আদর্শ বাবা
আফছানা খানম অথৈ
মিথিলা অনার্স ফাইনাল ইয়ার ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে।বাবা সামান্য একজন হকার, ষ্টেশনে গাড়ি যখন থামে তখন বিভিন্ন ইসলামিক বই নামাজ শিক্ষা,ইসলামিক হামদ নাতে রাসুল ইত্যাদি বই বিক্রি করেন।মা জোবেদা খাতুন বাসায় গৃহ কাজের পাশা-পাশি সেলাইয়ের কাজ করেন।তবুও একমাত্র মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।নিজেদের আরাম আয়েশ সুখ শান্তির কথা চিন্তা না করে মেয়ের সুখের কথা ভাবেন সবার আগে।তাদের আশা মেয়ে একদিন বড় শিক্ষিত হয়ে বড় চাকরী করলে তাদের সকল অভাব অনটন দু:খ দুর্দশা ঘুছে যাবে।এ জন্য মেয়ের চাওয়া পাওয়া পূরণ করেন সর্বদা।নিজেরা ছেঁড়া কাপড় পরে মেয়েকে নতুন কাপড় কিনে দেন।
শুধু ভালো মানের কাপড় না,ভালো মানের মুঠোফোন ও কিনে দিয়েছেন মেয়েকে যাতে বন্ধু-বান্ধবীদের কাছে তাকে ছোট হতে না হয়।মিথিলা পড়া-লেখা করছে ঠিকই কিন্তু ইদানীং তার আচার আচারণে কেন জানি অন্য রকম পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।মা-বাবার সঙ্গে আগের মতো ভালো আচরণ করে না।কথায় কথায় রাগ উঠে।টাকা পয়সা দিতে একটু দেরী হলে ঘরের জিনিস পত্র ভাঙ্গচুর, শুধু তাই নয়, না খেয়ে বেরিয়ে যায় প্রায় দিন।তবুও বাবা কড়া কিছু বলেন না।কারণ তারা বর্তমান হাই সোসাইটির নিয়ম অনুযায়ী মেয়ের চাহিদা পূরণ করতে করতে পারছেন না বিধায় সবকিছু হজম করে চলেছেন।মিথিলা কিন্তু থেমে নেয় এক বড় লোকের ছেলের সঙ্গে প্রেমের রিলেশন গড়ে তুলেছে।তার বয়ফ্রেন্ডের নাম রাজিব চৌধুরী।মাস্টার্স ফাইনান ইয়ারে পড়ে।রাজীব চৌধুরী বড় লোকের ছেলে হলেও ভদ্র, সৎচরিত্রবান ও উদার স্বভাবের।নামাজ পড়েন রোজা রাখেন গরীব দুঃখীদের সাহায্য করেন।বিশেষ করে টোকাই ছেলেদের জামা-কাপড় ও খাবার কিনে দেন মাঝে মাঝে।মিথিলার সাথে একদিন তার ক্যান্টিনে দেখা এবং পরিচয় হয়।তারপর ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা।
দুজনের সম্পর্ক খুব গভীরে চলে যায়।একে অপরের মাঝে অনেক বেশী ভালোবাসাবাসি।ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ছুটিয়ে আড্ডা মারা আর মুঠোফোনে মজার মজার আলাপন।
একদিন রাজীব চৌধুরী মিথিলার বাবা-মায়ের পরিচয় জানতে চাইল।মিথিলা বলল,
আমার বাবা বড় ব্যবসায়ী, আমাদের নিজস্ব বাড়ি গাড়ি।
টাকা-পয়সা অনেক অনেক।একমাত্র মেয়ে আমি সব ধন সম্পদের মালীক।আমাদের আর কোন ওয়ারীশ নেই।
রাজীব চৌধুরী তার কথার প্রতিত্তুরে বলল,
দেখ মিথিলা আমি তোমার ধন সম্পদ দেখে তোমাকে ভালোবাসিনি,ভালোবেসেছি তোমাকে দেখে।একজন নারীকে ভালোবাসার জন্য যে সব বৈশিষ্ট্য থাকার প্রয়োজন আমি তোমার মাঝে সবকিছু দেখেছি। আর এই জন্য তোমাকে আমার পছন্দ।
মিথিলা মজা করে বলে,
শুধু কি পছন্দ,না অন্যকিছু…।
হ্যাঁ মিথিলা পছন্দ করি,ভালোবাসি ও বিয়ে করতে চাই।
রাজীব সত্যি বলছ তো?
