গল্প কুমারী আফছানা খানম অথৈ

0

কুমারী

আফছানা খানম অথৈ

প্রেমা মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে।বাবা অবসর প্রাপ্ত হাই স্কুল টিচার। মেয়ের পড়া-লেখা শেষ এবার বিয়ে দেয়া আবশ্যক।ঘটক ডেকে পাত্র দেখতে বললেন।দুএকটা প্রস্তাব এসেও গেছে ইতিমধ্যে।দুপক্ষের পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার আছে যাক সেখানে বিয়ে হয়নি।ঘটক কিন্তু বসে নেই একটার পর একটা প্রস্তাব আনছে।পাত্রী অনেকের পছন্দ হয়, কিন্তু দেনা পাওনার হিসেবটা মিলছে না বিধায় প্রেমার বিয়ে হতে লেট হচ্ছে।মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে শিক্ষিত ভদ্র নম্র,সুন্দরী তবুও পাত্র পক্ষের অভিযোগ মেয়ের বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো না।মেয়ের বিয়েতে তেমন বড় কিছু দিতে পারবে না।প্রেমার বাবা রীতিমত হার্টফেল করার মতো অবস্থা।মেয়েকে পাত্রস্থ করার জন্য খুবই অস্থির হয়ে উঠেছেন।যাক এবার এক পাত্রের মা-বাবার সুমতি হলো।মেয়ে পছন্দ হলে বিয়ে হবে তাদের কোন চাওয়া-পাওয়া নেই।প্রেমার বাবা রাজী হলেন।ঘটক পাত্র পক্ষকে নিয়ে আসল। তারা প্রেমাকে দেখতে এসেছে।প্রেমার মা জেবুন্নেছে বাবা আছাদল হক খুব খাতির করে মেহমানের আপ্যায়ন করলেন।অপ্যায়ন শেষ এবার প্রেমাকে দেখার পালা,আছাদল হক সাহেব বললেন,
কৈ তোমরা তাড়াতাড়ি প্রেমাকে নিয়ে আস।
প্রেমার এক খালা তার সমবয়সী।তার চেয়ে বয়সে বড়।ওর বিয়ে কিন্তু হয়ে গেছে।তবু ও প্রেমার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক।সে প্রেমাকে নিয়ে পাত্র পক্ষের সামনে আসল।প্রেমা সালাম দিতে পাত্রের মা সালামের জবাব দিয়ে বলল,
বস মা,বস।
প্রেমা ভদ্রভাবে বসে পড়লো।পাশা-পাশি তার ছোট খালা রিপা ও আছেন।পাত্র পক্ষের প্রেমাকে পছন্দ হয়েছে।পাত্রের মা বলল,
মা তোমার হাতটা দাওতো?
প্রেমা হাত বাড়িয়ে দিলো।পাত্রের মা প্রেমার হাতে আংটি পরিয়ে দিলো।তারপর দুপক্ষের মতামত অনুযায়ী দিনক্ষণ ঠিক করা হলো।আছাদল হক সাহেব আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিমন্ত্রণ করলেন।আজ প্রেমার গাঁয়ে হলুদ।বাড়ি ভর্তি মেহমান।এমন সময় পাত্রের বাড়ি থেকে একজন লোক আসল।আছাদল হক সাহেবকে ডেকে বললেন,
পাত্রের কিছু দাবী-দাওয়া আছে।
তিনি আশ্চার্যের স্বরে বললেন,
কাল বিয়ে আজ এসব কি বলছেন?
জ্বী হ্যাঁ এই চিঠিতে সবলেখা আছে পড়ে দেখুন।যদি রাজী থাকেন যোগাযোগ করবেন।আছাদল হক পড়ে দেখেন।তাতে লেখা আছে নগদ এক লক্ষ টাকা, মেয়ের অলংকার,ঘর সাজানোর ফার্নিচার, এসব যদি দেয় তাহলে সে বিয়ে করবে, অন্যথায় না।
এই মুহূর্তে এত টাকা অলংকার উনি কোথায় পাবেন।তাছাড়া কাল বিয়ে আজ না করবে কিভাবে?কথাটা ভাবতেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লেন।দ্রুত গতিতে উনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।ইমারজেন্সীতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু,কিছুক্ষণ পর ডাক্তার জানিয়ে দিলো,উনি মারা গেছেন।প্রেমা খুব আফসেট কারণ তার বিয়েকে কেন্দ্র করে বাবার মৃত্যু হলো।সে কিছুতে নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না।কান্না সে কি কান্না,কেউ বুঝাতে পারছে না।
