অভিশাপ: পর্ব:১

0

 রক্তাক্ত শরীর, এলোমেলো চুল, পুরো শরীর ধুলায় ধূসরিত, পরনের কাপড়ের বিভিন্ন জায়গায় ছেড়া ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা, বাঁচাও বাঁচাও বলে দৌড়াতে দৌড়াতে মাদ্রাসার গেইটে এসে মাটিতে গড়িয়ে পড়লেন। এমন অবস্থা দেখে মাদ্রাসার দুজন ছাত্র দৌড়ে তার দিকে গেল। তাকে উঠিয়ে বসালো। ততক্ষণে অশীতিপর বৃদ্ধা জ্ঞান হারিয়েছেন।

মুহতামিমের (প্রধান শিক্ষক) পরামর্শে বৃদ্ধাকে মুহতামিমের কক্ষে নিয়ে আসা হলো। চোখে মুখে কিছুটা পানি ছিটিয়ে দেওয়ার পর জ্ঞান ফিরলো তার।

 

=”বাঁচাও বাবা! আমাকে বাঁচাও!”

মুহতামিম সাহেব আশ্বস্ত করে বৃদ্ধাকে বললেন,

“ভয় নেই মা আপনি এখন নিরাপদ। নিন একটু পানি খান।”

 

পানি খেতে খেতে, মুহতামিম সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, “এসব কিভাবে হলো, মা!”

 

বৃদ্ধা বলতে গিয়েও বলতে পারছেন না। কথা তার স্পষ্ট হচ্ছে না। মুহতামিম সাহেব বুঝতে পারলেন তিনি এখনো স্বাভাবিক হননি। মাদ্রাসার উৎসুক শিক্ষার্থীরা তখন চারপাশে ভিড় জমিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য মুহতামিম সাহেব সকল শিক্ষার্থীকে চলে যেতে বললেন।

 

 

কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধা বলতে শুরু করলেন, “বাবা! আমার ছেলে আমার এই অবস্থা করেছে।”

 

-“বলেন কি?” মুহতামিম সাহেব সহ উপস্থিত সকল শিক্ষক হতবাক হয়ে গেলেন।

 

“আমাকে মেরেই ক্ষান্ত হয়নি বরং ওই পিশাচটা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।”

 

বলতে বলতেই কান্নারত বৃদ্ধা হঠাৎ রেগে অগ্নি শর্মা হয়ে গেলেন। দুচোখ থেকে যেন তার আগুন বেরোচ্ছে। ক্ষুব্ধ কন্ঠে বললেন

 

“ও মরবে! আজই মরবে!”

 

মুহতামিম সাহেব বললেন

 

“এমনটা বলতে নেই মা, মায়ের অভিশাপ লেগেছে যেতে পারে”

 

বৃদ্ধা জবাব না দিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন,

 

“বাবা ওই যে দেখছো বড় বিল্ডিং টা ওই বিল্ডিংটার মালিক আমার ছোট ছেলে। আমার আগের ঘরের এক বড় ছেলে আছে। প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর ওর বাবার সাথে আমার বিয়ে হয়। এক বছর হল তিনিও গত হয়েছেন। স্বামীসূত্রে তাই আমি বেশ কিছু সম্পত্তি পেয়েছি। ছোট ছেলে চাচ্ছে সকল সম্পত্তি আমাকে দিয়ে জোর করে লিখিয়ে নিতে। এই নিয়ে এক বছর যাবত আমাকে চাপ দিচ্ছে। আমি অশীতিপর বৃদ্ধা। সম্পত্তি দিয়ে আমি কি করবো? কিন্তু আমার বড় ছেলেটা অনেক গরীব। আমি চেয়েছিলাম আমার সম্পত্তি থেকে ও একটা অংশ পাক। যাতে ও ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারে। আমি আমার ছোট ছেলেকে অনেক অনুনয় বিনয় করেছি। বলেছি সম্পত্তির অর্ধেক ভাগ নয় বরং কিছু অংশ বড় ছেলেকে দিতে। কিন্তু পিশাচটা তাতে রাজি নয়। ও আমাকে দিনের পর দিন ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখে। আমার ছোট ছোট আদরের নাতি নাতনিদের সাথেও আমাকে দেখা করতে দিত না পর্যন্ত! আমাকে দিনের পর দিন না খাইয়ে রাখত।”

 

বলতে বলতে দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো বৃদ্ধার। মুহতামিম সাহেব বৃদ্ধার দিকে তাকালেন। অশ্রু ঝরলেও বৃদ্ধার চোখে এখন আগুনের ফুলকি।

 

 

বৃদ্ধা আবার বলতে লাগলেন,

 

“মরবে! ও আজিই মরবে!”

