গল্প রাক্ষস আফছানা খানম অথৈ

0

গল্প
রাক্ষস
আফছানা খানম অথৈ

একদেশে বাস করত এক রাজা, নাম তার আরমান শেখ।একদা তিনি শিকারে বের হলেন। গভীর অরন্যের ভিতর ঢুকে পড়লেন।মেটো পথে হাটতে হাটতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লেন।
একটু জিরোতে গাছের নিচে বসে পড়লেন।গুম পাড়ানি মাসি পিসির আর সহ্য হলো না।রাজার চোখে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।কিছুক্ষণ পর এক মেয়েলি কণ্ঠের কান্নার সুর ভেসে উঠল।সুর যেন থামছে না গুন গুন করে বাজছে।রাজা কি আর থেমে থাকতে পারে।তিনি আড়মোড় খেয়ে জেগে উঠলেন।ততক্ষণে কান্নার সুর থেমে গেল।রাজা তো অবাক এ গভীর অরন্যে কাঁদলো কে? ভাবনার অবসান হতে না হতে সেই করুণ সুর আবার বেজে উঠল।রাজা কিন্তু এবার থেমে নেই।আশ পাশ চারদিক তাকালো।কোথাও কেউ নেই।তবে এ সুর আসল কোত্থেকে।তিনি এবার গাছের উপরের দিকে তাকালেন। এ কি! এক রুপসী রাজকন্যা গাছের মগডালে বসে বসে কাঁদছে। রাজার দয়া হলো, সে তাকে নামতে বলল।মেয়েটি প্রথমে অস্বীকৃতি জানালে ও পরে ঠিক ঠিক নেমে পড়লো।রাজা পরিচয় জানতে চাইলে, মেয়েটি কেঁদে কেঁদে এক কথায় জবাব দেয়,
রাজা সাব এই দুনিয়ায় আমার কেউ নেই।আমি বড় একা।
রাজা বলে,
আজব তো! তোমার মা বাবা ভাই বোন,এরা কোথায়?
তাছাড়া তুমি এখানে এলে কি করে?
রাজা সাব বলেছি না আমার কেউ নেই।
সে আরো কাঁদে, সজোরে কাঁদে। রাজা পড়লো মহাবিপাকে।একটা যুবতী মেয়েকে এভাবে একা জঙ্গলে পেলে রেখে যাওয়া কি সমুচীন হবে।ভীষণ ভাবনায় পড়লেন রাজা আরমান শেখ।শেষে বাধ্য হয়ে তিনি তাকে বিয়ে করে রাজ মহলে নিয়ে গেলেন।
আসলে এ তো মানুষ না রাক্ষস। রাজাকে দেখে মানুষের রুপ ধারণ করলো।রাজা গভীর ঘুমে আচন্ন।রানী তার পাশ থেকে উঠে, রাক্ষস বেশে বেরিয়ে পড়লে।ইচ্ছেমত গরু ছাগল,ভেড়া,মহিস, আহার করে আবার মানব রুপ ধারণ করে গন্তব্য স্থলে ফিরে আসল।সকাল হতে রাজা দরবারে বসতে না বসতে, জনগন আরজী নিয়ে তার দরবারে উপস্থিত।উজির নাজির, সেনাপতি সবাই একপায়ে খারা।
