পরকীয়া প্রেম
আফছানা খানম অথৈ
অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়া মেয়ে তানিয়ার বিয়ে ঠিক হলো ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সুমন শিকদারের সঙ্গে। তারা তিন ভাই বোন।দু’বোন বড়। তাদের বিয়ে আগে হয়ে গেছে।সুমন শিকদার পরিবারের একমাত্র আদরের ছেলে। তার উপরে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী।বাবা মারা গেছেন। মা এখনো জীবিত আছেন। একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা মহাধুমধাম তো হবে। ব্যান্ড পার্টি, নায়ক,গায়ক,মিউজিক আর ও কত কি?
তানিয়ার বাবা ও কোন অংশে কম না সেইম সেইম।তিনি ও বড় ব্যবসায়ী ।তার এক মেয়ে দু’ছেলে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা, খুব জাকজমক তো হবেই। সাতদিন আগে থেকে বিয়ের আয়োজন শুরু করলো।
বুঝতে পারছেন তো কি এলাহী কান্ড।
প্রায় তিন শতাধিক লোককে নিমন্ত্রণ করেছেন। বর যাত্রী ও প্রায় তিন শতাধিক। সব মিলিয়ে ছয় সাতশ হবে। দু’বাসায় বিয়ের মহাধুম পড়ে গেছে।গ্রামের বিয়ে আর শহরের বিয়ের পার্থক্য অনেক। গ্রামের বিয়ে দু’দিনে শেষ। আর শহরের বিয়ে সপ্তাহ খানেক ধরে চলে। প্রথমে আঁৎ করা হয়, তারপর গাঁয়ে হলুদ, তারপর বিয়ে। একেবারে গুনে গুনে সাত দিন।
সুমন শিকদার ও তানিয়ার বিয়ের আয়োজন ও সে রকম করে করা হলো।প্রথমে আঁৎ, তারপর গাঁয়ে হ্লুদ নিয়ে প্রথমে কনের বাড়িতে, তারপর বরের বাড়িতে কুটুমদের অতিথিয়েতা।খুব করে নাচ গান, প্যাকেজ, ব্যান্ড সংগীত ইত্যাদি বিনোদনের মধ্য দিয়ে গাঁয়ে হলুদের পর্ব শেষ হলো।এবার বিয়ের পর্ব। দু’পক্ষ টাকাওয়ালা,তাই নামী দামী কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করলেন।বর্তমানে বর কনেকে বিউটি পার্লারে সাজানো একটা ফ্যাশনে রুপ নিয়েছে।ঐখানে ও চলে তুমুল প্রতিযোগিতা যে যত বেশী টাকা দিবে তার সাজ গোছ তত বেশী সুন্দর হবে। বিশেষ করে এই দুই পরিবারের টাকার কোন কমতি নেই। তাই বর কনে দু’জনকে দামী সাজ দিয়ে সাজালেন বিউটিশিয়ানরা। খুব করে দু’জনের সৌন্দর্য ফুটে উঠল।কারণ দাম অনুপাতে কাজ। তাছাড়া এই হাইসোসাইটির কিছু কিছু মানুষ বিলাসিতার কাজে টাকা ব্যয় করতে একটু ও কার্পন্য করেন না। কার্পন্য করেন শুধু এক জাগাতে, গরীব দুঃখী আত্নীয় -স্বজন,ভিক্ষুক, ও ভালো কোন কাজে টাকা পয়সা দান করতে। তখন কত অযুহাত দেখান,ব্যবসায় লস,ঠিকমত মাল ডেলিভারী হচ্ছে না।হাতে টাকা নেই ইত্যাদি ইত্যাদি।
এদিকে বিয়ের সব আয়োজন কমপ্লিট। কমিউনিটি সেন্টারকে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত করা হলো।লাল নীল ঝিলিক বাতি শুক তারার মতো ঝিকঝিক করছে। বরাবর দুপুর দুটো, “বর” সুমন শিকদার তিনশজন যাত্রী নিয়ে উপস্থিত হলো।বর আসন পেতে বসলো। মৌলবী সাহেব বিয়ে পড়ানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। বন্ধু,বান্ধবী আত্নীয় স্বজন, বিশেষ করে বরের বড় ভগ্নিপতি ভিডিও ক্যামেরা ,ক্যামেরা,আইফোন, স্কিন টাচ্ মোবাইল রেডি, বর কন দু’জনকে ক্যামেরা বন্ধী করলো।
বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব পিক তোলা হলো।
বিশেষ করে তার বড় ভগ্নিপতি আকাশ চৌধূরী নব বধুর পাশে বসে খুব রোমান্টিক সিনারীতে বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গিতে কিছু পিক তুলে নিল।এর জন্য কেউ কিছু বলল না। কারণ বড় ভগ্নিপতি বড় ভাইয়ের সমান। তাছাড়া এগুলো আধুনিক যুগের নিউ ফ্যাশন।তাই এই নিয়ে কেউ কোন কু’মন্তব্য করেননি।কিন্তু যিনি তুলেছেন তার মাথায় কু’মতলব।
যাক বিয়ে,বর ভোজ সব শেষ হলো।সুমন শিকদার তার বউকে নিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করলো।
এদিকে নব বধুকে বরণ করার জন্য ব্যান্ড পার্টি,মিউজিক,প্যাকেজ কর্মী সবাই প্রস্তুত।তাই বধু বরণ করতে দেরী হলো না। নতুন বউয়ের আগমনে আনন্দ ধবনিতে বাসা বাড়ি মুখরিত। রাতের খানা শেষ সবাই ঘুমিয়ে পড়লো।নতুন বউ জামাই কথোপকথন শুরু করলো। ঠিক সেই মুহূর্তে তার বড় ভগ্নিপতি দরজার কড়া নাড়তে ভিতর থেকে আওয়াজ তুলল সুমন শিকদার,
কে ওখানে?