হ্যাঁ মিথিলা সত্যি।
মিথিলা চাইছে তার বাবা-মায়ের পরিচয় জানার আগে বিয়ের কাজ সারতে।তাই বলল,
রাজীব একটা কথা বলি?
হ্যাঁ বল।
রাজীব তুমিতো সত্যি আমাকে ভালোবাস নাকি?
হুম বাসি।
রাজীব আমি বলছিলাম কি….?
মিথিলা কি বলছিলে বল,থামলে কেন?
মিথিলা আমতা আমতা করে বলে,
রাজীব আমি বলছিলাম বিয়েটা করে ফেললে বোধ হয় ভালো হতো?
মিথিলা পড়ালেখা শেষ না হতে এক্ষণই বিয়ে,বল কী?
কদিন পর হলে ওতো বিয়ে হবে,এখন হলে সমস্যা কোথায়?
না মিথিলা পড়া-লেখা শেষ না হতে বিয়ে করা ঠিক হবে না।তাছাড়া আমি বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে তাদেরকে না জানিয়ে বিয়ে,অসম্ভব।
মিথিলা এবার রেগে উঠে বলে,
তার মানে তুমি আমাকে ভালোবাসো না এইতো?
মিথিলা তুমি ভুল বললে,আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি, এক্সাম শেষ হওয়ার পর সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তোমাকে আমাদের পরিবারের একমাত্র বউ করে নিয়ে যাব।
উহু!এত বছর বাঁচলে তো?
লক্ষিটি রাগ করে না।এত বছর নয়,মাত্র কটা মাস।
রাজীব উনারা যদি রাজী না হয়,তাহলে কি করবে?
মিথিলা আমার বাবা-মা খুব ভালো। অন্য অবিভাবকের মতো না,ছেলের পছন্দ করা পাত্রীকে ঠিক বউ হিসেবে মেনে নেবেন।তাছাড়া তোমাদের ফ্যামিলি স্টাটার্সতো আমাদের মতো সমস্যা হওয়ারতো কথা না।
ফ্যামিলি স্টাটার্স’র কথা শুনে মিথিলার ভিতরের আকাশটা হু হু করে উঠল।রাজীব যদি কোনমতে তার আসল পরিচয় জানে হয়তো বিয়ে ভেঙ্গে যেতে পারে।তাই বানিয়ে বলল,
রাজীব মা তার বোনের ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ের কথা পাকা করছে।সে ডাক্তারী পড়ছে।যদি কিছু একটা হয়ে যায়। শেষে আমাকে দায়ী করতে পারবে না।
মিথিলা ঠিক আছে কালই তোমাদের বাসায় গিয়ে আন্টির সঙ্গে কথা বলব।
না না রাজীব তুমি গেলে সমস্যা হবে।দেখি আমি ম্যানেজ করতে পারি কিনা?
ঠিক আছে মিথিলা তুমি যা ভালো মনে কর তাই কর।
মিথিলা আর কিছু বলল না।একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরে আসল।রাজীব চৌধুরীর মা-বাবা সত্যি ভালো,বাবা বড় ব্যবসায়ী।ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী তিনি ব্যবসা পরিচালনা করেন।প্রতি বছর শেষে যখন ঈদুল-আজহা আসে তখন হিসেব করে যাকাতের টাকা ফকির মিসকিনের মাঝে বিলিয়ে দেন। এজন্য গরীব মানুষেরা তাকে খুব ভালোবাসেন।রাজীব চৌধুরী ও বাবার মতো উদার স্বভাবের যাকাত ছাড়াও সে গরীব দু:খীদের দান খয়রাত করেন।গরীর টোকাই ছেলেরা তাকে খুব ভালোবাসে।তাকে দেখলে ঘিরে দাঁড়ায়।আর সেও তাদের মুখে হাসি ফোটাতে কার্পণ্য করে না।পাড়ার ছেলেরা তাকে গরীবের বন্ধু বলে ডাকে।রাজীব চৌধুরীর জন্ম দিনে মিথিলাকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে।মিথিলা বড় কিছু উপহার দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছে।বাবা-মাকে কড়া ভাবে বলল,
বাবা আমার এক বেষ্ট ফ্রেন্ডের জন্ম দিন।তার উপরে সে অনেক বড় লোক।বড় কিছু উপহার দিতে হবে,তা না হলে আমার মান সম্মান থাকবে না।
বাবা নরম স্বরে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
মা মিথিলা আমরা গরীব মানুষ।গরীবদের এত বড় লোকের জন্ম দিনে যাওয়া ঠিক না।
মেয়ে চটে উঠে বলল,
বাবা কি বললে তুমি,আমি ভার্সিটিতে পড়ি,আমার মান সম্মান বলে কথা,আমি কি ওদেরকে বলতে পারবো আমাদের গরীবানার কথা…?