প্রেমার বিয়ে আর হলো না।যৌতুকের জন্য ভেঙ্গে গেল।একদিকে বাবার মৃত্যু অন্য দিকে বিয়ে ভাঙ্গা দুটো আঘাত তাকে বিদ্রোহী করে তোলে।সে নিজেকে স্বামলম্বী করে করে তোলার প্রতিজ্ঞা করে। তাছাড়া সে পরিবারের বড় মেয়ে।ছোট ভাই-বোন দুজনের এখনো লেখা পড়া শেষ হয়নি।প্রেমাকে চাকরী-বাকরী কিছু একটা করতে হবে।তানা হলে ছোট দুভাই-বোনের লেখা পড়া সংসার চলবে কি করে।বিভিন্ন পদে চাকরীর জন্য সিভি জমা দিচ্ছে।বললে তো আর চাকরী হবে না।সময়ের প্রয়োজন আছে।আপাতত সে টিউশনি করছে।যাক আল্লাহপাক মুখ তুলে চেয়েছেন।সময়মতো ইনটারভিউ দিতে দিতে এক সময় তার অডিট অফিসার পদে চাকরী হয়।প্রেমার চাকরীর সুবাধে তাদের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আসে।ছোট ভাই বোনের লেখাপড়া সংসার খরচ মোটামুটি ভাবে মেনটেইন হচ্ছে।প্রেমার দিনকাল ভালোভাবে চলছে।মাঝে কমাস পার হলো।প্রেমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু।প্রেমার এককথা সে বিয়ে করবে না।শেষে এক পাত্রপক্ষ প্রেমার চাচাকে ধরেন।প্রেমাকে ছেলের বউ করার জন্য।চাচা সময় করে একদিন তার মায়ের কাছে যায়।তাকে দেখা মাত্রই প্রেমার মা বলল,
রাতুল ভাই যে, কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?
আল্লাহ রেখেছেন ভালো মতে। শোকরিয়া খোদা পাকের কাছে। এই দুর্দিনে যে মেয়েটার চাকরী হলো।
ভাবী সবই আল্লাহ পাকের ইচ্ছা।
তো ভাই এতদিন পর বুঝি আসার সময় হলো?
কি করবো ভাবী চাকরী সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকি সারাক্ষণ।আজ একটু সময় পেয়েছি, তাই চলে এলাম।ভাবী একটা কথা বলতে এসেছি ?
রাতুল ভাই বলো কি বলবে?
জানি ভাবী বিয়ে ভাঙ্গা ও ভাইজানের মৃত্যুতে প্রেমা খুব আফসেট।তবুও তাকে সংসার করতে হবে।একা তো আর থাকা যাবে না।কি বলেন ভাবী?
রাতুল ভাই আমিও তাই চাই।
ভাবী প্রেমার জন্য ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।
ছেলে কি করে?
ছেলে গভ:মেন্ট কলেজ টিচার।তুমি প্রেমাকে ভালো করে বুঝাও। ছেলেটা খুব ভালো তাছাড়া ফ্যামেলি স্টাটার্স ও ভালো।
ঠিক আছে ভাই,ও ডিউটি থেকে আসুক। তারপর কথা বলে তোমাকে জানাব।
ঠিক আছে ভাবী,আমি তাহলে এখন উঠি।
রাতুল সাহেব বিদায় নিলেন।প্রেমা ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরল।মাস শেষ মাইনে পেয়েছে। ছোট দুভাই বোন ও মায়ের জন্য কাপড় কিনে এনেছে।ছোট বোনের বার্থ ডে। কাপড়টা বোনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
Happy birth day to you.
বোনটি তাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু এঁকে বলে,
থ্যাংকস আপু তুমি অনেক অনেক ভালো।
প্রেমা ভাই-বোন ও মায়ের জন্য কাপড় কিনল।কিন্তু নিজের জন্য কিছু কিনল না।মা মেয়ের পাশে গিয়ে বসল।তারপর বলল,
প্রেমা তুই কি ঘুমিয়েছিস?
প্রেমা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
জ্বী না মা কিছু বলবে?
মেয়ের হাসি মুখ দেখে মা বলল,
প্রেমা সবার জন্য কাপড় কিনলি তোর জন্য কিছু কিনলি না যে?
