রোমিও জুলিয়েট
আফছানা খানম অথৈ
জুলিয়েটর বাবা নামী দামী একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি। জুলিয়েট মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের পড়ে।সে খুব জাকজমকভাবে চলাফেরা করে ।খুব ফ্রি ভাবে চলাফেরা করে বন্ধু বান্ধবীদের সাথে।একদিন শপিং করতে গিয়ে দেখা হলো রোমিওর সঙ্গে।দু’জনের সাথে আলাপ পরিচয় হয়।তারপর দুজনের মাঝে বন্ধুত্ব তৈরী হয়।এই বন্ধুত্ব থেকে দুজনের মাঝে গভীর ভালোবাসার সৃষ্টি হয়।দুজন দু’জনের প্রেমে একেবারে মগ্ন।আর্থিক অবস্থার দিক দিয়ে রোমিও অনেক নিচে।তাই রোমিও একদিন জুলিয়েটকে বলল,
জুলিয়েট তুমি কী সত্যি সত্যি আমাকে ভালোবাস?
কেনো বাসি।তো কী হয়েছে?
না তেমন কিছু হয়নি।তুমি অনেক উঁচু মানের মানুষ, কখন আবার অর্থের টানে আমাকে ভুলে যাও।কখন বলো তোমার মতো নিচু মানের মানুষকে আমি ভালোবাসতে পারবো না।তাই জানতে চাইলাম আর কী।
রোমিও আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি অর্থকে নয়।তুমি ছাড়া আমার এ জীবন বৃথা মুল্যহীন।আমার হৃদয়ে জমা আছে তোমার প্রতি অপূর্ব ভালোবাসা।যা কোন দিন শেষ হবে না
সত্যি বলছ জুলিয়েট?
হুম সত্যি।
কখনো আমাকে ভুলে যাবে নাতো?
না যাব না।
আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবে নাতো?
না করবো না।
যদি তোমার মা-বাবা রাজী না হন,তখন কী করবে?
রোমিও নো চিন্তা,নো টেনশন আমরা দুজনে সাবালিকা।নিজের ইচ্ছাতে বিয়ে করতে পারবো।
জুলিয়েট তা হলেতো আর কোন কথা নেই।জীবনে মরনে আমরা দু’জন দু’জনার।
ওকে জান। চলো ফেরা যাক।
সুইট হার্ট আর একটু বস।তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।
বলতে না বলতে রোমিও জুলিয়েটকে জড়িয়ে ধরে কিস কিস….।
তখনি সেখানে উপস্থিত হলো জুলিয়েট’র সই প্রিয়াংকা।সে তাদের রোমান্টিক দৃশ্য দেখে খ্যাক খ্যাক শব্দ করলো।তারা চমকে উঠে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে এলো।পরক্ষণে জুলিয়েট বলল,
হাই প্রিয়াংকা কখন এলে?
এইতো সবেমাত্র।
চলো ফেরা যাক।
হুম চলো।
ভালোবাসার কথা পাকা করে দু’জন স্ব স্ব অবস্থানে ফিরে গেল।
এদিকে তাদের ভালোবাসার কথা কিন্তু গোপন থাকল না,প্রকাশ হয়ে গেল।জুলিয়েটকে বিয়ে করতে চাই তার বাবার এক বন্ধুর ছেলে।সে শত চেষ্টা করেও জুলিয়েটের মনের রাজ্য দখল করতে পারলো না।কিন্তু সে থেমে নেই। চব্বিশ ঘন্টা জুলিয়েটের পেছনে লেগে আছে।তাই ওদের প্রেমের দৃশ্যটা ভিডিও করে সে জুলিয়েটের বাবাকে দেখাল।শুধু তাই নয় বানিয়ে বানিয়ে অনেক আজে বাজে কথা বলল।বাবা এরফান চৌধুরী কী আর থেমে থাকে।
তিনি রাগে বোম হয়ে মেয়েকে বলেন,
জুলিয়েট রাস্তা ঘাটে প্রকাশ্য দিবালোকে নিচু তলার মানুষের সঙ্গে এসব কী?আমার মান সম্মান বলে কিছু থাকল?
জুলিয়েট বুঝে ও না বুঝার ভান করে বলল,
বাবা কী হয়েছে,আমিতো কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।
বাবা মুখ ভ্যাংচিয়ে ভ্রু কুচকে বললেন,
আমার সাথে অভিনয় কর না?বুঝেও না বুঝার ভান করছ?
প্লিজ বাবা রাগ করো না।কি হয়েছে খুলে বল?
ওকে বলছি।তুমি নাকি রোমিও নামের এক নিচু জাতের ছেলেকে নিয়ে পাবলিক প্লেসে….।
ছিঃ ছিঃ এসব করার আগে একবার আমার মান সম্মানের কথা ভাবলে না?
প্লিজ বাবা না জেনে না শুনে কারো সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করা ঠিক না।রোমিও খুব ভালো ছেলে।বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট।আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।
ভালোবাসার কথা শুনে বাবা এরফান চৌধুরীর মেজাজ হাইতে উঠে গেল।তার নাগের ডগা বেয়ে তরতর করে ঘাম ঝরছে।তিনি চোখ দুটো রক্তবর্ণ করে কড়া চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
সাবধান জুলিয়েট আর কখনো রোমিওর সঙ্গে মিশবে না।
কেনো বাবা?
