যিনি ব্লগ লেখেন তাকে ব্লগার বলা হয় এটি আমরা সবাই জানি। একজন বা, একাধিক ব্যক্তি কোন ওয়েবসাইটে নিয়মিত যদি লেখা প্রকাশ করেন এবং সর্বশেষ লেখাটি প্রথমে দেখানো হয়। তাহলে এরকম ওয়েবসাইটগুলোকে ব্লগ বলা হয়। বাংলা ভাষায় কিছু মাল্টিব্লগিং সাইট রয়েছে, যেমনঃ টেকটিউনস, সামহোয়ারইনব্লগ ইত্যাদি।
ব্লগ শব্দের ধারণা আসে অনলাইন ডায়েরির ধারণা থেকে, ব্লগার তাকেই বলা হয় যিনি ব্লগ লেখেন। ব্লগ আসলে ডায়েরির মতো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, বরং সবার সামনে প্রকাশ করার মতো বিষয়। ব্লগার মানেই নাস্তিক ভেবে নেয়াটা ভুল। অনেক ব্লগার ইসলাম প্রচার করেন, হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্মও প্রচার করেন।
এই লেখাটিতে ব্লগ নিয়ে সবগুলো সাধারণ ধারণা এবং এটি আসলে কি সেটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো। এই একটি লেখাতেই আপনি বাংলা ব্লগিং বা, যেকোন ভাষায় ব্লগিং নিয়ে অনেক তথ্য পাবেন। কারণ, এই বিষয়ে প্রকাশিত অন্য লেখাগুলোর লিংকও এখানে দেয়া আছে।
ব্লগ কাকে বলে?
‘Weblog’ শব্দ থেকে ব্লগ শব্দের উৎপত্তি। ওয়েবসাইটে প্রতিদিন ডায়েরির মত করে নিজের কথাগুলো লিখে রাখা এবং সর্বশেষ প্রকাশিত লেখাটি প্রথমে দেখানো হয় যে সাইটে সেটিকে ‘ব্লগ’ নামে ডাকা হয়। এবং কালক্রমে এই নামটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
১৯৯৪ সালে জাস্টিন হল সম্ভবত সর্বপ্রথম links.net ঠিকানায় তাঁর ব্যক্তিগত হোম পেজ তৈরি করেন, এটার নাম যে ব্লগ সেটা তিনি নিজেও জানতেন না। তাই, আমরা জাস্টিন হলকে ব্লগিং এর জনক বলতে পারি।
ধীরে ধীরে এই ধারণাটা জনপ্রিয় হয়। এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে- গুগলের ব্লগস্পট এবং ওয়ার্ডপ্রেস। এর বাইরে আরো অনেক সাইটে আপনি খুব সহজে ব্লগ তৈরি করতে পারবেন-
- Wix
- Weebly
- Livejournal
- Tumblr
- Write.as ইত্যাদি
এইসব সাইটগুলোর প্রায় সবগুলোতেই বাণিজ্যিকভাবেই ব্লগিং করার সুযোগ আছে, অর্থাৎ ব্লগিং এর মাধ্যমে টাকা আয় করাটাও সম্ভব। যাদের টাকা নেই, তারা ওয়েব ২.০ সাইটগুলোতে ব্লগ তৈরি করতে পারেন। কিছু টাকা খরচ করে ওয়ার্ডপ্রেসে সুন্দর সুন্দর সাইট তৈরি করা যায় কোন কোডিং জ্ঞান ছাড়াই।
ইউটিউব ভ্লগ এবং ব্লগ এর মধ্যে পার্থক্য
ইউটিউবে আরেকটি শব্দ আপনারা শুনে থাকেন- ভ্লগার, এই শব্দটার অর্থ ভিডিও ব্লগার। ভিডিও ভ্লগারদের চ্যানেলকে বলা হয় ভ্লগ। ব্লগাররা যেমন নিজের কথাগুলো লিখে প্রকাশ করেন, ভ্লগাররাও নিজের কথাগুলো ভিডিওর মাধ্যমে প্রকাশ করেন।
