অভিশাপ (পর্ব:২)

0

রাশেদ: কিরে বন্ধু, কই যাস?

মুগ্ধ:দোস্ত ফটোকপির দোকানে!

রাশেদ:  (মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে) ও আচ্ছা, তাইলে পরীক্ষার প্রিপারেশন তো বেশ ভালোই!

মুগ্ধ: হ দোস্ত। আগের দুই পরীক্ষাতে ফাটাইয়া দিছি।

রাশেদ: কস কি! আর আমাদের কপাল দেখ! গতদিন পরীক্ষায় আমাদের হলে সুবর্ণা ম্যাডাম গার্ডে পড়েছিল। এক্কেবারে অবস্থা খারাপ। পরীক্ষা ভালো হয় নাই। দেখ! আগামী দিন হয়তো তোদের হলে পড়তে পারে।

মুগ্ধ: আরে পড়তে দে। দেখিস! ঠিক ম্যানেজ কইরা লাইমু।

রাশেদ: আরে কোনভাবে রিকোয়েস্ট করেও লাভ নাই ।গতকালকে আমাদের হলে চারজনের খাতা নিছে।

 

মুগ্ধ: কেমনে কি? তোরা কিছু কস নাই? আমার খাতা যদি একবার নেয় না, দেখিস! কি করি।

 

রাশেদ: নারে ভাই। বেয়াদবি করা ঠিক হইব না। তাইলে পড়ালেখা সব বরবাদ ।এমনি যতটুকু সুযোগ পাওয়া যায় তাই আর কি!

 

মুগ্ধ: আরে রাখ তো তোর নীতিকথা । অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। এখনো কি ফিডার খাই নাকি? আমাদের হলে পন্ডিতি কইরা গার্ড দেওয়ার দরকার কি?

 

রাশেদ: যাই হোক, দোস্ত। এমন কিছু করিস না যাতে টিচারদের অভিশাপ লাগে।

মুগ্ধ: আরে বাদ দে তো। যাই হোক, আজ আসি।

 

 

টিং টিং টিং! বেলা দশটার ঘন্টা। পরীক্ষার হল। অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চলছে। ডান দিকের সারির তৃতীয় বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে মুগ্ধ।  প্রশ্ন দেখে বেজায় খুশি সে। আজকে ফটোকপি করা সকল কিছু তার কমন পড়েছে। পটাপট বের করবে আর লিখবে। পরীক্ষায় তো আজ নিশ্চিত এ প্লাস।

 

যথারীতি আজকে পরীক্ষার হলে গার্ডে পড়েছে সুবর্ণা ম্যাডাম। পরীক্ষার হলে এসেই গার্ডের পজিশন চেক করেছেন। কিছু শিক্ষার্থীকে উঠিয়ে অন্যত্র বসিয়েছেন। কিন্তু মুগ্ধ তার জায়গায়ই আছে। এখন পর্যন্ত তেমন কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু হঠাৎ ই ম্যাডামের নজর পড়লো মুগ্ধর দিকে।

 

ম্যাডাম: এই যে আপনি, প্লিজ দাঁড়ান! আপনার কাছে কাগজ দেখলাম! কাগজটা দিয়ে দিন।

 

মুগ্ধ: কই ম্যাডাম কিছুই তো নাই।

 

ম্যাডাম: আমি কাগজ দেখেছি আপনি কাগজ দেন এবং আপনার পরীক্ষার খাতা জমা দেন।

 

মুগ্ধ: প্লিজ ম্যাডাম আমার কাছে কিছুই নেই।

 

ম্যাডাম: এই আপনার খাতা জমা দেন। আমি দেখছি কি আছে আর না আছে!

 

ম্যাডাম জোর করে খাতা চেক করতে গিয়ে মুগ্ধ এর কাছে নকল পেল। ম্যাডাম মুগ্ধর খাতা নিয়ে গেলেন।

 

মুগ্ধ: ম্যাডাম! দয়া করে, খাতাটা দিয়ে দেন। আমি কোন ঝামেলা করতে চাই না। আমরা এখন বড় হয়েছি ম্যাডাম। এখন এমন করলে কি চলে?