বাহির থেকে আওয়াজ তুলল,
শালা ভাই আমি তোমার বড় ভগ্নিপতি। দরজা খোল।
তাদের এই রোমান্টিক মূহুর্তে ভগ্নিপতির আগমন বিরক্তিকর মনে হলে ও দরজা না খুলে পারলো না।দরজা খুলতেই আকাশ চৌধুরী বলে উঠল,
কি শালা ভাই, দরজা খুলতে এত দেরী হলো কেন?বিয়ে হতে না হতে বউকে নিয়ে..।
আমি এ বাড়ির বড় জামাই। আমার টেককেয়ার কিন্তু সবার আগে।আমার একমাত্র শ্যালক বলে কথা, দামী রেষ্টরেন্টের দামী মিষ্টি। আমার পক্ষ থেকে স্পেশাল গিফট।
বলতে না বলতে সে তানিয়ার গাঁ ঘেষে বসলো। আর মিষ্টির প্যাকেট খুলে নিজ হাতে তানিয়াকে মিষ্টি খাওয়াতে এগিয়ে গেল।কেমন জানি আঁড়চোখে তার দিকে তাকাল,তার চোখের চাহনিটা তেমন ভালো মনে হলো না। তানিয়ার সন্দেহ হলো, সে লজ্জাবতী লতার মত মাথা নিচু করে নিলো।তার মুখের দিকে মিষ্টি এগিয়ে দিতে সে বলে উঠল,
প্লিজ দুলাভাই আমি এখন মিষ্টি খাবো না। কিছুক্ষণ আগে খেয়েছি। তাছাড়া আমি তেমন মিষ্টি খাইনা।
তানিয়ার মুখের না শব্দ তাকে খুব রাগিয়ে তুলল,
সে চক্ষু জোড়া লালে লাল করে বলে,
কি আমাকে এত বড় অপমান!আমি এ বাড়ির বড় জামাই, সম্মান বলে একটা কথা আছে।তুমি আমার সেই সম্মান নষ্ট করলে!এত বড় স্পর্দা তোমার। আমি আর এর মধ্যে নেই। এ বাড়িতে আমি আর কখনো আসবো না।
এই সব কড়া কথা বলে সে হনহন করে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলো। তখনি সুমন শিকদার নরম স্বরে বলে উঠল,
সরি দুলাভাই ভুল হয়ে গেছে।আর অভিমান নয়,তানিয়া দুলাভাইকে সরি বল,
বাঙ্গালী মেয়েরা স্বামীর হুকুম মানতে সদা প্রস্তুত। ভালো হোক আর মন্দ হোক। ঠিক তানিয়া ও তাই করলো। অপরাধ না করে অপরাধী হয়ে মাফ চেয়ে নিলো।আর এই সুযোগে আকাশ চৌধুরী খুব খাতির যত্ন করে নব বধুকে মিষ্টি খাওয়ালো।শুধু তাই নয় বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গিতে কিছু পিক তুলে নিলো।
মনে হয় নিজের বউ,ছবিগুলো ঠিক এমনি সিনারিতে তুলল।তানিয়ার অপছন্দ তবু ও কিছু বলতে পারলো না।যাক মান অভিমানের পর্ব শেষ করে সে চলে গেল।ঘড়িতে তখন রাত দুটো। কি বুঝেন, কি জঘন্য পাপ সে করে গেল।একজন নব দম্পত্তির ফুল শয্যার রাত প্রায়ই শেষ করে দিয়ে গেল।অথচ এই রাতের গুরুত্ব যে কত ব্যাপক তা আল্লাহর হাবিব তার লেখা বিভিন্ন হাদিসে বর্ননা করে গেছেন। তাছাড়া নারী পুরুষ উভয়ে ইয়ং ক্লাসে আসার পরপরই এই রাত নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে।
কিন্তু আছ সেই রাত, একটা বাজে লোকের আড্ডায় প্রায় গোল্লায় গেল।
এদিকে আকাশ চৌধুরীর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেল।সে তানিয়াকে নিয়ে কু’চিন্তা ভাবনা শুরু করলো।
আসলে আকাশ চৌধুরীর স্বভাব চরিত্র ভালো না। ইয়ং বয়সের অনেক কু’কীর্তি তার আছে।এখন যে ভালো হয়ে গেছে তা নয়,আর ও অহরহ ঘটনা আছে তার। তাই গাঁয়ে হলুদের অনুষ্টানে দেখার পর থেকে তানিয়ার প্রতি তার দূর্বলতা বাড়তে থাকে। আর এই জন্য বার বার বিভিন্ন অযুহাতে তার কাছে ছুটে যাওয়া। আর ঘটা করে তানিয়ার রুপের প্রশংসা করা। খুব খাতির যত্ন করে খাওয়া। শুধু তাই নয় নিজের বউয়ের চেয়ে খুব করে টেক কেয়ার করছে তানিয়ার।কারো চোখে যে পড়েনি তা নয়,দু’একজন ঠিক ফলো করেছে।ফুস ফুস অনেকে অনেক কথা বলাবলি করছে।
