন্যা সন্তানের জন্য মা দায়ী নয়

আফছানা খানম অথৈ

ময়না সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বয়স চৌদ্দ পনেরো হবে, খুব সুন্দরী ও বটে। তার পিছে পিছে ঘুরে ডজন খানেক বখাটে। সুন্দরী মেয়েদের সেইফ রাখা খুব রিক্স।বড় লোক হোক আর গরীব হোক।বড় লোকদের বেলায় দু’এক ক্ষেত্রে টাকা পয়সা দিয়ে কিছুটা ম্যানেজ করতে পারলে ও গরীবের বেলায় তা মোটেও সম্ভব নয়। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদেরকে, কেচ মামলা করার টাকা কই?তাই প্রায় ইভটিজিং’র শিকার হতে হয়, গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদেরকে। শুধু যে ইভটিজিং’র শিকার হয় তা নয়। বাবা মাকে বেঁধে রেখে তাদের সামনে ধর্ষণ করে মেয়েদের। চেয়ে চেয়ে দেখা আর চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার নেই তাদের। আর ও অহরহ ঘটনা ঘটে প্রতিনিয়ত। ধর্ষণ করে মেরে রেল লাইনে ফেলে দেয়ার ঘটনা ও প্রায়ই চোখে পড়ে। হায়রে পুরুষ জাতি কোথায় গেল তাদের বিবেক? কোথায় গেল তাদের মানবতা বোধ?মনে হয় তাদের ঘরে কোন মা বোন নেই। আর বিচার চাইতে গেলে উল্টো রিয়েকশন। কারণ তাদের পক্ষের কেউ না কেউ এই দলের।

এই জন্য অসহায় পিতা মাতা বাধ্য হয়ে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেন। নর পশুদের হাত থেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় বিয়ে। তাই গরীব কৃষক সোলায়মান ময়নাকে বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।এদিকে ময়নার সঙ্গে ভাব করার জন্য তার পিছনে ঘুর ঘুর করে, পাশের গ্রামের ছেলে সুজন।কিন্তু ময়না কোন পাত্তাই দিচ্ছেনা।এক পর্যায়ে সুজন বলে ও ফেলেছে,
ময়না তোকে আমি অনেক ভালোবাসি। তুই আমার দুই চোখের ঘুম হারাম করে দিয়েছিস। তোর রুপে আমি মগ্ন। তোকে আমি বিয়ে করব। যেমন করে হোক।
ময়না কোন কথার জবাব না দিয়ে বাড়ি ফিরে আসল। এদিকে দু’চারটা বিয়ের প্রস্তাব তার জন্য এসেও গেল। পাত্র পছন্দ কিন্তু সমস্যা একটা মোটা এমাউন্ট ডিমান্ড। কৃষক সোলায়মান’র পক্ষে এক সঙ্গে এত টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। তবুও মেয়েকে সেইফে রাখতে হলে পাত্রস্থ করতে তো হবে। বর্তমান যুগে কিছু কিছু পাত্রের বাবা মায়েরা পন্যের দামে ছেলেদের বিক্রি করছেন। আর কন্যাদায় গ্রস্ত পিতামাতা দামা দামি করে তা কিনে নিচ্ছেন। গরীবদের বেলায় নগদ টাকা, মধ্যবিত্ত আর বড় লোকদের বেলায় স্বর্ন অলঙ্কার, গাড়ি, বাড়ি,ব্যাংক ব্যলেন্স ইত্যাদি। এমনি অসহায় পিতা সোলায়মানের টাকা না থাকলে ও ভিটে বাড়ি সহ কিছু ধানিছা জমি আছে। সেখান থেকে দশ কড়া বিক্রি করে ময়নাকে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।

