কাহিনী!

0

কাহিনী!

আমি তাহাকে ভালোবাসিতাম। তাহাকে দেখিলে আমার হৃদয় কম্পিত হয়,কিন্তু জানিতাম না সেই তাহারই লাগিয়া আমি কিছু বেদনাময় মুহূর্তের অংশীদার হইব।এইখানে কথা হয়,সে অবস্থাশালী পরিবার হইতে আইসে।বাকি আর দশটা কাহিনী কিংবা ঘটনার মতো হইতে পারে।কিন্তু নিত্যদিনে আমার সহিত তাহার প্রায়ই দেখা হইতো।তাহার সহিত আমার চোখাচোখি হইতো।জানিতাম না সেই চোখাচোখির অর্থ কী?।আমার নজর অনুসারে আমার নিকট তাহা পরিষ্কার কিন্তু প্রশ্ন থাকে,তাহার ওই নজরের অর্থ কী?এইরূপ ঘটনাই ঘটে রোজ।রাস্তায় চলাচল কিংবা কোথাও স্থির থাকা অবস্থায় যখন তার সন্নিকটে থাকি, যেন মনে হয় তাহার ওই চোখ দুটো আমায় দেখিতেছে ঠিক যেরূপে আমি আমার চক্ষু দিয়া তাহাকে দেখিতেছি।এইরূপ কোনদিন থাকিয়া শুরু হইয়াছে অথবা কতোদিন ধরিয়া চলিতেছে,-তাহা আন্দাজ করিতে পারি না।কিন্তু ঘটনার প্রবাহতা সেইদিন সন্ধার আগ মুহূর্তের রোমাঞ্চকতাই।আমি বাজার হইতে বাড়ি আসিতেছি।সে আমার বিপরীত পাশ দিয়া আমকে অতিক্রম করিবামুহূর্তে কহিল, ‘কালকে বিকাল পাঁচটার সময় আমাদের আমবাগানের ওইদিকে আসিস কথা আছে।’বলিয়া সে যেমনি করিয়া চলাচল করিতেছিলো তেমনি করিয়া চলাচল করিতে লাগিলো।আমার হৃদয়ে তখন ঝড়ের মতোন হাওয়া চলাচল করা বোধ করি অস্বাভাবিক কিছু  না। কেননা আমরা পাড়া প্রতিবেশি তাই আমদের রোজ দেখা হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেই সূত্রে কবে থাকিয়া তাহার প্রতি আমার অনুভূতি জাগিয়াছে বলা মুস্কিল। কিন্তু তাহার আজিকার এই কথাতে আমি বিচলিত হইলাম বটে,যেন একটু বেশিই বিচলিত হইলাম। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই আমি অপেক্ষার প্রহর গুনিতে লাগিলাম। মনে পরে,এই সময় চিন্তারা এতো জোর দিতেছিল যে,সময়টা আসিবার আগ পর্যন্ত আমি কেবল সেই কথাই চিন্তা করিয়া যাইতেছি।ভাবিতেছিলাম,সে এটা বলিবে,না ওটা বলিবে।অতএব,সময় হইবার আধঘন্টা আগেই আমি তথায় গিয়া উপস্থিত হইলাম।তাহার কিয়ৎক্ষন পশ্চাতে সে আসিল।আসিয়া সোজাই আমকে প্রশ্ন করিল, ‘পছন্দ করিস আমাকে?’

জবাবে আমি কিছুই বলিতে পারিলাম না।কেবল মাথা হেঁট করিয়া রাখিলাম।

সে অনেকটা ‘বিষয়সকল জান্তা’ ভাব-ভঙ্গি লইয়া বলিল, ‘বয়স কতো তোর?’

সাহস করিয়া মাথা উঠাইয়া তাহার চোখের দিকে তাঁকাইয়া কহিলাম, ‘ঊনিশ…’

দেখিলাম সে কিছুক্ষন আমার দিকে চাহিয়া থাকিল,পরে কহল, ‘চলবে …আমার বাবাকে গিয়ে মানাতে পারবি?’

