বই বিপণন ব্যবস্থা বিষয়ক ভাবনা

0

একটি সুস্থ,সুন্দর জাতি গঠনের জন্য পড়া আবশ্যক।বর্তমানে পাঠক বইয়ের প্রতি ঝুঁকছে।ফলে বইয়ের ব্যবসাও জনপ্রিয় হয়ে এসেছে।কয়েক বছর আগেও বই প্রকাশনাকে ব্যবসা হিসেবে মনে করা হতো না।ফলে,সকল পণ্যের মতো বইয়ের প্রচার, প্রসার ঠিকমতো করা হতো না।অথচ, সকল পণ্যের মতো বইও একটি পণ্য।বই শুধু ছাপালেই হবে না, এটিকে বিক্রিও করতে হবে বিপণনের মাধ্যমে।
বই বিক্রির জন্য বইয়ের বিপণন অত্যন্ত জরুরি। বই ছাপাতে যে খরচ হয়,সেই খরচ উঠিয়ে আনা ও মুনাফা অর্জনের জন্য বইয়ের বিপণন অবশ্যই করতে হবে। কেননা,বিপণন না করলে পাঠক বই সম্পর্কে জানতে পারবে না। এই বিপণন করতে প্রয়োজন অর্থের। বইয়ের বিপণন যেকোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারে অথবা অন্য প্রতিষ্ঠান,সংস্থা বা ব্যক্তির অর্থায়নে করতে পারে।

বই বিপণন কেনো প্রয়োজন

১.বই প্রকাশনাকে ব্যবসা হিসেবে টিকিয়ে রাখার জন্য বিপণন অত্যাবশ্যক।বই তৈরিতে যে খরচ হয়, উৎপাদন থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত – সে পরিমাণ মুনাফা অর্জন না করতে পারলে পরবর্তীতে বই প্রকাশ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।ফলে,প্রকাশনা ব্যবসা হিসেবে টিকে থাকতে পারবে না।
২.একটি বই শুধু অন্য আরেকটি বইয়ের সাথে কম্পিট করে না। বরং,বর্তমানে সবকিছুর সাথেই কম্পিট করছে।ম্যাগাজিন,লিফলেট, বুকলেট,নিউজপেপার এই সব কিছুর সাথে বই কম্পিট করছে।এছাড়া মানুষ এখন সামাজিক মাধ্যমে বেশ আকৃষ্ট। এইসবকিছুর মাঝেও বইকে টিকিয়ে রাখার জন্য, মানুষের মাঝে তুলে ধরার জন্য বিপণনের প্রয়োজন।
৩.বই উৎপাদন থেকে বিক্রি পর্যন্ত যে পরিমাণ ব্যয় হয়,তা থেকে যেনো সামান্য পরিমাণও লাভ বা মুনাফা থাকে, সেই জন্য ঐ বইয়ের বিপণন করতে হবে। বিপণনের ফলে বইটি সম্পর্কে পাঠক জানতে পারবে ও ক্রয় করতে উদ্বুদ্ধ হবে।

তবে,বইয়ের এই বিপণন অন্য সব পণ্যের বিপণনের মতো হবে না।

যেকোনো পণ্যের প্রচার,প্রসার ও ঐ পণ্য থেকে মুনাফা অর্জনের জন্য বিপণন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিলিপ কটলার বিপণনকে এভাবে ব্যাখা দিয়েছেন,বিপণন হচ্ছে এমন একটি সামাজিক এবং ব্যবস্থাপকীয় প্রক্রিয়া,যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদন এবং বিনিময়ের মাধ্যমে প্রয়োজন চাহিদা পূরণ করে থাকে।যেকোনো বিপণনের ক্ষেত্রেই ২টি দিক আছে।বই বিপণনের ক্ষেত্রে এই ২টি দিক যেভাবে কাজ করে –

১.দর্শনগত- এখানে পাঠক কেমন বই চায়,পাঠকের অভিরুচি কেমন,পাঠকের ক্রয়ক্ষমতা কেমন সেসব দিকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নজর দেয়।
২.দর্শন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা-পাঠকের ক্রয়ক্ষমতা, অভিরুচি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে বইয়ের মূল্য, বিজ্ঞাপন এগুলোর উপর প্রভাব পরবে।

বই বিপণনে এমন একটি কার্যকরী বিক্রয় পদ্ধতি, যার মাধ্যমে লাভজনকভাবে পাঠকের বইয়ের চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়।কোন বিষয়ের উপর বই প্রকাশিত হয়েছে কোনো একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তা কিন্তু বিপণনের মাধ্যমে খুব সহজেই পাঠকদের জানিয়ে দেয়া সম্ভব।এর ফলে পাঠকের সাথে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের একটি অন্যরকম সংযোগ স্থাপন হয় বিপণনের মাধ্যমে। তবে বই বিপণন করার আগে কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে নিতে হবে। কোনো বই প্রকাশের আগে বইটির চাহিদা কেমন হতে পারে, বইটি কত কপি বিক্রি হতে পারে তার উপর ভিত্তি করে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বই বিপণনের সাথে ৪টি বিষয় সংশ্লিষ্ট-

