শিমুল পারুল
আফছানা খানম অথৈ
শিমুল জমিদার বাড়ির ছেলে,বনেদী বংশ।আর পারুল একজন গরীব কৃষকের মেয়ে।বাবা বর্গা জমি চাষ করেন।জমিদার বাড়ির বর্গাচাষা।সেই সুবাধে পারুলের বাড়িতে শিমুলের যাতায়াত।দুজনের এক সাথে বেড়ে উঠা,পড়ালেখা। একে অপরের ভালো বন্ধু। দুজনের পরিণত বয়স।এ বয়সে যা হয় আর কি?দুজনের ভাবসাবে বুঝা যায়,একে অপরকে ভালোবাসে।কিন্তু কেউ কাউকে বলে না।অপেক্ষা আর অপেক্ষা,আর কত…।
শিমুল একদিন বলল,
পারুল তোকে আমি ভালোবাসি।
বলিস কী!
পারুল সত্যি আমি তোকে ভালোবাসি।
শিমুল একথা আর কখনো মুখে আনিস না।তোর বাবা শুনলে আস্ত রাখবে না।
সেসব তোকে ভাবতে হবে না।তুই শুধু বল আমাকে ভালোবাসিস কি না?
না মানে ইয়ে…..।
ইয়ে ইয়ে করছিস কেনো?বল আমাকে ভালোবাসিস কি না?
শিমুল তুই আমার একজন ভালো বন্ধু।সেই হিসেবে আমি তোকে ভালোবাসি। আর কিছু না।
আর তোর সেই ভালোবাসাকে আমি গভীরে নিয়ে যেতে চাই।বল তুই সারাজীবন আমার সঙ্গী হয়ে থাকবি?
প্লিজ শিমুল বুঝতে চেষ্টা কর,তুই কি আর আমি কি?
দুজনের অবস্থান সম্পূর্ণ আলাদা।তাছাড়া তোর বাবা মা কখনো এ সম্পর্ক মেনে নেবে না।
সেটা আমি দেখব।
শিমুল মুখে কথাটা সহজে বলে ফেললে ও বাস্তব কিন্তু অনেক কঠিন।আমার বাবা তোমাদের বর্গাচাষা।এই চাষার মেয়ে হবে জমিদার বাড়ির বউ?তা সম্পূর্ণ অসম্ভব।তাই বলছি এই সম্পর্কের এখানে ইতি টান।তা না হলে এর প্রায়শ্চিত্ত আমাদেরকে ভোগ করতে হবে।
পারুল ভালোবাসা ধনী গরীব মানে না।এটা সম্পূর্ণ মনের ব্যাপার। মন যা চায় তা করতে হয়।তা না হলে হিতে বিপরীত হয়।আমি মন থেকে তোমাকে ভালোবাসি।এ ভালোবাসাতে নেই কোন ছলনা।নেই কোন প্রলোভন। নেই কোন স্বার্থ।আমি নি:স্বার্থভাবে তোমাকে ভালোবাসি।এরপর ও যদি না কর,আমি সুইসাইড করব।তারপর লিখে যাব এই সুইসাইডের জন্য তুমি দায়ী।এবার ভেবে দেখ কি করবে?
প্লিজ শিমুল পাগলামি করো না।বুঝতে চেষ্টা কর।সব সম্পর্কের মিলন হয় না।কিছুকিছু ভালোবাসা সেক্রিফাইজ করতে হয়।
না পারুল আমি তা পারব না।এরপর ও যদি না কর,আমি সত্যি সুইসাইড করব।
প্লিজ শিমুল তা করো না।আমি ও তোমাকে সত্যি ভালোবাসি।কিন্তু ভয় একটা, যদি কখনো হারাতে হয়।মেয়েরা যাকে ভালোবাসে সর্বস্ব দিয়ে সারাজীবনের জন্য মন থেকে ভালোবাসে।আমি ও তোমাকে সেইরকম ভালোবাসি।অবিভাবকের ছাপে পড়ে যদি কখনো ভুলে যাও,সেদিন আমার মরন হবে।এবার ভেবে দেখ কী করবে?
সারাজীবনের জন্য ভালোবাসব।
প্রমিস করো,কখনো ভুলে যাবে না?