কিছুক্ষনের জন্য মনে হইলো,আমি যেন ইহা আশা করি নাই।পরে আবার মনে হইলো,না ইহা তো আমি চিন্তা করিয়াছিলাম যে…আহা যদি তেমনটা হয়!কিন্তু যখন এমনটা হইয়া বসিল তখন আমার করনীয় কী?ইহা বটেই আমার মনে উদয় হয় নাই!তথাপি সে ‘কাল আমার বাবা বাড়িতে থাকবে,কাল এসে বাবার সাথে কথা বলিস।’ বলিয়া প্রস্থান করিল।আমি বাড়ি আসিলাম। সময় পার হইয়া পরের দিনটি টুপ করিয়া চলিয়া আসিল।আমি তাহাদের বাড়িতে গেলাম।কাকা সোফায় বসিয়া টিভি দেখার সহিত চা পান করিতেছেন।আমি গিয়া বলিলাম, ‘কাকা কিছু কথা ছিল……’

বোধ হইল,কাকা আমাকে দেখিয়া কিছু চমকিলেন।পরে আপনাকে সামলাইয়া লইয়া পরে কহিলেন,  ‘আয় আয়,বস,কি বলবি বল…’

 

তাহার পর কিরূপে আমি তাঁহার নিকট তাঁহার কন্যার প্রতি আমার অনুভূতি সকল প্রকাশ করিয়াছি এবং আমার সকল কথা শুনিয়া পরে কাকা কিরূপে আমার, আমার কর্ম এবং আমার পরিবারে একমাত্র সদস্যা আমার মা’এর নামে ব্যাঙ্গ করিলেন এবং সর্বপরি তাহার পুত্রের হস্তে বেদম পেটাইলেন –তাহার বর্ননা দিতে আমারি লজ্জা করিতেছে।কিন্তু তাহাকে তো আমার হৃদয় মাঝে রাখিয়াছি!হয়তো বা কিছুটা পারিপার্শ্বিকতায় এরূপ হইয়াছে। যেমন কিছুদিন ধরিয়া আমি বই পড়িতেছিলাম;- প্রনয়ধর্মী তথা রোমান্টিক কমেডি কাহিনীর বই।যাহার সহযোগীতায় আমার হৃদয়ে বহুত আবেগ উত্থিত হইয়াছে।ফলস্রুতিতে,কেবল মাত্র ঘটিত হওয়া ঘটনায় আমি আমার অনুভূত এবং অন-অনুভূত(ভুল শব্দ) সকল আবেগ সংযোজিত করিলাম।যাহাতে আমার চিন্তাধারা এরূপ হইলো যে, ‘কাকা বাস্তব বলছে,সুতরাং আমার কাজ হবে অকাদ এ থাকা।আর ভুলটা ধরাই দিছে…ওই ভূল আর করবো না।’ এই কথা চিন্তা করিতে করিতে আবেগে আপ্লূত  হইবার পালা! তারপর আমি সেই আমার -তাহার নিকট গেলাম। ইহার পর যাহা হইলো তাহা পাঠকে জানাইবার প্রয়াস নাই।আর তাছাড়া বয়সটা যেন আবেগী।

বোধ করি,পাঁচটা বছর কাটিয়া গিয়াছে।সেইদিন অপরাহ্নের পূর্বমুহুর্তে কাকা আমার সদ্য গড়িয়া ওঠা বাড়িতে আসিয়া হাজির।কাকাকে বসিতে দিলাম।কাকা বসিয়া আমার অসুস্থ মায়ের ঘরের দরজার দিকে তাকাইয়া আছেন। বিছানায় শায়িত মা’য়ের দিকে তাকাইয়াই কাকা বলিলেন, ‘এমন কি করিলি যে আমার মেয়েটা তোকে এতো ঘৃণা করতে লাগলো?’