ইংরেজীতে ‘Video log’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে Vlog. ইউটিউবে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ভ্লগার বলতে তৌহিদ আফ্রিদির নামটা মনে আসছে। এখন অনেকেই ভিডিও লগ প্রকাশের দিকে আগ্রহী হচ্ছেন। এটিও আপনাকে আনন্দ, জনপ্রিয়তা এববফ টাকা এনে দিতে পারে।
এখানে ভ্লগিং নিয়ে আমি কিছুই বলছি না। এর জন্য আপনি ইউটিউবের ভ্লগারদের ফলো করতে পারেন। তারা আপনাকে এর খুটিনাটি নিয়ে অনেক ভালো পরামর্শ দিতে পারবে। যেমনঃ এই ভিডিওটি দেখতে পারেন-
বাংলা ব্লগ লিখে আয়
আর, বাংলা ব্লগ এর ধারণাটাও ইদানিং জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। পেশাদার ব্লগারেরা ইংরেজী ব্লগ লেখার প্রতি যেমন আগ্রহী হয়ে ওঠেন বাংলা ভাষাতেও(আয় খুব কম থাকলেও) তেমন একটি শ্রেণী গড়ে উঠছে বলে আমার মনে হচ্ছে। ওয়েব কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নামে তারা নিজেদেরকে কখনো কখনো পরিচয় করিয়ে দেন, ভয়ে এবং বিরক্তিতে।
কিওয়ার্ড রিসার্চ করে লং ফর্ম কনটেন্ট লিখলে বাংলা ব্লগেও সফলতা পাওয়া যায়। প্রত্যেকটা কাজের একটি উদ্দেশ্য থাকে। আপনি চাইলে সামাজিক পরিবর্তনের জন্য লিখতে পারেন, একটি রাজনৈতিক দলের প্রচারের জন্য লিখতে পারেন, নাস্তিকতা প্রচারের জন্য লিখতে পারেন, আবার ধর্ম প্রচারের জন্যও লিখতে পারেন।
যেকারণেই লিখুন না কেন, সেটার মাধ্যমে আয় করা যায় যদি আপনি বিজ্ঞাপন দেখান। আর বিজ্ঞাপনের পূর্ব শর্ত ভিজিটর থাকা। কোন বিষয়ে যদি আপনার জ্ঞান থাকে। বা, জ্ঞান না থাকলেও আগ্রহ থাকে সেই বিষয় বেছে নিতে পারেন।
ভয় আর, বিরক্তির কথা বলেছি। বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন ব্লগার মানেই নাস্তিক এবং ইসলাম বিদ্বেষী যা শতভাগ মিথ্যা। কিন্তু এইভাবে মানুষকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে খুব করে ফেললে তো বিপদ। এছাড়া অনলাইনে আয় মানেই একটা ট্যাবুতে পরিণত হয়েছে আমাদের দেশে।
অনলাইন বলে কোন আলাদা কাজ নেই ভাই, আপনি কোন কাজ পারলে সেটি দিয়ে আয় করতে পারবেন। লেখালেখির যোগ্যতা থাকলে বাণিজ্যিক লেখার পদ্ধতি শিখে আয় করতে পারবেন। আমাদের দেশে প্রচলিত ধারণা আছে অনলাইনে কাজ হয়- সেই কাজ বলতে সাধারণ মানুষ ক্লিক মেরে আয় করা লোকেদের আর, প্রকৃতপক্ষে ভালো ভালো কাজ করা লোকেদের এক কাতারে নিয়ে আসে। এই কারণেই বিরক্তিটা আসে।
ব্লগিং এর জন্য এস ই ও সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার-
ব্লগ এবং ব্লগার নিয়ে প্রচলিত ধারণা
একটি ভুল ধারণা প্রবলভাবে বাংলাদেশের অনেক মানুষের মনেই গেঁথে গিয়েছে যে, ব্লগার মানে নাস্তিক এবং ব্লগ মানে এমন ওয়েবসাইট যেখানে ইসলামবিদ্বেষ ছড়ানো হয়। হতাশার কথা হচ্ছে, ইসলাম প্রচারের কাজেও অনেক মানুষ এই ব্লগকেই ব্যবহার করেন, এই তথ্যটাও তাদের অজানা। মুক্তমনা এবং আরো কিছু ব্লগের কল্যাণে এরকম ভুল ধারণার জন্ম হয়েছে। ‘মুক্তমনা’ শব্দটাকেও ভিন্নার্থে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
