গল্প কমলার দীঘি আফছানা খানম অথৈ

0

কমলার দীঘি

আফছানা খানম অথৈ

সুলায়মান রহমান ছিলেন অজয়পুর রাজ্যের রাজা।তিনি ছিলেন উদার ও মহানুবভতার প্রতীক।প্রজাদের সুখ দু:খ নিয়ে তিনি সর্বদা ভাবতেন।একদা রাজ্যে পানির খুব সংকট দেখা দেয়।পানির অভাবে রাজ্যে প্রজাদের মাঝে হাহাকার শুরু হয়।প্রতিদিন রাজ দরবারে পানি সংকট কিভাবে দূর করা যায় তা নিয়ে প্রজারা উপস্থিত হয়।রাজা কোন সমাধান দিতে পারছেননা।এদিকে পানি শূন্যতার কারণে ডায়রিয়ার মতো কিছু সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ে।আজ এখানে কাল ওখানে মানুষ মরছে অনায়াসে। রাজা পড়লেন মহাচিন্তায় কিভাবে পানি সংকট দূর করবেন।অনেক জল্পনা-কল্পনার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন একটা বড় দীঘি খনন করার।রাজ্যের প্রজাদের ডেকে তিনি বললেন,
প্রজাগন আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
প্রজাগন একবাক্যে বলল,
জ্বী জাঁহাপনা বলুন।
পানি সংকট দূর করার জন্য আমি একটা বড় দীঘি খনন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।এবার আপনাদের মতামত বলুন?
জাঁহাপনা উত্তম প্রস্তাব বটে।আমরা সবাই রাজী।
তাহলে আগামীকাল থেকে দীঘির কাজ শুরু করা হোক।
জ্বী জাঁহাপনা তাই হোক।
সবাই একবাক্যে স্লোগান ধ্বনি,
জাঁহাপনার জয় হউক।
জাঁহাপনার জয় হউক।
কথা মোতাবেক কাজ,রাজা প্রজা সবাই একত্রিত হয়ে বড় দীঘির কাজ শুরু করল।হাজার হাজার শ্রমিক নিয়োগ করা হল এই দীঘি খননের কাজে।দিন রাত পরিশ্রম করে চলেছে শ্রমিকরা।তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে দীঘির কাজ শেষ হয়।রাজা প্রজা সবাই খুশি এতবড় একটা দীঘি খনন করতে পেরে।কিন্তু দু:খের বিষয় দীঘিতে পানি উঠছেনা।
রাজা আবার পড়লেন মহাচিন্তায়।কিভাবে দীঘিতে পানি উঠানো যায় তা নিয়ে প্রজাদের সাথে আলাপ আলোচনা করেন।অনেকে অনেক পরামর্শ দিলো। কেউ বলে সিন্নী রেঁধে দীঘিতে ফেলতে,কেউ বলে খাশী গরু জবাই করে দীঘিতে ঢালতে,কেউ বলে মাঝারে টাকা মান্নত করতে।রাজা কিন্তু থেমে থাকলনা। একে একে সব পরামর্শ পালন করেছে।কিন্তু তবুও দীঘিতে পানি উঠছেনা।এদিকে পানির অভাবে রাজ্যে রোগব্যধি বেড়ে চলেছে।কিছু মানুষ মরছে কিছু মানুষ রোগে ভোগে বিছানায় কাতরাচ্ছে।রাজা-প্রজা কারো মনে শান্তি নেই।সবারই মনে আশান্তি বিরাজ করছে।
এদিকে মহারানী কমলা রাজাকে বলল,
জাঁহাপনা আমি একবার দীঘিটা দেখতে চাই।
রাজা রাজি হলো।
দুজনে চলে গেল দীঘি দেখতে।মহারানী কমলা এত বড় দীঘি দেখে মুগ্ধ হয়ে রাজাকে বলল,
জাঁহাপনা আপনার এ মহৎ কাজে আমি মুগ্ধ হলাম।এত বড় দীঘি আমি এর পূর্বে দেখিনি।এই দীঘির পানি পুরো রাজ্যের পানি সংকট দূর করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
এই বলে মহারানী কমলা দীঘির মধ্যে নেমে পড়লেন।রাজা ও রানীর সঙ্গে নামলেন।পাশা-পাশি হেটে দুজনে পুরো দীঘিটা দেখলেন।দেখা শেষ রাজা এবার রানীকে বলল,
মহারানী এবার উঠুন।
রানী উঠতে চাইছে কিন্তু পারছেনা।মনে হয় কিসের সঙ্গে পা আটকে গেছে।রাজা রানীর হাতধরে টানাটানি করছে, কিন্তু রানীকে তুলতে পারছেনা।রাজা-প্রজা সবাই চেষ্টা করল কিন্তু রানীকে তুলতে পারলনা।ঠিক সেই মূহূর্তে পাতালপুর থেকে দীঘিতে পানি উঠা শুরু হল।রাজা-প্রজার শত চেষ্টা ব্যর্থ হল।সবাই উপরে উঠে গেল।রাজা আর থেমে থাকতে পারলনা।রানীর জন্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।রাজা করুণ সুরে ডাকে,
কমলা আমি তোমাকে ছাড়া থাকব কি করে?তোমার সঙ্গে আমাকেও নিয়ে যাও।
না জাঁহাপনা,আপনি না থাকলে প্রজাদের দেখবে কে?
আর তুমি না থাকলে আমাকে দেখবে কে?
রানী কেঁদে কেঁদে বলে,
জাঁহাপনা আমায় ভুলে যান।আমি প্রজাদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করলাম।জাঁহাপনা আপনি প্রজাদের নিয়ে সুখে থাকুন।
বলতে না বলতে পানিতে দীঘি ভরে গেল।মহারানী কমলাকে আর দেখা গেলনা।রাজা প্রজা সবাই কান্নায় জর্জরিত।মহারানী কমলার নাম অনুযায়ী এই দীঘির নামকরন করা হল “কমলার দীঘি “।এর পর থেকে এই দীঘি কমলার দীঘি নামে পরিচিত।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

প্রতি দান

রাতে থেকে বৃষ্টি হচ্ছিলো, কিছুক্ষণ,বৃষ্টি থেমেছে সবে। সকাল কখন হয়েছে চম্পা জানে না। চম্পা শুনেছে, ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র

অ্যাথেনার অলৌকিক হার্প

অনেক অনেক বছর আগে, প্রাচীন গ্রিসের এক ছোট্ট গ্রামে বাস করত এক কিশোরী মেয়ে—নাইরা। সে দরিদ্র ছিল, কিন্তু তার গলায়

নীলচোখা জলপরী

শঙ্খনদী গ্রামের সকাল সবসময় সমুদ্রের শব্দ দিয়ে শুরু হয়। মাটির ঘরগুলোর চালের ফাঁক দিয়ে বাতাস ঢোকে, আর বাতাসের সাথে ভেসে

সময়ের দরজা

মেঘে ঢাকা এক বিকেল। পুরান ঢাকার সরু গলির ভেতরে, ধুলো ধরা এক প্রাচীন বইয়ের দোকানে ঢুকল আরসোহা। ইতিহাসের ছাত্রী সে,

Leave a Reply