বিবাহ বন্ধন
আফছানা খানম অথৈ
নিহা আর পাবেল দু’জন প্রতিবেশী।নিহা ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে আর পাবেল ডিগ্রীতে পড়ছে।দু’জন দুজনকে ভালোবাসে।তাদের রিলেশনের মেয়াদ তিন বছর।নিহার বাবা হঠাৎ মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন এক প্রবাসী পুরুষের সঙ্গে।কথাটা শুনামাত্রই পাবেলের হৃদকম্প শুরু…।সে দ্রুত গতিতে ছুটে আসে নিহার কাছে।নিহা তাকে দেখে কেঁদে কেঁদে বলে,
পাবেল তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না।
পাবেল ও কেঁদে কেঁদে বলে,
নিহা তোমাকে ছাড়া আমিও বাঁচব না।
তো এখন উপায়?
উপায় একটা আছে।
বলো কী উপায়?
যেমন করে হোক বাবা মাকে রাজী করাতে হবে।
পাবেল ঠিক বলেছ।তাড়াতাড়ি তোমার বাবা-মাকে রাজী করাও।তারপর আমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও।
পাবেল আর দেরী করলো না।বাসায় এসে নিজের বাবা-মাকে ভালোবাসার কথা বলল।
পাবেল’র এখনো লেখাপড়া শেষ হয়নি।এ কথা চিন্তা করে বাবা প্রথমে রাজী না হলেও পরে ছেলের ভালোবাসার কথা শুনে ঠিক রাজী হয়ে গেল।তারপর নিহার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন এবং তাদের ভালোবাসার কথা বললেন।নিহার বাবার রাগ চরমে উঠে গেল।তিনি কড়া ভাষায় বললেন,
কামরান সাহেব আপনার বেকার ছেলের সঙ্গে কখনো আমি মেয়ে বিয়ে দেব না।
কিন্তু আপনার মেয়ে যে আমার ছেলেকে ভালোবাসে তার কি করবেন?
কামরান সাহেব এসব ফালতু ভালোবাসাবাসি আমি বিশ্বাস করি না।
রফিক সাহেব ফালতু নয়, সত্যি ওরা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসে।আপনি ওদের ভালোবাসা মেনে নিন।
ভালোবাসার কথা শুনে রফিক সাহেব’র মেজাজ আরও হাইতে উঠে গেল।তিনি কড়া ধমক দিয়ে বললেন,
স্টপ কামরান সাহেব এসব ফালতু ভালোবাসার কথা আমার সামনে আর উচ্চারণ করবেন না।আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
তবুও বিষয়টা একবার ভেবে দেখেন?
এই ব্যাপার নিয়ে আর কিছু বলবেন না।বললে বাপ ছেলে দু’জনকে ইভটিজিং’র মামাল ফাঁসাব।
ইভটিজনিং’র মামলার কথা শুনে কামরান সাহেব আর কথা বাড়ালেন না।বাসায় ফিরে আসলেন।
এর ফাঁকে নিহার বিয়ে হয়ে গেল।নিহা অন্যত্র বিয়ে করেছে ঠিকই কিন্তু তার মনের সমস্ত আকাশ জুড়ে আছে পাবেল।সে পাবেলকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না।বারবার তার প্রতিচ্ছবি ছায়া হয়ে ভেসে উঠছে চোখের সামনে চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছে নিহা।তার কান্না দেখে স্বামী জিজ্ঞেস করলো,
প্রিয়তমা কাঁদছ কেনো?বাবার বাড়ির জন্য মন পুড়ছে বুঝি…।
বুকের জমানো দু:খকে চেপে রেখে বহু কষ্টে নিহা উত্তর দিলো,
হ্যাঁ তাই।বাবা-মাকে চেড়ে কখনো কোথাও যাইনিতো তাই খারাপ লাগছে।
স্বামী তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
প্রিয়তমা কেঁদো না।প্রত্যেক মেয়েকে বাবার বাড়ি ছেড়ে আসতে হয়, এটা বিধাতার নিয়ম।তাছাড়া স্বামীর বাড়ি হচ্ছে নারীর আসল ঠিকানা।এখন কান্না থামিয়ে ঘুমাও।
কোনমতে নিহা কান্না থামিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
এদিকে পাবেল নিহার শোকে একেবারে কাতর।খাওয়া দাওয়া প্রায়ই ছেড়ে দিয়েছে।বন্ধু-বান্ধব খুব করে বুঝাচ্ছে।কিন্তু কিছুতে কিছু হচ্ছে না।শয়নে, শফনে, জাগরনে শুধু নিহার কথা ভাবছে।যতই ভাবছে ততই খারাপ লাগছে।ভাবনার অবসান যেন হচ্ছে না।বারবার ভাবনা গুলো তার হৃদয় দুয়ারে এসে দোল খাচ্ছে।
মাঝে মাস ছ’য়েক পার হলো।নিহা প্রেগন্যান্ট হলো।তার স্বামী বিদেশ চলে গেল।নিহার কাছে প্রথমে স্বামীর শুন্যতা খারাপ লাগলেও পরে ঠিক ভালো লাগল। রাত জেগে দু’জনে ফোনালাপনে ব্যস্ত থাকে।একে অপরের হৃদয়ের না বলা কথা প্রকাশ করা হয় যথারীতি। তাই নিহার কাছে স্বামীর শুন্যতা তেমন একটা অনুভব হচ্ছে না।নিহার স্বামী বিদেশে গাড়ি চালায় ড্রাইভিং ভিসা।ভালো মাইনে পায়।প্রতিদিনেরমতো আজও সে গাড়ি নিয়ে বের হলো।যাত্রী নামিয়ে দিয়ে সে বউ’র সঙ্গে মুঠোফোন কথা বলে।বউকে বলে,
বউ সাবধানে চলাফেরা করো।কারণ তুমি এখন একা না।নতুন মেহমান আসছে।তাকে ঠিকমতো দেখাভাল করতে হবে।
ওগো আমার কেমন জানি ভয় করছে?