কাকার কথায় এবং মূখের অবয়বের মাঝে একটু আশ্বর্যের ছাপ পাইতেছিলাম,হাল্কা হাসিয়া কাকাকে দেওয়া বিস্কুটের সহিত বাটিটা হইতে একটা বিস্কুট হাতে লইয়া কহিলাম, ‘শুনলাম পরশু নাকি তার বিয়ে? কাল নেলক কার্ড দিতে এসেছিল।’

আমার মতোই কাকা আমার কথা ফেলাইয়া দিলেন,কহিলেন, ‘তুই ছোটো ছিলি যখন আমাকে ওইসব বলিস,এখন বড় হয়েছিস…।’বলিয়া কিছুক্ষন মাথা হেঁট করিয়া থাকিয়া পরে মাথা উঠাইয়া ফের বলিলেন, ‘ কল্যানী তোর থেকে বছর পাচেঁকের বড় হলেও তোর চিন্তাভাবনার কাছে তা কিছুই না।এখন তুই কাজ করছিস, যা করছিস তাতে তোর বেশ চলে যাচ্ছে। এখন তুই আমার মেয়েটাকে নিজের করে নিতে পারিস না বাবা?’

বলিয়া কাকা উঠিয়া দাঁড়াইল।আমিও উঠিয়া একটু হাসিলাম,কহিলাম, ‘না কাকা।’

কাকা বোধ করি আমার উত্তর পছন্দ করেন নাই। তাই কেমন অসহায়ের মতোন চাহিয়া থাকিলেন। আমি আপনাকে তথা নিজেকে যেন একটু জ্ঞানী ভাবি। তাই একটু হাসি আর রোমান্টিক ভাব লইয়া বলিলাম, ‘কাকা,তোমার মেয়েকে আমি রোজ স্বপ্নে দেখি আর রোজ আমি তাকে ইচ্ছেমতো নষ্ট করে দেই…।’

কথা শুনিবামাত্র কাকা আমার দিকে আগাইয়া আসিয়া তাহার ডান হাত মুষ্টি বাধিয়া সপাটে আমার নাকে এক ঘুষি মারিলেন।তাহার ঘুষির ভার সামলাইতে গিয়া আমি মেঝেতে পড়িয়া গেলাম।পরে উঠিয়া টিস্যু দিয়া নাকের রক্ত মুছিতে মুছিতে এক গর্বিত হিরোর ন্যায় কহিলাম, ‘তাহলে,কিছু বুঝলে কাকা?’

কাকা পুরুষালি কাঁদিতে কাঁদিতে বাহিরে চলিয়া গেলেন।আমি ভাবিলাম, ‘আহা ত্যাগী নায়ক আমি!’

সমাপ্ত


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Rajkumar roy

Author: Rajkumar roy

আমি রাজকুমার ।আমি লিখতে পছন্দ করি।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

প্রতি দান

রাতে থেকে বৃষ্টি হচ্ছিলো, কিছুক্ষণ,বৃষ্টি থেমেছে সবে। সকাল কখন হয়েছে চম্পা জানে না। চম্পা শুনেছে, ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র

অ্যাথেনার অলৌকিক হার্প

অনেক অনেক বছর আগে, প্রাচীন গ্রিসের এক ছোট্ট গ্রামে বাস করত এক কিশোরী মেয়ে—নাইরা। সে দরিদ্র ছিল, কিন্তু তার গলায়

নীলচোখা জলপরী

শঙ্খনদী গ্রামের সকাল সবসময় সমুদ্রের শব্দ দিয়ে শুরু হয়। মাটির ঘরগুলোর চালের ফাঁক দিয়ে বাতাস ঢোকে, আর বাতাসের সাথে ভেসে

সময়ের দরজা

মেঘে ঢাকা এক বিকেল। পুরান ঢাকার সরু গলির ভেতরে, ধুলো ধরা এক প্রাচীন বইয়ের দোকানে ঢুকল আরসোহা। ইতিহাসের ছাত্রী সে,

Leave a Reply