মা আমার কাপড় আছে তো, তাই কিনলাম না আর কি।
তার মানে ওদের কাপড় নেই নাকি?
প্লিজ মা আস্তে বল,ওরা শুনলে মনে কষ্ট পাবে।
মারে আমরা বোধ হয় তোর উপর অবিচার করছি।
বলতে না বলতে মায়ের চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়লো।প্রেমা মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
কিযে বলো না মা,অবিচার হবে কেন,এটাতো আমার দায়িত্ব এবং কর্তব্য।আমি কি তোমাদের সন্তান না?
হ্যাঁ মা তুই আমাদের আদর্শ সন্তান।মারে তোকে একটা কথা বলতে চাই।
জ্বী মা বলো?
মা আমি চাই তুই সংসারী হও।
মা আমি সংসার করলে তোমাদের দেখবে কে?
আল্লাহ দেখবে, তাছাড়া বিয়ে হলে কি তুই আমাদের দেখবি না?
মা আমি চাইলে ও ঐ পুরুষটি চাইবে না।
কে বলেছে তোকে, সব পুরুষ এক রকম হয় না।তোর চাচা একটা প্রস্তাব এনেছে।ছেলে গভ:মেন্ট কলেজ টিচার। তুই রাজী হয়ে যা মা।
প্লিজ মা আমি কখনো বিয়ে করবো না।
মা এমন কড়া কথা বলিস না।তুই বিয়ে কর,সংসারী হও।আমি তোর সুখ দেখতে চাই।
মা আমি এখন বেশ সুখে আছি।বিয়ে হলে বরং অসুখে থাকব।তাছাড়া যৌতুক দিয়ে আমি কখনো বিয়ে করবো না।
প্রেমা ছেলেটা যৌতুক চাইনি তো?
ভুল বললে মা।ঐ ছেলেটা আমাকে কেন বিয়ে করছে জান।
কেনরে মা?
চাকরী দেখে।
তো কি হয়েছে?
মা কি হয়নি বলো?প্রথমে আমার বিয়ে হয়নি যৌতুকের জন্য।তাও ভরা মসলিসের বিয়ে ভেঙে যায়।আর এটাকে কেন্দ্র করে বাবার স্ট্রোক এবং মৃত্যু।এরপর আমরা অসহায় হয়ে পড়লাম।তখন তো কেউ আমাকে বিয়ে করতে আসেনি।কি দোষ ছিল আমার,রুপ,গুন,যোগ্যতা কোন দিকে অযোগ্য ছিলাম?তবুও বিয়ে হলো না?কারণ আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো না তাই।
মা তাই বলে তুই সংসার করবি না?
করবো না মা।কারণ পুরুষেরা কখনো সত্যিকার ভাবে নারীদেরকে ভালোবাসে না।তারা নারীর অর্থ প্রতিপত্তি, চাকরী এসব দেখে বিয়ে করে, অন্যথায় নয়,।
এর নাম ভালোবাসা নয়,এর নাম বিয়ে নয়।আজ অবধি দেখেছ কোন গুনবতী মেয়ের যৌতুক ছাড়া বিয়ে হতে।দেখনি,আর যদি হতো তাহলে আমার বিয়েটা ভাঙতো না।আর এখন তোমরা যাকে ভালো বলছ সেও সেই দলের একজন।কারণ এখন সে আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে চাকরী দেখে গুন দেখে নয়।আমি এ সমস্ত পুরুষদেরকে মনে প্রাণে ঘৃণা করি।
বুঝিরে মা সব বুঝি।তবুও তো সবাই সংসার করে।
সবাই করুক, আমি সংসার করবো না।প্লিজ মা এই নিয়ে আর কখনো ফোর্স করো না।
মা আর বাড়াবাড়ি করলেন না।প্রেমা মনোযোগ দিয়ে জব করছে।মাঝে অনেক সময় পার হলো।ছোট বোনের পড়া-লেখা শেষ হলো।দেখে শুনে তাকে বিয়ে দিলো প্রেমা।এখনো যে তার বিয়ের বয়স ফুরিয়ে গেছে তা নয়।তার বড়ি ফিটনেস চেহারা চুরুত খুব ভালো।তাই এখনো তার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে।শুধু তাই নয় তার এক বেস্টফ্রেন্ড গ্রেজেটেড অফিসার তার বিয়ে ভাঙার কাহিনী ও প্রেমার বাবার মৃত্যুর কথা শুনে খুব আফসেট হয়।এমনিতে তারা ছোট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছে।দুজন ভালো বন্ধু। দুজনের মাঝে ভালো ভাবসাব।একে অপরকে ভালোবাসে কিন্তু মুখ ফোটে কেউ কাউকে কোন দিন বলেনি।আজ একটা সুযোগ পেয়ে রাফসান বলল,
