বিলম্বিত বাসর
আফছানা খানম অথৈ
লতিফ মাস্টার একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।তিনি পড়া-লেখায় খুব ভালো ছিলেন।প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হতেন না।খুব ভালোভাবে বি এ পাশ করেন।এরপর ও তার চাকরী হয়নি।কারণ চাকরী হতে হ্যালো হ্যালো লাগে,ঘুষ লাগে।লতিফ মাস্টারের এসব নেই।তাই চাকরী হয়না।একবার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে লিখিত পরীক্ষায় তিনি পাশ করেন।আনন্দে তার বুকটা ভরে গেল।তিনি তার প্রিয় শিক্ষক ইউছুপ স্যারকে খবরটা দিলেন।খবর শুনে ইউছুপ স্যার বললেন,
লতিফ তোমার রেজাল্ট শুনে খুশি হলাম।কিন্তু…।
কিন্তু কি থামলেন কেনো বলুন স্যার?
লতিফ ঘুষ ছাড়া চাকরী হয় না।জানি ঘুষ দেওয়ার মতো সামর্থ্য তোমার নেই।তো এক কাজ কর।
জ্বি স্যার বলুন।
তুমি আমাদের এম পি সাহেবের কাছে যাও।তার হাতে পায়ে ধরে কিছু করতে পার কি না দেখ।
স্যারের অনুরোধে লতিফ ছুটে গেল এম পি সাহেবের বাসায়।এম পি সাহেব লোকজন নিয়ে বৈঠকখানায় মিটিং করছেন।লতিফ বিনয়ের সহিত সালাম দিলো।তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন,
তুমি কে?তোমাকেতো চিনতে পারালাম না।
জ্বি হ্যাঁ মানে আমি গনু মুন্সীর ছেলে আবদুল লতিফ, বি এ পাশ।
ওহ আচ্ছা, তা কি মনে করে?
জ্বি না মানে আমার একটা চাকরীর দরকার।
কোথাও ইনটারভিও দিয়েছ?
জ্বি হ্যাঁ সাহেব।প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেছি।মৌখিক পরীক্ষা আগামী মাসের ১৮ তারিখ।যদি উর্ধবতন কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করতেন,আমার চাকরীটা হয়ে যেত।
লতিফ বর্তমানে চাকরী হচ্ছে সোনার হরিণের মতো। ধরা ছোঁয়ার বাইরে।তাছাড়া আমরা নেতারা ক্ষনস্থায়ী,আর অফিসারেরা দীর্ঘস্থায়ী। খালী হাতে সুপারিশ কোন কাজে আসবে না।উনারা শুনবেন না।যদি কিছু টাকা দিতে পার চেষ্টা করে দেখতে পারি।
জ্বি সাহেব কত টাকা লাগবে?
লাগে তো অনেক টাকা।এত টাকা দেয়ার মতো সামর্থ্যতো তোমার নেই।তো আপাতত তিন লক্ষ হলে চলবে।বাকীটা আমি দেখব।
তিন লক্ষ টাকার কথা শুনে লতিফের কলিজায় ছ্যাৎ করে উঠল।আপন মনে বলে,ঠিকমতো খেতে,পরতে পারি না,উনি বলে তিন লক্ষ টাকা,এত টাকা কোথায় পাবো। হায় আল্লাহ আমার বুঝি চাকরী হবে না।তাকে চুপ থাকতে দেখে এম পি সাহেব বললেন,
কি লতিফ চুপ করে আছ কেনো,কিছু একটা বল?