এদিকে সুজন ময়নার পেছনে লেগে আছে। সবসময় তাকে ফলো করে।তাই ময়নাকে বিয়ে দেয়ার কথাটা তার কানে পৌছতে দেরী হলো না। সে ঘটক মারফত প্রস্তাব পাঠাল। সোলায়মানকে সালাম দিতে তিনি বসতে বললেন।তারপর চুন্নু ঘটক বললেন,
সোলায়মান ভাই আপনার মেয়ের জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। ছেলেটি খুব ভালো টেক্সির ড্রাইভার। পাশের গ্রামের রহমত ‘র ছেলে।
তা বুঝলাম, কিন্তু দাবী দাওয়া।
ছেলের কোন দাবী দাওয়া নেই। তবে ছেলের বাবার…।
থামলেন কেন বলুন।ছেলের বাবার কি?
তেমন কিছুনা, নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা, এক ভরি অলঙ্কার,ছেলের সাজ, মেয়ের সাজ।
এত কিছুর পরে ও বলে সামান্য কিছু। তবুও মেয়েকে বিয়ে দিতে তো হবে। তাই সোলায়মান রাজী হয়ে গেল। নিয়ম অনুযায়ী বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো। মেয়ের বাবার দেয়া টাকা, অনুষ্ঠান করতে মন্দ কি?আনন্দে লাফাতে লাফাতে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছেলেকে বিয়ে করিয়ে নিয়ে গেল রহমত।
দিন যায় রাত হয়। কোনমতে চলছে ময়নার দিনকাল। মাঝে তিন চার বছর পার হলো। ময়না দু’মেয়ের মা হলো। শ্বশুর-শ্বাশুড়ী স্বামী সবাই অসন্তোষ্ট। ভালোবাসার ময়নার রুপে এখন আর সুজন মগ্ন নেই আগের মতো। কারণ একটাই, পরপর দুটো মেয়ে কেন তার হলো?শুধু তাই নয় উঠতে বসতে খোটা দেয়। কথায় কথায় গায়ে হাত তোলে। কি অমানসিক নির্যাতন! আগের মতো দেখা শুনা করেনা। শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর চোখের শুল। কেন মেয়ে হলো। অথচ শ্বাশুড়ী নিজে ও একজন নারী । হায়রে দুনিয়া কি বলব পুরুষ জাতির কথা। নারী বুঝেনা নারীর মর্যাদা। এই পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষকে নিয়ে যত গর্ব করুন না কেন? সেই পুরুষকে গর্ভে ধারণ করেছে কোন এক নারী জাতি। প্রত্যেক মেয়ে, মায়ের জাতি। এই সত্য কথাটা সর্বদা পুরুষদের মনে ধারণ করা উচিত।তবে সমাজের নারী নির্যাতন বন্ধ হবে, এর বাইরে না। ময়না সবার অমানুসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ছেলে সন্তানের জন্য, মানুষের কুবুদ্ধি ধরে তেল পড়া, পানি পড়া, তাবিজ কবজ, তকদির করার জন্য গুনিনের বাড়িতে ধর্ণা..।
এদিকে শ্বাশু মা তো রেগে আগুন। কড়া ভাষায় বলে,
তোর পোড়া কপাল, অলক্ষণে, কুলক্ষণা, ধাত্রী বলেছে, তোর আঁতে কোন ছেলে নেই। তুই অযথা আমার ছেলের টাকা নষ্ট করছিস কেন?হতছাড়ি! ফের যদি মেয়ে হয় তোকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিব, তারপর আমার ছেলেকে আবার বিয়ে করাব।