গ্রাম কিংবা শহরে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপে কনের বাড়িতে ছোট খাটো আরেকটা অনুষ্ঠান হয়। একে বলে আড়াইয়া খানা। অর্থাৎ আড়াই দিন পর্যন্ত বর শ্বশুর বাড়িতে থাকে।তারপর বউ নিয়ে আসা হয়। গ্রামাঞ্চলে এর প্রবণতাটা খুব বেশী। বর তার আত্নীয় স্বজন নিয়ে বরাবর আড়াই দিন থাকে। শহরে কিন্তু সে নিয়ম নেই। এক বেলা খেয়ে বউ নিয়ে আসা হয়। এই অনুষ্ঠানে অবশ্য বাইরের কোন অতিথি থাকে না।নিজস্ব আত্নীয় স্বজন, ভাই বোন, ভগ্নিপতি, নিয়ারেষ্ট দু’একজন বন্ধু বান্ধব।
দ্বিতীয় ধাপের খানার এরেঞ্চ করা হলো।ঘরোয়া পরিবেশে কনের বাসায়। লাঞ্চের দাওয়াত বরপক্ষকে দেয়া হলো।সুমন শিকদার তার বোন ভগ্নিপতি, চাচাতো, ফুফাতো খালাতো, মামাতো ভাই, আর দু’চার জন নিয়ারেষ্ট বন্ধুকে নিয়ে যথা সময়ে উপস্থিত হল।নব দম্পত্তির নতুন সংসার, রঙ্গিন রঙ্গিন স্বপ্ন ভাসে তাদের দু’চোখে। তাই নব দম্পত্তিরা একে অপরকে নিয়ে একটু ব্যস্ত।
কিন্তু আকাশ চৌধুরীর আর সহ্য হলো না।সে রেগে উঠে বলে,
কার বাসায় আসলাম,টেককেয়ার নেই। সেই কখন থেকে বসে রইলাম,তানিয়ার কোন খোঁজ খবর নেই।এটা কি অতিথিয়েতা?আমি চললাম।
কোন সমাধান দেয়ার অপেক্ষা না করে সে চলে আসল। তারপর শ্বাশুড়ীকে তানিয়ার বিপক্ষে কিছু মিথ্যে কথা বলল,তার ঠিকমত টেককেয়ার করলো না,বিয়ে হতে না হতে স্বামীকে আলাদা করে ফেলল।একটি বারের জন্য খোঁজ খবর নিলো না। আমাকে এত বড় অপমান!আমি চললাম।
শ্বাশুড়ি ভাবল কথা গুলো সত্যি। তাই জামাইকে কিছু বুঝানোর জন্য উদ্যত হলো। কিন্তু জামাই কি সেই সুযোগ দিলো।তার পূর্বে হন্তদন্ত হয়ে কেটে পড়লো।এদিকে সুমন শিকদার বউ নিয়ে আসল।তখনি ঘটে গেল এক তাল তুমুল কান্ড।শ্বাশুড়ী রেগে বোম।বউ আসতে না আসতে জামাইকে ঠিকমত টেককেয়ার করেনি কেন? তারজন্য খুব করে বকলেন।তারপর বললেন,
শোন বউ মা,আকাশ আমাদের পরিবারের বড় জামাই।তার সম্মান আমাদের ফ্যামিলির সাথে জড়িত। আর তুমি কিনা তাকে অপমান করলে!তার ঠিকমতো টেককেয়ার করলে না। তার সঙ্গে দেখা করলে না। কুশলাদি জিজ্ঞাসা করেলে না।এ কেমন কথা!তোমার মা বাবা কি তোমাকে ভদ্রতা বলতে কিছুই শিখাইনি?আজকে’র পর থেকে আর এমন ভুল করবে না।সুমনের চেয়ে বেশী আপ্যায়ন করবে আমার দু’জামাইকে। এক্ষণি আকাশকে ফোনে সরি বল, আর আসতে বল।
আকাশ চৌধুরী লোকটাকে তানিয়ার চোখে অসৎ স্বভাবের মনে হলো। কারণ তার আচার আচরণ, চাল চলন, ধ্যান ধারণা ভিলেনের মতো।তাকে তানিয়ার মোটেও পছন্দ না।কিন্তু তবুও শ্বাশুড়ীর কড়া আইন, তার সাথে মিট হতে হবে। কি আর করা তানিয়া নিরুপায়, তাই ফোন দিয়ে আকাশ চৌধুরীর সাথে ভূল বুঝা বুঝির পর্ব শেষ করে নিমন্ত্রণ করলো।আকাশ চৌধুরী আনন্দে লাফাতে লাফাতে শ্যালকের বউয়ের জন্য,দামী শাড়ি চুড়ি কসমেটিক, ফল ফলাদি, মিষ্টি এসব নিয়ে হাজির।
শ্বাশুড়ী দেখে তো মহাখুশি এক প্রকার আনন্দে নেচে উঠে বলল,
জামাই বাবাজি তুমি এত কিছু আনতে গেলে কেন?অযথা টাকা নষ্ট।
আকাশ চৌধুরী রসালো হাসির বাকস খুলে দিয়ে বলল,
কি যে বলেন মা,এ আর এমন কি? আমার একমাত্র শ্যালকের বউ বলে কথা।আমার মান সম্মান বলে একটা কথা আছে না। তানিয়াকে ডাকুন তার পছন্দ হয় কিনা?।
শ্বাশুড়ী উচ্চ স্বরে তানিয়াকে ডাক দিলে, সে দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসলো।তখনি তিনি বললেন,
আকাশ এসেছে, যাও বউ মা তাকে সালাম কর।
শ্বাশুড়ীর আদেশ অমান্য করা কি ঠিক হবে? কি আর করা সে আকাশ চৌধুরীকে পায়ে ধরে সালাম করলো।আর এই সুযোগে সে দু’হাত দিয়ে তানিয়াকে টেনে তুলে পাশের সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলল,
তানিয়া তুমি আমার ছোট বোন। তোমাকে আমি অন্য চোখে দেখছি না।তাই নিউ মার্কেট থেকে এই জামা-কাপড় গুলো কিনে এনেছি। এই শাড়িটা পরো, দেখি কেমন লাগে?
