জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? বিবাহ বার্ষিকী পালন করা কি জায়েজ জন্মদিন কিভাবে পালন করতে হয় জন্মদিনের ইতিহাস ইসলামে জন্মদিন পালনের বিধান জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? জন্মদিনের শুভেচ্ছা

জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ?

0

আমাদের বর্তমান আধুনিক মুসলিম সমাজে “জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালন করা” একটি ট্রেন্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। আজ আমাদের অধিকাংশ মুসলমানই  আধুনিক পশ্চাত্যের অনুসরণে জীবনযাপনে ব্যতিব্যস্ত। যা আমাদের অজান্তেই আমাদেরকে পাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই আজ আমাদের জানা উচিত “জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো ও জন্মদিন পালন করা” কি জায়েজ কিংবা ইসলাম সম্মত কিনা।

জন্মদিনের ইতিহাস

শুরুেই আমাদের জন্মদিন পালন এবং জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। জন্মদিনের ইতিহাস সম্পর্কে লিখিতভাবে  প্রথম জানা যায় বাইবেলের জেনেসিস অধ্যায় থেকে। তৎকালিন মিশরের ফারাওদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন  পালন করা হতো অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে। 

বাইবেলে মিশরের রাজা ফারাওয়ের একটি দিনের কথা  যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে এসেছে। তবে তা জন্মের দিন নাকি সিংহাসনে বসার দিন সেটি নিয়ে ইজিপ্টোলজিস্টদের মাঝে তুমুল বিতর্ক রয়েছে। তৎকালীন সময়ে মিশরের ফারাওদেরকে ঈশ্বর সমতুল্য মনে করা হতো। 

একইসাথে সিংহাসনে বসার দিনটিকে মনে করা হতো তাদের মানুষ থেকে ঈশ্বরে রূপান্তরের দিন। তাই বাইবেলে  ঠিক কোন দিনটির কথা বলা হয়েছে সেটি পরিষ্কার বোঝা না গেলেও ফারাও এর জন্মদিন কিংবা ‘ঈশ্বরে রূপান্তরের দিনটিকে’ তারা বেশ ধুমধামের সাথেই পালন করত।  

বাইবেলে বর্ণিত তৎকালীন এই ফারাও ছিলেন ইউসুফ (আ.) এর সময়ের ফারাও, আর সেইসময়ই ইউসুফ (আ) মিথ্যা যৌন নির্যাতনের মামলায় বন্দী রাখা হয়েছিল। বাইবেল থেকে আমরা যা জানতে পারি, 

জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? বিবাহ বার্ষিকী পালন করা কি জায়েজ জন্মদিন কিভাবে পালন করতে হয় জন্মদিনের ইতিহাস ইসলামে জন্মদিন পালনের বিধান জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? জন্মদিনের শুভেচ্ছা জন্মদিন পালন করা কি শিরক জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো কি জায়েজ জন্মদিনে শুভেচ্ছা কিংবা জন্মদিনে দাওআত দিলে করণীয়

তবে তৎকালীন সময়ে সাধারণ মানুষদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো কিংবা জন্মদিন  পালনের কোনো তথ্য ধর্মীয় কিংবা সাধারণ ইতিহাসের বইয়ে পাওয়া যায় না। 

ইউরোপে প্রথম জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালন শুরু হয় গ্রীক দেবি আর্টেমিসকে দিয়ে। তখন দেবীর জন্মদিনে চাঁদ আকৃতির কেক কেটে তা তার জন্য  উৎসর্গ করা হতো। 

তবে কীভাবে জন্মদিনের শুভেচ্ছা কিংবা জন্মদিন পালনের প্রথা গ্রীসে গিয়েছে সেটা জানা না গেলেও, ইতিহাসবিদরা ধারণা করছে, মিশরীয় ফারাওয়ের জন্মদিন পালন করার ঐতিহ্য দেখে গ্রীকরাও তাদের দেব-দেবীদের জন্মদিন পালন করা শুরু করে।

আরও পড়ুন : হযরত মুহাম্মদ সা. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

 

বিভিন্ন ধর্মে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালনের ইতিহাস

ইহুদি ধর্মে জন্মদিন পালন 

ইহুদি ধর্মে তাদের জন্মদিনে  বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় সজনদের জমায়েত করে আনন্দ উদযাপনের সাথে জন্মদিন পালন ও শুভেচ্ছা জানাতে মানুষকে উৎসাহিত করা হয়েছে। 

ইহুদিদের অনেক রাবায়ি (আলেম) মনে করেন যে, কেউ যদি তার জন্মদিন পালন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে। তাহলে তা তার জন্য দোয়া বিশেষ।

হিন্দুধর্মে জন্মদিন পালন 

হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শাস্ত্রীয় বইয়ের বিবরণ ও জ্যোতিষ গণনার ভিত্তিতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন পালন করা হয়। তাদের বিশ্বাস শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল ৩২২৮ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের ১৮ অথবা ২১ জুলাই। তাই তারা এই দিনটিকে শুভ জন্মাষ্টমী বলে উদযাপন করে। হিন্দু পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিণী নক্ষত্রটি  প্রাধান্য পায়। আর তখনই জন্মাষ্টমী পালিত হয়। 