মহলের বাইরে জনগনের হৈ হুল্লুড় শুনে রাজা গম্ভীর কণ্ঠে ডাক দেয়,
সেনাপতি সেনাপতি।
বলুন জাঁহাপনা।
বাইরে এত হট্টগোল কিসের?
জাঁহাপনা জনগন আরজি নিয়ে এসেছে।
দরবারে আসতে বল?
জ্বি জাঁহাপনা বলছি।
সবাই রাজ দরবারে উপস্থিত হলো।রাজা বলল,
কি তোমাদের আরজি বল?
এক সঙ্গে কয়েকজন বলে উঠল,
জাঁহাপনা বেয়াদবি নেবেন না।আমাদের খোয়াড়ের গরু ছাগল একটা ও নেই।
কেনো কি হয়েছে?
এক বৃদ্ধলোক কেঁদে কেঁদে বলে,
জাঁহাপনা আমার খুব শখের গাভী, এর দুধ বিক্রি করে আমি পেটের ভাত যোগাড় করি।আমার গাভীটা ও নেই।রাক্ষসে খেয়ে কল্লাটা পেলে রেখে গেছে।
রাজা আশ্চার্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
রাক্ষস আসল কোত্থেকে?
সবাই একবাক্যে বলে উঠল,
জাঁহাপনা আমরা ওতো তাই ভাবছি।এটা দস্যু রাক্ষসের কাজ।অন্য কোন জানোয়ার প্রাণি এমন জঘন্য কাজ করতে পারে না।
রাজা মাথা নেড়ে সাঁয় দিলো,
আমার ও তাই মনে হয়।তো ঠিক আছে আমি আজ রাত থেকে রাক্ষস পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করছি। আর তোমরা ও একটু সতর্ক থাকবে।রাক্ষস দেখমাত্রই জরুরী খবর দিবে।
জ্বি জাঁহাপনা তাই হবে।জাঁহাপনার জয় হউক।
ঠিক আছে আজ রাত থেকে পাহারা শুরু করো।
জ্বি জাঁহাপনা।
পাহারা শুরু তবুও সকালে জনগনের আরজি অমুকের গরু নেই, অমুকের ছাগল নেই আরো অনেক অনেক আরজি।
রাক্ষসের চিন্তাই রাজা অস্থির। পাহারা দেয়া সত্বেও খোয়াড়ের গরু ছাগল উধাও।
রাজা পড়লেন মহা চিন্তায়। এতো পাহারার পরও গরু ছাগল খাই কেমনে।
সকাল হতে না হতে জনগনের আরজি শুনতে শুনতে কান একেবারে জ্বালা পালা।রাজা রাক্ষস ধরার প্ল্যান খুঁজছে।

