গল্প সিয়ামের স্বপ্ন আফছানা খানম অথৈ

0

গল্প
সিয়ামের স্বপ্ন
আফছানা খানম অথৈ

দশ বছরের সিয়াম কমলাপুর রেল ষ্টেশন এ থাকে।তার ঘরে খুব অশান্তি। এক মুহুর্তের জন্য ভালো লাগছে না।তাই কমলাপুর রেল ষ্টেশন থাকছে, খাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে।

সিয়ামের বাবা একজন নেশাখোর জুয়াড়ি।কোনো কাজকর্ম করত না।স্ত্রী অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালাত।এতেও স্বামী সন্তুষ্ট না।স্ত্রীকে রোজ রোজ কারণে অকারণে মারধর করত। স্ত্রী মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য করত।কিন্তু তাতেও স্বামী সন্তুষ্ট না।এক সময় তাকে তালাক দিয়ে দেয়।

এরপর দুজন আবার বিয়েশাদী করে।সিয়াম খুব অসহায় হয়ে পড়ে।যখন বাবার কাছে যায়, সৎ মা অত্যাচার করে। আবার যখন মায়ের কাছে যায় সৎ বাবা মারধর করে তাড়িয়ে দেয়।সিয়ামের জন্য মাকে রোজ কথা শুনতে হয়।একবিন্দু শান্তি নেই কোথাও।যেখানে যায় সেখানে দূরদূর করে তাড়িয়ে দেয়।

এতটুকুন বাচ্চা যাবে কোথায়?।মায়ের জন্য খুব মন কাঁদে। ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।কিন্তু নিরুপায়,থাকবে কোথায়?
মায়ের কাছে থাকলে সৎ বাবা তাকে টর্চার করবে।তাই কোনো উপায় না পেয়ে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।হাটতে হাটতে চলে যায় কমলাপুর রেল স্টেশনে।খুব ক্লান্ত খাবে কি?
দেখে তার বয়সি কিছু ছেলে কাগজ আর বোতল কুড়াচ্ছে।তাদের সাথে পরিচিত হবার পর জানতে পারল,তারা এগুলো বিক্রি করে।কোনোমতে খাবার যোগায় আর রাতে কমলাপুর রেল স্টেশনে থাকে।তারাও তার মতো অসহায়।সিয়াম তাদের সাথে যোগ দিলো।
সারাদিন বোতল আর কাগজ কুড়াই।তারপর এগুলো বিক্রি করে দুচার টাকা যা পায়,তা দিয়ে চা বিস্কুট কিনে খাই।
তারপর রাতে কমলাপুর রেল স্টেশনের পাশে শুয়ে থাকে।

সিয়ামের স্বপ্ন ছিলো সে লেখাপড়া শিখে বড় হয়ে আর্মি হবে।দেশের সেবা করবে।কিন্তু তার বাবার অত্যাচারে তার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।তার বাবার উপর তার খুব ক্ষোভ।কারণ তার বাবা মাকে অত্যাচার করেছে,তালাক দিয়েছে।যার জন্য আজ তার করুণ অবস্থা।সে বাবাকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবে না।সে ক্ষোভে দু:খে বলেছে,

এমন বাবার জন্য কারাগার তৈরী করা হোক।আমি চাই আমার বাবা কারাগারে থাক।কারণ বাবা খুব খারাপ ছিল।এই বাবার জন্য আজ আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে ধুলিসাৎ হয়ে গিয়েছে।আমি ঘর ছাড়া হয়েছি।মা হারা হয়েছি।এই বয়সে আমার লেখাপড়া করার কথা।স্কুলে থাকার কথা।অথচ আজ আমি কাগজ বোতল কুড়িয়ে খাবার যোগাড় করছি।আমার খুব খারাপ লাগছে।

মায়ের প্রতি কোনো অভিযোগ আছে কি না?জানতে চাইলে, সে বলে,
আমার মায়ের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।আমার মা খুব ভালো ছিল। আমাকে খুব ভালোবাসত।খুব যত্ন করত।আদর করে খাওয়াত।ঘুম পাড়াত,স্কুলের টিপিন বানিয়ে দিতো।স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি করে দিতো।আমার মা বাবাকে বলেছিল,

তোমাকে আমি কর্ম করে খাওয়াব।তোমার কিচ্ছু করা লাগবে না। শুধু বলছি, তুমি ভালো হয়ে যাও। আমাকে আর মেরো না।নেশা করো না।বাচ্চাটাকে মেরো না।কিন্তু আমার বাবা শুনেনি।শেষ পর্যন্ত আমার মাকে মারধর করে তালাক দিয়ে দিলো। আমি আমার মায়ের জন্য দোয়া করি।মা তুমি যেখানে থাক ভালো থাক।আমার মা চাইলে আমি সবকিছু দিয়ে দেব।আমার মা আমার জান্নাত।আমার মাকে আমি অনেক অনেক ভালোবাসি।বাবাকে ঘৃণা করি।এই বাবার জন্য আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেলো।আমি হতে পারলাম না আর্মি। করতে পারলাম না দেশের দেবা।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

প্রতি দান

রাতে থেকে বৃষ্টি হচ্ছিলো, কিছুক্ষণ,বৃষ্টি থেমেছে সবে। সকাল কখন হয়েছে চম্পা জানে না। চম্পা শুনেছে, ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র

অ্যাথেনার অলৌকিক হার্প

অনেক অনেক বছর আগে, প্রাচীন গ্রিসের এক ছোট্ট গ্রামে বাস করত এক কিশোরী মেয়ে—নাইরা। সে দরিদ্র ছিল, কিন্তু তার গলায়

নীলচোখা জলপরী

শঙ্খনদী গ্রামের সকাল সবসময় সমুদ্রের শব্দ দিয়ে শুরু হয়। মাটির ঘরগুলোর চালের ফাঁক দিয়ে বাতাস ঢোকে, আর বাতাসের সাথে ভেসে

সময়ের দরজা

মেঘে ঢাকা এক বিকেল। পুরান ঢাকার সরু গলির ভেতরে, ধুলো ধরা এক প্রাচীন বইয়ের দোকানে ঢুকল আরসোহা। ইতিহাসের ছাত্রী সে,

Leave a Reply