গল্প ডিভোর্সি মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

0

ডিভোর্সি মেয়ে

আফছানা খানম অথৈ

তানহার বিয়ে হতে না হতে ডিভোর্স হয়ে যায়।শিক্ষিত সুন্দরী চাকরীজীবি তবুও সংসার টিকাতে পারলো না।ভেঙ্গে গেল।একমাত্র মেয়ে বাবা-মায়ের আদর আহলাদে বড়।তাই শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কটু কথা একটু ও সহ্য করতে পারলো না।যত আদরের মেয়ে হোক শ্বশুর বাড়ির লোকজনের চোখে সে বউ। তাকে একটু কটু কথা শুনতে হয়।প্রতিবাদ করা যায় না।মানিয়ে নিতে হয়।কিন্তু কিছুকিছু মেয়েদের ক্ষেত্রে উল্টো মানিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না।এই নিয়ে অনেক মনোমালিন্য হয়। বউ শ্বাশুড়ি কেউ কাউকে ছাড় দেয় না।বুঝতে চায় না,ভুল বুঝে।আর এই ভুল বুঝার সুত্রধরে বেঁছে নেয় ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত।অবশেষে হয়েও যায়।আর তানহার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় ডিভোর্স হয়ে যায়।

এখন সে স্বাধীন মুক্ত।সারাদিন টইটই করে বেড়ালেও কাউকে কৈফিয়ৎ দিতে হয় না।সারাদিন অফিস থাকে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে।একমাত্র মেয়ে অফিস করে বাসায় ফিরেছে।খুব ক্লান্ত। মা খুব যত্ন করে মেয়েকে খাওয়ায়।ভালোই কাটছে তানহার দিনগুলি।কিন্তু মায়ের মন মানলে তো?তিনি চান মেয়েকে আবার বিয়ে দিতে।কিন্তু তানহা রাজী না।তার এককথা সে এখন বিয়ে করবে না।তবুও মা-বাবা থেমে নেই।মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য পাত্র দেখছে।
একদিন এক লোক তাকে দেখতে এসেছে।লোকটাও ডিভোর্সি।লোকটা তেমন একটা ভালো না।খিটখিটা মেজাজের একরোখা।নিজে যা বুঝে তাই করে।কারো পরামর্শ আমলে নেয় না।

আমাদের সমাজের পুরুষগুলো ও না কেমন জানি?বউদের বুঝতে চায় না।বিয়ে হতে না হতে জজের মতো হুকুমজারী।পান থেকে চুন খসলে কড়া শাসন।একটু ও ছাড় দেয় না।নতুন বউ কোথাও একটু সুন্দর করে রোমান্টিক সুরে কথা বলবে,শিখিয়ে পরিয়ে নেবে তা না।কথায় কথায় দোষ ধরে,বাজে আচরণ করে।আর তখনি দুজনের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি।আর এই ভুল বুঝাবুঝির কারণে এই লোকটাকে ডিভোর্স দিয়েছে তার বউ।।আজ সে এসেছে তানহাকে দেখতে।তাকে সামনে আনা হলো।সে সালাম দিতে তাকে বসার নির্দেশ দেয়া হলো। লোকটা তার নাম পরিচয় জানতে চাইল।তানহা উত্তর দিলো।এবার লোকটা বলল,
আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে।তবে একটা কথা…।
জ্বি বলুন।
বিয়ের পর আপনি চাকরী করতে পারবেন না।
কেনো সমস্যা কোথায়?
মেয়েদের কাজ ঘর সামলানো, বাইরে না।
তাছাড়া আমি এসব পছন্দ করি না।
ঠিক আছে তাহলে আমার মতামতটা শুনুন।
জ্বি বলুন।