এদিকে অন্ধর মহলে ঘটল আরেক মজার ঘটনা।বড় রানী গরুর মাংস ধুচ্ছে রান্না করার জন্য।এমন সময় ছোট রানী ছোঁ মেরে মাংসগুলো খাবলে ধরে মুখে দিয়ে কড় কড়, খড় খড়,শব্দ করে গিলছে।বড় রানী তার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মনে মনে বলে, মানুষ কখনো কাঁচা মাংস খাই না।এ মানুষ নয় রাক্ষস, রাজদরবারে এক্ষণই খবর দিতে হবে।তিনি খবর পাঠানোর উদোগ নিলেন।আর তা বুঝতে পেরে রাক্ষস রানী বেশে ছোট রানী বড় রানীর চোখ দুটো হাতের নখ দিয়ে খাবলে তুলে নিলো।বড় রানী মাটিতে লুটিয়ে পুটিয়ে কাঁদছে আর বলছে,
তোরা কে কোথায় আছিস, রাজাকে খবর দে। ছোট রানী মানুষ না,রাক্ষস ।খবরটা জানাজানি হওয়ার পুর্বে ছোট রানী রাজাকে জরুরী তলব দিলেন।রাজা দ্রুতগতিতে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলো,
রানী এ অসময়ে জরুরী তলব,কি হয়েছে মহলে ?
আপনার মহলে রাক্ষসের আগমন ঘটেছে।
কি বলছো, আমার মহলে রাক্ষস কোথায়? দেখিয়ে দাও এক্ষণি এ বন্ধুকের গুলিতে তার বুক ঝাঝরা করে দেব।
দেখাতে হবে না, সে আপনার চোখের সামনে আছে।
বল কী,কোথায় সে?
জাঁহাপনা সে বাইরের কেউ না।আপনার বড় রানী।সে মানুষ না রাক্ষস।
রাজা বলল,
ছোট রানী তুমি মিথ্যে বলছ। সে কখনো রাক্ষস হতে পারে না।
জাঁহাপনা আপনার সম্মুখ্যে কারো মিথ্যে বলার সাহস আছে?বিশ্বাস না হয় নিজের চোখে দেখেন।কাঁচা মাংস খেয়ে শেষে নিজের চোখ ও খেয়ে ফেলেছে।
রাজা দেখতে গেল।একি! সত্যি তো বড় রানী অন্ধ,কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।মাটিতে লুটিয়ে ফুটিয়ে গড়াগড়ি করে কাঁদছে।তখনি ছোট রানী বলল,
জাঁহাপনা এবার বিশ্বাস হলো তো?বড় রানী যে রাক্ষস। তাকে এক্ষণি মহলের বাইরে বনবাসে পাঠিয়ে দিন।তা না হলে সে আপনার চোখ ও খাবলে খাবে।
হুম গুড় আইডিয়া,এক্ষণি আমি তাকে বনবাসে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।
কথাটা বড় রানী কানে যেতে সে চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলে,
জাঁহাপনা ও মিথ্যে বলছে। আমি রাক্ষস না ,আমি মানুষ।বনবাসে দিতে হলে ওকে দিন জাঁহাপনা ওহ মানুষ না, রাক্ষস , মাংস খেয়ে শেষে আমার চোখ ও খেয়ে ফেলেছে।
জাঁহাপনা ওর কথা বিশ্বাস করে সর্বনাশ ডেকে আনবেন না।
ছোট রানী ফের গর্জে উঠে বলে,
জাঁহাপনা ও মিথ্যে বলছে।ওর কথা বিশ্বাস করবেন না।তাড়াতাড়ি ওকে বনবাসে পাঠিয়ে দিন।
রাজা আসল নকল যাছাই বাছাই না করে সত্যিই বড় রানীকে বনবাসে পাঠিয়ে দিলেন।সতী নারীর প্রতি আল্লাহপাকের রহমতের দরজা খোলা থাকে সর্বদা।তাদেরকে যে কোন উছিলাতে আল্লাহপাক রক্ষা করেন।বড় রানী গভীর অরন্যে একা বসে বসে কাঁদছে।
ঠিক সেই মুহূর্তে সেখানে এক কাঠুরিয়ার আগমন ঘটল।তিনি তার নিকটে গেলেন এবং কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করলেন।বড় রানী কেঁদে কেঁদে তার দুঃখ দুর্দশার কথা বলল। সব কথা শুনার পর কাঠুরিয়া বলে,
মা কাঁইন্দো না, যার কেউ নাই তার আল্লাহ আছেন। আমাগো কোন ছেলে মেয়ে নেই।আজ থেইক্যা তুমি আমাগো মেয়ে।চলো আমার সঙ্গে। বড় রানী কাঠুরিয়ার সঙ্গে গেল।কাঠুরিয়া তার স্ত্রীকে ডেকে বলে,
ওগো আজ থেকে ও আমাগো মেয়ে।ওর ভালোমতন খাওন দাওন,সেবা যত্ন কইরো।
বড় রানী তখন সাত মাসের অন্তসত্তা। কাঠুরিয়ার স্ত্রী তা বুঝতে পেরে তার ভালো মতো সেবা যত্ন করে চলেছে।নির্দিষ্ট সময় পূর্ণ হতে কাঠুরিয়ার ঘর আলোকিত করে বড় রানীর কোল জুড়ে আসলো এক ফুট ফুটে ছেলে সন্তান।রাজার ছেলে ঠিক রাজার মতো।বড় রানী রাজার নামের সঙ্গে মিল রেখে ছেলের নাম রাখলো আমান শেখ।কাঠুরিয়ার ঘর হাসি আনন্দে ভরে উঠল।খুব ভালো চলছে বড় রানীর দিনকাল।