সনাতন ধর্মী হিন্দুর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার  অনুসারে, প্রতি বছর মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময়ে পড়ে। ভাদ্র ও মাঘ মাসের শুক্লা চতুর্থীকে গণেশ চতুর্থী বলা হয়। গণেশ চতুর্থী বা গণেশোৎসব যা হিন্দু দেবতা গণেশের বাৎসরিক পূজা-উৎসব। হিন্দু বিশ্বাসে এই দিনটি গণেশের জন্মদিন।

বৌদ্ধধর্মে জন্মদিন পালন 

আমরা সবাই জানি বুদ্ধ পূর্ণিমা হচ্ছে বৌদ্ধদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। আর এই সবচেয়ে বড় উৎসবটি হলো গৌতম বুদ্ধের জন্মদিন। বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা হল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহ্যবাহী পবিত্রতম উৎসব। এই পুণ্যোৎসব বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে এই পবিত্র তিথিতে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিল। এবং একইসাথে এই সময়েই তিনি বোধি বা সিদ্ধিলাভ করেছিল এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিল। 

এই দিন উপলক্ষে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা গোসল করে পবিত্র হয়। একইসাথে শুচিবস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত থাকে। এই উৎসবে তার ভক্তরা প্রতিটি মন্দিরে বহু প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করে। নানান ফুলের মালা দিয়ে মন্দিরগৃহ সুশোভিত করে বুদ্ধের জন্য তারা আরাধনায় নিমগ্ন হয়। শুধু তাইনয় বুদ্ধরা এই দিনে বুদ্ধ পূজার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেদ প্রার্থনা ইত্যাদি করে থাকে।

আরও পড়ুন: ইমাম বুখারি (রহ.) এর জীবনী 

খ্রিস্টান ধর্মে জন্মদিন পালন ও শুভেচ্ছা জানানো 

মেরী ক্রিস্টমাস খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর রোমান ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্ট চার্চের অনুসারীরা যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এ উৎসব পালন করে। 

খ্রীষ্টীয় ২০০ সাল থেকে এ উৎসব পালন শুরু হয় বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। তবে এটা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ৩৫৪ সালে। একইসাথে এই ঘোষণার অনেক পর ৪৪০ সালে পোপ স্বীকার করেন যে এই দিন যীশু খ্রীষ্টীের জন্মদিন। মূলত পৌত্তলিক রোমানদের উৎসবের বিপরীতে একটি উৎসব সৃষ্টির জন্যই ক্রিস্টমাস নামে যীশুর জন্মদিন  পালন শুরু হয়। সত্যিকথা বলতে গেলে জন্মদিনের ব্যাপক প্রচলন খৃষ্টানদের মাধ্যমেই ছড়িয়েছে।

তবে ধর্মীয় আঙ্গিনার বাইরে প্রথম জন্মদিনের কথা জানা যায় রোমে। রোমেই প্রথম সাধারণ জনগণ পরিবার ও বন্ধুদের জন্য জন্মদিনের পার্টি শুরু করে। এমনকি তৎকালীন সময়ে বিশেষ ক্ষমতাশালী ও সম্মানিত ব্যক্তিদের জন্মদিনে সরকারিভাবে ছুটিও চালু শুরু হয়। তবে এটা সত্য যে, তৎকালীন সময়ে জন্মদিন পালন শুধুমাত্র পুরুষদের জন্যই ছিল। নারীদের জন্মদিন পালনের কোনো রীতি তখন পর্যন্ত চালু হয়নি।

তৎকালীন প্যাগান সমাজে জন্মদিন পালনের রীতিনীতি চালু থাকলেও, খ্রিস্টান সেমেটিক সমাজে জন্মদিন পালন মোটেও স্বাভাবিক নিয়ম ছিল না। বরং প্যাগানরা এই উৎসবের ধারক ও বাহক বলে  ইহুদী ও খ্রিস্টানরা প্রথমদিকে জন্মদিন পালনকে শয়তানের রীতিনীতি হিসেবেই মনে করতো। 

তবে খ্রিস্টানদের এই ভুল ধ্যানধারণা পাল্টাতে থাকে চতুর্থ শতাব্দীর পর থেকে। প্রথমদিকে কোনো নিয়ম না মেনে ঢালাও ভাবে জন্মদিন পালন করা হলেও। চতুর্থ শতাব্দীর পর থেকে খ্রিস্টানরা ধীরে ধীরে আধুনিক ভাবে ঈসা (আ) এর জন্মদিন পালন শুরু করে। এর ফলে ধীরে খ্রিস্টান চার্চগুলো জন্মদিন পালনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে থাকে। 