আপনাকে আমার পছন্দ না।আমি আপনাকে বিয়ে করব না।
কথাগুলো বলে সে হনহন করে ভিতরে চলে গেল।পাত্রপক্ষ বিদায় নিলো।একমাত্র মেয়ে কড়া কিছু বলা যাবে না।মা আস্তে করে বলল,
মা এটা কী করলি?বিয়েটা ভেঙ্গে দিলে?
মা ভুল কিছু করিনি।যা করেছি সঠিক করেছি।
এভাবে আর কতদিন।বিয়ে তো একদিন করতে হবে।
তা সময় হলে দেখা যাবে।
মা বুঝতে পেরেছে মেয়ের মন খারাপ। তাই আর কিছু না বলে চুপ হয়ে গেল।
এদিকে লোকজনের গাল কিন্তু থেমে নেই।তানহাকে দেখলে ডিভোর্সি বলে সম্বোধন করে। আজে বাজে কথা বলে।তানহা কিন্তু শোনেও না শোনার ভান করে।আবার কখনো কখনো পালটা জবাব দেয়।তার অফিসের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের একদিন তাকে ডেকে বলেন,
তানহা তোমার জন্য আমার খুব মায়া হয়।
কেনো স্যার?
তুমি একা একা থাক।বিয়ে ও করছ না।খুব খারাপ লাগে।তুমি চাইলে আমি সময় দিতে পারি?
কী বললেন স্যার? ঠিক বুঝলাম না?

বোকা মেয়ে এও বুঝ না।আগামি সপ্তাহে আমরা অফিসের কাজে কক্সবাজার যাচ্ছি।তুমি চাইলে যেতে পার।আমরা দুজন একসঙ্গে কিছু ভালো সময় কাটাব।
স্টপ স্যার আর একটা কথাও বলবেন না।আমি আপনার মেয়ের মতো।লজ্জা করলো না,আমার সাথে এসব কথা বলতে?আপনাদের মতো পুরুষদের জন্য মেয়েরা নিরাপদ না।ঠিকমতো অফিস আদালত করতে পারছে না।ইভটিজিং এর স্বীকার হচ্ছে, লাঞ্চিত,অপমানিত,সম্ভ্রম হানি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য করছে।লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না। ছি: আপনি পুরুষ না,পুরুষজাতির কলঙ্ক। আপনাকে আমার ঘেন্না হচ্ছে।
এভাবে লোকজন তাকে বাজে প্রস্তাব দেয়।শুধু তাকে না,তার মা-বাবাকেও লোকের টিটকারি শুনতে হচ্ছে রীতিমতো। একদিন তানহার বাবা দোকানে বসে চা খাচ্ছেন।তানহা অফিস থেকে ফিরছে।লোকজন তার দিকে ঈশারা করে বলছে,
ওই যাচ্ছে ছাদেক স্যারের ডিভোর্সি মেয়ে।এখনো বিয়ে দিচ্ছে না।বুড়ি হয়ে যাচ্ছে।
কয়েকজন খিলখিল করে হেসে উঠে বলে,
ডিভোর্সি মেয়েকে কে বিয়ে করবে? শুনেছি মেয়েটা ভালো না।যার তার সঙ্গে ঝগড়া করে।কাউকে মান দেয় না।
তানহার বাবা থেমে থাকতে পারলো না।তাদের মুখের উপর বলল,
থামবে তোমরা।কী সব যা তা বলছ।
তার কথার জবাবে হোসেন বেপারি বলল,
যা তা নয় স্যার সত্যি বলছি।আপনার মেয়ে ভালো না।ভালো হলে কী সংসার ভাঙত?এখনো বসিয়ে রেখেছেন কেনো?বয়স তো আর কম হলো না।

আমার মেয়ে আমি বিয়ে দেব না কী করব?সেটা আমি দেখব।আপনি এই নিয়ে আজে বাজে কথা বলছেন কেনো?
বলি কী আর সাধে স্যার।সমাজে এমন বেহায়াপনা চলবে না।লজ্জা করে না?মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে কামাই খেতে।মেয়ের টাকাই সংসার চলে তাই বুড়ি করে ঘরে রেখেছেন।বিয়ে দিচ্ছেন না।ডিভোর্সি মেয়ে ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছেন নাকি?চোখে দেখেন না?
এত অপমান সহ্য করার মতো নয়।তিনি বসা থেকে কাত হয়ে পড়ে গেলেন।লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করলো।
ছাদেক মাস্টারের মৃত্যুতে পরিবারের লোকজন ভেঙ্গে পড়লো।তানহা বাবার মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারলো না।খুব ভেঙ্গে পড়লো।আর এই সুযোগে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তাকে বুঝ ভরসা দিয়ে খাতির জমাতে চাইছে।তানহা কিন্তু কোন রকমে তাকে পাত্তা দিচ্ছে না।
এমনিভাবে পরিচিত অপরিচিত অনেকে তার সাথে
গায়ে পড়ে বাজে আচরণ করে,নোংরা প্রস্তাব দেয়।

