যেকোনো পণ্যের প্রচার,প্রসার ও ঐ পণ্য থেকে মুনাফা অর্জনের জন্য বিপণন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিলিপ কটলার বিপণনকে এভাবে ব্যাখা দিয়েছেন,বিপণন হচ্ছে এমন একটি সামাজিক এবং ব্যবস্থাপকীয় প্রক্রিয়া,যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদন এবং বিনিময়ের মাধ্যমে প্রয়োজন চাহিদা পূরণ করে থাকে।যেকোনো বিপণনের ক্ষেত্রেই ২টি দিক আছে।বই বিপণনের ক্ষেত্রে এই ২টি দিক যেভাবে কাজ করে –
১.দর্শনগত- এখানে পাঠক কেমন বই চায়,পাঠকের অভিরুচি কেমন,পাঠকের ক্রয়ক্ষমতা কেমন সেসব দিকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নজর দেয়।
২.দর্শন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা-পাঠকের ক্রয়ক্ষমতা, অভিরুচি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে বইয়ের মূল্য, বিজ্ঞাপন এগুলোর উপর প্রভাব পরবে।
বই বিপণনে এমন একটি কার্যকরী বিক্রয় পদ্ধতি, যার মাধ্যমে লাভজনকভাবে পাঠকের বইয়ের চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়।কোন বিষয়ের উপর বই প্রকাশিত হয়েছে কোনো একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তা কিন্তু বিপণনের মাধ্যমে খুব সহজেই পাঠকদের জানিয়ে দেয়া সম্ভব।এর ফলে পাঠকের সাথে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের একটি অন্যরকম সংযোগ স্থাপন হয় বিপণনের মাধ্যমে। তবে বই বিপণন করার আগে কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে নিতে হবে। কোনো বই প্রকাশের আগে বইটির চাহিদা কেমন হতে পারে, বইটি কত কপি বিক্রি হতে পারে তার উপর ভিত্তি করে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বই বিপণনের সাথে ৪টি বিষয় সংশ্লিষ্ট-
১.concept:
প্রকাশনা পুরো ব্যবসাটাই পাঠক নির্ভর। এজন্য এখানে পাঠকের সন্তুষ্টি মূল বিষয়। সকলকিছু,পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। পাঠক কী প্রত্যাশা করে, চাহিদা কী এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে।যেমন,কিশোর উপন্যাসের পাঠক আর ছোট বাচ্চাদের বইয়ের পাঠক এক হবে না।কোন বইয়ের জন্য কোন ধরনের পাঠক, তাদের চাহিদা এসব কিছু সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে হবে বই বিপণনের ক্ষেত্রে।
২.functions:
ক.একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বিপণনের ক্ষেত্রে কি কি করতে করতে হবে, বিপণনের জন্য কি কি প্রয়োজন তা প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে।
খ.ধারণা তৈরি করতে হবে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে কি কি করতে হবে, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা কতটুকু,কত কপি বই প্রকাশ করা হবে তা সম্পর্কে।
গ.পাঠক সন্তুষ্টির দিকটি মাথায় রাখতে হবে। সর্বোপরি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মুনাফার কথা ভাবতে হবে।
ছোট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য আলাদা করে মার্কেটিং ম্যানেজার থাকে না,এক্ষেত্রে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার কিংবা বিক্রয়কর্মীই এ সমস্ত কার্যক্রম করে থাকে।এই কার্যক্রম যেই সম্পন্ন করুক, এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় এবং সঠিকভাবে করতে হবে।
৩.range of techniques:বিপণনকে “umbrella term” বলা হয়ে থাকে। শুধু বই বিক্রি এবং বিজ্ঞাপনের মধ্যেই বিপণন সীমাবদ্ধ নয়।বরং এর মধ্যে আরো বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।ক.প্রথমেই বাজার গবেষণা করতে হবে, এজন্য কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা নির্ধারণ করতে হবে।
খ. বইয়ের মান উন্নয়নের কাজ করতে হবে।সব বইয়ের মান এক হবে না। যেমন:বাচ্চাদের বই কিংবা বড়দের উপন্যাসের বইয়ের মান ভিন্ন ভিন্ন হবে।
গ.বইয়ের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মুনাফার কথা ভাবতে হবে। বই তৈরিতে কত খরচ পড়েছে, পাঠকের ক্রয়ক্ষমতা এগুলো মাথায় রেখে দাম নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া পাঠককে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে যে খরচ হবে তাও মাথায় রাখতে হবে। বইয়ের মূল্য খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতার জন্য ভিন্ন ভিন্ন হবে।
ঘ.বইয়ের উপস্থাপন ও প্রচারের জন্য বইমেলা একটি ভালো মাধ্যম।এছাড়া বুক রিডিং কার্যক্রমও বেশ ভালো ভূমিকা পালন করে।
“umbrella term” এর মধ্যে আরো আছে বই বিক্রি,ব্যবসা, সরাসরি মেইল,জনসংযোগ,বিক্রয় প্রচার,বিজ্ঞাপন ইত্যাদি।
৪.It is an on going process:
বিপণন হচ্ছে একটি চলমান প্রক্রিয়া।বিভিন্ন রকম কলাকৌশলের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়াটি চলতেই থাকে।বিপণনের ফলে সবসময়ই যে ব্যবসায় লাভ হবে এমন কোনো কথা নেই।বিপননের ফলে ব্যবসায় লাভ হতেও পারে,নাও পারে।বই প্রকাশের পর সেই বইয়ের অনেক বিজ্ঞাপন দিলেও তা বিক্রি নাও হতে পারে।এজন্য অনেক লেখক বইয়ের কিছু অংশ লিখে লিখে বই প্রকাশের আগেই ফেসবুকে পোস্ট করে থাকেন।

nice
Nice