এতটুকুন ময়নার জ্ঞান হয়েছে কত। বুঝে উঠার মতো এখনও তেমন বুদ্ধি জ্ঞান হয়ে উঠেনি। তাই শ্বাশুড়ীর চোখের কালো চশমা সরিয়ে দেয়ার মতো কিছু গুছিয়ে বলতে পারছে না। এই প্রবণতাটা যে শুধু অশিক্ষিত পরিবারে ঘটে তা নয়।কিছু কিছু শিক্ষিত পরিবারে ও প্রায়ই ঘটে থাকে। পরপর কন্যা সন্তান হওয়ার পর স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে ও দেখা যাই অনেক ক্ষেত্রে। আর নারীরা মুখ বুঝে তা সহ্য করে।
এদিকে ময়নার বাচ্চা হওয়ার সময় হয়ে গেছে। যে কোন সময় প্রসব ব্যাথা উঠতে পারে।ঠিক তাই হলো, রাত তখন দশটা ময়নার ব্যথা শুরু হলো। যাক বাড়ির পাশেই হাতুড়ে ধাত্রী ছিল। তাই আনতে দেরী হলো না। অসহায় ময়নার দিকে আল্লাহ পাক মুখ তুলে চেয়েছেন। ভোর পাঁচটা বাজতে ময়নার একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান হলো।
ধাত্রী বলে উঠল,
আপনার নাতনী হয়েছে, রুপবতী,নেন কোলে নেন।
ময়নার শ্বাশুড়ী কোলে নেয়া তো দূরের কথা। রেগে বোম, পরিবার শুদ্ধ সবাই। কারো মুখ কি আর থেমে থাকে। উত্তপ্ত পরিবেশ। সবাই এক সঙ্গে গালমন্দ শুরু করলো।
কি মানসিক নির্যাতন! শুধু তাই নয় স্বামী মেরে রক্তাক্ত। ময়না আর কত সহ্য করবে!এইমাত্র বাচ্চা প্রসব,এখন ও সুস্থ হয়ে উঠেনি, তার উপরে স্বামীর অমানবিক মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন, সঙ্গে সঙ্গে ময়না অজ্ঞান হয়ে পড়ল। তখনি ময়নার মা বাবা, মেয়ে মরে গেছে মনে করে, উচ্চস্বরে ডুকরিয়ে কেঁদে উঠল । তাদের কান্নার আওয়াজ আশ পাশের দু’চার বাড়ি পৌছে গেল।লোকজন দ্রুত গতিতে আসতে শুরু করলো।
সঙ্গে আসল, পাশের বাড়ির স্কুল টিচার রহমান মিয়ার ছেলে মিজান। সে এসে দেখে ময়নার অবস্থা ভালো না, সাড়া শব্দ নেই, অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে? কিন্তু শ্বাস প্রশ্বাস প্রবাহিত হচ্ছে, তার মানে সে এখনও বেঁচে আছে। দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে, তা না হলে ময়নাকে বাঁচানো সম্ভব না। তাই মিজান ময়নার মা বাবাকে বলল,
খালাম্মা আপনারা কাঁদবেন না। ময়না এখনও বেঁচে আছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। মিজান তার দায়িত্বে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। তারপর সুস্থ করে তার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে আসল।তাদের পরিবারের সবাই এখনও রেগে বোম হয়ে আছে।কেন তার কন্যা সন্তান হলো?যে ময়নাকে এক প্রকার পাগল হয়ে সুজন বিয়ে করেছিল, সে ময়না আজ তার চক্ষু শুল।হায়রে পুরুষ জাতি, কি তাদের মতি গতি, ক্ষণে ক্ষণে রুপ বদলায় তাদের।কখনও নিজের ভুল দেখেনা। বউদের এক আধটু ভূল হলে চলে নির্যাতন আর গালমন্দ, তার উপরে শ্বাশুড়ীর উস্কানি।
যেমনটি ঘটেছে ময়নার ক্ষেত্রে, এত নির্যাতনের পরও ময়নার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী তাকে দেখে বলে উঠল,
এই বউয়ের আমাদের বাড়িতে জায়গা নেই।
