উপন্যাস পর্ব “সাত”
মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয়
আফছানা খানম অথৈ
আজ সরকারী ছুটি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ।নয়ন এখনো শুয়ে আছে।মনের জগত খুলে প্রিয়তমাকে নিয়ে ভাবছে।
একের পর এক ভাবনা গুলো মনের দুয়ারে এসে দোল খাচ্ছে।যতই ভাবনার অবসান ঘটাতে চাইছে ততই দোর খুলে যাচ্ছে।শান্তার মিষ্টি মায়াবী চেহারা বারবার তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।শিহরনে শিহরিত দেহমন প্রাণ উতলা।মন চাইছে তাকে একান্ত আপন করে পেতে ভালোবাসার আদর দিতে।স্বপ্ন সুখে বিভোর নয়ন।ঠিক তখনি রুমমেট সুমন বলল,
নয়ন সকাল এগারোটা এখনো তুই শুয়ে আছিস?তাড়াতাড়ি উঠ।
কথাগুলো যেন নয়নের কানে গেল না।সে আপন নিয়মে ঘুমাচ্ছে।সুমন কিন্তু থেমে নেই,বাক্যগুলো বারবার প্রয়োগ করছে।নয়ন আর ঘুমিয়ে থাকতে পারলো না।জেগে উঠল,ভাবনার ঘোর এখনো কাটেনি ।তাই সুমনের মুখ পানে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।পরক্ষণে সুমন বলল,
এই তোর কি হয়েছেরে?মুড অফ, ড্যাব ড্যাব করে কি দেখছিস?
সুমনের কথায় এবার তার টনক নড়ল।সে তাড়াতাড়ি প্রেস হয়ে নাস্তা খেতে বসলো।এমন সময় হকার এসে কলিং বেল টিপ দিলো।নয়ন দরজা খুলে নিউজ পেপার এনে টেবিলের উপর রাখল।নাস্তা শেষ করে নিউজ পেপারে চোখ পড়তেই দেখতে পেল হেড লাইনে বড় বড় অক্ষরে লেখা আজ থেকে ঢাকা বই মেলা শুরু তিন দিন ব্যাপী চলবে।নয়নের গল্প উপন্যাস পড়ার সখ।তাই সে বলল,
সুমন চল ঢাকা বইমেলা থেকে ঘুরে আসি?
সুমন না করলো না।দুবন্ধু রওয়ানা করলো।সময় মতো তারা মেলায় পৌছে গেল।গেইট পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।মেলায় কয়েক সারিতে স্টল বসেছে।নামী দামী লেখকদের বই প্রথম সারিতে,ছোট-খাটো নতুন লেখকদের বই পরের সারিতে রেখেছেন কর্তৃপক্ষরা।মেলায় ভর্তি দর্শক সমাগম, সাথে হুড়মুড় করে বই বিক্রি হচ্ছে।নয়ন বইয়ের স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছে।এমন সময় তার চোখ পড়লো বিখ্যাত লেখক হুমায়ন আহমেদ’র লেখা আজ চিত্রার বিয়ে উপন্যাসটির দিকে।সে বইটা ক্রয় করলো,তখনি সুমন বলল,
দোস্ত এত বই থাকতে বিয়ে সমন্ধ্যের বই কেনো?
ভালো লাগল তাই।তাছাড়া একজনকে গিফট করবো।
দোস্ত কে সে?
আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
ছেলে না মেয়ে?
তা সময় হলে জানতে পারবি। এখন চলতো?
সুমনের কোন কিছু বলার আগে নয়ন এগিয়ে চলল,কি আর করা বাধ্য হয়ে সুমন ও হেটে চলেছে।দর্শকের খুব ভিড় দুবন্ধু ঠেসাঠেসি করে বের হচ্ছে।মুহূর্তে দর্শক জ্যাম, হৈ হুল্লড় শুরু,এর ফাঁকে বিদ্যুৎ ও চলে গেল।ক্রেতা-বিক্রেতারা পড়ল মহাবিপাকে।যাক বাঁচা গেল কিছুক্ষণের মধ্যে বিদ্যুৎ সার্ভিস হলো।দর্শক যাতায়াত শুরু হলো।নয়ন গেট পার হতেই তার গায়ের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল এক মেয়ে।পাশ ফিরে তাকাতে নয়ন দেখল পড়ে যাওয়া মেয়েটি তার ক্লাসমেট রীতা, যে তাকে খুব ভালোবাসে।তার মন চাইল রীতাকে তুলে সরি বলতে, কিন্তু পারলো না।কারণ রীতার শর্ত সে যেন তার সঙ্গে দেখা না করে।পরক্ষণে রীতা ডাক দিলো,
নয়ন এদিকে এসো?
রীতার ডাকে নয়ন সাড়া না দিয়ে পারলো না।সে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে বলল,
রীতা আমায় ডেকেছিলে?
হ্যাঁ ডেকেছিলাম।নয়ন তুমি মানুষ না পশু?