এদিকে রাজা আরমান শেখের মনে নেই শান্তি চোখে নেই ঘুম। তিনি ভীষন চিন্তিত। রাক্ষস বনবাসে, তবুও গরু ছাগল খাই কিসে?শত শত লোক নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে রাক্ষস পাহারা দিতে গিয়ে। এদিকে প্রজারা আস্তে আস্তে তার প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলছে।তাকে অযোগ্য রাজা ঘোষনার প্ল্যান খুঁজছে।খবরটা রাজার কানে যেতে তিনি আরো লোক নিয়োগ দিলেন।কিন্তু তাতে ও কোন কাজ হলো না। প্রজাদের খোয়াড়ের গরু ছাগল দিনে দিনে উজাড় হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে আমান শেখের বয়স বারো বছর পূর্ণ হলো। সে কাঠুরিয়ার সঙ্গে রোজ রোজ বনে কাঠ কাটতে যাই।আজও নানা-নাতী বনে কাঠ কাটতে গেল।তখনি শুনতে পেল,জরুরী এলাম,
প্রিয় প্রজাগন রাজ দরবার থেকে জরুরী ঘোষণা..ঘোষণা…ঘোষণা
এ রাজ্যে এক দস্যু রাক্ষসের আগমন ঘটেছে, দিনে দিনে প্রজাদের খোয়াড়ের গরু ছাগল উজাড় হয়ে যাচ্ছে।শত শত লোক পাহারা দেয়া সত্বে ও কেউ রাক্ষস ধরতে পারছে না।এখন প্রজাদের মধ্য থেকে যদি কেউ রাক্ষস ধরে দিতে পারেন।রাজা তাকে উপযুক্ত সম্মানে ভুষিত করবেন।
পুরো রাজ্য ঘুরে এ জরুরী এলাম ঘোষণা করা হলো।
আমান শেখ বাড়িতে গিয়ে মায়ের কাছে সব খবর প্রকাশ করলো।মা দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বলে,
বাবা আমি আজ তোকে সব সত্য বলবো,
বল মা কি সত্য?
সত্য হলো রাজা আরমান শেখ তোর জন্ম দাতা পিতা।আর রাক্ষস তার ঘরে।
বল কি মা।
হ্যাঁ বাবা সত্যি। তুই পারবি রাক্ষস ধরতে।
কি বলো মা, রাক্ষস আমাকে খেয়ে ফেলবে না।
না বাবা আমি তোকে সব কৌশল শিখিয়ে দেবে।
বড় রানী ছেলেকে সব কৌশল শিখিয়ে রাজ দরবারে পাঠিয়ে দিল।
রাজা বালকটিকে দরবারে জরুরী তলব করলো।বালকটি সম্মানের সহিত সালাম দিল।রাজা সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
তোমার নাম কি?
সে তার আসল পরিচয় লুকিয়ে নকল নাম প্রকাশ করল।বলল,
আমার নাম মোহন।অতপর রাজা জিজ্ঞেস করলো,
মোহন তোমার বয়স অনেক কম।পারবে তো রাক্ষস ধরতে?
জ্বি জাঁহাপনা পারবো।আপনি দোয়া করবেন।
ঠিক আছে তুমি কাজে লেগে যাও।
দিন শেষে রাত হলো।মোহন সদর দরজায় মেহমান খানায় বসে আছে।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।মোহন অন্ধর মহলের দিকে চোখ রেখে চেয়ার পেতে বসে আছে।যাতে রাক্ষস বের হওয়ার সাথে সাথে সে দেখতে পাই।ঠিক তাই হলো ছোট রানী রাক্ষস বেশে বেরুতেই, মোহন রাক্ষস রাক্ষস বলে চিৎকার জুড়ে দেয়।ছোট রানী ভয়ে মহলের ভিতরে ঢুকে যাই।এভাবে কয়েকবার চেষ্টা করে সে ব্যর্থ হলো।মোহনের এমনি ভাবে সাত দিন সাত রাত পার হলো।মোহন নির্ঘুম রাত কাটিয়ে প্রজাদের গরু ছাগল রাক্ষসের হাত থেকে রক্ষা করল।রাজা-প্রজা সবাই মোহনকে সাধুবাদ জানালো।