এই তোমার হাতে হাত রেখে শফথ করে বলছি।আমি মৃত্যু অবদি তোমাকে ভালোবেসে যাব।কখনো ভুলে যাব না।
আমি ও সহমত পোষন করছি।
দুজন একে একে অপরের হাতে হাত রেখে একসঙ্গে থাকার শফথ করলো।
মাঝে কবছর কেটে গেলো।দুজনের পড়ালেখা শেষ হলো।এবার বিয়ের পালা।দুজনের পরিবার দুজনকে বিয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে।এই খবরটা দুজনের কানে যায়।তারপর দুজন পালিয়ে যায়।জমিদার বংশের একমাত্র বংশধর,শিমুল একজন বর্গাচাষীর মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।এই বিষয়টা কি মেনে নেয়া যায়?কখনোই না।চারদিকে লোক লাগিয়ে দেয়া হলো,তাদেরকে খুঁজে বের করার জন্য।
সবাই ব্যর্থ হলো।কেউ তাদের খুঁজে বের করতে পারলো না।এবার নিরুপায় হয়ে তারা পুলিশ কল করলো।পুলিশ বের হলো তার দলবল নিয়ে।সবার চোখকে ফাঁকি দিলেও পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেয়া এত সহজ না।চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ সত্যি তাদের খুঁজে বের করলো।তাদের নিয়ে আসা হলো।শিমুলের বাবা জমিদার আব্বাস মিয়া বিচার ডাকলেন।তারপর সবার সামনে পারুল কেনো তার ছেলেকে নিয়ে পালালো এরজন্য সাজা স্বরুপ তাকে একশত দোররা আর তার বাবাকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিলেন।শুরু হলো বিচার,
পারুলকে দোররা দেয়া শুরু…।
পারুল সহ্য করতে পারছে না।চিৎকার করে কাঁদছে।তখনি শিমুল ছুটে আসছে তাকে বাঁচাতে।চিৎকার করে বলছে,
বাবা পারুলের কোন দোষ নেই।তাকে মেরো না।মারতে যদি হয় আমাকে মারো।
সে পারুলের সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর খাস কামলা, বরকতকে বেত্রাঘাত করতে বাঁধা দিলো।তখনি তার বাবা রেগে উঠে বলল,
তোমরা দাঁড়িয়ে আছ কেনো?শিমুলকে ভেতরে নিয়ে যাও।
কয়েকজন মিলে ঝাপটে ধরে টেনে হেঁছড়ে নিয়ে যাচ্ছে।শিমুল কেঁদে কেঁদে বলছে,
বাবা পারুলকে মেরো না।আমি তাকে ভালোবাসি।দেহ থেকে প্রাণ যেমন আলাদা করা যায় না।পারুলকেও আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না।
শিমুলের শত অনুরোধ ব্যর্থ হলো।বাবা তার সিদ্ধান্তে অটল।তিনি পূণরায় দোররা দিতে নির্দেশ দিলেন।খাস কামলা,বরকত পারুলকে কঠোরভাবে মারছে।পারুল কেঁদে কেঁদে চিৎকার করে বলছে,
জমিদার সাহেব আপনার এই অত্যাচারী জমিদারী একদিন ধ্বংস হবে।কারণ আল্লাহ কখনো অত্যাচারীদের পছন্দ করেন না।আপনার ছেলে আমাকে ভালোবাসে।আমি সেই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে গিয়ে তার ডাকে সাড়া দিহ্।আমরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চেয়েছিলাম।ভুলতো কিছু করিনি।আর আপনি আমাকে অন্যায়ভাবে সাজা দিচ্ছেন।
মিথ্যে সব মিথ্যে,ছোটলোকদের এই এক অভ্যাস টাকার লোভে বড় লোকের ছেলেদের পিছু লাগা।তুই ও তাই করেছিস টাকার লোভে আমার ছেলের সাথে ভালোবাসা করেছিস।আমি এস ফালতু ভালোবাসা বিশ্বাস করি না।
আমার ভালোবাসা সত্য না মিথ্যা তা,একদিন প্রমাণ হবে।সেদিন আপনি আমার দুয়ারে যাবেন,ছেলের ভালোবাসা ভিক্ষা চাইতে।
কী আমার মুখের উপর এত বড় কথা।বরকত ওকে আর ওজোরে মার।
বরকত মারে আর মারে। ঠিক একশ দোররা দেয়ার পর সে থামে।ততক্ষণে পারুল অজ্ঞান হয়ে পড়ে।মা-বাবা ধরাধরি করে তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়।
এদিকে শিমুল পারুলের নাম ঝপতে ঝপতে অজ্ঞান হয়ে পড়লো।তাকে দ্রুতগতিতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।ডাক্তার ইমারজেন্সি চিকিৎসা শুরু করলো।স্যালাইন ইনজেকশন পুস করলো।ঘন্টাখানেক পরে তার জ্ঞান ফিরে আসল।তখনি চিৎকার করে বলে উঠল,
মা পারুল কোথায়?