আমি বাংলায় কাচা- মুক্তমনার প্রতিশব্দ সম্ভবত সংকীর্ণমনা। যারা নিজেদেরকে ধার্মিক মুসলিম বলে দাবি করেন(বাস্তবে বকধার্মিকও হতে পারেন) তারা কি নিজেদেরকে সংকীর্ণমনা বলে পরিচয় দেবেন? কখনোই না। মুক্তভাবে যিনি চিন্তা করতে পারেন তিনিই মুক্তমনা, নাস্তিকেরা বা, ইসলামবিদ্বেষীরাই মুক্তমনা হবেন এমন কোন কথা নেই। ইসলামবিদ্বেষীরাও সংকীর্ণমনা হতে পারেন।
ঢাকা থেকে প্রকাশিত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমাজের পত্রিকার নাম ছিল শিখা(তাদের নবজাগরণের চিন্তাধারার সাথে আপনার দ্বিমত থাকতেই পারে), সেখানে লেখা থাকতো,
“জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব”
যারা মুক্তমনা ব্লগের ব্লগারদের হত্যা করেছে তারা ইসলামের দৃষ্টিতে হত্যার অপরাধ করেছে। রাষ্ট্রীয় আইনে তো অপরাধ করেছেই। নিজেকে সামান্য হলেও শিক্ষিত করেন ভাই, সবারই ন্যূনতম জ্ঞান থাকার প্রয়োজন আছে।
নিজের লেখা নিজের ব্লগে প্রকাশ করার জন্য ব্লগ তৈরি করা শিখতে হবে-
বাংলা ব্লগ সাইটগুলোর তালিকা
আমি অল্প কিছু সাইটের তালিকা এখানে দিয়ে দিচ্ছি, আরো কোন ভালো সাইটের নাম জানা থাকলে কমেন্ট করে জানান। আমার কাছে জনপ্রিয় মনে হয়েছে এমন ব্লগগুলোর তালিকা-
- সামহোয়ারইনব্লগ
- টেকটিউনস
- টিউনারপেজ
- পিসিহেল্পলাইনবিডি
- লেখক ডট মি
- শখের কৃষি
- রুমানার রান্নাবান্না
- ট্রিকবিডি
- গোল্লাছুট
- আল কাউসার
- মুক্তমনা
- নির্বাণকামী
- বিজ্ঞানযাত্রা ইত্যাদি
বাংলা ব্লগ সাইট যেগুলো আছে সেগুলোর বেশীরভাগই প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখির সাইট, বৈচিত্র কম। ইউটিউবে নানা রকম চ্যানেল তৈরি হচ্ছে, কিন্তু নানারকম ব্লগ কেন তৈরি হচ্ছে না আমি বুঝতে পারছি না।
ডোমেইন-হোস্টিং থাকলে আপনার ব্লগ সবাইকে দেখাতে পারবেন-
ব্লগ থেকে আয়
ভালো কনটেন্ট এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ভিজিটর এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের আগ্রহ থাকলে ব্লগ থেকে আয় করা ও এটাকে পেশা হিসেবে নেয়া সম্ভব। শুধুই যে সমাজ পরিবর্তন বা, কোন রাজনৈতিক বা, ধর্মীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই ব্লগ তৈরি করা যায় এমনটা নয়, পেশা হিসেবেও এটাকে নেয়া সম্ভব।
আমি আপনাদেরকে ব্লগারদের আয়ের একটি তালিকা দেখাই। তারা অবশ্য ইংরেজীতে লেখেন। বাংলা ব্লগ থেকে কে কেমন আয় করছেন সেই তথ্য খুজে পাচ্ছি না, তবে র্যান্ড ফিশকিন, ব্রায়ান ডিনের মতো ব্লগারেরা মিলিয়ন ডলার প্রতি মাসে আয় করেন।
ব্লগিং করে কত টাকা আয় করা যায়?