অনিচ্ছা সত্বেও তানিয়া শাড়ি পরে আকাশ চৌধুরীর সামনে গেল।আর তখনি সে তার কাঁধে হাত দিয়ে কিছু পিক তুলে নিলো।তানিয়ার প্রচণ্ড ঘৃণা হলো। পর পুরুষ কেন তার কাঁধে হাত দিলো। প্রতিবাদ করতে মন চাইলে ও শ্বাশুড়ীর ভয়ে তা কন্ট্রোল করে নিলো।আকাশ চৌধুরী মহাখুশি,কু’মতলব হাসিল করার চিন্তা ভাবনায় মগ্ন।
শ্বাশুড়ীর নির্দেশে তানিয়া আকাশ চৌধুরীকে খুব খাতির যত্ন করে খাওয়ালো।এবার আকাশ চৌধুরী খুব খুশি।তাই যাবার বেলায় শ্বাশু মা’কে বলল,
মা তানিয়াকে দেন,ক’দিন আমাদের বাসায় বেড়াবে।
মা আর অমত করলেন না। আকাশ চৌধুরী তানিয়াকে সঙ্গে করে রওয়ানা করলো।কিছু সময় রানিংয়ের পর গাড়ি জ্যামে পড়লো।একটানা তিন ঘন্টা। রাত একটা, এত রাতে বাসায় যাওয়া সমুচীন হবে না, কোন রকম অযুহাত আর কি।
তাই ম্যানেজারকে ফোন করে হোটেল রুম বুকিং করে নিলো।জ্যাম কাটতে আকাশ চৌধুরী তানিয়াকে নিয়ে হোটলে অবস্থান করলো। বাসার পরিবর্তে হোটেল তানিয়া আশ্চার্যের স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
দুলাভাই বাসায় না গিয়ে এখানে কেন?
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ,কয়টা বাজে? এত রাতে বাসায় যাওয়া নিরাপদ না।তুমি হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে নাও।আমি খাবার আনতে বলি।বলতে না বলতে অনেক দামী দামী খাবার এসে গেল তার সামনে।
এই রুমটা আকাশ চোধুরীর জন্য বরাদ্দ। টাকা এক কালীন দিয়ে দেয়া হয়। প্রায় রাতে হরেক রকম আনকালচার্ড মেয়ে নিয়ে সে এই হোটেলে রাত কাটায়। কিন্তু আজকের মেয়াটা অন্য রকম,ভদ্র,নম্র,পরনের সামাজিক পোশাক প্রমাণ করে সে কোন ভদ্র ঘরের মেয়ে, কিন্তু সে এ নোংরা কাজে আকাশ চৌধুরীর সঙ্গে কেনো?
বিষয়টা হোটেলের দায়িত্ব থাকা সকলের চোখে পড়লো। কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বললো না।এদিকে তানিয়া খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লো।চোখে ঘুম ঘুম ভাব, মনে ভয়, আকাশ চৌধুরী যদি তার কোন ক্ষতি করে। ঠিক সেই মুহূর্তে কলিং বেলের আওয়াজ তার কানে ভেসে উঠল।বারবার তিনবার বাজনার পর তানিয়া আওয়াজ তুলল,
কে ওখানে?
তানিয়া আমি তোমার বড় ভাই আকাশ চৌধুরী দরজা খোল।
তানিয়ার ইচ্ছে করছে কড়া কিছু বলতে। ফের শ্বাশুড়ীর কথা মনে পড়তেই দরজা খোলে দিলো।সে ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে,তার গা ঘেষে বসে পড়লো।শুধু তাই নয়, নোংরামী করার জন্য তাকে জড়িয়ে ধরল। তানিয়ার শত অনুরোধ তাকে দমিয়ে রাখতে পারলো না। সে তার কু’কাম হাসিল করলো।
তানিয়া সবাইকে বলে দেয়ার হুমকি দিলে, সে ভয় দেখায় এবং নোংরা ভিডিও গুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার কথা বলে। আর হোটেলে রাত কাটানোর কথাটা কাউকে না বলার জন্য বারণ করে দেয়। এবং তার কথামত না চললে সংসার ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়ার হুমকি ও দেয়।সংসার শব্দটা মেয়েদের জীবনে এমন গুরুত্বপূর্ণ যা ভাঙ্গার কথা শুনলে তাদের মাথায় সপ্ত আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।তাই শত নির্যাতনে ও বুক পাটে তবুও মুখ ফুটে না।নারীর সম্ভ্রম হানি প্রতি পদে পদে হয়। তারা লজ্জায় বলতে পারে না।আজ তানিয়ার অবস্থা ও তাই হলো।
এদিকে সুমন শিকদার বাসায় এসে বউয়ে’র কথা জিজ্ঞেস করলে,মা বলে,
আকাশ তাকে নিয়ে গেছে তাদের বাসায় বেড়াতে।
সুমন শিকদার কিছুই বলল না।বউয়ের মোবাইল ফোনে কল দিলো।ফোন বন্ধ।তারপর ভগ্নিপতির কাছে দিলো তাও বন্ধ,এবার বাধ্য হয়ে বোনের কাছে দিলো,সে রিসিভ করে বলে উঠল,
হ্যালো ভাই কেমন আছিস?তানিয়া কোথায়?