মিজান বলে উঠল কেন,কেন খালাম্মা ?
শ্বাশুডি ভ্যাংচি কেটে বলে,
তা তুমি বুঝনা।
জ্বী না খালাম্মা,বলুন তো কি হয়েছে?
তো বলছি শুন পর পর তিন বার কন্যা সন্তান জন্ম দিলো, ছেলে না হলে বংশের বাতি দেবে কে শুনি? এমন কুলাঙ্গার বউয়ের আমাদের দরকার নেই তাকে নিয়ে যাও। আমার ছেলেকে অন্য জাগায় বিয়ে করাব।
সুজন তার মায়ের কথার প্রতিবাদ না করে, সাপোর্ট করে বলে,
মিজান ভাই, মা ঠিক বলেছে, তাকে নিয়ে যেতে বলেন। এমন বউয়ের আমার দরকার নেই।
এত দিনের চুপ থাকা ময়না জেগে উঠল। আর কত চুপ থাকবে, চুপ থাকতে থাকতে তার জীবন শেষ হতে চলেছে। এবার শেষ লড়াই দেখি ভাগ্যে কি আছে? প্রতিবাদী বজ্র কণ্ঠে ময়না বলে উঠল,
আমার স্বামীর ঘর থেকে এক পাও নড়ব না । দেখি কে আমাকে তাড়ায়।
স্বামী ক্ষেপে উঠে বলে,
কি তোর এত বড় সাহস, আমার মুখের উপর কথা। এক্ষণি তোকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব। বসা থেকে উঠে দাঁডালো গলা ধাক্কা দিতে উদ্যত হলো। তখনি মিজান কড়া ধমক দিয়ে বলে উঠল,
স্টপ সুজন ভাই,আর এক পাও এগুবেনা। আমি এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে তোমাদের সব কথা শুনেছি। গলা ধাক্কা ময়না ভাবিকে নয়, তোমাকে দিতে হবে।
কি বল মিজান ভাই, অন্যায় করলো ময়না, আর গলা ধাক্কা কিনা আমাকে, এই সব কি বলছ তুমি!
ঠিক বলেছি আমি, তুমি জঘন্য অন্যায় করেছ? তোমাকে এখন জেলে দেয়া দরকার।
বল কি!
বল কি মানে, প্রথমত আল্লাহপাকের সৃষ্টিকে তুমি অস্বীকার করেছ,।ছেলে হোক আর মেয়ে হোক এটা আল্লাহপাকের নেয়ামত। এই নেয়ামতকে বিশ্বাস করতে হবে। আর তুমি কিনা তা অস্বীকার করে ময়নাকে ভাবীকে তার জন্য দায়ী করলে? ময়না ভাবী কি মানুষ সৃষ্টি করতে পারে? পারে না। একমাত্র আল্লাহ পাক ছাড়া মানুষ সৃষ্টি করার ক্ষমতা কারো নেই। আর তুমি কিনা ময়না ভাবীকে এর জন্য দায়ী করছ।
ছিঃছিঃএ তুমি কি করলে, কঠিন পাপের অংশীদার হলে! আল্লাহর হাবীব বলেছেন তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যার প্রথম সন্তান কন্যা (আল হাদীস)
আল্লাহর হাবীব আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনটা মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে ভালো স্বামীর হাতে বিয়ে দেবে, সে এক হজ্জের সওয়াব পাবে। পরকালে তাহার জন্য বেহেস্তের দরজা খোলা থাকবে। আর তুমি কিনা সেই মেয়েকে অবহেলা করছ।
ছিঃছিঃ সুজন ভাই তুমি একি করলে! আল্লাহ পাক তোমার এ অন্যায় কখনো বরদাস্ত করবেন না। এর জন্য পরকালে তোমাকে কঠিন সাজা ভোগ করতে হবে। তাছাড়া কন্যা সন্তানের জন্য তুমি দায়ী। ময়না ভাবী নয়।
মিজান ভাই তুমি এসব কি বলছ?
সুজন ভাই আমি সঠিক এবং সত্য কথা বলেছি। আমি বড় ডাক্তার ও নয় কবিরাজ ও নয়, অতি সাধারণ একজন মানুষ। সবেমাত্র জীব বিজ্ঞান নিয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হলাম।আমার এই স্বল্প জ্ঞান থেকে তুমি কিভাবে কন্যা সন্তানের জন্য দায়ী, তার ব্যাখ্যা দিচ্ছি শুনুন।