তানহা কিন্তু আপন গতিতে চলছে। এসব কথা আমলে নিচ্ছে না।এভাবে আর কতদিন।এক সময় সে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে।লোকজনের অপমান আর নিতে পারছে না।জীবন থেকে হারিয়ে যায় অনেকগুলো বছর।এত সময় পর কেনো জানি মনে হলো।সংসার ভাঙাটা তার ঠিক হয়নি।স্বামীর সংসারে যদি একটু মানিয়ে নিত।সবঠিক হয়ে যেত।স্বামীর সংসার ভালোই ছিলো।শ্বশুর-শ্বাশুড়ির একটু কটু কথা,এ আর এমন কী?অথচ আজ তাকে আর ও দ্বিগুন কটু কথা শুনতে হচ্ছে।যা সহ্য করার মতো নয়।নিজের ভুলগুলো নিজের চোখে ধরা পড়েছে।হারিয়ে যাওয়া দিনগুলির জন্য খুব আফসোস। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না।মনের অজান্তে চোখ জোড়া জলে ভরে উঠল।
এদিকে সংসারেও তাকে নিয়ে ঝামেলা চলছে।ভাই-ভাবি তাকে ভালো চোখে দেখছে না।এই নিয়ে তার মাকে রীতিমতো খোটা শুনতে হচ্ছে।ভাবীর এককথা,
আপনার আহলাদে তানহা নষ্ট হয়ে গেছে।আমরা আর নিতে পারছি না।যেমন পাত্র হোক তাকে বিদায় করেন।লোকজনের টিটকারি আর উপহাস ভাল লাগে না।

বউ মা তুমি কিন্তু লিমিট ক্রস করে ফেলছে।
এইতো ভালো কথা বললে দোষ।মা আমরা কিন্তু আর তানহার বোঝা বইতে পারব না।তাকে বলেন বিয়ে করতে, নয়তো ঘর চেড়ে যেতে?
বউ মা,তুমি এমন কথা বলতে পারলে?
জ্বি হ্যাঁ পারলাম।
বউয়ের কথা সত্যি মায়ের মনে আঘাত লেগেছে।সহ্য করতে পারলেন না।ছুটে গিয়ে তানহাকে বললেন,
তোর জন্য আজ আমাকে বউয়ের খোটা শুনতে হলো?
কেনো কী হয়েছে?
কী হয়নি বল?জেবা বলেছে তোকে বিয়ে করতে,নয়তো ঘর ছেড়ে যেতে।তারা আর তোর বোঝা বইতে পারবে না।
মা তারা আমার বোঝা বইবে কেনো?আমি তাদের খাই, না তাদের পরি?তাছাড়া এই বাড়িটা আমার বাবার, এই বাড়ির উপর ভাইয়ার যেমন অধিকার আছে,আমার ও তেমন অধিকার আছে।
তবুও মেয়েরা সারাজীবন বাবার বাড়ি থাকে না। তাছাড়া বাবার বাড়ি মেয়েদের ঠিকানা না।মেয়েদের আপন ঠিকানা হলো স্বামীর বাড়ি।আমি আর তোর কোন কথা শুনব না।এবার তোকে বিয়ে দেবই।যেমন পাত্র হোক।কাল এক পাত্রপক্ষ তোকে দেখতে আসবে।তুই কিন্তু না করতে পারবি না?