তানিয়া কোথায় মানে! সে তো দুলাভাইয়ের সঙ্গে বেড়াতে গেছে তোমাদের বাসায়।
তাই নাকি? সে তো আমাকে কিছু বলেনি।
তাদের দু’জনেরি মোবাইল বন্ধ।তাছাড়া রাত একটা এখন ও যায়নি?
কোন বিপদ আপদ হয়নি তো?
ভাই তুই চিন্তা করিস না। মোবাইলে হয়ত চার্জ নেই।তাছাড়া ঢাকা শহরের যান জটের যে অবস্থা।হয়ত জ্যামে পড়েছে, ওরা আসলে আমি জানাবো।ভালো থাকিস ভাই,ওকে।
সারারাত কোন খবর নেই।সকাল নয়টা, সুমনের বড় বোন সায়লা শিকদার হাই তুলতে তুলতে সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠে বসলো,তখনি কলিংবেল বেজে উঠল।সায়লা শিকদার দরজা খুলতেই,তাদেরকে দেখে বলে উঠল,
তোমরা!সারারাত কোথায় ছিলে?
আর বলো না জান,কি অসহ্য! জ্যামে ছিলাম।
তার মানে তুমি হবু বউটাকে এত কষ্ট দিলে?
তো আর বলছি কি। এখন জেরা করবে, না ওকে ভিতরে নিয়ে যাবে?
তাইতো, আস বোন।
আকাশ চৌধুরীর কাজের লোকের অভাব নেই।বুয়া সহ দু’চারজন লোক সবসময় তার বাসায় কাজ করে।শাড়ি,চুড়ি গহনা,পরা ছাড়া সব কাজ, কাজের লোকেরা করে থাকেন। কিন্তু আকাশ চৌধুরী আজ নিজে গেলেন বাজার করতে।কয়েক প্রকারের ছোট বড় মাছ,মাংস ও কম না, গরু খাশি,হাঁস মোরগ কবুতরের বাচ্চা কিনে ভ্যানে করে পাঠিয়ে দিলেন।আকাশ চৌধুরী লাঞ্চ বাইরে করেন।কিন্তু আজ বাসায়!সায়লা চৌধুরী প্রশ্ন তুলল,
কি ব্যাপার তুমি!এই ভর দুপুরে?
কি বল,আমার একমাত্র শ্যালকের বউকে বাসায় রেখে আমি অফিসে খাব।?তাকে আপ্যায়ন করতে হবে না?দাঁড়িয়ে আছ কেন?তাড়াতাড়ি লাঞ্চ রেডি কর।
তানিয়ার আপ্যায়ন আদর যত্ন উপছে পড়ছে।বিকেলে বের হলো হাওয়া খেতে, বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা শেষ করে, ফের ঐ হোটেলে অবস্থান করলো।তানিয়া কিন্তু আজ থেমে নেই,কড়া ধমক দিয়ে বলে,
দুলাভাই আজ আবার আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন?
প্রেম করতে।
আমার স্বামীকে সব বলে দেব।”ডোন্ট টাচ মি”।
এতে তোমার সংসার নষ্ট হবে।
কেন কেন?
আমি বলব তুমি আমাকে অপার দিয়েছ।
বললেই হলো?
অবশ্যই, মোবাইলে তোমার সব পিক আমার সাথে এংগেজ।কে তোমার কথা বিশ্বাস করবে? বরং আমার কথা বিশ্বাস করে তোমাকে তাড়িয়ে দেবে।দেখলে না সে দিন মা আমার কথা কতটা বিশ্বাস করলো।এটা ছিল আমার অভিনয় তোমাকে কাছে পাওয়ার। আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।সায়লা শিকদারকে তাড়িয়ে দিয়ে তোমাকে বিয়ে করব।
তানিয়ার ভিতরে বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে।কোন বুদ্ধি মাথায় কাজ করছে না।আকাশ চৌধুরী আজ ও তানিয়াকে নিয়ে মজার ভুবনে…।
এভাবে সাত দিন পার হলো।তানিয়ার আর সহ্য হচ্ছে না।স্বামীকে কড়াকড়ি ভাষায় বলে,
তুমি এক্ষণি এসে আমাকে নিয়ে যাও।
দুলাভাইর সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে কথা হয়েছে।তিনি বারণ করেছেন। আর ও কয়দিন থাকতে বলেছে।
স্টপ আর একটা কথাও বলবে না। বিয়ে কি তুমি করেছ? না আকাশ চৌধুরী?