রোমিওর মতো একটা রাস্তার ছেলেকে কখনো আমি আমার মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নেব না।
মেয়ে ও হারবার পাত্রী নয়।বাবার মুখের উপর বলে দিলো
বাবা তুমি না মানলেও আমি বলবো,আমি রোমিওকে ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি।
যতই ভালোবাসি বল কোন লাভ হবে না।তোমার বিয়ের আমার পছন্দের ছেলের সঙ্গে হবে।আমি বেঁচে থাকতে কখনো এ সম্পর্ক মেনে নেব না।
বাবা তুমি শুনে রাখ, বিয়ে যদি করতে হয় রোমিওকে করবো আর কাউকে না।
বাবা মেয়ে আর ও কিছু সময় তর্ক করলো।কেউ কাউকে ম্যানেজ করতে পারলো না।
এর ফাঁকে কেটে গেল কিছুদিন।জুলিয়েটের ফাইনাল এক্সাম শেষ হলো।রোমিও একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী নিলো।কর্মক্ষেত্রে দু’জন দু’জাগায়। তাই আগের মতো কারো সাথে কারো তেমন দেখা সাক্ষাত হয় না।দুজনের আলাপ হয় ফোনে,তাও চুপিসারে গোপনে।একদিন জুলিয়েট মুটোফোনে কথা বলছে রোমিওর সঙ্গে।আর এই দৃশ্যটা দেখে ফেলল বাবা।দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে মেয়ের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে রাগের বশে ভেঙ্গে ফেললেন।আর জুলিয়েটকে শেষ বারের মতো সতর্ক করে দিলেন রোমিওর সঙ্গে সকল যোগাযোগ বন্ধ করতে।বাবার মুভ:মেন্ট বুঝতে পেরে জুলিয়েট নীরবে সবকিছু হজম করে নিলো।বাবা কিন্তু থেমে নেই।তড়িঘড়ি করে জুলিয়েটের বিয়ে ঠিক করলো।জুলিয়েট কোন রকমে বের হতে পারছে না।কড়া পাহারায় রাখা হয়েছে তাকে।সকল ফোন কানেকসন ও বন্ধ।জুলিয়েট কিন্তু থেমে নেই। বের হওয়ার প্ল্যান খুঁজছে।কোন একফাঁকে দেখল পাহারাদারেরা ঘুমিয়েছে।আর এই সুযোগে জুলিয়েট বেরিয়ে পড়লো।শত চেষ্টা করেও রোমিওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলো না।শেষে রোমিওর বন্ধু অরভিল’র পরামর্শ ছুটে গেল ডাক্তারের কাছে।ডাক্তার জুলিয়েটের হাতে একটা ঔষধ দিয়ে বলল,
জুলিয়েট তুমি বিয়ের বাহাত্তর ঘন্টা পূর্বে এই ঔষধটা খাবে।
এবার জুলিয়েট বলল,
তারপর কী হবে ডাক্তার সাহেব?
তারপর তুমি অচেতন হয়ে পড়বে।এমনভাবে অচেতন হবে,তারা ভাববে তুমি মারা গেছ।
তারপর..?
তারপর মৃতভেবে তারা তোমাকে মাটি দিয়ে আসবে।বাহাত্তর ঘন্টা পর তোমার জ্ঞান ফিরে আসবে এবং তুমি জীবিত হবা।তারপর কবর থেকে উঠে রোমিওকে নিয়ে পালিয়ে যাবে।
ডাক্তার সাহেব সত্যি বলছেন তো?
হুম জুলিয়েট সত্যি। তুমি ঔষধটা খেয়ে দেখতে পার।
ওকে ডাক্তার সাহেব আমি রাজী।
জুলিয়েট ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধটা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসল।আর খবরটা দেয়ার জন্য অরভিল ছুটে চলল।হঠাৎ গাড়ি এ্যাকসিডেন্টে অরভিল আহত হলো।লোকজন অজ্ঞান অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করালো।
এদিকে সময়মতো বিয়ের কার্যক্রম শুরু হলো।জুলিয়েট গুনে গুনে বাহাত্তর ঘন্টা পূর্বে ডাক্তারের দেয়া ঔষধটা খেয়ে ফেলল।সময়মতো সে সিরিয়াসভাবে অচেতন হয়ে পড়লো।বিউটিশিয়ানরা সাজাতে এসে দেখে সে অচেতন,তার কোন সাড়াশব্দ নেই।সারা বাড়িতে হুলুস্থুল পড়ে গেল।মুহূর্তে ডাক্তার ডেকে আনা হলো।ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করলো।পুরো বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এলো।জুলিয়েটকে কবর দেয়া হলো।
এদিকে রোমিও এ অচেতনের ব্যাপারে কিছুই জানে না।তাই জুলিয়েটের মৃত্যু সংবাদ শুনে রোমিও ছুটে আসল।জুলিয়েটকে ছাড়া বেঁচে থাকা যাবে না বিধায় সে তার কবরের পাশে সুইসাইড করলো।বাহাত্তর ঘন্টা পর যখন জুলিয়েটের জ্ঞান ফিরে আসল।সে কবর খুঁড়ে উঠে দাঁড়াল।তারপর রোমিওর লাশ দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারলো না।রোমিওর রক্তমাখা চুরি নিজের শরীরে আঘাত করে সুইসাইড করলো।জানা জানি হওয়ার পর দুজনকে পাশাপাশি কবর দেয়া হলো।কবরের পাশে লিখে দেয়া হলো “রোমিও জুলিয়েট”।