কি বলবে লতিফ, সে বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।তবুও বহু কষ্টে উত্তর দিলো,
সাহেব আমি এখন আসি, পরে যোগাযোগ করব।
এম পি সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সে ছুটে গেল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বাসায়।তাকে হাতে পায়ে ধরে অনুনয় বিনয় করে চাকরীটা চাইল।কিন্তু কোন লাভ হলো না।তারও এক কথা ঘুষ ছাড়া চাকরী হবে না।বিদায় হও। দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলেন।
একবুক দু:খ নিয়ে লতিফ বাড়ি ফিরে আসল।যথা সময়ে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো।ঘুষ দেয়া লোকদের চাকরী হয়ে গেল।কিন্তু লতিফের চাকরী হলো না।এভাবে সে আরও অনেক পরীক্ষায় পাশ করলো।কিন্তু চাকরী হলো না।শেষে বাধ্য হয়ে টিউশনির পথ বেচে নিলো। এরপর থেকে তাকে সবাই লতিফ মাস্টার বলে ডাকে।লতিফের মা নেই বাবা আছে।বাবা গনু মুন্সী ছেলেকে সময়মতো বিয়ে করালেন।তার এক মেয়ে এক ছেলে হলো।সময়ের গন্ডি ফেরিয়ে তারা বড় হয়ে উঠল।মেয়ে মীম এইচ এস সি তে, আর ছেলে রোহান এস এস সি তে পড়ে।লতিফ মাস্টারের ছোট্ট সংসার, অভাব অনটন হলে ও ভালোভাবে কেটে চলেছে।একদিন হঠাৎ ছেলে রোহান স্কুলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।টিচার’রা খবর দিলে লতিফ মাস্টার ছেলেকে বাসায় নিয়ে আসে।সামনে ফাইনাল পরীক্ষা পড়া-লেখার প্রচণ্ড চাপ তাই সিরিয়াস কিছু না ভেবে, একজন পল্লী ডাক্তার এনে জ্ঞান ফেরার জন্য স্যালাইন ইনজেকশন পুস করলেন।দাদা গনু মুন্সী নাতীকে খুব করে দোওয়া পড়ে ফুঁ দিলেন।আল্লাহর রহমতে রোহানের জ্ঞান ফিরে আসল।সবাই টেনশন মুক্ত হলো।
এর ফাঁকে কেটে গেল ক’মাস রোহানের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলো।দাদা নাতী এশার নামাজ পড়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো।মাঝপথে আসার পর রোহান সেদিনকার মতো অজ্ঞান হয়ে পড়লো। গনু মুন্সীর সঙ্গে আরও লোকজন ছিল।তারা সবাই মিলে তাকে পাঁজাকোলা করে বাসায় নিয়ে আসল।সেদিনকার মতো পল্লী ডাক্তার এনে স্যালাইন ইনকেজশন পুস করল।ঐদিনের মতো দাদা গনু মুন্সী দোওয়া পড়ে নাতীকে কয়েকবার ফুঁদিলেন।স্যালাইন ও শেষ হয়ে গেল।কিন্তু রোহানের জ্ঞান ফিরে আসল না।মা রোকসানা বেগম চিৎকার করে কেঁদে উঠে বললেন,
ওগো আমার ছেলের কি হয়েছে।সে কথা বলছে না কেনো?তোমরা সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছ?
কারো কোন জবাব নেই।সবার চোখ থেকে অনবরত জল ঝরছে।
রোহানের টিচার বজল মাস্টার এগিয়ে এসে বললেন,
আপনারা সবাই থামুন।আমার কথা শুনুন।জীবিত মানুষকে মেরে ফেলবেন নাকি?রোহান এখনো বেঁচে আছে।
সন্তান বেঁচে আছে শুনে মায়ের মন আনন্দে ভরে উঠল।তিনি কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,
সত্যি বলছেন স্যার?
জ্বি হ্যাঁ সত্যি।
তাহলে কথা বলছে না কেনো?