প্রেমা আমি তোকে একটা কথা বলতে চাই।
বল কি বলবি?
আগে বল রাগ করবি নাতো?
না করবো না,বল।
প্রেমা বিস্তারিত না বলে সংক্ষেপে বলি।
হ্যাঁ বল।
প্রেমা তোর যদি কোন আপত্তি না থাকে,আমি তোকে বিয়ে করতে চাই।আমি তোকে খুব ভালোবাসি।
এক গাল ঘৃণার হাসি হেসে প্রেমা জবাব দিলো,
রাফসান তুই কি আমাকে করুণা করতে চাস?
প্রেমা করুণা নয়।সত্যি আমি তোকে ভালোবাসি।এভাবে একা একা নিজেকে কষ্ট দেয়ার কোন মানে হয় না।তাছাড়া তোর এমন কিবা বয়স হয়েছে।তোর চেয়ে বেশী বয়সেও মেয়েরা বিয়ে করে।তাহলে তুই পারবি না কেন?
রাফসান আমি তোর প্রস্তাবে রাজী হতে পারিনি বলে দুঃখিত।
কেন প্রেমা আমার অপরাধ?
রাফসান তোর কোন অপরাধ নেই।তুই খুব ভালো।তবে একটা সত্য কথা না বলে পারলাম না।তোর মা-বাবা বেঁচে থাকলে এ বিয়েতে কখনো রাজী হতো না।তাছাড়া আর বাঁচব বা কদিন।এখন আর সংসার-টংসার নিয়ে ঝামেলা করার কি দরকার।
প্রেমা প্লিজ আর একটু ভেবে দ্যাখ।
রাফসান আমি যা বলার ভেবেচিন্তে বলেছি।প্লিজ আমাকে ক্ষমা কর।
রাফসান আর কিছুই বলল না।প্রেমা মনোযোগ দিয়ে জব করছে।নিজের প্রতি তেমন একটা খেয়াল নেই।মা ভাই-বোন সবার ঠিকমতো টেককেয়ার করছে।মাঝে কিছু সময় পার হলো।তার একটা গভ:মেন্ট অফিসে অডিট করার ডাক পড়লো।প্রেমে ছুটে গেল অডিট করতে।অফিসে প্রবেশ করতে ম্যানেজার সালাম দিয়ে বিনয়ের সহিত বসতে দিলো।মুখের দিকে তাকাতে প্রেমা ঠিক লোকটিকে চিনে ফেলল।এ আর অন্য কেউ না যার সঙ্গে প্রেমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল, আবার যৌতুকের জন্য ভেঙ্গে গেল সেই মাসুদ রানা।প্রেমা তাকে চিনতে পারলেও সে প্রেমাকে চিনতে পারেনি।প্রেমা অফিসের কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা,তা দেখার জন্য বের করতে বলল।তিনি সব ফাইল পত্র বের করে দিলেন।প্রেমা একেএকে সব কাগজপত্র দেখলেন।কোন কাগজপত্র ঠিক নেই।তার মানে মাসুদ ম্যানেজার দায়িত্ব পালন করছেন না।তখনি প্রেমা বলল,
মাসুদ সাহেব আপনার একটা কাগজপত্র ওতো ঠিক নেই।আপনি মনে হয় ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না।
কথাটা সত্যি তিনি গোপন করবেন কিভাবে।পরক্ষণে তিনি বললেন,
ইয়ে মানে ম্যাডাম আমি ফ্যামিলিগতভাবে একটু সমস্যায় ছিলাম।তাই অফিসের কাজ ঠিকমতো পালন করতে পারেনি।
তাই বলে এত অনিয়ম?
সরি ম্যাডাম ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা করুণ।
মাসুদ সাহেব প্রথম বারের মতো ক্ষমা করলাম।দ্বিতীবার এসে এমন অনিয়ম দেখি সঙ্গে সঙ্গে চাকরী থেকে সাসপেন্ড করবো।
ম্যাডাম আর অনিয়ম হবে না।
কথা আর কাজের সাথে যেন মিল থাকে।চলুন আপনার বাসায় যাব।
বাসায় কেন ম্যাডাম?
এমনি,কোন সমস্যা?
জ্বী না ম্যাডাম,চলুন।
প্রেমাকে সে বিয়ে করেনি যৌতুকের জন্য।এবার প্রেমা তার বউয়ের কাছে থেকে শুনবে সে কি পরিমাণ যৌতুক নিয়ে বিয়ে করেছে,তাই তার বাসা পর্যন্ত যাওয়া।অফিসের পাশে মাসুদ ম্যানেজারের বাসা।তাই যেতে লেট হলো না।প্রেমাকে বসিয়ে রেখে তিনি বউকে চা নাস্তা বানাতে বললেন।বউ বলল,
ঘরে চা চিনি কিছুই নেই।
ম্যানেজার বউকে বলল,