প্রথমদিকে শুধু খ্রিস্টান ধর্মালম্বিদের মঝে এইসব ধর্মীয় চরিত্রগুলোর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষেরাও কেউ কেউ জন্মদিন পালন শুরু করে। বর্তমানে ক্রিসমাস পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন : হযরত উসমান (রা.) এর জীবনী 

জন্মদিন পালন ও শুভেচ্ছা দেওয়া কাদের সংস্কৃতি

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা  জন্মদিন পালন এবং জন্মদিনের শুভেচ্ছা দেওয়ার  ইতিহাস থেকে এটা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, এটা কখনোই ইসলামের সংস্কৃতি নয়। এবং এইসব বিজাতীয় সংস্কৃতির আশেপাশে ইসলামের নাম গন্ধও নেই। অতএব এটা স্পষ্টতই বিধর্মীদেরই এক‌টি আচার অনুষ্ঠান। যা তাদের মূলত ধর্মীয় আচার, অনুষ্ঠান এবং  আনুষ্ঠানিকতাকেই প্রমোট করে। আর এটা তারা খুবই সূক্ষ্মভাবে পরবর্তীতে সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। 

যারফলে এই সংস্কৃতি বিশ্বের সব দেশ এবং জাতির মধ্যে তারা খুব কৌশলে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। এতে করে তারা দুই দিকে  লাভবান হয়েছে। এক হচ্ছে আর্থিকভাবে। অর্থাৎ জন্মদিন পালন ও জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে যাবতীয় সামগ্রীর ব্যবসা। দুই হচ্ছে তাদের ধর্মীয় আচার আচরণ কালচার এবং ধর্মবিশ্বাসকে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া । সুতরাং জন্মদিন পালন ও শুভেচ্ছা জানানো কোনোটাই আমাদের তথা ইসলামের সংস্কৃতি নয়। 

ইসলামের ইতিহাসে জন্মদিন পালন ও শুভেচ্ছা জানানো 

ইসলামের জন্মলগ্ন থেকে কারো জন্মদিন পালন কিংবা জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানোর ইতিহাস কোথাও নেই। আল্লাহর বরকতময় প্রতিদিনে যে কেউ জন্মগ্রহণ করতে পারে। আর এই জন্ম উপলক্ষে সূর্য  বার্ষিকী হিসাব করে আনন্দ-ফুর্তি করা, খাওয়া দাওয়া করা কিংবা খাওয়া দাওয়া করানো অথবা ভালো নিয়তে কোনো কিছু  করা ইত্যাদি বিষয়ে কুরআন-সুন্নায় দলিল ভিত্তিক কোনো আমল পাওয়া যায়না। 

বছরের যেকোনো দিনে যে কেউ জন্ম গ্রহণ করতে পারে। আর এই দিনকে স্বরণ রাখার জন্য কিংবা এই দিনকে স্বরনীয় করার জন্য জন্মদিন নামে এমন কোনো কিছু করার ইতিহাস ও কোন অস্তিত্ব খাইরুল কুরূনেও (সাহাবী ও তাবেঈন রা. এর স্বর্ণযুগ) পাওয়া যায় না।

ইসলামে যদি কারো জন্মদিন এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ হতো, তাহলে এই সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য হাদীস ও ইতিহাসের কিতাব গুলোতে পাওয়া যেত। অথচ সুদূর অতীতে সাহাবী ও তাবাঈন রা. এর জন্মদিন পালন কিংবা তাদের জন্মের ঘটনা এবং সময়কে কেউ কোনো গুরুত্ব দিয়েছে এমন কিছু পাওয়া যায় না। এমনকি তাদের জন্মদিন পালনের কথাতো অনেক দূরে, তাদের জন্মের সন সাল তারিখেরই কোনো ইয়াত্তা পাওয়া যায় না।

যেকারণে তাদের কাছে জন্মদিন পালন এর কোন গুরুত্বই ছিল না। যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের জীবনীর দিকে দৃষ্টিপাত করলে। সাহাবা ও তাবেঈন রা. এর জীবনীর দিকে লক্ষ্য করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, তারা কে কোন সনে বা সালে জন্মগ্রহণ করেছেন তা কারো কারোটা জানা গেলেও কোন মাসের কোন তারিখে জন্ম করেছেন তা জানা খুবই দুস্কর। 

এমনকি আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবিউল আওয়াল মাসের কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন এটা নিশ্চিত ভাবে জানা না থাকায় সীরাতপ্রণেতাদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। 

শুধু কি তাই, জন্মদিন পালন তো দূরের কথা। তৎকালীন সময়ে তো আরবি ক্যালেন্ডারই ছিলো না। যেখানে ক্যালেন্ডারই নেই, সেখানে জন্মদিন পালনের কথা আসে কীভাবে। 

তাই ইসলামে যদি জন্মদিন পালন কিংবা শুভেচ্ছা জানানোর কোনো গুরুত্ব থাকত। তাহলে তার প্রয়োজনীয়তা সাহাবী তাবেয়ী রা. গন উপলব্ধি করে তাদের যেসব  সন্তান সন্তুতি জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের জন্মতারিখ সংরক্ষিত করে রাখত। এমনকি তারা ঘটা করে জন্মদিনও পালন করত। 