প্রিয়তমা ভয় নেই।আল্লাহ রক্ষা করবেন।আল্লাহ’র উপর ভরসা রাখ।
দোয়া করবেন। আমাদের বাচ্চা যেন ছহিছালামতে পৃথিবীর আলো দেখে।
আমার দোয়া সবসময় তোমার সঙ্গে আছে।ভালো থেকো।এখন রাখি।খোদা হাফেজ।
নিহার স্বামী শরিফ উদ্দিন যাত্রী বোঝাই গাড়ি নিয়ে এগিয়ে চলল।কিছুদূর রানিং’র পর বিপরীত দিক থেকে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মারে।গাড়ি উল্টে রাস্তার খাদে পড়ে যায়।শরিফ উদ্দিন গুরুতরভাবে আহত হয়।তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।তাৎক্ষণিকভাবে দেশে খবর পাঠানো হয়।খবর শুনে নিহা কান্নায় ভেঙে পড়ে। শ্বশুর বাড়ির লোকজন বলে,
বউ অপয়া,অলক্ষণে, স্বামী খেকো, তাই বিয়ে হতে না হতে স্বামী মারা গেছে।
আমাদের সমাজে অল্প বয়সে কোন নারীর স্বামী মারা গেলে তাকে অযৌক্তিক অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা হয়।শুধু তাই নয় স্বামীর মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ী ও হেনস্থা করা হয়।তাই নিহাকে আজ এমন জঘন্য ভাষা শুনতে হলো।নিহার একদিকে স্বামীর শোক অন্যদিকে লোকজনের অপমান কিছুতেই সে সইতে পারছে না।বারবার মুর্ছিত হয়ে পড়ছে।
শত লাঞ্চনা গঞ্জনা উপেক্ষা করার কিছুদিন পর নিহা বাবার বাড়ি ফিরে আসে। তার কয়েক মাস পর নিহা ফুটফুটে একটা ছেলে সন্তান প্রসব করে।ছেলেকে নিয়ে কোনমতে কেটে চলেছে তার দিনকাল।
এদিকে তার প্রেমিক নিহার বিপদের কথা শুনে ছুটে আসে তার কাছে।তাকে দেখে নিহা বলে,
পাবেল কাউকে ঠকিয়ে কেউ কখনো সুখী হয়না।তোমাকে ঠকিয়ে আমি সুখী হয়নি।মনে হয় তোমার অভিশাপ লেগেছে।আমায় ক্ষমা কর।
প্লিজ নিহা এমন করে বলো না।আমি তোমাকে এখনো ভালোবাসি।
সত্যি বলছতো?
হুম সত্যি।কারণ সত্যিকার ভালোবাসা কখনো মরে না।
তুমি আমায় এখন গ্রহণ করবে?
হুম করবো।কারণ আমি মন থেকে তোমাকে ভালোবাসি।তুমি শুধু আমার।তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
এবার নিহা বলল,
আমিও তোমাকে ভালোবাসি ঠিক আগেরমতো।আমি বিপদে পড়ে বাবার চাপে অন্যত্র বিয়ে করেছিলাম।কিন্তু আমার হৃদয়ের সমস্ত আকাশ জুড়ে আছ শুধু তুমি তুমি তুমি…।
দু’জনের ভুল বুঝাবুঝির অবসান হলো।একে অপরের হাতে হাত রেখে বাঁচা মরার শফথ করলো।তারপর নিহার বাবা নথ হয়ে পাবেলের হাতে নিহাকে তুলে দিলো।দু’জন “বিবাহ বন্ধনে” আবদ্ধ হলো।
ঃসমাপ্তঃ

চমৎকার লিখেছেন
ভালো মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।