উপন্যাস পর্ব “আট”
মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয়
আফছানা খানম অথৈ
নয়ন রওয়ানা করলো।বাসে উঠে বসল।গাড়ি গড়গড় শব্দ করে এগিয়ে চলল।বাসে বসা যাত্রীদের মধ্যে কেউ ফেসবুক দেখছে,কেউ গান শুনছে,কেউ নিউজ পেপার পড়ছে।নয়ন কিন্তু এসবের মধ্যে নেই।সে তার মনের মাধুরীতে মিশে থাকা শান্তাকে নিয়ে ভাবছে।গাড়ি মাঝ পথে এসে ব্রেক করলো।মুহূর্তে গাড়িতে উঠল জালমুরি,চানাচুর,লজেন্স,আচার ইত্যাদি বিক্রি করা একটা ছেলে।সে জোরে জোরে বুলেটিং দিচ্ছে,
জালমুরি,আচার লজেন্স,চানাচুর,লন ভাই বোনেরা লন।
ছেলেটি গাড়ির গলিতে হেটেহেটে এগুলো বিক্রি করছে।প্রায় অনেকে কিনছে,নয়নের কাছাকাছি আসতেই জোরে দিলো এক বুলেটিং।নয়নের এসবের দিকে খেয়াল নেই।সে শান্তাকে নিয়ে ভাবছে আর ভাবছে,চোখে মুখে ঘুম ঘুম ভাব।মুহূর্তে মনে হলো শান্তা তার সামনে, সে লজেন্স বিক্রেতা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
মাই সুইট হার্ট শান্তা তুমি কখন এলে?এসো আমার কাছে।
ছেলেটিকে এমন জড়িয়ে ধরেছে না মনে হয়,দম বন্ধ আসবে।তখনি সে তাকে ঝাপটা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলল,
ভাইজান আমি শান্তা না,আমি সোহাগ,আমারে ছাইরা দেন।
এতক্ষণে নয়নের টনক নড়ল।সে তাকে ছেড়ে দিয়ে থবনে হারিয়ে গেল।বাসের সকল যাত্রী হা হা হো হো করে হেসে উঠল।নয়ন খুব লজ্জিত হয়ে মাথা নিচু করে রাখল।যথা সময়ে সে বাড়ি পৌছল।মাকে শ্রদ্ধার সহিত সালাম করলো।ছেলেকে দেখে মায়ের মন খুশিতে আটখানা।মায়ের কপালে চুমু একে ছেলে বলল,
মা তুমি অনেক শুকিয়ে গেছ?
নয়ন এটা তোর দেখার ভুল।আমার মনে হয় তুই অনেক শুকিয়ে গেছিস।
নয়ন হেসে উঠে বলল,
মা এটা তোমারও দেখার ভুল।প্রেমে পড়লে ছেলে-মেয়েদের শরীরের পরিবর্তন হয় এটা স্বাভাবিক।আর মায়ের চোখে তা ধরা পড়লো।তখনি তিনি বললেন,
নারে নয়ন মায়ের চোখ কখনও ভুল দেখে না।সত্যিরে তোর মুখটা শুকনো শুকনো লাগছে।আর কোন কথা নয়।হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে আয়।আমি খাবার দিচ্ছি।
জ্বী আচ্ছা মা।
নয়ন মায়ের হাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লো।সারাদিনের জার্নিংয়ে শরীরটা খুব ক্লান্ত।তাই শুতে না শুতে দুচোখের পাতা এক হয়ে গেল।রাতের মাত্রা বেড়ে গেল।দেয়াল ঘড়িতে রাত দুটো বাজার সংকেত দিলো।এমন সময় নয়নের চোখের সামনে একটা মজার স্বপ্ন ভেসে উঠল।স্বপ্নে বিভোর শিহরনে শিহরিত দেহ মনে তোলপাড়..।
কোন বাধা নিষেধ মানতে চাইছে না।শান্তাকে নিয়ে মজার ভুবনে…।
সুখ সুখ লাগছে মনের গভীরে। শান্তাকে জড়িয়ে ধরে কিস করছে বারবার।অমনি দুষ্টমির ছলে সে দূরে সরে যায়।এটুকু ছলনা সইল না নয়নের।শান্তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইল।অমনি তার দুচোখের পাতা খোলে গেল।সে তাকাতে দেখে শান্তা নেই।মুহূর্তে মনে হলো এটা বাস্তব নয়,স্বপ্ন,তখনি সে বিড়বিড় করে বলে,আমি তাহলে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখেছিলাম।হুম তাইতো,যাক স্বপ্নটা খুব মজার। স্বপ্ন সুখের হাবিলাষে সে বিছানায় গড়াগড়ি করছে।এমনিভাবে রাত শেষ হলো।মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ফজরের আযান ধ্বনি বেজে উঠল।নয়ন নামাজ পড়তে মসজিদে গেল।ফিরে আসলে মা বলল,
নয়ন কোথায় গিয়েছিলে?
ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলাম।
ছেলে নামাজী হয়েছে তা শুনে মায়ের মন আনন্দে ভরে উঠল।পরক্ষণে তিনি বললেন,
নয়ন নামাজ হচ্ছে “ফরজ”। আর ফরজ শব্দটার অর্থ হচ্ছে আবশ্যকরণীয়।পবিত্র কোরানে আল্লাহপাক যে সমস্ত কাজকে “ফরজ” বলে ঘোষণা করেছেন,তা সঠিক ভাবে পালন না করলে নিশ্চিত জাহান্নামে জ্ব্বলতে হবে।আর নামাজ হলো বেহেশতের চাবি। জবাবে ছেলে বলল,
“সুবহানআল্লাহ” নামাজের এত গুনাগুন।
হ্যাঁঁ নয়ন ঠিক তাই।সাবধান কখনো নামাজ পরিত্যাগ করবে না।
জ্বী আচ্ছা মা।
পরক্ষণে মা ছেলের পছন্দের নাস্তা দিয়ে টেবিল সাজিয়ে দিলো।নয়ন নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে পড়লো প্রিয়তমার সঙ্গে দেখা করার জন্য।নয়ন ঠিক কলেজ গেইটের সামনে একটা রেস্টুরেন্টে বসে পড়লো।কলেজ ছুটি হলো শান্তা বেরিয়ে পড়লো।ঝুমার বিয়ের দিন তারিখ ফাইনাল তাই সে কলেজে যাইনি।শান্তা একা একা গাড়ি ষ্টেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।তখনি নয়ন পেছন থেকে ডাক দিলো।শান্তা পেছন ফিরে তাকাতে নয়নকে দেখে থমকে দাঁড়াল।ততক্ষণে নয়ন তার কাছাকাছি এসে গেল এবং বলল,
শান্তা কেমন আছ?
ভালো।তুমি কেমন আছ?
তোমাকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারি?
চলো পার্কে বসি,তারপর প্রাণ খুলে মনের কথা বলব।
শান্তা না করলো না।দুজন পার্কের বেঞ্চে পাশাপাশি বসে পড়লো।শান্তার গায়ের রং ফর্সা মায়াবী চেহারা তার উপরে মিষ্টি কালারের থ্রিফিচ দারুণ মানিয়েছে।নয়নের পলক যেন পড়ছে না।একক ভাবে তাকিয়ে আছে।দৃশ্যটা শান্তার চোখে পড়তেই সে মিটিমিটি হেসে বলল,
এই যে সাহেব এমন করে কি দেখছেন?
কথাগুলো যেন তার কানে গেল না।সে তাকিয়ে আছে,শান্তা আর থেমে থাকতে পারলো না।খিল খিল করে হেসে উঠল।এবার নয়নের ধ্যান ভাঙল।সে বলল,
শান্তা এমন ভাবে হাসার মানে কি?
হাসব নাতো কি করব।তুমি এমন ভাবে তাকিয়ে আছ না,লোকে দেখলে পাগল ভাববে?
শান্তা কি করব,তোমার রুপ যে আমাকে পাগল করে দিয়েছে।তুমি খুব খুব কিউট।I love you শান্তা I love you.