সে অসুস্থ তাই কথা বলতে পারছে না।তাকে হাসপাতালে নিতে হবে।।লতিফ ভাই আর দেরী করা ঠিক হবে না।চলুন ওকে বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।
লতিফ মাস্টার আর দেরী করলো না।ছেলেক শহরের বড় হাসপাতালে নিয়ে গেল।ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানাল তার দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে।আগামী চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে একটা কিডনি দিতে হবে।তানা হলে তাকে বাঁচানো যাবে না।কিডনি দুটোর দাম চল্লিশ লক্ষ টাকা।কথাটা শুনা মাত্রই মা বাবা সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।দাদা গনু মুন্সী নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে নাতীর রোগ মুক্তি ও হায়াত বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করছেন।মা-বাবার ও একই অবস্থা নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছেন।এছাড়া তাদের আর কোন উপায় নেই।চব্বিশ ঘন্টা পার হতে চলেছে, আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকী এমন সময় তার বড় বোন মীম হাসপাতালে ছুটে এসে বলল,
ডাক্তার সাহেব আমার ভাইকে আমি কিডনি দেব।
ডাক্তার তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
সত্যি বলছেন?
জ্বি ডাক্তার সাহেব,আমার একটা কিডনি নিয়ে নিন।
ডাক্তার আর দেরী করলো না।মীমকে অপারেশন কক্ষে নিয়ে গেল।অপারেশন করে মীমের কিডনি নিয়ে নেওয়া হলো।তারপর রোহানকে তা স্থাপন করা হলো।এক সঙ্গে দুটো অপারেশন আল্লাহর রহমতে সাকসেস হলো।রোহান সুস্থ হয়ে উঠল।সবার চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল।দাদা গনু মুন্সী নাতীর সুস্থতার জন্য মসজিদে মিলাদ পড়িয়ে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করলেন।
এর ফাঁকে কিছু সময় পার হলো।মীম এইস এস সি পাশ করলো।তার জন্য একটা ভালো বিয়ের প্রস্তাব আসল।মীম দেখতে শুনতে মন্দ না,রপবতী, গুনবতী,নামাজি, পর্দানশীন তাই সবার পছন্দ হয়ে যায়।তাকে দেখে পাত্রের মা বললেন,
ভাইজান আপনার মেয়েকে আমাদের পছন্দ হয়েছে।আমরা সমন্ধ করতে রাজি।
লতিফ মাস্টার সত্যবাদী কোনকিছু গোপন করতে চান না।তাই সরাসরি বললেন,
ভাবী সাহেবা একটা কথা, সত্যকে লুকিয়ে কখনো সুখী হওয়া যায় না।তাই কথাটা না বলে পারছি না।আমার মেয়ে সবদিকে ভালো তবে একটা সমস্যা।
বলুন কি সমস্যা?
আমার মেয়ের একটা মাত্র কিডনি।
একটা কেনো?
তিনি আর দেরী করলেন না।একটা কিডনির কারণ তাদেরকে বুঝিয়ে বললেন।সব কথা শুনার পর পাত্র পক্ষ কেটে পড়ল।
মা রোকসানা বেগম এগিয়ে এসে বললেন,
দিলেতো মেয়ের বিয়েটা ভেঙ্গে।এসব কথা বলার কি দরকার ছিল?
রোকসানা সে তুমি বুঝবে না।ওরা এখন পালিয়েছে ভালো হয়েছে।যদি বিয়ের পর সত্যটা জানতে পেরে আমার মেয়েকে ত্যাগ করত,তখন টেনশন আরও বাড়ত, বৈ কমত না।
তাই বলে মেয়েটার বিয়ে হবে না?
তা বলেছে কে,উপরওয়ালাকে ডাক তিনি সব সমস্যার সমাধান করবেন।
রোহান মা-বাবার কথোপকথন শুনল।তারপর বোনের পাশে গিয়ে বসল।বোনের কাঁধে হাত রেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বলল,
আপু আমি বোধহয় তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম।
কেনোরে কি হয়েছে?