বিজ্ঞান এবং ধর্ম ওপ্রতোভাবে জড়িত। কোরানের বিধান অনুযায়ী নিয়ম কানুন মেনে চলার নাম হলো ধর্ম। আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যা প্রমাণ করা হয় তা হলো বিজ্ঞান। যার আবিষ্কারক হলেন মানুষ। কিন্তু দুটোর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাক। অর্থ্যাৎ কোরান সরাসরি নবী করিম (স:) উপর নাযিল করেছেন। আর আল্লাহপাক মানুষ সৃষ্টি করে তার মগজে দিয়েছেন অনেক বুদ্ধি। কোরানে আল্লাহপাক উল্লেখ করেছেন, হে মানুষ জাতি তোমরা এমন কিছু আবিষ্কার কর যা তোমাদের পরবর্তী বংশধরদের কাজে লাগবে। এবার বুঝতে পারলেন তো আল্লাহ পাকের সৃষ্টির রহস্য। একটা হলো ডাইরেক্ট, আরেকটা হলো ইনডাইরেক্ট। আর বিজ্ঞান হলো এই ইনডাইরেক্ট নেরেশনের একটা আবিষ্কারক। এবার দেখুন সেই বিজ্ঞানে কন্যা সন্তানের জন্য কাকে দায়ী করেছে।
মানব দেহের প্রতিটি দেহকোষে ২৩ জোড়া ক্রোমোসোম থাকে। তার মধ্যে ২২ জোড়া দেহের গঠন প্রনালী ও জৈবিক কাজ নিয়ন্ত্রন করে। বাকী এক জোড়া সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারন করে।
স্ত্রীলোকদের ডিপ্লয়েড় কোষে দুটি লিঙ্গ নির্ধারন ক্রোমোসোমই x, ক্রোমোসোম (xx).কিন্তু পুরুষের বেলায় একটি x অপরটি y (xy)।স্ত্রী লোকদের ডিম্বানু গঠনের সময় প্রতিটি ডিম্বানু অন্যান্য ক্রোমোসোমের সাথে একটি করে x ক্রোমোসোম লাভ করে। কিন্তু পুরুষদের শুক্রানু সৃষ্টির সময় অর্ধেক শুক্রানু x ক্রোমোসোম এবং অপর অর্ধেক y ক্রোমোসোম লাভ করে। গর্ভধারন কালে x ক্রোমোসোমবাহী শুক্রানু যদি ডিম্বানুকে নিষিক্ত করে, তবে নিষিক্ত ডিমের ক্রোমোসোম হবে xx এবং সন্তান হবে কন্যা। অপর পক্ষে y ক্রোমোসোম বহনকারী শুক্রানু দিয়ে যদি ডিম্বানু নিষিক্ত হয়, তবে নিষিক্ত ডিম্বে ক্রোমোসোম হবে xy। ফলে ভূমিষ্ট হবে পুত্র সন্তান।
সুজন ভাই এবার আপনি বলেন,কন্যা সন্তানের জন্য কে দায়ী?
এত লেকচার শুনার পর সুজনের টনক নড়ল এবং সে তার ভুল বুঝতে পারলো। তাই নরম স্বরে বলে উঠল,
মিজান ভাই এসব বলে আর আমাকে আর লজ্জা দিওনা। তোমার মতো করে কেউ আমাদেরকে কখনো বুঝিয়ে বলে নাই। তাই আমরা অন্ধকারে ছিলাম। আজ তোমার যুক্তি সঙ্গত ও প্রিয় সত্য কথাগুলো আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি খুব আপরাধী।ময়নার কোন দোষ নেই। সন্তান ছেলে হবে, না মেয়ে হবে তা নির্ভর করবে, বাবার উপর, মায়ের উপর নয়।
সুজন ভাই নিজের ভুল যখন বুঝতে পেরেছ, তখন ভাবীর কাছে মাফ চাও।
ঠিক আছে,ময়না না বুঝে না শুনে তোমাকে অন্যায় ভাবে অনেক মারধর করেছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। আমি এমন ভুল আর কখনো করুম না।
ময়না চোখের জল মুছতে মুছতে বলে,
আপনি আমার কাছে মাফ চেয়ে গুনাগার বানাবেন না। দেরীতে হলে ও ভুল বুঝতে পেরেছেন, এটাই আমার বড় পাওয়া। আমি আর কিছু চাইনা।