তুমি ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলো।আমি দোকান থেকে চা পাতা চিনি নিয়ে আসি।
প্রেমা আর ম্যানেজারের বউ খোশ গল্পে মেতে উঠল।গল্পের এক পর্যায়ে প্রেমা বলল,
ফার্নিচার গুলোতো অনেক সুন্দর।ম্যানেজার সাহেব কিনেছে বুঝি?
কি যে বলেন ম্যাডাম, ওর এসব কেনার মুরোদ আছে নাকি?এসব তো আমার বাবা-মা দিয়েছে।
ও তাই।তো আপনার বাবা-মা আর কি কি দিয়েছে?
নগদ টাকা,অলংকার,ফার্নিচার সব আমার বাবা মা দিয়েছে।তবুও তার অভাব।
আপনাদের বাচ্চা -কাচ্চা কজন?
পাঁচ জন।দু’ছেলে তিন মেয়ে।
ভাবী আমি এখন উঠি।
ম্যাডাম সে কি চা নাস্তা না করে চলে যাবেন?
ভাবী আজ থাক।অন্যদিন ..।
প্রেমা বেরিয়ে পড়লো।ম্যানেজার চা পাতা চিনি নিয়ে বাসায় ফিরলো।কদিন পর ম্যানেজার জেনে গেল।এ অডিট অফিসার কে,যে তার বাসা পর্যন্ত গেল।তার পরিচয় জানার পর ম্যানেজার খুব অনুতপ্ত হলো।তারপর নিজের ভুল স্বীকার করে একটা চিরকুট লিখে পাঠাল।
ম্যাডাম,
সালাম নিবেন।আপনার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার যোগ্যতা আমার নেই।আপনার এ পরিণতির জন্য আমি দায়ী।ম্যাডাম যৌতুক নিয়ে বিয়ে করার মাঝে কোন আনন্দ নেই।আজ আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।উঠতে বসতে বউ খোটা দেয়।কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ কখনো সুখী হতে পারে।আপনাকে কষ্ট দিয়ে আমি সুখী হতে পারিনি।এটা আমার পাপের ফসল তাই বউয়ের কাছে প্রতি মুহূর্তে অপমানিত হতে হচ্ছে।ম্যাডাম সবশেষে বলব,সেদিন বুঝিনি,তাই যৌতুক দাবী করেছিলাম।যার কারণে আপনার বিয়েটা ভেঙ্গে যায়।আমি যা করেছি তা ক্ষমার যোগ্য নয়।তবুও বলব আমাকে ক্ষমা করুণ।ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন।খোদা হাফেজ।
ইতি
অপদার্থ বিবেকহীন ম্যানেজার
মাসুদ রানা।
প্রেমার পিয়ন তার হাতে খামটা দিয়ে বলল,
ম্যাডাম ম্যানেজার মাসুদ রানা আপনাকে এই চিঠিটা দিতে বলেছে।
প্রেমা খামটা খুলে চিঠিটা পড়লো।তারপর আপন মনে বলে,মাসুদ সাহেব তাহলে শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল বুঝতে পারলেন।এখন এসব বলে আর লাভ কি?আপনাদের মতো কিছু বিবেকহীন স্টুপিডদের জন্য শুধু আমি নয়,আর ও অনেক মেয়ে বেঁচে থাকা অবধি “কুমারী” জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলো।
ঃসমাপ্তঃ


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

প্রতি দান

রাতে থেকে বৃষ্টি হচ্ছিলো, কিছুক্ষণ,বৃষ্টি থেমেছে সবে। সকাল কখন হয়েছে চম্পা জানে না। চম্পা শুনেছে, ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র

অ্যাথেনার অলৌকিক হার্প

অনেক অনেক বছর আগে, প্রাচীন গ্রিসের এক ছোট্ট গ্রামে বাস করত এক কিশোরী মেয়ে—নাইরা। সে দরিদ্র ছিল, কিন্তু তার গলায়

নীলচোখা জলপরী

শঙ্খনদী গ্রামের সকাল সবসময় সমুদ্রের শব্দ দিয়ে শুরু হয়। মাটির ঘরগুলোর চালের ফাঁক দিয়ে বাতাস ঢোকে, আর বাতাসের সাথে ভেসে

সময়ের দরজা

মেঘে ঢাকা এক বিকেল। পুরান ঢাকার সরু গলির ভেতরে, ধুলো ধরা এক প্রাচীন বইয়ের দোকানে ঢুকল আরসোহা। ইতিহাসের ছাত্রী সে,

Leave a Reply