কেন পারবি না,সত্য কথা বললে কোন দোষ হয় না।বরং পূণ্য হয়।তাছাড়া নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ করা ভালো।তা না হলে লোক জানা জানি হলে পরে আর ও বেশী অপমানিত হতে হবে।
মিথিলা কি আর আদর্শ বাবার আদর্শ নীতি বুঝে।সে রেগে একেবারে বোম ঘরের জিনিস পত্র ভাঙচুর।তখনি বাবা বাধ্য হয়ে বলল,
মা মিথিলা অনেক হয়েছে এবার থাম,বল তোর কত টাকা লাগবে?
আমার দুই হাজার টাকা লাগবে।
ঠিক আছে আর রাগ করিস না।ফ্রেস হয়ে খেয়েনে।টাকা সময়মতো পেয়ে যাবি।
মিথিলার টেনশন কোনমতে দূর হলো।শুতে গেল,এমন সময় তার বয়ফ্রেন্ড মানে রাজীব চৌধুরী ফোন করলো।মিথিলা রিসিভ করতে রাজীব চৌধুরী বলল,
হাই জান কেমন আছ?
ভালো জান,তুমি কেমন আছ?
ভালো মিথিলা।
শুনছি বল?
আমার জন্ম দিনের কথা মনে আছেতো?
হ্যাঁ আছে।
মিথিলা আসবে তো?
আমার জানের জন্ম দিন, না গিয়ে কি পারি?
তাতো অবশ্যই?
রাজীব আন্টি আংকেলকে কি বলবে?
তা নিয়ে তুমি ভেবো না সেটা আমি ম্যানেজ করব।এখন রাখি ভালো থেকো। গুড নাইট।
ফোনালাপন শেষ করে দুজন ঘুমিয়ে পড়লো।
রাজীব চৌধুরী ফ্যামিলির একমাত্র ছেলে।তাই বাবা ইমরান চৌধুরী একমাত্র ছেলের জন্মদিন খুব জাকজমক ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন।বাবা-ছেলে দুজনের ফ্রেন্ড সার্কেল ও কিছু গরীব দুঃখী মানুষকে খাওয়ানোর আয়োজন করলেন।জাস্ট টাইমে অনুষ্ঠান শুরু হলো।
আমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে শুরু করলো।বাবা-ছেলে দুজনে যথাস্থানে গেস্টেদের রিসিভ করে বসানোর ব্যবস্থা করছেন।এর ফাঁকে এসে গেল রাজীব চৌধুরীর স্পেশাল গেস্ট তার গার্লফ্রেন্ড মিথিলা ও তার সই সিনথিয়া খুব জাকজমক ভাবে সাজু-গুজু করে এসেছেন।তাকে দেখে বুঝা যায়না সে যে একজন সামান্য হকারের মেয়ে। ঠিক রাজীব চৌধুরীর ফ্যামিলির লোকের মতো দেখতে অনেকটা।রাজীব চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে তাদেরকে সাদরে বরন করলো।মিথিলা রাজীব চৌধুরীর জন্য দামী শার্ট ফ্যান্ট কিনে নিয়ে আসল।রাজীব চৌধুরীর হাতে উপহার দিয়ে মিথিলা বলল,
Happy birth day to you.
রাজীব চৌধুরী একসেপ্ট করে তা ভিতরে নিয়ে গেল।তারপর তার মায়ের সঙ্গে বেস্ট ফ্রেন্ড বলে মিথিলাকে পরিচয় করিয়ে দিলো।মিথিলা সম্মানের সহিত তাকে সালাম করলেন।রাজীব চৌধুরীর মাতা তাকে আশীর্বাদ করে বললেন,
বেঁচে থাক মা,বেঁচে থাক।
তারপর মিথিলার সঙ্গে আলাপ পরিচয়ের পর্ব শেষ করলেন।মিথিলা ও আসল পরিচয় রেখে নকল চাপা মারে।তার আষাঢ়ে গল্প রাজীব চৌধুরীর মা বিশ্বাস করলেন।শুধু তাই নয় মনে মনে মিথিলাকে একমাত্র ছেলের বউ কারার সিদ্ধান্ত নিলেন।অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ছেলের পাশে বসে বললেন,
হ্যাঁ রে রাজীব তোর বেস্ট ফ্রেন্ড মিথিলা খুব কিউট একটা মেয়ে। ওকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।তোর পাশে মানাবে ভালো।
তাই নাকি মা?