মিজান বলে উঠল, “কি বলেন ময়না ভাবী,স্বামীর কাছে মাফ চাইলে গুনা হবে, এ কথা আপনাকে কে বলেছে?
কে আর বলবে ভাই, মুরব্বীদের মুখে শুনেছি।
এত দিন যা শুনেছেন ভুল শুনেছেন। এবার শুধরে নেবেন। স্ত্রী যদি অন্যায় করে তাহলে স্বামীর কাছে মাফ চাইতে হয়। অনুরুপ স্বামীর ক্ষেত্রেও তাই। তাছাড়া সুজন ভাইতো সিরিয়াস অন্যায় করেছে,মাফ চাইতে দোষ কি?
হ্যাঁ ভাই ঠিক বলেছ, ময়না তুমি আমাকে মাফ না করলে আমার ইহকাল ও পরকাল অমঙ্গলের হবে। তাছাড়া আল্লাহপাক কখনো আমাকে ক্ষমা করবেন না।
দু’জনার ভুল বুঝাবুঝি ও মাফ চাওয়ার পর্ব শেষ করে হাতে হাত রেখে সুন্দর জীবন গড়ার শফথ নিলো। তারপর মিজান বলল,
খালাম্মা সবশেষে আপনাকে ছোট্ট একটা কথা বলব। যদি কিছু মনে না করেন?
না বাবা মিজান কিছু মনে করবো না। একটা কেন, যত খুশি তুমি বল। আমি শুনব।
তা হলে শুনুন বলছি,
খালাম্মা আপনাকে আপনার মা গর্ভে ধারণ করেছিল। আপনি যখন কন্যা রুপে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন, তখন আপনার দাদি কি, আপনার মা’কে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল?
দেয়নি।
তাহলে আপনি কেন ময়না ভাবীকে ঘর থেকে বের করে দিলেন? নারী হয়ে নারীর সম্মান যদি না দেন, তাহলে নারী নির্যাতনের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়বে, বৈ কমবে না। এবার ভেবে দেখুন কি করবেন?
বাবা মিজান আমরা তোমার কাছে লজ্জিত। এতদিন যা করেছি না বুঝে করেছি। ময়নার উপর আর কোন নির্যাতন হবে না। আজ থেকে সে মেয়ে হয়ে আমার বুকে থাকবে। আয় মা আমার বুকে আয়।
ময়নাকে বুকে জড়িয়ে তিনি খুব কাঁদলেন এবং নিজের ভুল শিকার করলেন। এবার মিজান বলে উঠল,
খালাম্মা এবার বুঝতে পারলেন তো, “কন্যা সন্তানের জন্য মা দায়ী নয় “।
বাবা মিজান শুধু যে বুঝতে পেরেছি তা নয়। আজ থেকে সমাজে যাতে এই ধরনের জঘন্য ঘটনা না ঘটে তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবো ইনশা আল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ খালাম্মা শুনে খুশি হলাম। আল্লাহপাক আপনাকে কামিয়াব করুক। আমীন।।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

সুপুরুষ ও কাপুরুষ

ছেলেবেলায় ভালো পড়াশোনায় ছিলো সুমন। তাই এমনিতেই মহিলা মহলের প্রিয় ছিলো সমুন। কিন্তু আজকাল , সুমন পাড়ায় জিমে ঘাম ঝরাচ্ছে।

আমায় দুঃখ দাও আমায় কষ্ট দাও

তুমি আমার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার খেলা খেলছ। জানি আমি, এতে তুমি আনন্দে আছ, তবু আমি তোমায় কিছুই বলি না। কারণ

উদঘাটন

উদঘাটন      ❝সেদিনের পর থেকে আজও চিন্তিত থাকে সুকান্ত। সে কোনোদিনও সেই স্মৃতি ভুলতে পারবেনা❞ রহস্য আর রহস্যময় মানুষ

Leave a Reply