অথচ জন্মদিন পালন তো দূরের কথা তাদের জন্মতারিখই সংরক্ষণ করা হয়নি ঠিকমতো। সুতরাং জন্মদিন পালন যদি পালনীয় কোনো  বিষয় হতো বা গুরুত্ব বহন করত তাহলে অবশ্যই তারা তদাদের সন্তানদের জন্ম তারিখ সংরক্ষণ করতেন। এর মাধ্যমে এ কথা প্রমাণিত হয় জন্মদিন বলতে বর্তমানে যা বুঝায় ইসলামে এর কোন অস্তিত্বই ছিল না।

আরও পড়ুন : হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর জীবনী

জন্মদিন পালন কি ইসলাম সম্মত? 

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার ধর্ম। ইসলামে অপূর্ণ বলতে কোনো শব্দ নেই। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল (সা.) মানব জীবনের এমন কোনো দিক পরবর্তীতের জন্য বাকি রেখে যাননি। ঠিক এই জন্মদিন নিয়েও ইসলামের অবস্থান খুবই পরিষ্কার।

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, 

জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? বিবাহ বার্ষিকী পালন করা কি জায়েজ জন্মদিন কিভাবে পালন করতে হয় জন্মদিনের ইতিহাস ইসলামে জন্মদিন পালনের বিধান জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? জন্মদিনের শুভেচ্ছা জন্মদিন পালন করা কি শিরক জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো কি জায়েজ জন্মদিনে শুভেচ্ছা কিংবা জন্মদিনে দাওআত দিলে করণীয়

 

অর্থাৎ আল্লাহ মুসলমানদের জন্য দ্বীন ইসলামে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। এখন এখানে নতুন করে কিছু যোগ কিংবা পুরোনো কোনো কিছু বাদ দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।  তাই আল্লাহ আরো বলেন,

জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? বিবাহ বার্ষিকী পালন করা কি জায়েজ জন্মদিন কিভাবে পালন করতে হয় জন্মদিনের ইতিহাস ইসলামে জন্মদিন পালনের বিধান জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? জন্মদিনের শুভেচ্ছা জন্মদিন পালন করা কি শিরক জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো কি জায়েজ জন্মদিনে শুভেচ্ছা কিংবা জন্মদিনে দাওআত দিলে করণীয়

এখানে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, আল্লাহ প্রদত্ত বিধি বিধান,  নিয়মকানুন ও আইনকানুন ছাড়া অন্য কোনো জাতি ধর্ম গোষ্ঠীকে অনুসরণ করা যাবে না। যেকারণে আল্লাহ আরো উল্লেখ করেন, 

জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? বিবাহ বার্ষিকী পালন করা কি জায়েজ জন্মদিন কিভাবে পালন করতে হয় জন্মদিনের ইতিহাস ইসলামে জন্মদিন পালনের বিধান জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? জন্মদিনের শুভেচ্ছা জন্মদিন পালন করা কি শিরক জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো কি জায়েজ জন্মদিনে শুভেচ্ছা কিংবা জন্মদিনে দাওআত দিলে করণীয়

অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত বিধি বিধান আচার অনুষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো কিছুর কিংবা কারোর কোনো কিছুই অনুসরণ করা যাবে না। এবং শুধুমাত্র আল্লাহ আমাদের যে সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন ও জীবনবিধান দিয়েছেন। সেই আইনকানুনেরই, এবং বিধি বিধানেরই অনুসরণ করতে হবে। 

একইসাথে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বিধর্মী কাফের মুনাফিকদের যাবতীয় অনুসরণ অনুকরণ করতে সরাসরি নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেনে,

জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? বিবাহ বার্ষিকী পালন করা কি জায়েজ জন্মদিন কিভাবে পালন করতে হয় জন্মদিনের ইতিহাস ইসলামে জন্মদিন পালনের বিধান জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? জন্মদিনের শুভেচ্ছা জন্মদিন পালন করা কি শিরক জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো কি জায়েজ জন্মদিনে শুভেচ্ছা কিংবা জন্মদিনে দাওআত দিলে করণীয়

 

উপরোক্ত দুটি আয়াত দ্বারা আল্লাহ কঠোরভাবে বিধর্মীদের এবং মুনাফিকের অনুসরণ করতে নিষেধ  করেছেন।  

আজ আমাদের সমাজে সচ্ছল অসচ্ছল নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত যেসকল মানুষেরা  আধুনিক মানসিকতা নিয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাসের সাথে  ছেলেমেয়েদের জন্মদিন পালন করছে। তারা মূলত নামধারী ইমানদার হলেও তারা একপ্রকার মুনাফিক। বিধর্মীদের অনুসরণ অনুকরণে মুনাফিক হওয়া এইসব লোকদের দেখাদেখি অন্যান্য সাধারণ মুসলমানও না জেনে পাপে জড়িয়ে যাচ্ছে। 