আমাকে কিডনি দেয়ার কারণে আজ তোর বিয়েটা ভেঙ্গে গেল।নিজেকে ধ্বংস করে আমায় কেনো বাঁচালি।মরে যেতাম ভালো হত।
লক্ষি ভাই আমার এমন অলক্ষণে কথা বলিস না।তোকে বাঁচানোর আমি কে,আমিতো মাত্র কিডনি দিয়েছি।তোকে বাঁচিয়েছে একমাত্র আল্লাহ।আল্লাহ ছাড়া বাঁচানোর ক্ষমতা কারো নেই।আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় কর।তুই ওসব নিয়ে একদম ভাবিস না।সময়মতো সব হবে।
বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু প্রস্তাব আসা বন্ধ নেই।একটার পর একটা আসে আর এভাবে ভেঙ্গে যায়।
এর ফাঁকে কেটে গেল আরও কিছু সময়।মীম ডিগ্রীতে ভর্তি হলো।সে গ্রামের রাস্তা দিয়ে নিয়মিত পায়ে হেটে কলেজে যাতায়াত করে।তাকে দেখে পাড়া প্রতিবেশীরা ঈশারা ঈঙ্গিতে কিছু কথা বলে,ভ্যাংচি কাটে, সমালোচনা করে।তাদের ধারণা মেয়েরা বেশি দূর লেখা-পড়া করা পাপ।
একদিন এক প্রতিবেশী জয়তুন্নেছা বাড়ি বয়ে এসে বললেন,
রোহানের মা লজ্জা শরমের মাথা খাইছ নাকি,এত বড় ডেঙ্গী মাইয়া এখনো বিয়া দিতাছ না ক্যান।এখনো ড্যাং ড্যাং কইরা ঘুইরা বেড়াইতাছে,পড়াইতাছো না,মাইয়াগো এত বেশী পড়াইতে নাই,গুনা অইব।তারাতারি বিদায় কর।নইলে গুনার বোঝা বইয়া বেড়াইতে অইব।
রোকসানা বেগম জানে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না কেনো।তাই জয়তুন্নেছার মুখের উপর কিছু না বলে বোবা কান্নায় জর্জরিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।জয়তুন্নেছা নিজে নিজে বকবক করে বিদায় নিলো।
এক সময় মীম বি এ পাশ করল।ইনটারভিও দিতে দিতে বাবার মতো অস্থির হয়ে উঠল।পরীক্ষায় পাশ করে কিন্তু চাকরী হয় না। ঐ যে বললাম চাকরী হতে ঘুষ লাগে হ্যালো হ্যালো লাগে।মীমের এসব নেই তাই যত সমস্যা।বিয়ে ও হচ্ছে না,চাকরী ও হচ্ছে না।এভাবে আর কতদিন।
এবার সে বাধ্য হয়ে একটা এন জিও প্রতিষ্ঠানে সুপার ভাইজার পদে চাকরী নেয়।দিন যায় রাত হয় কোনমতে চলছে মীমের দিনকাল।মীমের দাদা গনু মুন্সী বয়সের কারণে বার্ধ্যকে নুয়ে পড়েছে।আগের মতো হাটাচলা করতে পারেন না।তবুও তিনি জামায়াতে নামাজ পড়েন।একদিন নামাজ পড়া অবস্থায় তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।সবাই মিলে পাঁজাকোলা করে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসল।তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তার ডাকা হলো।ডাক্তার যন্ত্র বসিয়ে দেখেন প্রেশার নেই,মানে উনি মারা গেছেন।ছহিছালামতে উনাকে দাফন করা হলো।কয়েকদিন পর মীমের জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব আসল।পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে।কথাটা গ্রামের লোকদের কানে যেতে তারা ক্ষেপে উঠল।কয়েকজন মিলে লতিফ মাস্টারকে বললেন,
কি লতিফ মাস্টার তুমি নাকি মেয়ে বিয়ে দিতেছ?
কেনো কি হয়েছে?