এদিকে ছোট রানী অর্ধাহারে অনাহারে শুকিয়ে একেবারে কাঠ।রাজাকে দেখে অসুখের ভান ধরে উঃ আঃ শব্দ করে কাতরাতে থাকে।রাজা জিজ্ঞেস করলো,
রানী তোমার কি হয়েছে?
জাঁহাপনা আমার কঠিন বেরাম হয়েছে।
তাহলে তো কবিরাজকে খবর দিতে হয়।
জ্বি না জাঁহাপনা কবিরাজ এ রোগ সারাতে পারবে না।
তো কে পারবে?
জাঁহাপনা আমার এ কঠিন রোগের নাম মড়মড়ি বেরাম।এ রোগের ঔষধ দেড় হাত হোঁয়া, এক হাত ডাটা, লোহার চাল,লোহার ডাল,।
রানী কি বলছো তুমি! এমন ঔষধের নাম আমি জীবনে ও শুনিনী
জাঁহাপনা বেয়াদবি মাফ করবেন।এ ঔষধ না খেলে আমার রোগ সারবে না।
তা বুঝলাম।কিন্তু এটা কোথায় পাওয়া যাবে?
জাঁহাপনা এটা পাওয়া যাবে তলন্য নগর, সমুদ্রের তলদেশে।
রানী তুমি আমাকে কঠিন ফ্যাসাদে ফেললে তো।এ তলন্য নগর কাকে পাঠাই আমি।
জাঁহাপনা আমি বলি কি, মোহন ছেলেটা খুব সাহসী, দেখছেন না দস্যু রাক্ষসকে কেমন ভাবে কাবু করলো।তাকে পাঠিয়ে দিন না।সে পারবে এ অসাধ্যকে সাধন করতে।
ছোট রানীর কথামত রাজা মোহনকে পাঠিয়ে দিল তলন্য নগর।
তলন্য নগর ছোট রানীর বাবার দেশ। রাক্ষসের নগরী,সেখানে রাক্ষস আর রাক্ষস।তার ধারনা মোহন সেখানে গেলে আর ফিরে আসতে পারবে না।নিশ্চিত তার মৃত্যু হবে।তাই ঘটা করে তাকে পাঠিয়ে দিল।কিন্তু মোহন মায়ের শেখানো বুদ্ধির জুলি নিয়ে সেখানে গেল।প্রথমে তার দেখা হলো ছোট রানীর বড় ভাই বড় রাক্ষসের সাথে, সে তাকে সালাম দিয়ে বলে,
মামা কেমন আছেন?
মামা পিছন ফিরে তাকিয়ে বলে,
কেরে আমারে মামা বলে ডাকলে?
আমার তো কোন ভাগিনা নেই।আমি তোকে খাবো।
সত্যি মামা আমি তোমার ভাগিনা।কাঞ্চন নগরের রাজার সঙ্গে তোমার ছোট বোনকে যে বিয়ে দিয়েছিলেন, আমি তার ছেলে।
সত্যি বলছিস?
জ্বি মামা সত্যি। মা পাঠিয়েছে আপনাদেরকে দেখতে।
ঠিক আছে তুই বাড়িতে যা, মায়ের কাছে।আমরা পরে আসবো।
আমান পরপর আরো চারজন রাক্ষস সঙ্গে একই রকম ভাবে ভাব বিনিময় করে দেখা শেষ করে, তারপর মুল বাড়িতে গেল।নানিকে দেখামাত্রই সালাম দিয়ে সে বলে উঠল,
নানি কেমন আছেন?
নানি পেছন ফিরে তাকিয়ে বলে,
কে রে আমারে নানি বলে ডাকলো?আমার তো কোন নাতি নেই। আমি তোকে খাবো?
বল কী নানি, নাতিকে খাবে?
কে নাতি,কোন নাতি,তোকে মনুষ্য জাতির মতো মনে হয়।
জ্বি না, নানি আমি মনুষ্য জাতি না।সত্যি তোমার নাতি। ঐ যে কাঞ্চন নগরের রাজার সঙ্গে তোমার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলে, আমি তার ছেলে। মাইতো আমাকে পাঠিয়েছে তোমাদেরকে দেখতে। তা না হলে আমি কি চিনতাম।
সত্যি তো, নাতি বস,আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি।