যেহেতু জন্মদিন পালন কিংবা জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো অথবা বার্ষিক কোনো অনুষ্ঠান পালনের ইতিহাস ইসলামে নেই। সেহেতু এটা পালন করা কোনোভাবেই  জায়েজ নয়। 

আরও পড়ুন : হযরত আদম (আ.) এর জীবনী

 

তারপরও আমাদের মধ্যে কিছু নব্য উদারপন্থী মুসলমান রয়েছে যারা এটা মেনে নিতে পারে না বলে কষ্ট হয়। তাই তাদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শিক মহামানব রাসুল (সা.) এর প্রসিদ্ধ হাদীস। যা হযরত ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 

জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? বিবাহ বার্ষিকী পালন করা কি জায়েজ জন্মদিন কিভাবে পালন করতে হয় জন্মদিনের ইতিহাস ইসলামে জন্মদিন পালনের বিধান জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? জন্মদিনের শুভেচ্ছা জন্মদিন পালন করা কি শিরক জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো কি জায়েজ জন্মদিনে শুভেচ্ছা কিংবা জন্মদিনে দাওআত দিলে করণীয়

অর্থাৎ কেউ ইসলামের আদর্শের বাইরে গিয়ে অন্য কোনো আদর্শ বা সংস্কৃতিকে পছন্দকে যদি লালন করে। তবে সে ঐ দলের বা গোষ্ঠীরই অন্তর্ভুক্ত হবে। এখন আমরা যদি মনের আবেগে সন্তানের বায়না পূরণ করতে গিয়ে জন্মদিন পালন কিংবা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায় তাহলে আমরাও বিধর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো। 

আর আমাদের আদরের সন্তানদের যদি এখনই দ্বীন ইসলামের শিক্ষা না দিয়ে বিধর্মীদের অনুসরণ করতে দেই। তাহলে এই সন্তান ভবিষ্যতে দ্বীন ইসলামের উপর থাকবে এমনটা ভাবা অযৌক্তিক। 

আর যে সন্তান দ্বীন ইসলামের সঠিক শিক্ষা পাবে না, সেই সন্তানের দ্বারা যেকোনো অনৈইসলামিক অমানবিক কাজ হতে বাধ্য। এমনও হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, দ্বীন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এই সন্তান বিধর্মীদের অনুকরণে বাবা মাকে বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবে না। সুতরাং এখন থেকেই সাবধান হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। 

আরও পড়ুন : ইসলামিক ফেসবুক পোস্ট- বাংলা স্ট্যাটাস ডাউনলোড

অপরদিকে আমাদের সমাজে অনেককে জন্মদিন পালন কেন করছে? এটা জিজ্ঞাসা করলেই জবাব দেয়, “আমি জন্মদিন হিসেবে শুকরিয়া স্বরূপ জন্মদিন অনুষ্ঠান পালন করছি।” আর তার যুক্তিকে যুক্তিযুক্ত করার জন্য  কিছু বিদআতী হুজুর ডেকে দোয়া দরুদ পড়ে খানাপিনার আয়োজনও করে।  

এখন এই যদি হয় আমাদের জন্মদিন পালনের মন মানসিকতা তাহলে, কথা হলো ইসলামে যে বিষয়টি নেই তা ইসলামের অন্তর্ভুক্ত করা বিদআত এবং তা প্রত্যাখ্যাত। হাদীস এসেছে –

হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 

জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? বিবাহ বার্ষিকী পালন করা কি জায়েজ জন্মদিন কিভাবে পালন করতে হয় জন্মদিনের ইতিহাস ইসলামে জন্মদিন পালনের বিধান জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? জন্মদিনের শুভেচ্ছা জন্মদিন পালন করা কি শিরক জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো কি জায়েজ জন্মদিনে শুভেচ্ছা কিংবা জন্মদিনে দাওআত দিলে করণীয়

অনুরূপভাবে আরেকটি হাদিসে এসেছে যা হযরত যাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ রা. বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবার মাঝে বলতেন, 

“যাকে আল্লাহ হেদায়াত দেন তাকে ভ্রষ্টকারী কেউ নেই।আর যাকে পথভ্রষ্টকরেন তার জন্য হেদায়াত কারী কেউ নাই। নিশ্চয়ই সবচেয়ে খাটি কথা হল আল্লাহর কিতাব ও সর্বোত্তম দিশারী হল মুহাম্মাদ সা এর সুন্নাত এবং সর্ব নিকৃষ্ট কর্মহল (দ্বীনের মাঝে) নতুন কিছু উদ্ভাবন করা। প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত বিষয়ই বিদআত; প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই জাহান্নামী।” (সুনানে নাসাঈঃ১৫৭৭)

সুতরাং কেউ যদি উদার মনমানসিকতা নিয়ে  নিজ থেকে শুকরিয়া আদায় করার জন্য হলেও বিধর্মীদের অনুসরণ অনুকরণ করে। তাহলেও সেটা ইসলাম সমর্থন করে না। 