আছে বাবা আছে।তুই একটু শান্ত হও।
আমি শান্ত হবো না।আগে বলো পারুল কোথায়?
কথা বলছো না কেনো?তোমরা পারুলকে মেরে ফেলেছ বুঝি?
না বাবা মারিনি।পারুল বাড়িতে আছে।তুমি আগে সুস্থ হও।
না আমি তোমাদের কথা বিশ্বাস করি না।আমি পারুলের কাছে যাব।
সে ছুটে যেতে প্রস্তুত হলো।তখনি ডাক্তার নার্স তাকে চেপে ধরে শুইয়ে দিলো।শুধু তাই নয়,তৎক্ষণাত ঘুমের ইনজেকশন পুস করলো।
এদিকে পারুল তার মা-বাবাকে নিয়ে অচেনা শহরে পাড়ি জমাল।আপাতত তার চাচা আবু তালেবের বাসায় উঠল।পারুল কিন্তু থেমে নেয়।মাস্টার্স এর রেজাল্ট বের হওয়ার পরপরই সে বিসি এস পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে।আল্লাহপাক তার দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন।সে বিসি এস ক্যাডার হয়ে যায়।থানা নির্বাহী অফিসার পদে তার চাকরী হয়।এমন বিপদের দিনে আল্লাহপাক তাকে চাকরী দিয়েছেন এর জন্য লাখ লাখ শোকরিয়া আদায় করলো।সারাদিন কাজের মাঝে ব্যস্ত থাকে পারুল।টাকা চাকরী সবই আছে, তবুও কেনো জানি মনের ভিতর শুন্যতা।বারবার শিমুলের কথা মনে পড়ছে।কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছে না।তার সাথে কাটানো মধুর স্মৃতির দিনগুলো বারবার মনে পড়ছে।তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছে না।তার ফোন বন্ধ।ফেসবুক হোয়াইটস অ্যাপ সব জাগায় মেসেজ দিচ্ছে।কিন্তু কোন রিপ্লাই আসছে না।কিন্তু কেনো?শিমুলের কোন বিপদ আপদ হয়নি তো?না না এসব আমি কি ভাবছি।হে পরম করুণাময় আল্লাহ শিমুল যেখানে থাকুক,আপনি তাকে ভালো রাখুন,সুস্থ রাখুক এই দোয়ায় করি।
এদিকে শিমুলের একবার জ্ঞান ফিরে আবার অজ্ঞান হয়ে যায়।বারবার পারুলের কাছে ছুটে আসতে চায়।কিন্তু পারে না,সবাই তাকে ঝাপটে ধরে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে।মা-বাবার ধারনা সে এক সময় পারুলকে ভুলে যাবে।কিন্তু না সে জ্ঞান ফেরার পর পারুলের কথা বলে,তার কাছে চলে যেতে চায়।এভাবে আর কতদিন…।
হাসপাতালে বা আর কতদিন থাকবেন।কিছুদিন চিকিৎসার পর ডাক্তার তাকে রিলিজ করে দেয়।তাকে বাড়িতে এনে একঘরে বন্দি করে রাখা হয়।তাকে পাহারা দেয়ার জন্য কয়েকজন লোক রাখা হয়।তারা তাকে দেখভাল করছে।মা নিয়মিত ছেলের ঔষধ পথ্য খাওয়াচ্ছে।কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।তার শরীর স্বাস্থ্য ভালো যাচ্ছে না।ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে।সে শয়নে শফনে জাগরনে শুধু পারুলকে দেখছে।এক মূহূর্তের জন্য তাকে ভুলতে পারছে না।ঘুমের ঘোরে পারুলকে দেখে,পারুল পারুল বলে চিৎকার করে উঠে।একদিন মা জেবুন্নেসা ছেলেকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে তার পাশে শুয়ে আছেন।শিমুল নাক ঢেকে ঘুমাচ্ছে।কিছু সময় যাবার পর দেখলেন শিমুল ঘুমের ঘোরে বলছে,
পারুল তোমাকে ছেড়ে আমি এক মূহূর্তে ও ভালো নেই।তুমি এসেছ ভালোই হয়েছে।তোমাকে আর যেতে দেব না।সারাজীবনের জন্য রেখে দেব।
না আমি থাকব না।
কেনো থাকবে না?