১.concept:

প্রকাশনা পুরো ব্যবসাটাই পাঠক নির্ভর। এজন্য এখানে পাঠকের সন্তুষ্টি মূল বিষয়। সকলকিছু,পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। পাঠক কী প্রত্যাশা করে, চাহিদা কী এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে।যেমন,কিশোর উপন্যাসের পাঠক আর ছোট বাচ্চাদের বইয়ের পাঠক এক হবে না।কোন বইয়ের জন্য কোন ধরনের পাঠক, তাদের চাহিদা এসব কিছু সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে হবে বই বিপণনের ক্ষেত্রে।

২.functions:

ক.একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বিপণনের ক্ষেত্রে কি কি করতে করতে হবে, বিপণনের জন্য কি কি প্রয়োজন তা প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে।
খ.ধারণা তৈরি করতে হবে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে কি কি করতে হবে, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা কতটুকু,কত কপি বই প্রকাশ করা হবে তা সম্পর্কে।
গ.পাঠক সন্তুষ্টির দিকটি মাথায় রাখতে হবে। সর্বোপরি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মুনাফার কথা ভাবতে হবে।
ছোট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য আলাদা করে মার্কেটিং ম্যানেজার থাকে না,এক্ষেত্রে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার কিংবা বিক্রয়কর্মীই এ সমস্ত কার্যক্রম করে থাকে।এই কার্যক্রম যেই সম্পন্ন করুক, এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় এবং সঠিকভাবে করতে হবে।

৩.range of techniques:

বিপণনকে “umbrella term” বলা হয়ে থাকে। শুধু বই বিক্রি এবং বিজ্ঞাপনের মধ্যেই বিপণন সীমাবদ্ধ নয়।বরং এর মধ্যে আরো বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।ক.প্রথমেই বাজার গবেষণা করতে হবে, এজন্য কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা নির্ধারণ করতে হবে।
খ. বইয়ের মান উন্নয়নের কাজ করতে হবে।সব বইয়ের মান এক হবে না। যেমন:বাচ্চাদের বই কিংবা বড়দের উপন্যাসের বইয়ের মান ভিন্ন ভিন্ন হবে।
গ.বইয়ের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মুনাফার কথা ভাবতে হবে। বই তৈরিতে কত খরচ পড়েছে, পাঠকের ক্রয়ক্ষমতা এগুলো মাথায় রেখে দাম নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া পাঠককে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে যে খরচ হবে তাও মাথায় রাখতে হবে। বইয়ের মূল্য খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতার জন্য ভিন্ন ভিন্ন হবে।
ঘ.বইয়ের উপস্থাপন ও প্রচারের জন্য বইমেলা একটি ভালো মাধ্যম।এছাড়া বুক রিডিং কার্যক্রমও বেশ ভালো ভূমিকা পালন করে।
“umbrella term” এর মধ্যে আরো আছে বই বিক্রি,ব্যবসা, সরাসরি মেইল,জনসংযোগ,বিক্রয় প্রচার,বিজ্ঞাপন ইত্যাদি।

৪.It is an on going process:

বিপণন হচ্ছে একটি চলমান প্রক্রিয়া।বিভিন্ন রকম কলাকৌশলের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়াটি চলতেই থাকে।বিপণনের ফলে সবসময়ই যে ব্যবসায় লাভ হবে এমন কোনো কথা নেই।বিপননের ফলে ব্যবসায় লাভ হতেও পারে,নাও পারে।বই প্রকাশের পর সেই বইয়ের অনেক বিজ্ঞাপন দিলেও তা বিক্রি নাও হতে পারে।এজন্য অনেক লেখক বইয়ের কিছু অংশ লিখে লিখে বই প্রকাশের আগেই ফেসবুকে পোস্ট করে থাকেন।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Shifa

Author: Shifa

আল্লাহ যা করবেন কল্যাণের জন্য করবেন 🙂

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

যে রহস্যময় জলাশয়ে নামলেই যে কোনো প্রাণী পাথর হয়ে যায়।

পৃথিবীতে এমন একটি রহস্যময় জলাশয় রয়েছে যেখানে নামলেই যে কোনো প্রাণী পাথর হয়ে যায়। এটি কোন সাইন্স ফিকশন মুভির গল্প
চর্যাপদের কথা

চর্যাপদ- বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন

বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ লেখা হয়েছে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দির মধ্যে। এই সময়ে বাংলায় পাল রাজাদের রাজত্ব ছিল। পাল
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়। তবে, তিনি স্বাক্ষর করতেন ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা নামে। বিদ্যাসাগর উপাধিটি সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে
ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা

২০২৩ সালের ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা

আমরা আইলা, নার্গিস, রোয়ানু ইত্যাদি ঝড়ের নামের সাথে পরিচিত। নতুন আরেকটি ঘূর্ণিঝড় এসেছিল যার নাম ফণি- এটির নামকরণ বাংলাদেশের করা।

2 Replies to “বই বিপণন ব্যবস্থা বিষয়ক ভাবনা”

Leave a Reply