 

ম্যাডা:ম তুমি আমার সাথে আর একটা কথাও বলবে না। তুমি তোমার খাতা পাবে না । এখনই হল থেকে বের হয়ে যাও।

 

এবার মুগ্ধর মাথা বেশ গরম হয়ে গেল। রেগে মেগে বলল আপনি আমাকে পরীক্ষার হল থেকে বের হতে বলেন আপনার সাহস তো কম না। জানেন আপনি আমার পরিচয় জানেন আমি ছাত্র##র লিডার।(রাজনৈতিক দলের নেতা)।

 

ম্যাডাম: বেয়াদব কোথাকার! নেতা হয়েছে তো যা খুশি তাই করবা ? পরীক্ষার হলে নকল করবা?

 

মুগ্ধ: একদম ভালো হইবো না কিন্তু আর একটা ফাউল কথাও আপনি বলবেন না। আমার খাতা দিয়ে দিন।

 

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পরীক্ষার হলে থাকা অন্য একজন শিক্ষক এগিয়ে এলেন। বললেন ম্যাডাম ঝামেলা করার দরকার কি। আর এই ছেলে একদম চুপ কর বসে থাকো আমরা দেখছি কি করা যায়।

 

মুগ্ধ: ম্যাডামকে উদ্দেশ্য করে আমি আপনাকে দেখে নিব। আপনার এত সাহস কোথা থেকে এলো তাও আমি দেখে নিব।

 

ইতিমধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তিনি ম্যাডামকে ডেকে হল থেকে নিয়ে গেলেন। মুগ্ধ ইতিমধ্যে হল থেকে বের হয়ে কয়েকজন বড় ভাইকে ফোন দিয়েছে। তারাও এসেছে। অবশেষে মুগ্ধ আবার তার খাতা ফেরত পেয়েছে। দেদারসে নকল করে পরীক্ষা সম্পন্ন করলো সে। পরীক্ষার হলে থাকা অন্যান্য পরীক্ষার্থীরা নিরব দর্শক হয়ে ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী হয়ে থাকল।

 

এরপর অনেকদিন কেটে গেছে। হাটি হাটি পা পা করে পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে ।পরীক্ষায় মুগ্ধ এক বিষয়ে ফেল করেছে। এবং ওই বিষয়ে যেদিন সে পরীক্ষা হলে বেয়াদবি করেছিল। অন্যান্য সাবজেক্টগুলোতে মুগ্ধ কম করে হলেও ফাস্ট ডিভিশন অর্জন করেছে। কিন্তু এই একটি সাবজেক্টেই ফেল। মুগ্ধর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে লাগলো। কয়েকদিন পেরুতে না পেরেতে আবার এক ঝড় তার সামনে এলো। এতদিন সে স্বপ্ন দেখেছে পুলিশের এসআই হবে। ভালো পড়াশোনা এবং রাজনৈতিক শক্তি সকল কিছুই তার ছিল। কিন্তু ফাইনাল ইয়ারে এক বিষয় ফেল করার কারণে সে আর পরীক্ষায় আবেদন করতে পারল না।…


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প: অপেক্ষা লেখক:

গল্প: অপেক্ষা লেখক: মো: আবিদ রানা রিমি প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরেই বারান্দায় বসে। তার চোখ সব সময় খোঁজে একটা চেনা

গল্প সিয়ামের স্বপ্ন আফছানা খানম অথৈ

গল্প সিয়ামের স্বপ্ন আফছানা খানম অথৈ দশ বছরের সিয়াম কমলাপুর রেল ষ্টেশন এ থাকে।তার ঘরে খুব অশান্তি। এক মুহুর্তের জন্য

গল্পঃ অনুপমার চোখে ২

গল্পঃ অনুপমার চোখে লেখকঃ বকুল রায়  #Part_02 অনুপমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, এটা নিজেকে স্বীকার করলেও তাকে বলার সাহস তখনও হয়নি। কারণ

গল্পঃ অনুপমার চোখে ১

গল্পঃ অনুপমার চোখে লেখকঃ বকুল রায় Part 01 ঢাকার ব্যস্ত সড়কগুলো আমার কাছে সবসময় যেন এক রঙিন ক্যানভাস। ছোটবেলা থেকে

2 Replies to “অভিশাপ (পর্ব:২)”

Leave a Reply