জমিদার সাহেব আবার আমাকে মারবেন।
না সেই সুযোগ আর বাবাকে দেব না।চলো আমরা অনেক দূর পালিয়ে যাব।সেখানে থাকবে না, বাবার হিংস্রতা আর বর্বরতা।
লাভ হবে না।জমিদার সাহেব আবার খুঁজে বের করে মারবেন।কাপুরুষের মতো পালিয়ে বিয়ে না করে বাবার সম্মতি নিয়ে বীর পুরুষ হয়ে এসো।তবে আমি তোমাকে বিয়ে করবো।এর ব্যতিরেকে নয়,চলি…।
পারুল আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।আর শিমুল পারুল পারুল বলে উচ্চস্বরে ডাকতে ডাকতে অজ্ঞান হয়ে পড়ছে।মা শিমুল শিমুল বলে ডাকে।তার কোন সাড়া নেই।মা বুঝতে পেরেছে ছেলে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে।তাৎক্ষণিক ডাক্তার হাসপাতাল।এভাবে আর কতদিন….।
মা বুঝতে পেরেছে পারুল ছাড়া ছেলে সুখী হবে না।তাই স্বামীর কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ করে,
ওগো আমি হাতজোড় করে বলছি।আপনি শিমুলের ভালোবাসা মেনে নেন।পারুলকে নিয়ে আসেন।তা না হলে শিমুল কোনদিন সুস্থ হবে না।
স্টপ আর কখনো এই চাষাভুষার মেয়ের নাম মুখে আনবে না।কখনো আমি ওকে বউ হিসেবে মেনে নেব না।
কেনো নেবেন না,চাষা বলে কী ওরা মানুষ না?আল্লাহর জমিনে সবাই সমান।
এত জ্ঞান দিতে এসো না।কিসে ছেলের মঙ্গল হবে সেটা আমি বুঝব।
জেবুন্নেসা আরও অনেক যুক্তি দেখাল।কিন্তু কোন লাভ হলো না।স্বামী তার সিদ্ধান্তে অটল।তিনি কিছুতেই পারুলকে বউ হিসেবে মেনে নিতে রাজী না।
এদিকে ডাক্তার শিমুলের বারবার অজ্ঞান হওয়ার বিষয়টা নিয়ে ভাবলেন।তারপর পরামর্শ দিলেন,তাকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর জন্য।
ততদিনে শিমুল পুরোপুরি অ্যাবনরমাল হয়ে যায়।মা-বাবা কাউকে চিনতে পারে না।আলা বোলা হয়ে যায়।নিজে নিজে বিরবির করে আবল তাবল কথাবার্তা বলে।জমিদার বাড়ির একমাত্র ভবিষ্যৎ বংশধর অসুস্থ।কারো মনে কোন শান্তি নেই।আস্তে আস্তে সবাই ভেঙ্গে পড়েছে।বিশেষ করে শিমুলের বাবা তার ভুল বুঝতে পেরেছে।অনুশোচনায় কাতর হয়ে পড়েছে।তাড়াতাড়ি ছেলেকে শহরের বড় হাসপাতালে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞর কাছে নিয়ে গেলেন।ডাক্তার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকথা শুনলেন।তারপর পরামর্শ দিলেন,
আব্বাস সাহেব,কিছুকিছু রোগ ঔষধে কাজ করে না।এরজন্য প্রয়োজন ভালোবাসা আর সুন্দর আচরন।আমার ডাক্তারি বিদ্যায় যা বুঝলাম,তাতে মনে হয়েছে,তাকে শত চিকিৎসার পর ও সুস্থ হবে না।কারণ সে তার মনের মানুষকে হারিয়েছে।এখন আপনাদের উচিৎ হবে তার ভালোবাসা মেনে নেয়া এবং দ্রুতগতিতে তার সঙ্গে বিয়ে দেয়া।দেখবেন সে ঔষধ ছাড়াই সুস্থ হয়ে গেছে।আর যদি তা না করেন,ছেলে আর ছেলের জাগায় থাকবে না।পুরো পাগল হয়ে রাস্তায় হাটবে।
কী বলছেন ডাক্তার সাহেব?