 

মুহতামিম সাহেব বারণ করা সত্ত্বেও বৃদ্ধা থামলেন না।

 

আবার বলতে লাগলেন,

 

“বাবা, এত কিছুর পরেও যখন কাজ হচ্ছিল না তখন ও আমার গায়ে হাত দিতে লাগলো। আমি তখন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতাম। ভাবতাম আমি মরে গেলে অংশীদার সত্ত্বে আমার ছোট ছেলেটা কিছুটা ভাগ পাবে। কিন্তু আমার কষ্টের দিন গুলো যেন শেষ হচ্ছিল না। শেষমেষ আজ সকালে ও আমাকে ধাক্কা দিয়ে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেয়। প্রাণ বাঁচাতে আমি দৌড়ে মাদ্রাসায় আসি।”

 

ঘটনা শুনে সকলেই থ হয়ে গেল। কারো কিছু বলারও ছিল না। এর পর মুহতামিম সাহেবসহ শিক্ষকরা প্রতিদিনকার ক্লাসে মনোযোগ দিলেন। বৃদ্ধা সেই রুমেই রইলেন।

 

কিন্তু একটু পরপর, তার রুম থেকে ভেসে আসছিল, “মরবে! ও মরবে! আজই মরবে‍!‌‍‌‍

দুপুর গড়িয়ে বিকাল নামলো। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলছে। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে ওযু করে মাগরিবের নামাজের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন। এমন সময় মাদ্রাসার গেটে কে যেন বারবার নক করছিল। বারবার নক করার পর মাদ্রাসার ছাত্ররা মাদ্রাসার প্রধান গেট খুলে দিল। শোঁ শোঁ করে একটা অ্যাম্বুলেন্স মাদ্রাসার মাঠে প্রবেশ করলো। জিজ্ঞাসা করা মাত্রই জানতে পারা গেল, ভিতরে একটি লাশ রয়েছে জানাযার জন্য। সেই লাশটি কারো নয়, বরং অশীতিপর বৃদ্ধার ছোট ছেলের!

 

লাশটি দেখে বৃদ্ধা এত খুশি হলেন যতটা ছেলের জন্মের পর শিশু মুখখানা দেখে খুশি হয়েছিলেন। এমন

হাসির দৃশ্য পৃথিবীর ইতিহাসে অতি বিরল!

 


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প: অপেক্ষা লেখক:

গল্প: অপেক্ষা লেখক: মো: আবিদ রানা রিমি প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরেই বারান্দায় বসে। তার চোখ সব সময় খোঁজে একটা চেনা

গল্প সিয়ামের স্বপ্ন আফছানা খানম অথৈ

গল্প সিয়ামের স্বপ্ন আফছানা খানম অথৈ দশ বছরের সিয়াম কমলাপুর রেল ষ্টেশন এ থাকে।তার ঘরে খুব অশান্তি। এক মুহুর্তের জন্য

গল্পঃ অনুপমার চোখে ২

গল্পঃ অনুপমার চোখে লেখকঃ বকুল রায়  #Part_02 অনুপমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, এটা নিজেকে স্বীকার করলেও তাকে বলার সাহস তখনও হয়নি। কারণ

গল্পঃ অনুপমার চোখে ১

গল্পঃ অনুপমার চোখে লেখকঃ বকুল রায় Part 01 ঢাকার ব্যস্ত সড়কগুলো আমার কাছে সবসময় যেন এক রঙিন ক্যানভাস। ছোটবেলা থেকে

2 Replies to “অভিশাপ: পর্ব:১”

Leave a Reply