নানি গেল খাবার আনতে। এর ফাঁকে নাতি চোখ পাকিয়ে সব কিছু দেখে নিল।পরক্ষনে নানি গরুর কিছু কাঁচা বাসি মাংস, লোহার চাল,লোহার ডাল,এনে বলে,
নাতি খা পেট পুরে খা।
নানি এতদিন পর এলাম নানার দেশে ভালো কিছু খাওয়াবে,তা না নিয়ে এসেছো বাসি মাংস।
নাতি আজ এগুলো খা, কাল তোর জন্য তরতাজা মাংস নিয়ে আসবো।
নানি এক কাজ কর।
বল নাতি কি কাজ?
নানি তোমার খামারে তো অনেক গুলো মোরগ দেখতে পাচ্ছি। এখান থেকে একটা জবাই করে দাও না,খাবো।ক্ষুধায় পেট ছোঁ ছোঁ করছে।
নাতি এসব মোরগ খাওয়া যাবে না।
ক্যান ক্যান নানি?
নাতি অনেক গুলো মোরগ কই দেখলে। মাত্র তো ছয়টা মোরগ।এই ছয়টা মোরগের ভিতরে আমার ছয় ছেলে মেয়ের রুহ।এই ছয় ছয়টা মোরগ যেদিন মারা যাবে, সেদিন আমার ছয় ছেলে মেয়ের মৃত্যু হবে।
সত্যি বলছো নানি?
হুম নাতি সত্যি।
নানি আরেকটা কথা।
নাতি বল কি কথা?
নানি তোমার রুহটা কোথায়?
নাতি বলছি শুন,এই পুকুরের তলদেশে একটা কোটরা আছে। তার ভিতরে একটা ভ্রমরা আছে যেদিন ভ্রমরাটা মারা যাবে, সেদিন আমার মৃত্যু হবে।
নানি ধন্যবাদ, কাহিনীটা তো অনেক মজার।
তো নানি বেড়ায় কাগজ মোড়ানো চোখ জোড়া কার?
ঐগুলো তোর সৎ মায়ের।
তো নানি এখানে এলো কি করে?
তোর মায়ের সাথে তর্ক করাতে নখ দিয়ে খাবলে তুলে আমাদের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
নানি ও গুলো লাগানো যাবে না?যাবে নাতি যাবে।থু থু ছিটা দিলে চোখ দুটো লাগিয়ে যাবে।
নানি সত্যি বলছো তো?
হুম নাতি সত্যি।
আমান সব তথ্য সংগ্রহ করে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে পড়ল।ভোর হতে রাক্ষসের দল দূর দূরান্তে আহারের জন্য বেরিয়ে পড়ল।আর এই সুযোগে আমান এক ডুবে চলে গেল পুকুরের তলদেশে।সেখান থেকে ভ্রমরাটা তুলে এনে ঘাড় মটকে ভেঙ্গে দিল।তারপর সিরিয়াল অনুযায়ী প্রথম থেকে শুরু করে পাঁচ নাম্বার মোরগ পর্যন্ত সব কটাকে মেরে শেষ করে দিলো।
মুহূর্তে রাক্ষসের রাজত্ব ধবংস হলো। তারপর আমান ছয় নাম্বার মোরগ যেটাতে ছোট রানীর রুহ তা নিয়ে দেশে ফিরে আসলো।তাকে দেখা মাত্রই রাজা প্রজা সবাই এক বাক্যে বলে উঠল,
মোহন তুমি এসেছ,এদিকে আমাদের খোয়াড়ের গরু ছাগল আবারো উধাও।
মোহন বলে উঠল,
জাঁহাপনা,প্রজাগন, সবাই শান্ত হউন।আমি কথা দিচ্ছি,আর আপনাদের খোয়াড়ের একটা গরু ছাগল ও উধাও হবে না।কাল রাজদরবারে জন সম্মুখ্যে রাক্ষসের বিচার হবে। জরুরী এলাম ঘোষনা করে দিন।জাঁহাপনা আমি এখন গেলাম। কাল সময়মতো চলে আসবো।
জাঁহাপনা এই নিন ছোট রানীর ঔষধ।রাজা মহলে গিয়ে রানীকে ডাক দেয়। রানী এগিয়ে আসলে বলে,
রানী এই নাও তোমার ঔষধ।