যা সত্যি তাই বলছি।আমরা চিকিৎসা চালিয়েছি।আপনি মেয়েটিকে খুঁজে নিয়ে আসেন।
এতক্ষণে জমিদার বুঝতে পারলো,পারুল ছাড়া শিমুল সুখী হবে না।তাকে খুঁজতে লোকজন লাগিয়ে দিয়েছে।কিন্তু কোথাও তাকে পাচ্ছে না।অবশেষে ফেসবুকে স্ট্যাটার্স দিলেন জমিদার,
মা পারুল তুই কোথায় আছিস জানি না।এই অচেনা শহরে তোকে অনেক খুঁজেছি।কিন্তু কোথাও পাইনি।নিরুপায় হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটার্স দিয়েছি।আমি তোর উপর অনেক অন্যায়, অবিচার করেছি।আমাকে ক্ষমা করে দিস।তুই বলেছিলে,আমি তোর কাছে ছেলের ভালোবাসা ভিক্ষা চাইব।মা সত্যি আমি আজ তোর কাছে ছেলের ভালোবাসা ভিক্ষা চাইছি।তুই আমাকে ফিরিয়ে দিস না।তুই আমার ছেলের জীবনে ফিরে আয়। ডাক্তার বলেছে,পারুল ছাড়া শিমুলকে বাঁচানো যাবে না।শিমুলের অবস্থা ভালো না।প্রাইম হাসপাতালে ৯ নাম্বার সিটে চিকিৎসারত আছে।তুই তাড়াতাড়ি আয় মা।আর অভিমান করে থাকিস না।
ইতি
জমিদার আব্বাস মিয়া
পরিচিত অপরিচিত সবাই এই লেখাটাকে শেয়ার করতে লাগল।
আজ পারুলের কোনকিছুতে মন বসছে না।কেনো জানি শিমুলের কথা বারবার মনে পড়ছে।অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এসেছে।শুয়ে শুয়ে ফেসবুক দেখছে।তখনি নজরে পড়লো এই লেখাটা।সে এক নিমিষে পড়ে শেষ করলো।তারপর ছুটে গেল প্রাইম হাসপাতালে। রিসিপশনে বসা লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, ৯ নাম্বার সিট কোন দিকে। লোকটি হাত ঈশারায় দেখিয়ে দিলো সোজা পশ্চিম দিকে।পারুল ছুটে গেল ৯ নাম্বার সিটে তারপর দেখলো,শিমুল শুয়ে আছে।হাতে স্যালাইন পুস করানো।
সে কী!শিমুলের চেহারা চুরুত কেমন জানি হয়ে গেছে।সম্পূর্ণ অন্যরকম ,তাকে চেনাই যাচ্ছে না।পারুল সইতে পারলো না।তার পাশে গিয়ে বসলো।তারপর বলল,
শিমুল কেমন আছ?
শিমুল চিনতে পারছে না।তার মুখপানে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।পারুল আবার বলল,
শিমুল চিনতে পারছ না।আমি তোমার পারুল।
কোন পারুল?
আমি তোমার ভালোবাসার পারুল।
কণ্ঠটা পরিচিত মনে হলেও ঠিক মনে করতে পারছে না কে?
শিমুল চেহারর একি হাল হয়েছে?মনে হয় অনেকদিন খাওনি।আজ আমি মিজের হাতে তোমাকে খাওয়াব।
সত্যিই খাওয়াবে?
হুম সত্যি খাওয়াব।
পারুল নিজ হাতে শিমুলকে খাওয়ালো।তার সেবাযত্নে শিমুল সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠল।শুধু তাই নয় পারুলকে সে ঠিক চিনে ফেলল।এবার পারুল বলল,
শিমুল তুমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।আমি এবার আসি।
শিমুল কিছুই বলছে না।বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।তখনি জমিদার দুহাত জোড় করে বলল,
মা এখনো আমার উপর রেগে আছিস?
চাচা না মানে ইয়ে…।
মা পারুল আমি আজ জোর গলায় বলছি,তোর ভালোবাসা সত্য এবং সঠিক।আমি তোর কাছে আমার ছেলের ভালোবাসা ভিক্ষা চাইছি।তুই আমার ছেলেকে পেলে যাসনে।ফিরে আয় মা।আর অভিমান করে থাকিস না।আমাকে ক্ষমা করে দেহ্।
চাচা আপনার উপর আমার আর কোন রাগ নেই।
সত্যি বলছিস মা?
জ্বি চাচা সত্যি।
দুপরিবারের ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে “শিমুল পারুল” বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো।কোন বাঁধাই তাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারলো না।
ঃসমাপ্তঃ