তুমি আমার জান, তুমি আমার প্রাণ। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ। বেঁচে থাকা অসম্ভব।বাঁচতে হলে তোমাকে নিয়ে বাঁঁচব,মরতে হলে তোমাকে নিয়ে মরব।এর ব্যতিরেকে নয়।এবার তোমার মতামত বল?
আমি আর কি বলব,এত করে যখন বলছ না করতে কি পারি,
I love you too.
শান্তা সত্যি বলছতো?
হুম সত্যি।
শুধু সত্যি বললে হবে না।কাজে পরিণত করতে হবে।
শান্তা তোমার এইচ. এস. সি ফাইনাল পরীক্ষা কবে?
কেন এপ্রিলের প্রথম দিকে।
পরীক্ষা শেষ কি করবে?
কি করব মানে, বিয়ে করব।
সত্যি।
হুম সত্যি।
তা কাকে বিয়ে করবে?
নয়নকে ক্ষ্যাপানোর জন্য শান্তা ফান করে বলল,
কাকে আবার, মা বাবার পছন্দ বিয়ে করব।
মা বাবার পছন্দের কথা শুনে নয়নের রক্ত গরম হয়ে উঠল।রাগে বোম হয়ে নাকের ঢগা বেয়ে তরতর করে ঘাম ঝরছে।ডান হাত দিয়ে কপালের উপরিভাগের চুলগুলো টানতে শুরু হলো।মনের ভিতর তোলপাড় শুরু হলো।আর তর সইছে না।কত সইবে।মুখ ফসকে বেরিয়ে আসল।রাগের মাথায় বলল,
শান্তা বাবা-মায়ের পছন্দে বিয়ে করলে,আমাকে আই লাভ ইয়ু বললে কেন?
তুমি বলতে বললে তাই বললাম।
তার মানে পুরোটা ফান,তুমি আমাকে ভালোবাস না?
না বাসি না।
সত্যি?
হুম সত্যি?
শান্তা তোমাকে ছাড়া আমি বাঁঁচব না।আমি বেঁচে থাকতে তুমি অন্য কারো হবে তা আমি সহ্য করতে পারব না।
তো কি করবে?
সুইসাইড করবো।
কেন কেন?
কেন শুনতে চাও।
হুম চাই।
বলছি শুন, তোমার বিয়োগান্ত সহ্য করতে পারব না বিধায়।
নয়ন তুমি আমাকে এত ভালোবাস?
তো আর বলছি কি।
নয়ন সত্যি সুইসাইড করতে পারবে তো?
হুম পারব।
করে দেখাও তো?
নয়ন আর দেরী করলো না।ছুটে গেল চলন্ত গাড়ির দিকে।তখনি শান্তা বলল,
নয়ন আমি তোমার সাথে ফান করেছি।সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি।I love you নয়ন।
নয়ন থমকে দাঁড়ালো।পরক্ষণে বলল,
কি বললে আমি শুনতে পায়নি।আবার বল।
শান্তা আর দেরী করলো না।পূণরায় বলল,
I love you নয়ন।I love you.
নয়ন আর দেরী করলো না।ছুটে এসে শান্তাকে জড়িয়ে ধরে তুলতুলে গালে কিস…।
তখনি শান্তা বলল,
এই ভর দুপুরে কি শুরু করে দিলে?লোকে কি ভাববে,যত্তসব…।
নয়নকে সরিয়ে দিয়ে সে নিজেকে সামলে নিলো।তারপর বলল,
নয়ন তোমার লজ্জা শরম বলতে কিচ্ছু নেই।বিয়ে না হতে এসব কেউ করে?
শান্তা এতে শরমের কি দেখলে,এতো ভালোবাসার শুভ উদ্ভোধন।
হয়েছে আর লেকচার দিতে হবে না।চলো ফেরা যাক।
তার আগে আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট উপহার।
বলতে না বলতে নয়ন শান্তার হাতে হুমায়ন আহমেদ’র লেখা আজ চিত্রার বিয়ে,নোবেল বইটা উপহার দিলো।শান্তার নোবেল বই পড়ার সখ তাই খুশি হয়ে বলল,
নয়ন থ্যাংকস।
দুজনের ভালোবাসা পাকা করে স্ব স্ব বাড়িতে ফিরে গেল।