এত বড় বিদ্যান হয়েছ, এটা জান না,মুরব্বী মারা গেলে গুরুমরা মানতে হয়।সন না ফিরতে বিয়ে শাদী দেয়া যায় না।
গনি ভাই এসব কুসংস্কারের কথা, হাদীসে নেই।
লতিফ মাস্টার সব কথা হাদীসে থাকে না।এটা মুরব্বীদের কথা,আমরা মেনে এসেছি।তোমাকে ও মানতে হবে।
মুরব্বীরা অনেক ভুল করেছে, অন্যায় করেছে।তাই বলে এসব অন্যায় মানব?
কড়া ধমক দিয়ে গনি মিয়া বলল,
মানতে তোমাকে হবেই।তানা হলে সমাজে বাস করতে পারবে না।
কি আর করা, লতিফ মাস্টার বাধ্য হয়ে এক বছরের জন্য বিয়ে স্থগিত করল।এক বছর পার হলো।লতিফ মাস্টার এবার মেয়ে বিয়ে দিতে প্রস্তুত।কিন্তু পাত্র খুঁজে পাচ্ছে না।কারণ তার একটা কিডনির কথা সমাজের সবাই জেনে গেছে।তাই বিয়ের প্রস্তাব আসা বন্ধ হয়ে গেল।লতিফ মাস্টার পড়লেন মহাচিন্তায়।কিভাবে মেয়েকে পাত্রস্থ করতে পারবেন,সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠলেন।একদিন মা রোকসানা বেগম বললেন,
ওগো মেয়েটার যে বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে সে খেয়াল আছে?
কি করব বল।চেষ্টাতো আর কম করিনি।সবার এক কথা,একটা কিডনি মানে সে সম্পূর্ণ অচল।এমন মেয়ে আমরা বিয়ে করাব না।এভাবে সব বিয়ে ভেঙ্গে গেল।প্রস্তাব তো কম আসেনি।
তাই বলে মেয়েটার বিয়ে হবে না?
আল্লাহ মাবুদে জানেন।আমি কিছু বলতে পারবো না।
মা-বাবার কথোপকথন শুনে মীম এগিয়ে এসে বলল,
বাবা তোমরা এসব নিয়ে একদম চিন্তা করো না।কপালের লিখন না যায় খণ্ডন। কপালে যা আছে তাই হবে।তা কেউ খণ্ডন করতে পারবে না।
এর ফাঁকে কেটে গেল আর ও কিছু সময়।মীমের অফিসে একজন নতুন অফিসার আসল।নাম হারুনুর রশিদ। দুজনের মাঝে আলাপ পরিচয় হলো।প্রথম দেখাতে মীমকে উনার পছন্দ হলো।হারুন সাহেব আর দেরী করলেন না।মীমের বাবার কাছে সরাসরি বিয়ে প্রস্তাব দিলেন।
লতিফ মাস্টার খুশি হয়ে উঠল ঠিকই, কিন্তু ভিতরটা ভয়ে শংকিত।যদি বিয়েটা আবার ভেঙ্গে যায়।তবুও নি:সংকোচে বললেন,
বাবা হারুন আমার মেয়ের ব্যাপারে একটা কথা।
জ্বি বলুন।
আমার মেয়ের একটা মাত্র কিডনি।
তা আমি জেনেছি।
এরপরও আমার মেয়েকে বিয়ে করবে?
জ্বি হ্যাঁ করব।আমি ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ করেছি।একটা কিডনিতে মানুষ সম্পূর্ণ সুস্থ এবং সবল।কোন সমস্যা নেই।এমন কি মা হতেও কোন সমস্যা হবে না।আপনি তাড়াতাড়ি আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করুণ।
খুশিতে লতিফ মাস্টারের বুকটা ভরে গেল।তিনি ধুমধাম করে হারুনুর রশিদের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিলেন।হারুন সাহেব মীমকে পেয়ে মহাখুশি।দুজনের মাঝে অনুষ্ঠিত হলো “বিলম্বিত বাসর”।
ঃসমাপ্তঃ