কেনো কি হয়েছে।তাছাড়া আমার মাঝে পশুর কি দেখলে?
কি দেখলাম মানে এইমাত্র তুমি যা করেছ তা মানুষের লক্ষণ ?
রীতা আমি কি করেছি?
কি করেছি মানে,আমি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলাম,আর তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখছ।এরপর ও বলছ কিছু করনি।
রীতা আমি তোমাকে সরি বলতে চেয়েও পারলাম না।
কেনো কেনো?
তুমি যে বলেছিলে আমাকে তোমার সাথে দেখা না করতে।আমাকে দেখে যদি তোমার রাগ উঠে তাই।
নয়ন তুমি দেখছি এখনো সেই কথা মনে রেখেছ।
রীতা না রেখে কি উপায় আছে।তাছাড়া আমি চায় না আমার দ্বারা তোমার কোন ক্ষতি হোক।
মুহূর্তে রীতার ভিতরে ভালোবাসা নামক শব্দটা রোমান্থন হয়ে উঠল।সে আর কোন কিছু না বলে হনহন করে চলে গেল।পিছন থেকে ডাক দিলো নয়ন।রীতা থমকে দাঁড়ালো,নয়ন কাছাকাছি এসে বলল,
রীতা একটা কথা বলব?
রীতা ভাবল নয়ন তাকে ভালোবাসার কথা বলবে।তাই ম্লান হেসে বলল,
হ্যাঁ বল।
রীতা জিসান ভাই তোকে খুব ভালোবাসে।
নয়নের মুখে নয়নের ভালোবাসার কথা শুনার কথা,কিন্তু তার মুখে জিসানের ভালোবাসার কথা শুনে রীতার রাগ চরমে উঠে গেল।সে কড়াকড়ি ভাবে জবাব দেয়,
নয়ন তোমার কাছ থেকে আমি এমন প্রস্তাব আশা করিনি।একটা হৃদয় বারবার নয়,একবার দিতে হয়।আমার হৃদয় সমুদ্রে একবার ভালোবাসার জন্ম হয়েছিল তা অচিরেই ঝরে গেছে।আর কখনো এ হৃদয়ে ভালোবাসার জন্ম হবে না।
রীতা তাই বলে সারা জীবন কুমারী থাকবে?
কুমারী থাকব কেনো?বাবা-মায়ের পছন্দে বিয়ে করবো।
ওকে। রীতা থ্যাংকস।
রীতার মুখে বিয়ের কথা শুনে নয়ন থ্যাংকস জানিয়ে বিদায় নিতে চাইলে রীতা বলল,
নয়ন শুন।
বলো রীতা?
নয়ন তোমার সুখের দিনে নয়,দু:খের দিনে আমাকে স্মরণ কর। চলি বাই বাই।
রীতার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নয়ন বাসায় ফিরে গেল।দরজা এখনো বন্ধ করেনি।এমন সময় কাঁধে ব্যাগ চেহারায় বিষন্নতা,মাঝ বয়সী একজন লোক এগিয়ে এসে বলল,
হ্যালো শুনুন?
জ্বী বলুন।
এখানে নয়ন নামের কেউ আছে?
জ্বী আমি নয়ন,বলুন?
এই নিন আপনার চিঠি।
নয়নের হাতে চিঠি দিয়ে
পিয়ন বিদায় নিলো।নয়ন চিঠিটা পড়তে শুরু করলো।শান্তার হ্যাঁ সুচক জবাবে সে প্রার্থনার স্বরে বলে,হে পরম করুনাময় প্রভু, আপনি মহান দয়ালু,আপনি আমার প্রার্থনা কবুল করুন।আমাদের দুজনের মনের বাসনা পূর্ণ করে, দুজনকে এক সুত্রে গেঁথে ভালোবাসার বন্ধন তৈরী করার তৌফিক দান করুন।আমিন।শান্তা তুমি যা লিখেছ অপূর্ব লিখেছ।আমি ও তাই আশা করেছিলাম।আমার ইচ্ছে করছে,এই মুহূর্তে তোমাকে নিয়ে…।তার মন ফুরফুরে মুরমুরে দেখে সুমন বলল,
দোস্ত মিটিমিটি হাসছিস যে, কার চিঠি?
ঐ যে তোকে বললাম,আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
বেস্ট ফ্রেন্ড না গার্লফ্রেন্ড?
যে কোন একটা হবে।
তার মানে তুমি প্রেমের…।
হুম ঠিক বলেছিস।
তো কি লিখেছে রে?
তাড়াতাড়ি দেখা করতে বলেছে।
তা কবে যেতে চাস?
ভাবছি কাল রওয়ানা করবো।
ওকে। যা করার তাড়াতাড়ি কর।তানা হলে প্রিয়তমা অন্য ডালে গিয়ে বাসা বাঁধবে?
দোস্ত ঠিক বলেছিস।যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।আর কোন কথা নয়, রাত অনেক হয়েছে।এবার ঘুমা।
প্রেমের হিসেব চুডান্ত করে দুবন্ধ ঘুমিয়ে পড়লো।