রানী খুলে দেখে তাতে তার দেয়া লিস্ট অনুযায়ী সব আছে,এক হাত হোঁয়া,দেড় হাত ডাড়া,লোহার চাল, লোহার ডাল।
সে মনে মনে বলে, মোহনকে পাঠালাম কি জন্য, আর এখন হলো কি?ওরা তাকে না খেয়ে জ্যান্ত পাঠাইয়া দিলো।মোহন তোমাকে ওরা খেতে পারেনি, কিন্তু আমি তোমাকে খাবো,হুম।
এদিকে পুরো রাজ্যে জরুরী এলাম ঘোষণা করার প্ররিপ্রেক্ষিতে সকাল হতে না হতে রাক্ষসের বিচার দেখার জন্য দলে দলে প্রজাগন আসতে শুরু করলো।
এদিকে মোহন সময় মতো মোরগটাকে লোহার খাঁচায় শিকল পরিয়ে নিয়ে আসলো।তাকে দেখামাত্রই প্রজাগন জয় ধবনি উল্লাস শুরু করল।মোহন সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
জাঁহাপনা আপনি আসন পেতে বসুন।প্রজাগন আপনারা শান্ত হয়ে বসুন।আমরা এক্ষণি বিচার কার্য শুরু করবো।
মোহন আর দের‍্যি করলো না।লোহার খাঁচা খুলে শিকল পরা মোরগটার এক পা ভেঙ্গে দিল।মুহূর্তে ছোট রানী মহল থেকে আঃ আঃ উঃ উঃ শব্দ করে ল্যাংডাতে ল্যাংডাতে বেরিয়ে এলো।পরক্ষনে মোহন অপর পা ভেঙ্গে দিলো।এবার সে আরো দাপাদাপি শুরু করলো।
রাজা প্রজা সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে বলে এ তাহলে মানুষ না,”রাক্ষস”।
জ্বি জাঁহাপনা, প্রজাগন ঠিক ধরেছেন।
তাৎক্ষনিক ভাবে রাজা প্রজা সবাই তাকে মেরে ফেলার হুকুম দেয়।মোহন সঙ্গে সঙ্গে মোরগটির গাঢ় মটকে ভেঙ্গে দেয়।নিমিষে “রাক্ষস” মারা পড়ে।রাজা মোহনের পরিচয় জানতে চাইলে,মোহন বলল,
জাঁহাপনা আমি আপনার ওরসজাত সন্তান আমান শেখ।আপনার কি মনে আছে, বারো বছর আগে নকল রানী রাক্ষসের কথা বিশ্বাস করে আসল রানীকে বনবাসে দিয়েছিলেন আমি তার সন্তান। আমি যাচ্ছি আমার মায়ের কাছে।
যাসনে বাবা, আমি অনেক বড় ভুল করেছি।আমাকে ক্ষমা করেদে। আয় বাবা আমার বুকে আয়।
বাবা ছেলে মিট হয়ে গেল।রাজা রানীকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে নতুন করে সংসার জীবন শুরু করল।

বিঃ দ্রঃ পুরো গল্পটা কাল্পনিক,তবে মজার ও দুঃখের বটে। সবাই পড়বেন, আশা করি ভালো লাগবে।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

ছোটগল্প:খোকদার বরই গাছ

ছোটগল্প:খোকনদার বরই গাছ মো.রিমেল রহমতপুর গ্রামের সরকারী স্কুলের মাঠের পাশ দিয়ে সোজা একটি রাস্তা গেছে।রাস্তার পূর্ব দিকে খোকনদার বাড়ি।বাড়ির পূর্বদিকে

সুপুরুষ ও কাপুরুষ

ছেলেবেলায় ভালো পড়াশোনায় ছিলো সুমন। তাই এমনিতেই মহিলা মহলের প্রিয় ছিলো সমুন। কিন্তু আজকাল , সুমন পাড়ায় জিমে ঘাম ঝরাচ্ছে।

আমায় দুঃখ দাও আমায় কষ্ট দাও

তুমি আমার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার খেলা খেলছ। জানি আমি, এতে তুমি আনন্দে আছ, তবু আমি তোমায় কিছুই বলি না। কারণ

Leave a Reply