যা ইসলাম সমর্থন করে না তা পালন করলে আমরা বিদআত জড়িত হবো। আর এই বিদআতই ধীরে ধীরে একজন মুসলমানকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। আল্লাহ আমাদের জানার বোঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন। 

আরও পড়ুন : হযরত আলী (রা.) এর জীবনী 

প্রশ্নোত্তর

জন্মদিন পালন করা কি শিরক

জন্মদিন বা যেকোনো দিবস পালন করার বিষয়টি শিরক বা কুফরি নয়। এর মাধ্যমে আল্লাহর কোনো হক ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। তাই জন্মদিন পালন শিরক বা কুফরি বলার কোনো সুযোগ নেই।

তবে এমন কিছু দিবস রয়েছে, যা দ্বারা আল্লাহর আইনকানুনকে অবজ্ঞা কিংবা বাতিল বা উচ্ছেদ করা হয়। তখন সেইসব দিবস পালন করা সরাসরি শিরক।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, জন্মদিন পালন কিংবা জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো শিরক না হলেও কবিরাহ গুনাহ। কেননা এইজাতীয় যাবতীয় দিবস যা বিধর্মীদের সংস্কৃতি এবং আচার আচরণ। তা মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ। তাই তা পালন করা হারাম। 

জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো কি জায়েজ

জন্মদিন (Birthday) পালন করা, জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো এবং জন্মদিন উপলক্ষে নানারকম গিফট লেনদেন করা আমাদের আধুনিক মুসলিম সমাজে একটি রীতিনীতিতে পরিনত হয়েছে। যা কখনোই  শরিয়ত সম্মত নয়। কেননা এইসব সম্পূর্ণই অমুসলিমদের সংস্কৃতি। 

আর আমাদের ইসলামে অমুসলিমদের এইজাতীয় আচার অনুষ্ঠান  অনুসরণ-অনুকরণ করা নিশ্চিত ভাবেই নিষিদ্ধ। শুধু আচার অনুষ্ঠানই নয়, বরং অমুসলিমদের পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতি-নীতি বা কৃষ্টি-কালচার যাবতীয় বিষয়। যা তাদের ধর্মীয় পরিচয় ফুটে উঠে, তা থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে।

আরও পড়ুন : হযরত ওমর (রা.) এর জীবনী 

 

এই বিষয়ে হাদিসে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, 

জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? বিবাহ বার্ষিকী পালন করা কি জায়েজ জন্মদিন কিভাবে পালন করতে হয় জন্মদিনের ইতিহাস ইসলামে জন্মদিন পালনের বিধান জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? জন্মদিনের শুভেচ্ছা জন্মদিন পালন করা কি শিরক জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো কি জায়েজ জন্মদিনে শুভেচ্ছা কিংবা জন্মদিনে দাওআত দিলে করণীয়

শুধু তাইনয় রাসুল (সা.) চৌদ্দশত বছর আগেই জানতেন, আমাদের বর্তমান মুসলমানরা কীভাবে ইহুদী নাসারাদের অনুসরণ করবে। তাই তিনি তখনই সাবধান করে গেছেন। যা হাদিসের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে এসেছে। হযরত আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত আছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? বিবাহ বার্ষিকী পালন করা কি জায়েজ জন্মদিন কিভাবে পালন করতে হয় জন্মদিনের ইতিহাস ইসলামে জন্মদিন পালনের বিধান জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? জন্মদিনের শুভেচ্ছা জন্মদিন পালন করা কি শিরক জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো কি জায়েজ জন্মদিনে শুভেচ্ছা কিংবা জন্মদিনে দাওআত দিলে করণীয়

সুতরাং এই হাদিস থেকে এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে মুসলমানরা একসময় না একসময় অবশ্যই বিধর্মীদের অনুসরণ করবে। এবং সেই সময়টা হচ্ছে এখন। যখন আমরা তাদের সকল আচার অনুষ্ঠান বিভিন্ন নামে বেনামে আমাদের মুসলিম সমাজে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছি।

এছাড়াও ইসলামে জন্মদিন পালন কিংবা মৃত্যুবার্ষীকি পালনের কোনো রেওয়াজ বা অনুমোদন নেই। অতএব, বিধর্মীদের অনুসরণে জন্মদিন পালন কিছু জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো ইত্যাদি জায়েজ নেই।

সুতরাং এ জন্মদিন উপলক্ষে কাউকে উইশ (wish) করা, শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো, গিফট আদান প্রদান করা, কেক কাটা, মোমবাতি জ্বালানো বা ফুঁ দিয়ে নিভানো, বিশেষ খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা, জন্ম দিনের নামে নানান পার্টি করা সবই হারাম।

আরও পড়ুন : ইমাম আবু হানিফা (রহ.)