মানে কি?
মানে হলো আমি কি তোমার বউ, না আকাশ চৌধুরীর বউ?
তুমি আকাশ চৌধুরীর বউ হতে যাবে কেন?তুমি আমার বউ।
তাহলে আকাশ চৌধুরীর অর্ডার ছাড়া নড়ছ না কেন?
আহা!মাথা গরম না করে কি হয়েছে বলবে তো?
এত প্রশ্ন না করে বল,আমাকে নিয়ে যাবে কিনা?
লক্ষিটি রাগ করোনা আমি এক্ষণি গাড়ি নিয়ে আসছি।
তানিয়া বাসায় ফিরল।কিন্তু আগের মতো হাসি খুশি ভাব সাব আর নেই।চোখে মুখে বিষন্নতা, চেহারায় চিন্তার রেখা,কোন কিছুতে মন বসছে না।
আকাশ চৌধুরীর নোংরামীর কথাগুলো কি বলবে? বলাটা কি ঠিক হবে?কোন বুদ্ধি তার মাথায় কাজ করছে না। খুব টেনশন ফিল করছে।
শেষে ভালো একটা বুদ্ধি তার মাথায় কাজ করলো।সে সিদ্ধান্ত নিলো আকাশ চৌধুরীকে আর দেখা দেবে না।শ্বাশু মা শত অনুরোধ করলে ও না। ঠিক সেই মুহূর্তে আকাশ চৌধুরীর ফোন আসল।তানিয়া রিসিভ করলো না।এবার অন্য নাম্বার থেকে করলো।তানিয়া রিসিভ করতেই আকাশ চৌধুরী বলে উঠল,
জান তুমি আমাকে না বলে চলে গেলে কেন?যেমন করে হোক তোমাকে আমি বিয়ে করব।আমার লাইফে তোমার মত সুন্দরী মেয়ের বিচরণ পূর্বে ঘটেনি।সুমন তোমাকে কি দিতে পারবে? আমি তোমাকে গাড়ি, বাড়ি, ডায়মন্ডের অলংকার, সব বানিয়ে দেব।রাজ রানী করে মাথায় তুলে রাখব।অপূর্ব ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে সুখী করব।কাল তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব। তুমি রেডি থেকো।ওকে ভালো থেকো জান।
যাক এত দিন পর তানিয়া কাজের কাজ করলো।আকাশ চৌধুরীর সবকথা রেকডিং করে নিলো। এদিকে তানিয়া তার ইউনিভার্সিটি লাইফের সিনিয়র আপু রেহানা পারভিনকে আকাশ চৌধুরীর নোংরামী থেকে শুরু করে ভালোবাসা ও বিয়ের প্রস্তাব পর্যন্ত সব ঘটনা প্রকাশ করলো।রেহানা পারভিন সিনিয়র হলেও তানিয়ার ভালো একজন বন্ধু। তাছাড়া সে সত্যবাদী ও প্রতিবাদী একজন নারী।কাল আকাশ চৌধুরী আসলে কি করতে হবে সে পরামর্শ রেহানা পারভিন তানিয়াকে বলে দিলো।জাস্ট টাইমে লুচু আকাশ চৌধুরীর শ্বশুরালয়ে আগমন।তানিয়া অসুস্থতার ভান করে লেপ মোড়া দিয়ে শুয়ে আছে।শ্বাশু মা দরজায় নক করে বলে,
বউ মা উঠ,আকাশ এসেছে তার জন্য চা নাস্তা নিয়ে এসো।
নরম স্বরে উত্তর দিলো তানিয়া,
মা আমি অসুস্থ। বুয়াকে বলেন চা নাস্তা দিতে।
তিনি আর কিছুই বললেন না।বুয়াকে দিয়ে চা নাস্তা পাঠিয়ে দিলেন।বুয়াকে দেখে তার পিত্তি জ্বলে উঠল।সে কটাক্ষ করে শ্বাশু মাকে বলল,
মা আমাকে এত বড় অপমান!বুয়াকে দিয়ে চা নাস্তা পাঠালেন।তানিয়া কোথায়?