আমাদের প্রতিবেশী দেশের কিছু ইংরেজী ব্লগারের লিস্ট দেখাই, ধারণা পাবেন-
- হার্শ আগারওয়ালের আয় ৪০০০০ ডলার
- প্রিতম নাগরাল- ২৫০০০ ডলার
- অরুণ প্রভুদেশী- ১০০০০ ডলার
এখানে প্রতি মাসের আয় বুঝানো হয়েছে, এটা গড় আয়- পরিবর্তিত হয়। ব্লগ লিখতে হলে সেই বিষয়ে লিখতে হবে যেটাতে সার্চ ভলিউম আছে, মানে লোকে যেটা খোঁজে। বাংলাদেশী ব্লগারদের আয়ের তালিকা অনলাইনে খুঁজে পাচ্ছি না, আমার কাছে কোনভাবেই নেই- তাই দেখাতে পারছি না। বাংলাদেশীরাও কম আয় করেন না।
বেসিক ব্লগিং শিখুন-
ব্লগিং অনলাইনে কোর্স
পেশাদার ব্লগার হিসেবে যদি ক্যারিয়ার গড়তে চান অথবা, পার্টটাইম ব্লগিং করে টাকা আয় করতে চান, তাহলে ভালোভাবে শিখে শুরু করা উচিত। এক্ষেত্রে দরকারি শিক্ষাটা মূলত কাজে নেমে পড়ার পরে শেখা যায়। প্রাথমিক ধারণা নেয়ার জন্য ভুল কারো কাছে যাবেন না। তাহলে, ভুল কিছু শিখে বিপদে পড়বেন।
Pavilion360 Ltd. এর ম্যানেজিং ডিরেক্টরের একটি ওয়েবিনার আছে, সেখানে তিনি মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন। মাত্র ৩০০ টাকায়(ফ্রিতে দরকারি কিছু দেওয়া এবং পাওয়া উচিত না) তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনেক কিছু জেনে নিতে পারেন-
- কনটেন্ট স্ট্রাকচার
- আইডিয়া জেনারেশন
- এস ই ও প্রয়োজনীয় টুলস
- ট্রান্সলেশন
- কপিরাইটিং ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
সর্বোপরি, প্রশ্নোত্তর সেশন আছে। সেখানে একজন ব্লগিং শিখতে আগ্রহী ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
শেষ কথাঃ যারা এই লেখাটি পড়ছেন, তাদের প্রতি আমি আহবান জানাচ্ছি- নতুন নতুন বাংলা ব্লগ তৈরি করে অনলাইনে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করুন। কৃষিভিত্তিক, রান্নাবান্না, হেলথ টিপস, ইতিহাস, বাংলা গান, ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি নিয়ে ভালো ব্লগ হতে পারে। এরকম ব্লগ নেই বললেই চলে।
আরো পড়ুন(প্রো টিপস)-
- কিওয়ার্ড ক্যানিবালাইজেশন
- গুগল এডসেন্স এর বিকল্প
- কনটেন্ট রাইটিং কোর্স
- আর্টিকেল লেখার নিয়ম
- বাংলা আর্টিকেল রাইটিং পেশা