বিবাহ বার্ষিকী পালন করা কি জায়েজ

আমরা আগেই জেনেছি জন্মদিন পালন কিংবা জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো কখনোই আমাদের সংস্কৃতি নয়। অনুরূপভাবে বিবাহ বার্ষিকী পালন করাও আমাদের মুসলমানদের সংস্কৃতি নয়। ইতিহাস থেকে আমরা জেনেছি এইসব এসেছে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর থেকে। সুতরাং এটা আমরা গ্রহণ করতে পারি না।

ধর্মীয় বিধিনিষেধ ছাড়াও এর কারণ হচ্ছে, আমাদের মুসলমানদের কাছে প্রতিটি দিনই খুশির দিন। আমরা যাঁরা স্বামী-স্ত্রী আছি, তাঁদের কাছে প্রতিটি দিনই হতে হবে খুশির দিন। কেননা আল্লাহ স্বামী স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেনই একে অন্যের মনোরঞ্জন করার জন্য। আর এটাই বিবাহের মূল কারণ। 

সুতরাং প্রকৃত মুসলমানরা বছরের প্রতিদিনই তার স্বামী কিংবা স্ত্রীর সাথে হাসিখুশি থাকবে। আর এইসবের মূল হোতা বা সৃষ্টিকারী হচ্ছে ইউরোপ আমেরিকার লোকেরা। তারা তাদের ধর্মীয় রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক  সংস্কৃতির পরিপ্রেক্ষিতে এইসব পালন করে আসছে।  

এর কারণ হচ্ছে, ইউরোপ আমেরিকা কিংবা যাবতীয় ধনী দেশে যারা আছেন তারা তাদের জীবনযাপনে খুবই ব্যস্ত। একইসাথে তাদের ধর্মীয় বিধিনিষেধের শিথিলতার কারণে তারা কখনোই স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গুলোকে যত্ন নেয় না।

ফলে তাদের মধ্যে সামাজিক এবং পারিবারিক বন্ধন গুলো খুবই দুর্বল। তাদের মধ্যে এমনও আছে যে তারা একে অপরের সাথে বছরে একবার দেখা করে, এই কারণে  তাঁরা জন্মদিন পালন কিংবা মা দিবস, বাবা দিবস ইত্যাদি দিবস উপলক্ষে বাবা-মাকে বা স্বামী স্ত্রীকে কিংবা বন্ধুদের বছরে একবার কার্ড পাঠায়। আর এই কারণেই তারা এইসব ঘটা করে পালন করে।

কিন্তু আমরা যারা ইসলাম মানি এবং মেনে চলি। আমাদের কাছে প্রতিদিনই বাবা-মাকে সম্মান দিতে হয় এবং তাদেরকে সবসময়ই হাসি খুশি রাখতে হয়। এইজন্য প্রতিদিনই আমাদের জন্য খুশির দিন।

আর তাই আমরা এ জাতীয় কোনো সংস্কৃতি গ্রহণ করতে পারি না। আমাদের মুসলমানদের স্ত্রীদের সব সময়ই স্বামীকে সময় দিতে হয় এবং খুশি রাখতে হয়। একইভাবে স্বামীরাও তাদের স্ত্রীদের সবসময়ই খুশি রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

যা কখনোই কোনো সুনির্দিষ্ট দিনে নয়। এ জন্য বিয়ের দিন কিংবা জন্মদিন, এ জাতীয় জিনিসগুলো পালন করা ইসলাম অনুমোদন করে না। আর তাই বিবাহ বার্ষিকী বা জন্মদিন পালন ইত্যাদি ইসলামে জায়েজ নেই। 

আরও পড়ুন : ১০ টি সেরা ইসলামিক বই–যা অবশ্যই পড়া উচিত

জন্মদিন কিভাবে পালন করতে হয়

আমরা আগেই জেনেছি, জন্মদিন পালন কিংবা জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো ইসলামে নিষিদ্ধ বা হারাম। এবং তা মুসলমানদের জন্য জায়েজ নয়।

সুতরাং এই পর্যায়ে যদি কেউ জন্মদিন পালন করতে চায়, তবে তাকে এই বিষয়ে ইসলাম কী বলে, তা দেখতে হবে। এই বিষয়ে আল্লাহর কিংবা রাসুলের (সা.) কোনো নির্দেশনা রয়েছে কিনা। অথবা সাহাবীদের সাথে সালফে সালেহীনদের থেকে কোনো দিকনির্দেশনা রয়েছে কিনা তা দেখতে হবে।

আমরা যদি ইসলামের ইতিহাসের দিকে যদি তাকাই, তাহলে সুদূর অতীতে ইসলামে এইসব পালনের কোনো চিহ্ন পর্যন্ত নেই। এমনকি ইসলামে জন্মদিন বা জন্মবার্ষিকী পালন তো দূরের কথা, বড় বড় ইসালামিক মনীষিদের জন্ম সাল বা তারিখেরই কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। যেখানে জন্ম সালের অস্তিত্ব নেই, সেখানে জন্মদিন পালন করা তো অসম্ভব কথা। সুতরাং মুসলমানরা কখনোই জন্মদিন পালন করতে পারে না।

তারপরও যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি না জেনে আর দশজনের দেখাদেখি এই জাতীয় জন্মদিন পালন, বিবাহ বার্ষীকি ইত্যাদি পালন করে। তাহলে আমাদের করণীয় কী। এবং কীভাবে আমরা জন্মদিন পালন করতে পারি।