বাবা আকাশ রাগ করোনা তানিয়া অসুস্থ।
মা সব মিথ্যে কথা। বিয়ে হতে না হতে সে আমাদেরকে পর ভাবতে শুরু করেছে। একে একে সবাইকে আলাদা করে ফেলবে। আমি শুনেছি অন্য ছেলের সাথে তার রিলেশন।সাবধান ওকে এতটা বিশ্বাস করবেন না।আমার কথাগুলো কতটা সত্য তার প্রমাণ এক্ষণি পেয়ে যাবেন।গিয়ে দেখেন সে সম্পূর্ণ সুস্থ।
শ্বাশু মা রেগে বোম। তানিয়ার দরজা নক করে উচ্চ স্বরে ডাক দিলো।সে দরজা খুলতেই, তিনি তার গায়ে হাত দিয়ে বুঝলেন, সে সম্পূর্ণ সুস্থ।তখনি জামাইর কথা বিশ্বাস করে তানিয়াকে ইচ্ছেমত বকাঝকা করলেন।চরিত্রহীনা বলে সংসার ভাঙ্গার কথা ও বললেন।শুধু তাই নয়,তানিয়ার মা বাবাকে দ্রুত আসতে বললেন।এর ফাঁকে সুমন শিকদারকে ও জামাইর মিথ্যে বানোয়াট গল্প বলে কান ভারী করে দিয়েছে।বাসায় ফিরে সে গুম মেরে শুয়ে আছে।তানিয়া ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে তাই বিরক্ত না করে আপন নিয়মে সেও শুয়ে আছে।
ইতিমধ্যে আকাশ চৌধুরী তানিয়ার ছবি দিয়ে কম্পিউটারে কিছু নোংরা ছবি বানালো।সবার চোখে তাকে চরিত্রহীনা প্রমাণ করার জন্য।
তানিয়ার বাবা মা,দুএকজন আত্নীয় স্বজন,রেহানা পারভিন সহ সবাই সুমন শিকদারের বাসায় উপস্থিত হলো।বেয়াইন,আকাশ চৌধুরী,তার স্ত্রী সুমন শিকদার সবাই গুম মেরে বসে আছে।কারো মুখে কোন কথা নেই।তখনি তানিয়ার বাবা বলে উঠল,
বেয়াইন সাহেবা আমাদেরকে জরুরী আসতে বললেন যে,তানিয়া কি কোন অন্যায় করেছে?
এই সেরেছে কারো মুখ কি আর থেমে থাকে।বেয়াইন সাহেবার মুখ ফোটে জামাইর মিথ্যে বানোয়াট গল্প বলতে শুরু করলো।
এবার তানিয়ার বাবার পালা।তিনি বললেন,
বেয়াইন সাহেবা,আমার মেয়ের যে পর পুরুষের সাথে রিলেশন তার কি প্রমাণ আছে?
সব প্রমাণ আছে।দেখাও তো আকাশ।
এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মানে ভিলেন হলেন লুচু আকাশ চৌধুরী। মিথ্যে গল্প বানানো তার জন্য ইজি ব্যাপার। সেই তানিয়ার নোংরা ভিডিও ও কিছু ছবি তাদের দেখালো।তারপর বেয়াইন সাহেবা বলল,
এবার বিশ্বাস হলো তো?যত বড় মুখ নয়, তত বড় কথা। আপনার মেয়েকে নিয়ে যান।এই নষ্ট মেয়ের দ্বারা সংসার হবেনা।দেনা পাওনার হিসেবটা কাজী অফিসে বুঝিয়ে দেব।
বেয়াইন সাহেবা ভালো মন্দ যাচাই না করে, এত সহজে হিসেবটা মিলিয়ে ফেললেন।
এত প্রমাণের পরও আরও প্রমাণ চান?
জ্বি চাই।
শ্বাশু মা আর জামাই মিলে অনেক আজে বাজে কথা বললেন।এবার রেহানা পারভিন মুখ খুললেন।তিনি কড়া ধমক দিয়ে বললেন,
স্টপ আকাশ সাহেব আর একটা বাজে কথা নয়, অনেক হয়েছে। আজ এখানে আসল সত্য উদঘাটন করে নষ্টামীর বিচার করব। সে যেই হোক।বিচারের রায় কিন্তু আমরা দেব না। খালাম্মা দেবেন।তবে তার আগে কিছু কথা মনোযোগ দিয়ে আপনাকে শুনতে হবে।
হ্যাঁ শুনব বল।
খালাম্মা বেয়াদবি মাফ করবেন।সত্য কথাগুলো না বলে আর পারলাম না।তানিয়া কার স্ত্রী?
কার আবার, সুমনের।
তাহলে আকাশ চৌধুরী সাথে বেড়াতে দিলেন কেন?
বোন হিসাবে নিয়েছে তাতে কি হয়েছে?
খালাম্মা কি হয়নি বলেন? সমস্যা তো ওখানে।
কি বলছ তুমি?
জ্বি খালাম্মা সত্যি বলছি।
রেহানা তুমি কোন কিছু গোপন না করে সব সত্য আমাকে বল।
জ্বি বলছি,
আল্লাহ পাক পবিত্র কোরানে এরশাদ করেছেন। প্রত্যেক মুসলিম নারীর বারোজন পুরুষকে দেখা দেয়া জায়েজ।আর বাকী সবাইকে দেখা দেয়া নাজায়েজ ও কবীরা গুনাহ।আর এ না দেখা দেয়ার মধ্যে প্রথম বেমাহারাম হলো, দেবর ভাসুর, নন্দিয়া মানে স্বামীর ভগ্নিপতি,নিজের ভগ্নিপতি।মৃত্যুকে যে রকম মানুষ ভয় পায় ঠিক প্রথম কাতারে চিহ্নিত এই ব্যক্তিদেরকে ও নারীরা সেই রকম ভয় করতে হবে।বেপর্দায় সাজুগুজু করে তাদের সামনে যাওয়া যাবেনা।একা যাওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। বিয়ের পর একজন নারীর প্রথম “ফরজ” কাজ হলো তার স্বামীকে সন্তুষ্ট করা।গুরুজনদের মান্য করা, অসুস্থ ও বৃদ্ধাবস্থায় সেবাযত্ন করা।কিন্তু আমরা আসল সত্যকে ডেকে রেখে, নকল সত্য নিয়ে টানাটানি করি।
রেহানা নকল সত্য আবার কি?