মেয়েকে কিছু কড়া কথা বলে তিনি চলে গেলেন।তানহার ভিতরে কেমন জানি পরিবর্তন দেখা দিলো।মায়ের কথার আর প্রতিবাদ করলো না।যাক এতদিন পর মা মেয়েকে একটু শাসন করেছে।
সময়মতো পাত্রপক্ষ তানহাকে দেখলে আসল।দেখাদেখির পর্ব শেষ হলো।তানহাকে পাত্রের পছন্দ হলো।এখন জরুরী কিছু আলাপ…।
লোকটি বলল,
আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে।তবে কিছু কথা…।
জ্বি বলুন।
আমার পাঁচ ছেলে-মেয়ে।এদের দেখভাল করার জন্য আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। এখন বলুন এদের নিজের ছেলে-মেয়ের মতো করে দেখে রাখবেন?
পাঁচ ছেলে -মেয়ের কথা শুনে তানহার মেজাজ হাইতে উঠে গেল।কড়া কিছু বলতে চেয়েও পারলো না।নিজেকে কন্ট্রোল করে ভিতরে চলে গেল।তারপর কড়া ভাষায় বলল,
মা এইসব কী হচ্ছে?আমাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে না?
মজা কেনো করব?তোকে বিয়ে দিতে চাইছি।
তাই বলে পাঁচ সন্তানের বাবাকে বিয়ে করতে হবে?
তার কথার সুত্রধরে ভাবী বলল,
তোমার মতো ডিভোর্সি মেয়ের জন্য এর চেয়ে ভালো পাত্র আর পাওয়া যাবে না। ওকে তোমার বিয়ে করতে হবেই।
তানহা ও হারবার পাত্রী নয়।ভাবীর মুখের উপর বলে দিলো,
ভাবী একটা কথা মাথায় রেখো।জোর করে কোনোকিছু হয় না।ডিভোর্সি হয়েছি বলে আমি কী পঁচে গেছি?
আমি কখনো ওকে….।
বিয়ে করবে না এইতো?
ঠিক তাই।
তুমিও একটা কথা মাথায় রেখো।যেমন করে হোক ওর সঙ্গে তোমাকে বিয়ে দেব।দেখি কী করে ঠেকাও?
ননদ ভাবী একে অপরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলো।দেখি কে জিতে?তানহার কথার এখন আগের মতো কেউ মূল্য দেয় না।কারণ সে এখন ডিভোর্সি মেয়ে পরিবারের বোঝা।তাকে পাত্রস্থ করতে পারলে সবাই বাঁচে।

আর এইজন্য ওই লোকটার সঙ্গে তানহার বিয়ে ঠিক করে।তানহা কিন্তু এই বিয়েতে রাজী না।তাই একটা চিঠি লিখে টেবিলের উপর রেখে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়।সকাল হলে তানহার বিয়ে।
কিন্তু সে কী!তানহা ঘরে নেই।তবে কোথায় গেল?
সবাই জল্পনাকল্পনা,কারো সাথে কী রিলেশন?না না তা ও তো নেই।তবে কোথায় গেল?শেষে তার টেবিলের উপর পেল একটা চিঠি,তাতে লেখা
শ্রদ্ধেয়া
মা
শুরুতে আমার সালাম ও ভালোবাসা নিও।
জানি তুমি খুব টেনশনে আছ?কিন্তু কী করব বলো মা,পাঁচ সন্তানের পিতাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই রাতের অন্ধকারে পালিয়ে এলাম। আজ থেকে সেপারেট হয়ে গেলাম।আর কখনো তোমাদের বোঝা হয়ে সামনে দাঁড়াব না।আমি অনেক দূরে চলে গেলাম।

মা আজ কিছু সত্য কথা না বলে পারলাম না। সংসার জীবনে কিছু ভুলত্রুটি হয়।এসব মেনে নিতে হয়।কিন্তু তুমি আমাকে কখনো এসব শিখাওনি।যার ধরুন,আমি শ্বশুর বাড়ির সামান্য ভুলত্রুটি সহ্য করতে পারিনি।সামান্য কিছু হয়েছে তোমাকে বলেছি।আর তুমিও তালে তাল মিলিয়ে সাপোর্ট করেছ।আর আমি ও তোমার তালে তাল মেলাতে গিয়ে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির ভুলত্রুটি ধরতে শুরু করেছি।মুখে মুখে তর্ক করেছি।স্বামীর সঙ্গে কারণে অকারণে ঝগড়া করেছি।নিজের অধিকারের জন্য যুদ্ধ করেছি।স্বামীকে এককভাবে পাওয়ার চেষ্টা করেছি।

