গল্প
অপয়া মেয়ে
আফছানা খানম অথৈ
নাবিলার বারবার বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে।তাকে সবাই অপয়া,অলক্ষি বলে সম্বোধন করে। রাগে ক্ষোভে টেনশনে নাবিলা গলায় ফাঁস দিতে যাই।বড় ভাই দেখে ফেলে।তাকে জড়িয়ে ধরে নামিয়ে ফেলে।কেঁদে কেঁদে বলল,
বোন এ কী করলি,ফাঁসি দিচ্ছিস কেনো?
ভাইজান ফাঁসি দিব নাতো কী করব?সবাই আমাকে অপয়া,অলক্ষি বলে,বারবার আমার বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে।আমাকে দেখলে নাকি সবাইর অমঙ্গল হয়।আমি বাঁচতে চাইনা,আমি মরলে সবাই বাঁচে।
বোন তোকে সবাই অপয়া বললে ও আমি বলব না।কারণ আমি জানি আমার বোন ভালো লক্ষি একটা মেয়ে।
বিয়ে ভেঙেছে তো কী হয়েছে,আমি তোকে আবার বিয়ে দেব।
ভাইজান আমার বিয়ের কথা আর মুখে এনো না।আমার বিয়ে কোনোদিন হবে না।
এমন অলক্ষণে কথা আর বলিস না বোন।বিয়েশাদী আল্লাহর হুকুমে হবে।কেউ ঠেকাতে পারবে না।দেখিস তোর বিয়ে ঠিকই হবে।
নাবিলার চোখের জল মুছে দিয়ে ভাই তাকে বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে গেল। কিন্তু নাবিলা টেনশনমুক্ত হতে পারলো না।
তাকে নিয়ে গ্রামে কানাঘুষা চলছে।সবাই তাকে অপয়া বলে,কেউ তার মুখ দেখতে চাই না।যদি ভুলবশত কারো সামনে পড়ে দৌড়ে পালায়।অপয়া বলে চিৎকার করে।
এমন একটা সুন্দরী মেয়ে তার বিয়ে কেনো ভেঙে যাচ্ছে।তার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না।নাবিলাকে নিয়ে পরিবারের সবাই টেনশনে আছে।তাকে পাত্রস্থ করার জন্য সবাই অস্থির।তার জন্য ছোট বোনের বিয়ে হচ্ছে না।এক সময় সে ও তাকে অপয়া বলে সম্বোধন করে।
নাবিলা এত দু:খ রাখবে কোথায়?আঁচলে মুখবুঝে গুমরে গুমরে কাঁদছে।কাউকে বুঝতে দিচ্ছেনা।ঘর থেকে বের হতে পারছে না।বের হলে পাড়া প্রতিবেশী দূরদূর করে…।মুখ দর্শন করেনা।শুভ কাজে যাওয়ার আগে কেউ তার মুখ দর্শন করে না।
অনেক চেষ্ঠার পর আবার তার বড় ভাই বিয়ে ঠিক করলো।চারদিকে বিয়ের আমেজ ফুটে উঠেছে।ঘরভর্তি মেহমান।বিয়ের কার্যক্রম চলছে।বরের জন্য রান্নাবান্না করছে।ঠিক সেই মুহূর্তে খবর আসল, বর গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে,এবং ঘটনাস্থলে মারা গেছে।
খবরটা শুনামাত্রই বাড়িভর্তি মেহমান সবাই নাবিলাকে অপয়া বলে সম্বোধন করল।সবাই তাকে অপয়া অপয়া বলে চিৎকার শুরু করলো।বড় ভাই হাতজোড় করে বলল,
আপনারা চুপ করুন।আমার বোনকে অপয়া বলবেন না।
সবাই একবাক্যে বলে উঠল,
অপয়া বলব নাতো কী বলব?অপয়া না হলে কারো বিয়ে এতবার ভাঙ্গে?
যতবার বিয়ে ঠিক কর,ততবার ভেঙ্গে যাই।আসার পথে কেউ ল্যাংড়া হয়,কেউ মারা যায়।আর কখনো এই মেয়ের বিয়ে ঠিক করবা না। এই মেয়ের বিয়ে কোনোদিন হবেনা।এই মেয়ে অপয়া,অলক্ষি,…।
যে যা পারল তাই বলল।এত অপমান পরিবারের লোকজন সইবে কী করে?
মা বিরক্ত হয়ে বলল,
সবাইতো ঠিক বলেছে,তুই অপয়া,তা নয়তো কী?তোর জন্য সমাজের সবার কাছে আমাদেরকে ছোট হতে হলো।এত অপমান রাখবো কোথায়?তুই মরতে পারিস না।
মা তুমিও আমাকে অপয়া বললে?
বলব নাতো কী করব?তুই সত্যি অপয়া।
এতদিন পাড়াপড়শি বলেছে,নাবিলা সহ্য করেছে।আজ নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে সে সহ্য করতে পারলো না।সে সত্যি সত্যিই আত্মহত্যা করলো।
একটা চিরকুট লিখল,
আমি অপয়া বেঁচে থাকলে সবার অমঙ্গল হবে।তাই মরে সবাইর মঙ্গল করলাম।সবাই ভালো থাকুক এই প্রার্থনা করি।
ইতি
তোমাদের অপয়া মেয়ে
নাবিলা।
বলতে না বলতে নাবিলার আত্নহত্যার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।সে পাত্রের সাথে নাবিলার বিয়ে ঠিক হলো, আসার পথে এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে বলে খবর ছড়িয়েছে, সে মরে নাই বেঁচে আছে।সে সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছে নাবিলাকে বিয়ে করার জন্য।কিন্তু এসে নাবিলার মৃত্যু সংবাদ শুনে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।তাকে যে মৃত বানিয়ে মিথ্যা খবর রটালো তাকে সবার সামনে ধরে আনল।সে হলো নাবিলার প্রতিটা বিয়ে ভাঙ্গার ভিলেন।নাবিলার দুসম্পর্কের খালাত ভাই।সে নাবিলাকে ভালোবাসত,কিন্তু নাবিলা তাকে পাত্তা দিতো না।তাই সে বারবার পাত্রদের কানপড়া দিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দিত। আর গ্রামের লোকজন তাকে “অপয়া মেয়ে” বলে সম্বোধন করত।আসলে আমাদের সমাজের মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে ঠিকই,কিন্তু এখনো অন্ধবিশ্বাসে বিশ্বাসী।আমরা প্রায়ই দেখি কোনো মেয়ের বিয়ে যদি একটু দেরীতে হয় তাকে সবাই আজেবাজে কথা বলে।অপয়া, অলক্ষি বলে সম্বোধন করে।নাবিলার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।আর কতো সহ্য করবে?অবশেষে আত্মহত্যা করে গ্রামের মানুষকে মুক্তি দিয়ে গেল।