হ্যাঁ বাবা রাজীব তাই।
ওদের বাসার ঠিকানাটা বল,আমি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে আসি।
প্লিজ মা এত তাড়াহুড়ার দরকার নেই।আগে মিথিলার ফাইনাল এক্সাম শেষ হোক তারপর…।
ঠিক আছে রাজীব তাই হবে।
রাজীব মনে মনে মহাখুশি তার গার্ল ফ্রেন্ডকে তার মা পছন্দ করেছে।তাই আর দেরী না করে মিথিলাকে খুশির খবরটা জানিয়ে দিলো।মিথিলা তার মায়ের যাওয়ার কথা শুনে খুব চিন্তায় পড়লো।রাজীব চৌধুরীকে কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না।কমিনিট ভেবে নিলো। তারপর রাজীব চৌধুরীকে বানিয়ে বলল,
প্লিজ রাজীব আন্টিকে এখন আমাদের বাসায় পাঠাবে না।
কেন সমস্যা কোথায়?
না মানে কোন সমস্যা না,তবুও….।
তবুও কি মিথিলা বল?
রাজীব আমি এখনো বাবা-মাকে আমাদের ভালোবাসার কথা বলিনি।
আহা!আগে বলনি, তাতে কি হয়েছে এখন বলবে।
রাজীব আমার খুব ভয় করছে?
কেন কেন?
উনারা যদি রাজী না হয়?
উহু!আগে বলে দেখ না।
প্লিজ রাজীব আমার একটা কথা শুন।
হ্যাঁ বল।
রাজিব আমি বলি কি আগে গোপনে বিয়েটা করে পেলি। তারপর উনাদেরকে বলব।
প্লিজ মিথিলা আমার বাবা-মাকে না জানিয়ে আমি বিয়ে করতে পারবো না।তাছাড়া আমার বাবা-মা রাজী না হলে।
এই বলে রাজীব ফোন কেটে দিলো।মিথিলা আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না।
মিথিলা ঘুম থেকে উঠল।ফোন হাতে নিতে দেখে তার বয়ফ্রেন্ডের টেক্সট,
Good morning mithila.
শুভ সকালে বয়ফ্রেন্ডের সুপ্রভাত তার আশান্ত মনকে কোন রকমে শান্ত করলো।মা নাস্তা রেডি করে ডাক দেয়,
মিথিলা, মিথিলা।
মিথিলার কোন সাড়া শব্দ নেই। এবার তিনি এগিয়ে এসে বলেন,
কিরে মা ডাকছি যে শুনছিস না,নাস্তা রেডি করেছি খেয়ে যা।
মিথিলা গজগজ করে বলে,
মা আমি তোমাদের এই বাজে নাস্তা খাব না।
এসব কড়া কথা বলে সে হনহন করে ভার্সিটিতে যেতে বেরিয়ে পড়লো।মিথিলার বাবা খুব ভোরে ষ্টেশনে বই বিক্রি করতে গিয়েছেন।সেখান থেকে ক্লান্ত হয়ে সবেমাত্র বাসায় ফিরলেন।মেয়ের হনহন করে বেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটা তার চোখে পড়লো।তিনি ভিতরে এসে তার রাগের কারণ জিজ্ঞেস করলেন।তারপর মিথিলার মা বলল,
ওগো মিথিলা না খেয়ে বেরিয়ে গেছে।তাড়াতাড়ি তাকে টাকা দিয়ে এসো।
তুমি চিন্তা করো না।আমি এক্ষণি যাচ্ছি।
বাবা দ্রুত হেটে ষ্টেশন পর্যন্ত গেলেন।আশ পাশ তাকালেন কোথাও তাকে পেলেন না।মেয়ে না খেয়ে বেরিয়েছে শুনে বাবার মন খারাপ হয়ে গেল।তিনি আর নাস্তা করতে বাসায় ফিরলেন না।ফের বই বিক্রি করতে ছুটে গেলেন।
মিথিলা ভার্সিটির ক্লাস শেষ করতে রাজীব চৌধুরী তার সাথে যোগ হলো।দুজন ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো।ভালো মানের ভালো নাস্তা ওয়েটার এনে দিলো।দুজনে খেতে শুরু করলো।
এবার রাজীব চৌধুরী বলল,
মিথিলা তুমি কি বলতো,আমাদের রিলেশনের এত সময় পার হয়ে গেল,এখনো তোমার মা-বাবার সঙ্গে আমাকে পরিচয় করালে না।আমি আজ আর তোমার কোন কথা শুনব না।তোমাদের বাসায় গিয়ে আন্টি আংকেলকে আমাদের ভালোবাসার কথা বলব।
মিথিলা ভাবলো রাজীব তাদের বাসায় যাওয়া মানে সব সত্য প্রকাশ হয়ে যাওয়া। তাই সে বানিয়ে বলল,
প্লিজ জান আজ না অন্য আর একদিন যেও।
কেন আজ সমস্যা কোথায়?
মা-বাবা দুজনে গ্রামের বাড়িতে গেছেন নানুকে দেখতে।
ঠিক আছে জান তোমার কথা রইল।অন্যদিন যাব।চলো ফেরা যাক।
রাজীব চৌধুরী বড় লোক হলেও লোকাল গাড়িতে ভার্সিটিতে যাতায়াত করে।দুজন লোকাল গাড়িতে উঠে বসলো।কিছু সময় রানিং এর পর গাড়ি জ্যামে পড়লো।এমন সময় গাড়িতে উঠল,এক মধ্য বয়সী লোক পরনে অনেক পুরানো জামা-কাপড়।লোকটি বাসের গলিতে হেটে হেটে নামাজ শিক্ষা ও অন্যান্য ইসলামিক বইয়ের ফলাফল বর্ণনা করছে।কেউ বই কিনছে না।তবুও লোকটি তার দায়িত্ব পালন করে চলেছে।রাজীব চৌধুরীর কাছাকাছি আসতে তিনি এক ডজন নামাজ শিক্ষার বই কিনলেন।লোক জনের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার জন্য।তারপর লোকটিকে পাঁচশত টাকার একটা নোট দিলেন।লোকটি বইয়ের দাম রেখে বাকী টাকা ফেরৎ দিতে চাইলে রাজীব চৌধুরী বলল,
আংকেল টাকাগুলো আপনি রেখে দিন।
না বাবা টাকা গুলো আমি রাখতে পারবো না।
কেন আংকেল?
কাজ করার শক্তি যাদের আছে তাদের দান খয়রাত নেয়া ঠিক না।এটা নবীর শিক্ষা।
রাজীব চৌধুরী লজ্জিত হয়ে বলল,
সরি আংকেল আমাকে ক্ষমা করুণ।আমি এসব দিক ভেবে দেখিনি।আমি টাকাগুলো বোনাস হিসেবে দিতে চেয়েছিলাম।
না বাবা তোমার কোন দোষ নেই।আমি কিছু মনে করিনি।
মিথিলার গা জ্বলে যাচ্ছে বাবাকে দেখে।কিছু বলতেও পারছে না।বাবা বলে পরিচয় ও দিতে পারছে না।চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।তখনি বাবা পকেট থেকে একশ টাকার একটা নোট বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল,
মা মনি টাকাটা নাও।তোমার মা বলেছে তুমি নাকি নাস্তা না করে বেরিয়েছে।তোমার জন্য আমি ও না খেয়ে আছি।নাও টাকা নাও।
মিথিলা টাকা ও নিচ্ছে না কথা ও বলছে না।বাবা বাধ্য হয়ে টাকাটা তার ব্যগের উপর রেখে নেমে পড়লো।রাজীব চৌধুরীর ঠিক বুঝতে পারলো মিথিলার সাথে লোকটির কি সম্পর্ক।
তবুও মিথিলার মুখ থেকে শুনার জন্য বলল,
মিথিলা লোকটি তোমার কি?
আমাদের পাশের বাসায় থাকেন।
ছিঃ মিথিলা ছিঃ নিজের জন্মদাতা পিতাকে অস্বীকার করতে তোমার লজ্জা করলো না।যে বাবা দিন রাত মাথার ঘাম পায়ে পেলে পরিশ্রম করে চলেছে তোমাকে মানুষ করার জন্য, আজ তুমি তাকে অস্বীকার করলে।তুমি মেয়ে না, মেয়ে নামের কলঙ্ক।তোমার সাথে রিলেশন রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না।কারণ যে মেয়ে একজন “আদর্শ বাবাকে” অস্বীকার করতে পারে।সে যেকোন মুহূর্তে সুযোগ বুঝে আমাকে অস্বীকার করতে পারবে।আজ থেকে আমাদের সম্পর্ক এখানে শেষ।
চলি মিথিলা।খোদা হাফেজ।
মিথিলার মুখ দিয়ে কোন বচনবানী বের হলো না।সে চুপসে গেলো।