খালাম্মা আমরা প্রায় দেখে থাকি,বিয়ের পর মেয়েদেরকে মা-বাবা শ্বশুর -শ্বাশুড়ী উপদেশ দেন, তোর দেবর ভাসুর নন্দিয়া এদের ঠিকমতো টেককেয়ার করবি কিন্তু।মুরুব্বীদের এই অযুক্তিক অসত্য উপদেশ মানতে গিয়ে তারা এক সময় নোংরা জগতে চলে যাই।শুধু তাই নয়,প্রায় দেখা যাই,দেবর ভাবীকে নিয়ে পালিয়েছে, ভাসুর ছোট ভাইয়ের বউকে নিয়ে পালিয়েছে,নন্দিয়া শ্যালকের বউকে নিয়ে পালিয়েছে আরও অনেক অনেক জঘন্য ঘটনা যা বলতে আমার মুখে বাঁধছে। আজকে আমাদের সমাজে এই নোংরামির জন্য দায়ী হচ্ছে, আপনাদের মত কিছু মুরব্বী শ্রেণির লোকেরা। যারা অন্যায় অসত্য অযুক্তিক উপদেশ দিয়ে ছেলে মেয়ের মাথা খারাপ করে দেন।যার ফলশ্রুতিতে নারী পুরুষ উভয়ে পাপের পথে পরিচালিত হয়। একে বলা হয় নকল সত্য।খালাম্মা এবার আপনি বলুন তানিয়াকে আকাশ সাহেবের সাথে বেড়াতে দেয়া কোরান ও সুন্নাহ মোতাবেক হয়েছে কি?
রেহানা সত্য কথা বলতে কি, বর্তমানে আমরা কেউ কোরান হাদিস নিয়ে ভাবি না।যুগের সাথে তাল মেলাতে আমরা এ সমস্ত পাপ কাজে লিপ্ত হই।আসলে তা ঠিক হয়নি।
আলহামদুলিল্লাহ খালাম্মা আপনি কোরান ও হাদিস সম্পর্কে এটুকু বুঝতে পেরেছেন শুনে খুশি হলাম।
তো রেহানা তানিয়ার এই নোংরা ছবি কোত্থেকে এলো?
এই নোংরা ছবির মুল নায়ক ও ভিলেন হলো আপনার জামাতা আকাশ চৌধুরী।
বল কি!
জ্বি খালাম্মা। সত্যি বলছি।গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠানের পর থেকে সে তানিয়াকে কু’দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করলো।তারপর কায়দা করে বেড়ানোর নাম করে হোটেলে রাত কাটালো।
তার মন জয় করার জন্য বিভিন্ন জাগায় ঘুরে বেড়াল।তারপর বিয়ের প্রস্তাব দিলো।তানিয়া রাজী হয়নি বলে কম্পিউটারের এই নোংরা নকল ভিডিও ছবি বানিয়েছে।
আকাশ চোধুরী চিৎকার করে বলে,
না মা সব মিথ্যে কথা।তানিয়া আমার ছোট বোন। ঐ মহিলা সব মিথ্যে বলেছে।
আমি মিথ্যে বলেছি, না।এই মোবাইলে সব রেকডিং আছে, আপনারা শুনুন।মোবাইল অন করতে সব সত্য বেরিয়ে আসল।
শ্বাশু মা ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
ছিঃছিঃ আাকাশ তোমার চরিত্র এত নোংরা।শেষে কিনা ছোট ভাইয়ের বউকে নিয়ে…।
কি লজ্জা।
তুমি আর কখনও আমাকে মা বলে ডাকবে না।দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে।
খালাম্মা এবার বুঝলেন তো মিথ্যাবাদী লুচু পুরুষেরা কিভাবে সতী নারীর সংসার ভাঙ্গার প্ল্যান করে।নিজে পরকীয়া প্রেমে পড়ে অন্যকে ফাঁসানোর চেষ্টা, ভাগ্যিস তানিয়া রাজী হয়নি। তানা হলে নিশ্চিত আপনার মেয়ের কপাল পুড়ত।চল তানিয়া, তোকে আমরা আর ও ভালো ঘরে বিয়ে দেব।
কি বললে রেহানা! আমার সতী বউমাকে আমি দিলে তো?সব দোষ আমার।
কিন্তু আপনার লুচু জামাইটার “পরকীয়া প্রেম “কিভাবে বন্ধ করবেন?যার কু’চোখ আছর পড়েছে তানিয়ার উপর।
সে দায়িত্ব আমার। এই নিয়ে তোমরা ভেবো না।
তবুও বলেন না, একটু শুনি।
রেহানা তুমি আমাদের চোখের কু’চশমা সরিয়ে দিয়েছে। আজ থেকে আমরা কোরান ও হাদিসের আলোকে জীবন পরিচালিত করব।শুধু তানিয়া নয় প্রত্যেক নারীকে বলব বেগানা ওইও বেমাহারাম পুরুষকে দেখা না দিতে এবং পর্দা মোতাবেক চলা ফেরা করতে।আর আমার মতো ভুল যাতে কেউ না করে তাও বুঝিয়ে বলবো।যাতে কোন পুরুষের কু’আছর কোন নারীর উপর পড়তে না পারে তার জন্য সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যাবো।ইনশাআল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ খালাম্মা শুনে খুশি হলাম। আল্লাহ পাক আপনাকে কামিয়াব করুক।আমীন।।