আরও পড়ুন : যে আমলে নেকী বৃদ্ধি হয় 

 

এর উত্তর হচ্ছে, আমরা কখনোই এইজাতীয় উৎসব তথাকথিত উপায়ে পালন করতে পারি না। আর যেহেতু ইসলামে এর বিধান নেই, সেহেতু তা আমাদের পালন করা কর্তব্য নয়। 

তারপরও রাসুল (সা.) থেকে একটি হাদিস এসেছে যে, তিনি প্রতি সোমবার সাওম তথা রোজা পালন করতেন। কেন পালন করতেন? তা জানতে চাইলে, তিনি জানান যে, এই দিনে তথা সোমবার তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন এবং নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছেন। আর এই কারণেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া স্বরূপ তিনি রোজা রাখতেন।

তবে তিনি কাউকে জন্মবার উপলক্ষে রোজা রাখার বা অন্য কোনো ইবাদত বন্দেগীর নির্দেশ দেননি। তাই জন্মবার উপলক্ষে কোনো প্রকার ইবাদত কিংবা সওয়াবের নিয়তে কোনো কিছু করা ইসলাম সম্মত নয়। 

সুতরাং জন্মদিন কোনভাবেই পালন করা যাবে না। যদি কিছু করার ইচ্ছা জাগে, তাহলে যে বারে সে জন্মগ্রহণ করেছে, সেই বারে প্রতি সপ্তাহে রোজা রাখতে পারে। তার এটাই সর্বোচ্চ আমল। এর বেশি কিছু কোনো অবস্থাতেই স্বীকৃত নয়। 

আরও পড়ুন : হযরত আবু বকর (রা.) এর জীবনী 

 

জন্মদিনে শুভেচ্ছা কিংবা জন্মদিনে দাওআত দিলে করণীয় 

আমাদের বর্তমান আধুনিক মুসলিম সমাজে অনেকেই অন্যান্যদের দেখাদেখি জন্মদিন পালন এবং জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানায়। তাই কেউ যদি অজ্ঞতা বশত: জন্মদিন পালন করে এবং সেখানে দাওআত দেয়। কিংবা আমাদের জন্মদিনেও আমাদেরকে উইশ করে। তাহলে তাকে ভদ্রভাবে নিষেধ করতে হবে এবং এ সম্পর্কে ইসলামের বিধান কী, তা তাকে জানাতে হবে। 

কিন্তু কেউ যদি আমাদের জন্মদিনে উপহার নিয়ে হাজির হয়ে যায় বা উইশ করে। এবং এক্ষেত্রে তাকে যদি তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করি, বা উপহার ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করলে যদি  সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাকে তখনই সরাসরি না করা যাবে না। আপাতত তার উপহার গ্রহণ করে তাকে ধন্যবাদ জানানো যেতে পারে।

কেননা আমাদের নিয়ত হচ্ছে তার কাছে ইসলামের সঠিক তথ্য পৌঁছানো। আর তাই তার উপহার কিংবা উইশ তাৎক্ষণিকের জন্য গ্রহণ করলেও, পরবর্তীতে আমাদের সময় সময় সুযোগ বুঝে তাকে এই ব্যাপারে ইসলামের বিধান কী, তা তাকে জানাতে হবে।

আর কেউ যদি তাদের জন্মদিন পালনের জন্য আমাদের দাওআত দেয় তাহলে তাকে বিনয়ের সাথে এই ব্যাপারে ইসলামের বিধান সম্পর্কে জানিয়ে দিতে হবে। তবে তাকে কোনভাবেই তিরস্কার করা যাবে না। আর এভাবেই আমরা ইসলামের বিধানগুলো অন্যকে জানানোর চেষ্টা করব।

আমরা আজ উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারলাম যে, একজন মুসলিম ইমানদারের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো এবং জন্মদিন পালন করা কখনোই জায়েজ নয়। এমনকি ইসলামের ইতিহাসে জন্মদিন পালনের কোনো প্রমাণ নেই। শুধু তাইনয় ইসলামের বড় বড় স্কালারেরসহ অনেক নামীদামি বুজুর্গেরও কোনো জন্ম তারিখের ঠিক ঠিকানা নেই। এমনকি এই জন্মদিন পালন এবং জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে বিধর্মীদের রীতিনীতি। অতএব একজন মুসলমানের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো এবং জন্মদিন পালন করা কোনোমতেই উচিত নয়। আসুন আমরা বিজাতীয় সংস্কৃতি পরিহার করে ইমান আকিদা সংরক্ষণ করে দ্বীন ইসলামের সঠিক আমল করি। 

 


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

Author: সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী জন্ম চট্টগ্রামে। জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলেন। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখেছেন। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস। বর্তমানে বেসরকারি চাকুরিজীবী। তাঁর ভালোলাগে বই পড়তে এবং পরিবারকে সময় দিতে।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply