গল্প চোর সাজল প্রেমিক আফছানা খানম অথৈ

0

চোর সাজল প্রেমিক

আফছানা খানম অথৈ

মিতা কলেজে পড়ে,ইন্টারমিডিয়েট ফাস্ট ইয়ার। আজ কলেজে নবীন বরন অনুষ্ঠান। একটু সাজু গুজু না করলে কেমন হয়। তাছাড়া মিতা একটু রোমান্টিক স্বভাবের। সাজু গুজু তার লাইফের একটা পার্ট। না সাজলে নিজেকে বেমানান মনে হয়। তাই খুব করে অলংকারাদি পরে সাজু গুজু করে তবে বের হলো। অনুষ্ঠান শেষ, সে বেরিয়ে পড়ল। ষ্টেশনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা…।
সমাজে এক ধরনের রোমান্টিক চোরের আগন ঘটেছে। এদের চুরির নিয়মটা একটু অন্য ধরনের। এরা সুযোগ বুঝে ভাব করে। যেমন কখন ও বন্ধু, কখন ও ভাই, কখন ও প্রেমিক সাজে।
এমনি এক চোরের চোখ পড়ল মিতার উপর।নাম তার সানু চোর। সে প্রথম জীবনে ছোটখাট চুরি নিয়ে ব্যস্ত ছিল। যেমন পুরানো হাড়ি পাতিল, হাঁস মোরগ ইত্যাদি।সেই ছোট সানু চোর আজ বড় সানু চোরে পরিণত হয়েছে। তার এই চোরের পেছনে সমাজের কিছু গন্যমান্য,অসৎ লোভী স্বভাবের মানুষের হাত কাজ করে অলটাইম। তাই সে এতটা উপরে উঠে গেছে। মানে নারীর জীবন নিয়ে চিনি বিনি খেলছে। কেউ চুরির আরজি নিয়ে আসলে, উল্টো তাকে দোষী করে সানু চোরকে নির্দোষ প্রমাণ করে। মানুষের বিবেক আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে দেখেন?
দু,চারজন ছাড়া সবাই এই হাইল্লা, ঠিল্লা সানু চোরকে নিয়ে গর্ব করছে,আর তার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, পাশে বসে চা চক্র পান করছে। হায়রে! সভ্যতা কোথায় গেল? সমাজ পতিদের একটু ও লজ্জা করছে না, এই চোরের সঙ্গে ভাব করতে, তার পাশে বসে চা খেতে কোথায় গেল তাদের বিবেক?

কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া তিনটা ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিচ্ছি, সে গ্রাম ছেড় শহরে যায়। গাড়ি থেকে নেমে চারদিকে তাকাল। তারপর অলংকার পরা একজন বিবাহিত মেয়েকে দেখে এগিয়ে যায়। তারপর তার পা চেপে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে,
আপু আপনাকে দেখে ঠিক আমার বড় আপুর মত লাগে। ক’দিন আগে আমার আপুটা মারা গেল। তারপর আমি অসহায় হয়ে পড়লাম। আজ আপনাকে দেখে আমার বোনের কথা মনে পড়ল। তাই চোখের জল আর ধরে রাখতে পারলাম না। ভালো থাকেন আপু গেলাম।
মেয়েদের মন মোমের মত নরম। তাই অপরিচিত কন্ঠে ডাকা ভাইয়ের চোখের জল তার মনে বিশ্বাসের জন্ম দিলো। সে পেছন থেকে ডাক দিলো। সে এগিয়ে আসলে জিজ্ঞেস করলো,
তুমি থাক কোথায় ভাই? তাছাড়া তোমার লেখাপড়া কতদূর?
চোখের জল মুছতে মুছতে জবাব দিল সানু চোর,
আপু আমার থাকার কোন জায়গা নেই। আমি বি.এ পাশ চাকরীর জন্য শহরে এসেছি।
গার্মেন্টস ফ্যাক্টুরিতে চাকরী করা রেশমা সানু চোরের আষাঢ়ে গল্প বিশ্বাস করে তাকে আশ্রয় দিল।থ্রি ক্লাশ পড়া সানু চোর মহাখুশি। সে খুব করে বোনের টেককেয়ার করছে। বোনটি ও তাকে খুব আদরযত্ন করে খাওয়াচ্ছে। সানু চোর মহাআনন্দে, খাচ্ছে, দাচ্ছে ঘুমাচ্ছে। এমনিভাবে দিন পনেরো পার হলো। একদিন রেশমা অসুস্থ হয়ে পড়ল। তার স্বামী বাসায় ছিলোনা। সানু চোর তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। ডাক্তারের পরামর্শে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে সে তার পাশে বসে রইল। প্রায় ঘন্টা দুয়েক পরে তার জ্ঞান ফিরে আসল। ঠিক সেই মুহুর্তে রেশমার স্বামী ও এলো। এমন সময় রেশমা বলল,
ভাই তুমি আমাকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছো। যাও বাসায় গিয়ে রেষ্ট নাও।
সানু চোর খুশিতে নেচে নেচে চাবি হাতে নিয়ে দুলাতে দুলাতে বাসায় ফিরে আসল।
তারপর কাপড় ছোপড় থেকে শুরু করে টিভি, টাকা পয়সা স্বর্ণ অলংকার সবকিছু গুছিয়ে পালিয়ে গেলো।মোবাইলটা ও বন্ধ।এদিকে সকাল দশটা পেরিয়ে গেল, এখন ও চোর ভাইটার খবর নেই। মোবাইলটা ও বন্ধ। তারা খুব চিন্তাই পড়লো। তারপর তড়িঘড়ি করে বাসায় ফিরে আসল। এসে একি দেখল! সদর দরজা খোলা। তালা চাবি ভাঙ্গা, ঘরের জিনিসপত্র, টাকা পয়সা,স্বর্ণ অলংকার, কিছুই নেই। সপ্ত আকাশ ভেঙ্গে পড়লো রেশমার মাথায়। ডুকরে কেঁদে উঠে বলে,
কেন যে এই চোরটাকে ভাই বলে বিশ্বাস করলাম। আমার পরিশ্রমের টাকায় কেনা সব জিনিস শেষ। কে জানত তার ছলনাময়ী কান্নার সুত্র। যেমন করে হোক এই চোরটাকে খুঁজে বের করে জেলে দেব। তার মোবাইল বন্ধ হলে কি হবে। এই ডিজিটাল যুগে তাকে খুঁজে বের করা খুব সহজ। রেশমা চলে গেল মোবাইল কাষ্টম অফিসে। তারপর নাম্বার অনুযায়ী তার নাম ঠিকানা বের করে সরাসরি চলে আসল তার বাড়িতে।

সানু চোর তাকে দেখে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল। বউয়ের মুভমেন্ট ভালো না। তিনি অগ্নিমূর্তিরুপ ধারন করে বসে আছেন। কারন চোরের বউ চুন্নি। সতী নারী স্বামীর অপকর্মের প্রতিবাদ করে। আর এই অসতী নারী স্বামীর অপকর্মকে সাধুবাদ জানাই। রেশমা যখন তার স্বামীর চুরির রোমান্টিক কাহিনী তার সামনে তুলে ধরল এবং তার সবকিছু ফেরত চাইল, তখনি চুন্নি বউটা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে গালমন্দ শুরু করলো।
রেশমা ও থেমে নেই কড়া ধমক দিয়ে বলে,
স্টপ চুন্নি, তোর স্বামী কোথায় বল?
কথায় বলেনা চোরের বউ’র বড় গলা। চুন্নি কি আর থেমে থাকে, দা কুড়াল নিয়ে ওদেরকে কুপিয়ে হত্যা করার হুমকি দেয়। হাজার হোক ভীনদেশি মহিলা, তাছাড়া এখানে কোন আত্নীয় স্বজন নেই। তাই ভয়ে আর কোন কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো। তারপর সমাজের দু’চারজন গন্যমান্য ব্যক্তিকে কিভাবে রিলেশন হলো, কিভাবে চুরি করল, তার সব ঘটনা খুলে বলল,সবকথা শুনার পর উনারা বললেন,
সানুতো এখন নেই। সে আসুক, তারপর জিজ্ঞাসা করে দেখি, ঘটনাটা সত্য কিনা?
রেশমা রেগে উঠে বলে,
কি বলেন আপনারা, আমি বলেছি এটা সঠিক। আবার তাকে জিজ্ঞাসা করবেন কেনো?বলুন, আপনারা কিছু করতে পারবেন কিনা?তা না হলে আমি পুলিশ কেচ করব।
পুণরায় তারা আবার বলল,
সে যে চুরি করেছে তার কোন প্রমাণ আপনার কাছে আছে?
এবার রেশমা রেগে উঠে বলে,
আমতা আমতা করে এসব কি বলছেন? বুঝতে পেরেছি আপনারা ও সে দলের একজন। ঠিক আছে আমি পুলিশ কেচ করব।
রেশমা পুলিশ কেচ করল।তদন্ত রিপোর্টে বের হলো। জনগন খুব করে তার গুড সার্টিফিকেট দিয়ে দিলো। আর পুলিশকে কিছু খরচা পাতি মানে ঘুষ দিয়ে দিলো। কেচ টেচ আর কি হবে পুলিশের কাছে টাকায় তো সব। ভালো করে একটা রিপোর্ট লিখে থানায় জমা দিলো। মানে সানু চোর নির্দোষ। এলাকাতে তার কোন চুরির প্রমাণ নেই। ঐ মহিলাটি বানোয়াট গল্প সাজিয়ে মিথ্যে মামলা দায়ের করেছে সানুকে ফাঁসানোর জন্য। অমনি সানু চোরের জামিন হয়ে গেল। তার এই চুরির মূল যোগান দাতা হলো তার চাচা নুরুল আমিন ও সমাজের কিছু গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ । সে টাকা দিয়ে সব সময় তাকে হেল্প করে। এই কেচের সব টাকার যোগান দাতা সে।

তার কাজ হলো প্যান্ট শার্ট, সু,ট্রাই লাগিয়ে বাইক চালিয়ে কলেজের সামনে, গাড়ি ষ্টেশনে, লঞ্চ ঘাটে, অর্থাৎ যেখানে যেখানে মেয়েদের যাতায়াত সেখানে ঘুরঘুর করা এবং সময় বুঝে মেয়েদের সাথে ভাব করা। ঠিক লঞ্চ ঘাটে দেখা হলো এক কলেজ স্টুডেন্টের সঙ্গে, সে কায়দা করে কথাবার্তা শুরু করল। মেয়েটি পরিচয় জানতে চাইলে সে বলে,
আমি অমুক থানার এস. পি। এখন ও বিয়ে করেনি। পছন্দমত মেয়ে খুঁজছি।এই সেরেছে,
অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়া মেয়ে দু’চারটা কথাতে কাবু হয়ে গেল। তারপর দামী হোটেলে চা নাস্তা…।
সানু চোরের দেয়া লাগল না। মেয়েটি আগাম দিয়ে দিলো। তারপর নিজ থেকে ফোন নাম্বার চেয়ে নিলো। খুব খাতিরযত্ন করে কথাবার্তা বলল। মোটামুটি এক প্রকার ভাবসাব হয়ে গেল।
গভঃমেন্ট কর্মকর্তার কথা শুনলে মেয়েরা খুশিতে লাফিয়ে উঠে। কিভাবে তাকে কাবু করা যায় সেই প্ল্যান মাথায় কাজ করে অলটাইম। ছেলেটি ভালো না মন্দ, সত্য না মিথ্যা, নাম ঠিকানা, কোনকিছু যাছাই বাছাই না করে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঠিক অনার্স পড়া রীতার অবস্থা ও তাই। না বুঝে না শুনে গভঃমেন্ট কর্মকর্তা তার উপরে এস.পি এই শুনে তার প্রেমে খুব করে মজে গেলো।
অলটাইম ফোনালাপ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মাঝে মাঝে দু’জন দেখা সাক্ষাৎ করে। রীতার চোখে সানু চোর খুব ভালো প্রেমিক হিসেবে ফুটে উঠল। চোরটা ও ভালোভাবে প্রেমের অভিনয় করে চলেছে। রীতার মনে একটিবারের জন্য ও সন্দেহের জন্ম হলো না। তার ভিতরে চলচাতুরী আছে। এমনিভাবে মিথ্যে প্রেমের অভিনয় করে রীতার মনের রাজ্য দখল করে নিলো। কথায় বলেনা, অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ । সানু চোরের অভিনয়টা ও সেই রকম। এবার তার ঝোপ বুঝে কোপ মারার পালা । তাই দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ করে ফোনালাপনে মজার মজার কথা বলে।দেখা সাক্ষাৎ করার কথা বললে,বলে,
আমি কাজের চাপে ব্যস্ত।এখন দেখা করতে পারবো না। জান তুমি টেনশন করো না।
এমনিভাবে পার হলো ক’দিন। হঠাৎ একদিন মাঝরাতে সানু চোর ফোন করে বলল,
হ্যালো জান কেমন আছো?
মেয়েদের একটা স্বভাব অল্পতে কেঁদে ফেলা। অনুরুপ রীতাও তাই করল। কেঁদে কেঁদে বলে,
জান তুমি এ ক’দিন কোথায় ছিলে? তোমাকে ফোনে পাচ্ছিনা।
আর বলো না জান। পুলিশের চাকরী খুব হিবিজিবি। প্রমোশনের জন্য উর্ধবতন কর্মকর্তার কাছে গিয়েছিলাম। তিনি বললেন তিন লক্ষ টাকা লাগবে। এই নিয়ে খুব টেনশনে আছি। বুঝলে জান এ সমাজে সৎ লোকের কোন দাম নেই। আমার মতো সৎ লোকের চাকরীর প্রমোশনের জন্য ও ঘুষ। দেশটা গোল্লায় গেছে। সব হারাম খোরের দল। নতুন চাকরী একসঙ্গে এত টাকা কোথায় পাবো। খুব টেনশনে আছি। তাই ঠিকমত তোমার টেককেয়ার করতে পারছি না।কিছু মনে করোনা জান। তুমি শুধু আমার। প্রমোশন হয়ে গেলে বিয়ে করব। এখন শুধু টাকার সমস্যা।
বিয়ের কথা শুনে রীতার ভিতরের আকাশ হু হু করে নেচে উঠল।আনন্দ চিত্তে বলে উঠল,
জান তুমি কোন চিন্তা করোনা। তিন লক্ষ টাকা আমি দেব। বল তুমি কোথায়?আমি এক্ষণি টাকা নিয়ে আসছি।
সে চমকে উঠে বলে,
জান তোমার কষ্ট করে আসা লাগবে না। আমার নাম্বারে টাকা বিকাশ করে দাও। আমি তুলে নেব।
ওকে জান দিচ্ছি।
প্রেমে পড়লে মেয়েরা বোকা হয়ে যায়।রীতা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। অপরিচিত একটা লোককে বিশ্বাস করে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনল। বলতে না বলতে তিন লক্ষ টাকা বিকাশ করে দিলো। তারপর ফোন করে বলে,
জান টাকা পেয়েছো?
হ্যাঁ পেয়েছি। আমি এখন বিজি। পরে কথা বলব। ভালো থেকো। ওকে রাখি।
দু’চারটা কথা বল সে ফোন রেখে দিলো।
রীতার বাবা ছিলেন একজন স্কুল টিচার। কিছুদিন পূর্বে মারা যান। তার পর রীতা এই পেনশনের টাকার মালীক হন। তার বিয়ে শাদী, লেখাপড়ার খরচ সবকিছুর জন্য এই টাকা তার নামে একাউন্ট করে ব্যাংকে রেখে দেন। আজ সেই টাকা কৌশল করে হাতিয়ে নিলো সানু চোর। রীতা এখন ও এসবের কিছুই জানেনা।ইতিমধ্যে মহাধুমধামে উর্ধবতন কর্মকর্তার বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখে চলেছে।
মন আর মানছে না। তখনি ফোন দিলো। ফোন বন্ধ, অপর প্রান্ত থেকে আওয়াজ আসল, এখন সংযোগ দেয়া সম্ভব না, একটু পরে ডায়াল করুন।রীতা কিন্তু থেমে নেই কল দিয়ে চলেছ।একটানা তিন দিন তিন রাত, তার কোন খবর নেই। রীতার এখন ও তার উপর বিশ্বাস,মনে মনে ভাবে হয়ত প্রমোশন নিয়ে ব্যস্ত তাই ফোন চার্জ দিতে পারছে না। এভাবে সপ্তাহ খানেক পার হলো। মন আর মানছে না। তার দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী থানায় চলে গেল। তারপর নিয়ম অনুযায়ী সালাম দিয়ে প্রবেশ করল,এস.পি সাহেবের কক্ষে। তিনি বসার অনুমতি দিলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন,
আপনার কি সমস্যা?
লজ্জাবতী লতারমতো জড়োসড়ো হয়ে জবাব দিলো রীতা,
আমার কোন সমস্যা নেই। আমি একজনকে খুঁজতে এসেছি। সে এই থানাতে চাকরী করে।
তার নাম পদবী?
তার নাম শরিফুল ইসলাম। এস.পি কিছুদিন পূর্বে উর্ধবতন কর্মকর্তা পদে প্রমোশন হয়েছে।
এস.পি সাহেব ক’মিনিট তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।তারপর বললেন,
এই নামের কোন লোক আমাদের এখানে চাকরী করেন না। আমার মনে হয় আপনি ভুল ঠিকানায় এসেছেন।
রীতা চমকে উঠে বলে,
কি বলেন আপনি, সে তো আমাকে এই থানার ঠিকানা দিয়েছে।
তার স্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার ছবি আপনার কাছে আছে?
জ্বী আছে, তবে স্থায়ী ঠিকানা নেই। এই নিন মোবাইল নাম্বার ও ছবি।
এস.পি সাহেব নাম্বার দিয়ে কম্পিউটার ওপেন করে দেখলেন, এই নামের কোন লোক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে চাকরী করে কিনা? কিন্তু না, এই নামের কোন লোক তাদের ডিপার্টমেন্টে নেই। এবার তিনি বুঝতে পারলেন রীতা কোন প্রতারকের পাল্লায় পড়েছে। তাই রীতাকে কিভাবে তার সাথে পরিচয় হলো জিজ্ঞেস করলেন।রীতা কোনকিছু না লুকিয়ে কিভাবে তার সাথে দেখা হলো, কিভাবে প্রেম হলো, কিভাবে তার টাকা হাতিয়ে নিলো, সবকিছু খুলে বললেন। সবকথা শোনার পর এস.পি সাহেব বললেন,
আপনার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি। আপনি কোন প্রতারকের পাল্লায় পড়েছেন।তো একটা কথা, আপনাদের মতো শিক্ষিত মেয়েদের উচিৎ কারো প্রেমে পড়ার আগে তার সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ খবর নেয়া।আমার ভাবতে ও অবাক লাগছে, একটা লোক সম্পর্কে ভালো করে না জেনে, না শুনে তাকে এতটা বিশ্বাস করলেন!এবং বাবার রেখে যাওয়া শেষ সম্বল তিন লক্ষ টাকা দিয়ে দিলেন।এ আপনি কি করলেন!

কথাটা শুনামাত্রই রীতার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো। নিজেকে আর সামলে রাখতে পারল না। অঝর ধারায় কেঁদে উঠল। তিন লক্ষ টাকা চারটি খানি কথা। মনে হয় হার্ট এট্যাক …।
তাকে সিরিয়াস টেনশন করতে দেখে তিনি বলেন,
বোন এখন কেঁদে আর লাভ কি।ভুল যা করার তাতো আগেই করেছো। এখন এককাজ কর, তার নাম্বার নিয়ে মোবাইল কাস্টম অফিসে যাও। যদি তার নাম ঠিকানা সংগ্রহ করতে পার, তাহলে আমার কাছে চলে এসো। আমি তোমাকে সব রকম হেল্প করব।
কোন রকম বুঝিয়ে তাকে পাঠিয়ে দিলো।
এদিকে সানু চোর টাকা নিয়ে উল্লাস করতে করতে বাড়ি ফিরে আসল। দোকানে বসিয়ে জমিয়ে আড্ডা মারছে আর বলছে, আমি বড় একটা চাকরী পেয়েছি।মাসিক বেতন এক লক্ষ টাকা। সবাই বসেন চা খান।

সবাই তা বিশ্বাস করে খাতির জমিয়ে চা নাস্তা খাচ্ছে আর বলছে, একটা এম.এ পাশ ছেলে রাস্তায় হাটছে। আর সানুর এতবড় চাকরী। এতো রীতিমত এলাহী কাণ্ড। ধন্যবাদে তার পকেট পুরে গেছে।শুধু তাই নয়,চাকরীর জন্য অনেকে তার দুয়ারে ধর্ণা..।
আর এই সুযোগে সে চাকরী দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিলো, কয়েক লক্ষ টাকা। সমাজে সৎ লোকের সংখ্যা কম। তাই দু’চার জন ছাড়া সবাই তার পক্ষে সাপোর্ট করলো।
ভাবতে ও ঘৃণা হচ্ছে শিক্ষিত লোকের বিবেক আজ কোথায় গেলো?একটিবারের জন্য ও তারা ভেবে দেখল না, একটা এম. এ পাশ ছেলের বেতন হয়না একলক্ষ টাকা। আর থ্রি ক্লাশ পড়া সানু চোরের বেতন এক লক্ষ টাকা কি অবিশ্বাস্য বিষয়! ভাবলে ঘেন্না ধরে।

এদিকে রীতা কাস্টম অফিস থেকে তার নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে সরাসরি চলে আসল ডার্লিং’র বাড়িতে। এসে একি দেখল! এস.পি নামধারী লোকটি পেশায় চোর, তার বউ বাচ্চা ছেলে মেয়ে আছে।
এই দৃশ্য দেখার পর সে কি আর স্থীর থাকতে পারে?রীতা অজ্ঞান হয়ে পড়লো। অমনি খবরটা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লো। লোকজন কি আর থেমে থাকে? দ্রুত গতিতে ছুটে এসে তার বাড়িঘর ভর্তি।
রীতা যদি মরে যায়, তাহলে জেলে যেতে হবে। এই ভয়ে চোরের বউ চুন্নী ডাক্তার নিয়ে আসল।মোটামুটিভাবে রীতা সুস্থ হয়ে উঠল। তার পর সানু চোর কিভাবে তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিলো,তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলো। সবকথা শোনার পর চোরের পক্ষের সমাজপতিগন বলে,
আপনি এখন যান। আমরা তার সঙ্গে কথা বলে দেখি কি করা যায়।
রীতা ও থেমে নেই কড়া ভাষায় বলে,
আমি তিন দিন সময় দিয়ে গেলাম। এর মধ্যে যদি আমার নাম্বারে টাকা বিকাশ না করে, তাহলে আমি থানায় জি.ডি করব। আমি গেলাম।সময়মাত্র তিন দিন।
সানু চোর ক’দিনের জন্য গা ঢাকা দিলো। আর ফোনে চোরের সর্দার তার চাচা নুরুল আমীনকে সবকিছু মেনেজ করার দায়িত্ব দিলো। নুরুল আমীন ঘুষ দিয়ে সবাইকে হাত করে নিলো।

এদিকে রীতা থেমে থাকল না। তিনদিন অপেক্ষার পর, সেই এস. পির কাছে গিয়ে জি.ডি করল। চোরের থানায় রিপোর্ট করল। পুলিশ গন্তব্য স্থলে আসলে পূর্বের নিয়মে লোকজন তার গুড সার্টিফিকেট দিয়ে দিলো। অমনি তার জামিন হয়ে গেল। এমন একটা কঠিন বিপদ থেকে সানু চোর পার পেয়ে গেল, অসৎ সমাজ পতিতাদের কারনে। এমনি অহরহ ঘটনা আছে তার লাইফে। সব ঘটনা লিখতে গেল একটা বইয়ে ও শেষ হবে না। তো সবশেষে ছোট্ট একটা মজার কাহিনী লিখে গল্পটা শেষ করব। মানুষ অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, চুরি, ব্যভিচার এসব পছন্দ করলে ও আল্লাহপাক এসব মোটে ও পছন্দ করেন না। পবিত্র কোরানে কঠিন ভাষায় উল্লেখ করেছেন,অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দু’জন সমান পাপের অংশীদার। আর তাদের স্থান পরকালে জাহান্নামে। আর সেই নিয়ম অনুযায়ী সানু চোরের পাশাপাশি সমাজ পতিরা ও পাপের অংশীদার হবে।
আপনারা যাই বলেন না কেন? আল্লাহপাক ন্যায় বিচার করেন। যেই সমাজ পতিরা পুলিশের কাছে সানু চোরের গুড সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাদের একজনের মেয়ের নাম মিতা। এবার সে মিতার সঙ্গে লাইন মারছে।

ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে মাঝরাতে ফোন করে, তার আসল পরিচয় গোপন করে নকল চাপা মারে। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সে। নিজস্ব বাড়ি গাড়ি, ব্যাংক ব্যলেন্স। এম.এ পাশ সেনা অফিসার পদে চাকরী করে। ছুটিতে বাড়িতে এসে নবীন বরন অনুষ্ঠানে তাকে দেখে পছন্দ হয়।
তার কথার হ্রেষ ধরে মিতা বলে,
যদি সত্যি আমাকে দেখে থাকেন,তাহলে বলুন আমার গায়ে কি রংয়ের জামা ছিলো?
চোর কি আর থেমে থাকে তাকে কাবু করার জন্য ফটাফট করে বলতে শুরু করলো।
তোমার পরনে ছিলো মিষ্টি কালারের লং থ্রি ফিজ, কানে ছিলো স্বর্নের দুল, গলায় ছিলো নেকলেস, হাতে ছিলো সিটি গোল্ডের ছুড়ি তোমাকে যা মানিয়েছে, আমার মনে হলো নায়িকা অপু বিশ্বাসকে ও হার মানবে, এমনি সুন্দরী তুমি, তাই তোমাকে আমার খুব পছন্দ। আমার চোখের সামনে শুধু তোমার ছবি ভেসে উঠে। তুমি আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছো।তোমাকে ছাড়া অন্য কোন নারীকে ভাবতে পারি না। তুমি আমার জান। তুমি আমার প্রাণ। তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।
সত্যি?
একশ পার্সেন সত্যি।এবার তোমার মতামত বল?
আমি আর কি বলব। তোমার মতো একজন সেনা অফিসার আমাকে ভালোবাসে, এতো আমার সৌভাগ্য। সত্যি?
হুমসত্যি। মা ডাকছে পরে কথা বলব।এখন রাখি ওকে।
মিতা ভাবল সত্যি সে সেনা অফিসার। তাই খুব করে ভালোবেসে ফেলেছে।
রাতদিন চব্বিশ ঘন্টা ফোনালাপনে দু’জন ব্যস্ত থাকে। এখন আর সানু চোর ফোন করা লাগেনা। মিতা নিজ থেকে ফোন করে। কারন এমন একটা যোগ্য পাত্র যদি হাত ছাড়া হয়ে যায়।এই ভয় তার ভিতরে অলটাইম কাজ করে। তাই ফোন বন্ধ পেলে সে খুব টেনশন করে। মনে হয় তার লাইফ থেকে সে হারিয়ে গেছে। এমনিভাবে কেটে গেলো ক’মাস। মিতাকে ফোনে কথা বলতে দেখে তার মা জিজ্ঞেস করলো,
মিতা ছেলেটি কে?
মা ছেলেটির নাম হাসান মাসুদ। সেনা অফিসার।
খুশিতে লাফিয়ে উঠে মা বলে,
বলিস কী! এদিকে দেতো আমি কথা বলি।
মেয়ের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে মা বলল,
হ্যালো বাবা হাসান কেমন আছো?
ভালো মা, আপনি কেমন আছেন?
আছি বাবা কোনমতে। তো মেয়েটাকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।
তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে সে বলে,
মা মিতাকে নিয়ে আপনি কোন টেনশন করবেন না। আমি তাকে খুব ভালোবাসি। ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসলে তার সঙ্গে দেখা করব। তারপর বিয়ে।
তা বুঝলাম। কিন্তু তোমার মা বাবা যদি বেঁকে বসে।
জ্বী না মা, তারা আমার কথার উপর কোন কথা বলবে না । আমার সিদ্ধান্তই চুডান্ত।
সত্যি বলছ তো বাবা?
জ্বী মা সত্যি। আপনি কোন চিন্তা করবেন না।শরীরের প্রতি যত্ন নিবেন। ঠিকমত খাবেন। এখন রাখি। আসসালামু আলাইকুম।
মা মেয়ে দু’জনকে ফটিয়ে নিলো চোরটা। কিভাবে মিতার কানের দুল আর নেকলেস চিনিয়ে নিতে পারবে সেই চিন্তাই মগ্ন।এদিকে মিতার মা মগ্ন কিভাবে সেনা অফিসারকে জামাই করবে। বই পুস্তুকে পড়েছি, লেখা পড়া করে যে, গাড়ি ঘোডা চড়ে সে। কিন্তু এখন দেখছি উল্টো।
চুরি চামারি করে যে, গাড়ি ঘোডা চড়ে সে। সানু চোর বর্তমানে চার পাঁচটা বাইকের মালীক। এগুলো ভাড়া দেয়া হয়। আর দামী একটাই চড়ে সে ঘুরে বেড়াই।

এদিকে মিতার মা খুব টেনশনে আছে কিভাবে সেনা অফিসারকে জামাই করবে তার চিন্তায় মগ্ন। ফোন দিয়ে বলে,
বাবা মাসুদ, রোজা প্রায় শেষ হতে চলেছ,তুমি কখন আসবে?।
মা আপনি কোন চিন্তা করবেন না আমি কাল রওয়ানা করব। ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম। এখন রাখি।ভালো থাকবেন।
পরদিন লঞ্চ টাইম পার হবার পর মিতাকে ফোন দিয়ে বলে,
জান আমি চলে এসেছি। তুমি নিউ মার্কেট চলে এসো। আমরা ঈদের শপিং করব।
মা মেয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠল। মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠিয়ে দিলো।নিউ মার্কেটে দু’জনার দেখা হলো।সানু চোর মিতার বিশ্বাস অর্জন করার জন্য দামী থ্রি ফিজ,কসমেটিক কিনে দিলো।মিতা মহাখুশি ভাবল এ সত্যিকারের প্রেমিক।চোরের চোখ মিতার অলংকারের দিকে, আর মিতার চোখ চোরের দিকে। তাকে গভীরভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিতা বলে,
জান এমন করে কি দেখছো?
কি দেখছি মানে, আমার চাঁদ পাখিটাকে। তোমাকে আজ খুব সুন্দরী লাগছে। মনে হয় নায়িকা অপু বিশ্বাস ও তোমার রুপের কাছে হার মানবে।চলো ফেরা যাক।
দু’জন বাইকে উঠে বসল। বাইক চলছে আপন নিয়মে। কিছুদূর রানিং’র পর নির্জন স্থানে এসে বাইক ব্রেক করলো। তারপর মিতাকে বলল,
জান একটু নাম তো। দেখি বাইকের কি হয়েছে?
সে হাত ঘুরিয়ে বলে,
জান তেল শেষ হয়ে গেছে বাইক আর চলবে না।
তো উপায়?
লোকাল গাড়িতে যেতে হবে। অপেক্ষা কর। জান তোমার কানের দুল আর নেকলেসটা খুলে হাতে নাও।
কেন,কেন?
মোবাইলে পিক তুলব। তোমার জন্য বানাতে হবে তো তাই।
ওকে জান খুলছি।
সে কয়েকটা পিক তুলে নিলো। তারপর ভালো করে দেখার জন্য তার হাতে নিলো। আর মিতাকে গাড়ি ফলো করতে বলল। এর ফাঁকে সে বাইকে চড়ে ফুল স্প্রিডে দিলো দৌড়। এত সময় পর মিতার মনে হলো সে প্রেমিক নয় চোর। সে চোর চোর বলে চিৎকার জুড়ে দিলো। লোকজন ছুটে আসলে সে সবকথা খুলে বলল। লোকজন ছি:ছি:বলে ধিক্কার দিলো।
আর বলল,কি কলির যুগ আাইল,”চোর সাজল প্রেমিক”
খবরটা মিতার বাবার কানে আসতে তিনি ক্ষেপে উঠে বলেন,
সানু চোরের এতবড় সাহস শেষে কিনা আামার মেয়ের সঙ্গে…।
আমি তাকে জেলে দেব।
একজন প্রতিবাদী স্কুল টিচার বলে উঠলেন,
কি জামান সাহেব এখন কেমন লাগছে?তখন তো থানায় ভালো করে গুড সার্টিফিকেট দিয়ে তার জামিন নিয়ে আসলেন। সে এলাকায় চুরি করে না।গুড বয়। এবার বুঝলেন তো চোরকে প্রশ্চয় দিলে যে মাথায় উঠে তা কতখানি সত্য। চোরের ধর্ম চুরি। সে কখন ও আপন পর বিচার করে না। এজন্য এদেরকে প্রশ্চয় দিতে নেই।জামান সাহেব আর কিছুই বললেন না,লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলেন।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প: অপেক্ষা লেখক:

গল্প: অপেক্ষা লেখক: মো: আবিদ রানা রিমি প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরেই বারান্দায় বসে। তার চোখ সব সময় খোঁজে একটা চেনা

গল্প সিয়ামের স্বপ্ন আফছানা খানম অথৈ

গল্প সিয়ামের স্বপ্ন আফছানা খানম অথৈ দশ বছরের সিয়াম কমলাপুর রেল ষ্টেশন এ থাকে।তার ঘরে খুব অশান্তি। এক মুহুর্তের জন্য

গল্পঃ অনুপমার চোখে ২

গল্পঃ অনুপমার চোখে লেখকঃ বকুল রায়  #Part_02 অনুপমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, এটা নিজেকে স্বীকার করলেও তাকে বলার সাহস তখনও হয়নি। কারণ

গল্পঃ অনুপমার চোখে ১

গল্পঃ অনুপমার চোখে লেখকঃ বকুল রায় Part 01 ঢাকার ব্যস্ত সড়কগুলো আমার কাছে সবসময় যেন এক রঙিন ক্যানভাস। ছোটবেলা থেকে

Leave a Reply