কিন্তু কোনোকিছু পারিনি।স্বামী শ্বশুর-শ্বাশুড়ি কারো মন পাইনি।সবার চোখে আমি খারাপ হিসেবে ধরা পরলাম।তারা চাইনি আমি আর তাদের পরিবারে থাকি।অবশেষে তুমিও বললে ভাত কাপড়ের অভাবে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি নাকি?শুধুশুধু কেনো সে নির্যাতন ভোগ করবে?আমার একটামাত্র মেয়ে, আমি এর চেয়ে দশগুন ভালো ঘরে বিয়ে দেব।চলে আয়।আমি ও সাঁই দিলাম।হয়ে গেলো ডিভোর্স।আমি হয়ে গেলাম ডিভোর্সি মেয়ে।এবার বুঝতে পারছ তো,এসব কার পরামর্শে হয়েছে?তোমার পরামর্শে।তুমি যদি তখন আমাকে ভালো পরামর্শ দিতে,শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে আপন করে নিতে বলতে,ভুলত্রুটি মানিয়ে নিতে বলতে, তাহলে আমার সংসারটা ভাঙত না।সুন্দরভাবে গড়ে উঠত।আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি একটু উগ্র মেজার ছিলো সেটা ঠিক আছে।বউয়ের উপর বেশি খবরদারী করত। তবে তা মানিয়ে নিলে সবঠিক হয়ে যেত।কিন্তু আমি তা করিনি,কেনো জানো?তোমার কানপড়া আমাকে ভুলভাল শিক্ষা দিয়েছে,উগ্র করেছে, ক্রোধ সৃষ্টি করেছে।যা আমল করতে গিয়ে আমার সোনার সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে।

আজ বাস্তবতার কঠিন মূহূর্তে এসে বুঝতে পেরেছি।কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ?একটা কথা বুঝতে পেরেছি দোষে গুনে মানুষ।টক ঝাল মিষ্টি এই নিয়েতো জীবন।এই বাস্তব সত্যটা মেনে নিলে সব সমস্যার সমাধান,অন্যথায় না…।তাছাড়া সংসার টিকাতে হলে একটু সেক্রিফাইজ তো করতে হবেই।
মা সবশেষে বলব,আমার মতো আর কাউকে ভুলভাল শিক্ষা দিওনা।শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে আপন করে নেয়ার পরামর্শ দিও।ভুলত্রুটি মানিয়ে নিতে শিখিও।তবে সোনার সংসারে সুখ পাখি ধরা দেবে।এর ব্যতিরেকে নয়।ভালো থেকো সুখে থেকো। আল্লাহপাকের কাছে এই দোওয়া করি।
ইতি
তোমারই অপরাধী কন্যা
তানহা।
চিঠিটা পড়ার পর তানহার মায়ের ভিতরে পরিবর্তন দেখা দিলো।নিজের ভুলগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠল।নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো।অনুশোচনায় কাতর হয়ে পড়লো।
আজকাল সংসার ভাঙার প্রবনতাটা বেড়ে গেছে বহুগুনে।কেনো জানেন?মায়ের কুপরামর্শ আর মেয়েদের স্বাবলম্বী।এই দুটো কারণ ইদানীং বেশি লক্ষ্য করছি।আর এই দুটো কারণ ফলো করতে গিয়ে সংসার ভাঙছে অহরহ।সাবধান মেয়েরা কখনো মায়ের কুপরামর্শ ফলো করবে না।করলে তানহার মতো “ডিভোর্সি মেয়ে” হয়ে সারাজীবন মানুষের উপহাস শুনতে হবে।

ঃসমাপ্তঃ


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প: অপেক্ষা লেখক:

গল্প: অপেক্ষা লেখক: মো: আবিদ রানা রিমি প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরেই বারান্দায় বসে। তার চোখ সব সময় খোঁজে একটা চেনা

গল্প সিয়ামের স্বপ্ন আফছানা খানম অথৈ

গল্প সিয়ামের স্বপ্ন আফছানা খানম অথৈ দশ বছরের সিয়াম কমলাপুর রেল ষ্টেশন এ থাকে।তার ঘরে খুব অশান্তি। এক মুহুর্তের জন্য

গল্পঃ অনুপমার চোখে ২

গল্পঃ অনুপমার চোখে লেখকঃ বকুল রায়  #Part_02 অনুপমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, এটা নিজেকে স্বীকার করলেও তাকে বলার সাহস তখনও হয়নি। কারণ

গল্পঃ অনুপমার চোখে ১

গল্পঃ অনুপমার চোখে লেখকঃ বকুল রায় Part 01 ঢাকার ব্যস্ত সড়কগুলো আমার কাছে সবসময় যেন এক রঙিন ক্যানভাস। ছোটবেলা থেকে

Leave a Reply