গল্প বিয়ের নামে দেহ ব্যবসা আফছানা খানম অথৈ

0

বিয়ের নামে দেহ ব্যবসা

আফছানা খানম অথৈ

আঁখি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে। বাবা ব্যবসা করেন,ফ্যামিলি স্ট্যাটার্স মোটামুটি ভালো।আঁখি হোস্টেলে থেকে লেখা পড়া করে।তারা একই রুমে আটজন থাকে।সিট অবশ্য আলাদা,একমাত্র আখি ছাড়া সবাই প্রেমের রিলেশনে জড়ানো।সন্ধ্যার পরপরই সবাই গল্প-সল্প আর ফোনালাপন নিয়ে ব্যস্ত।আখি খুব বিরক্তবোধ করত তবুও কিছু বলতো না।কারণ কারো ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা ঠিক না।যাক নিজেকে ম্যানেজ করে কোন রকম পড়া-লেখা চালিয়ে গেল।
একদিন মাঝ রাতে তার মুঠোফোনে কল আসে, সে অপরিচিত নাম্বার দেখে কল কেটে দেয়।কল কিন্তু থেমে নেই বার বার আসছে।এবার সে বাধ্য হয়ে কল রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলল,
হ্যালো কে আপনি?
লোকটি শুরুতেই উত্তর দিলো,
আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড।
আখি কড়া ভাষায় উত্তর দিলো,
স্টপ বাজে কথা বলবেন না।
লোকটি উত্তর দিলো,
আঁখি বাজে কথা নয়,আমি অরুপ রহমান,মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি।আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।
আঁখি আশ্চার্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?
ভালোবাসার মানুষের নাম্বার সংগ্রহ করা কোন ব্যপার না।
তবুও আমি আসল সত্যটা জানতে চাই?
অভি সত্যকে লুকিয়ে মিথ্যা বাক্য প্রকাশ করলো,
আঁখি আমি তোমার নাম্বার স্বপ্নে পেয়েছি।
হোয়াট!স্বপ্নে কেউ নাম্বার পায় নাকি?
মজার হেসে উত্তর দিলো অরুপ,
সত্যি বলছি আঁখি আমি তোমার নাম্বার স্বপ্নে পেয়েছি।
স্টপ অরুপ সাহেব আর একটা মিথ্যে কথা ও বলবেন না।এটা হচ্ছে ছেলেদের মেয়েদের ফটানোর চাল।
এই বলে আঁখি কল কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেয়।পরদিন একই টাইমে আবার কল আসে,সে ফোন রিসিভ করে দু’চারটা কথা বলে ফোন রেখে দেয়।এমনি ভাবে সপ্তাহ খানেক কেটে যাই।তারপর আঁখি আস্তে আস্তে অরুপের প্রেমে পড়ে যায়।একে অপরের জন্য পাগল প্রায়।এক সময় তাদের প্রেম কাহিনী অবিভাবকের নলেজে চলে যাই।অরুপের বাবা কড়া ভাষায় জিজ্ঞেস করে,
অরুপ তুমি নাকি আঁখি নামের এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করছ?
অরুপের শরীর ভয়ে থত্থর করে কাঁপছে।মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না।বাবা কিন্তু থেমে নেই কড়া ভাষায় আবারও সেই বাক্য পেশ করলো।এবার সে আস্তে করে বলল,
জ্বি না বাবা ইয়ে মানে….।
মানে মানে করছ কেন, যা বলার সরাসরি বলো।
অরুপের সাহস হলো না বাবার মুখের উপর সরাসরি ভালোবাসার কথা বলার।তাই সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
এবার বাবা কড়া ভাষায় বলল,
অরুপ তোমাকে ফাস্ট টু লাস্ট ওয়ার্নিং আর কখনো এসব বাজে মেয়ের সাথে মেলামেশা করবে না।
অরুপ হ্যাঁ না কিছু না বলে নিজের ঘরে ফিরে গেল।এদিকে আঁখির বাবাও মেয়েকে খুব করে শাসালেন।কিন্তু সে ও হ্যাঁ না কিছু না বলে নিজের ঘরে ফিরে গেল।কিন্তু প্রেমে কি এতই সহজ শাসন বারণে থেমে থাকবে।না তা কখনো সম্ভব না।তারা দুজন কিন্তু থেমে নেই। নিয়মিত ফোন আলাপন ও গোপন অভিসারে মিলিত হয়।এমনি ভাবে চলতে থাকে তাদের মজার দিনগুলো।অরুপ ও আঁখি প্রেমের রিলেশন খুব সিরিয়াস রুপ ধারণ করে। এক সময় দুজন মা-বাবাকে তাদের বিয়ের কথা বলে।দুফ্যামিলি গর্জে উঠে এ সম্পর্ক মেনে নেবে না বলে হুশিয়ারী সংকেত জানিয়ে দেয়।কিন্তু তারা থেমে নেই।অরুপ মাস্টার্স কমপ্লিট করে ভালো একটা জব করছে।বিয়ে করে বউকে খাওয়া পরার মতো ব্যবস্থা হয়েছে।তাই একদিন আঁখিকে নিয়ে বিয়ে করার কথা বলে পালিয়ে যায়।শেষে বাধ্য হয়ে দুঅবিভাবক তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়।তারপর দু’অবিভাবক আলোচনায় বসে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে। সময় মতো বিয়ে হয়। অরুপ বউকে নিয়ে কক্সবাজার হ্যানিমনে যায়।হোটেলে ভি আই ভি একটা রুম ভাড়া করা হয়।আঁখিকে রুমে রেখে অরুপ বাইরে যায়।কিছুক্ষণ পর তারজন্য হোটেল বয় খাবার নিয়ে আসে।অরুপ ফোন করে আঁখিকে বলে,
তুমি খেয়ে নাও।আমি বাইরে থেকে খেয়ে আসব।আঁখি খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লো।তার ঘন্টা খানেক পরে অরুপ তার অফিসের বসকে নিয়ে ফিরে আসল।বস নেশা করে এসেছে,আঁখির গা ঘেষে ধপাস করে বসে পড়লো।আঁখির কাঁধে হাত দিয়ে বলে,
হাই কেমন আছ?
আঁখি জড়োসড়ো হয়ে তার হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,
জ্বি ভালো আছি।
ততক্ষণে বস আঁখির স্লিলতা হানির জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।অরুপ কিন্তু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।আঁখি কড়া ধমক দিয়ে বলে,
স্টপ “ডোন্ট টাচ মি”।অরুপ তোমার বউকে তোমার সামনে অন্য লোক টাচ করছে আর তুমি চেয়ে চেয়ে দেখছ?এসবের মানে কি?
অরুপ রসালো হেসে উত্তর দিলো,
আঁখি এটাই সঠিক,আজ রাতে তুমি আমার বসের সঙ্গে রাত কাটাবে।
আঁখি জোর গলায় উত্তর দিলো,
না আমি পারবো না।
পারতে তোমাকে হবেই।
সে আবার ও বলে,
না আমি পারবো না।আমি সবাইকে বলে দেব।
বললে তোমার আর ও ক্ষতি হবে।কারণ বিয়ের আগে তুমি আমার সঙ্গে যা যা করেছ তার সকল ভিডিও আমার কাছে আছে।আমি ওগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়ে বলব,তুমি পতিতা।
আঁখি কেঁদে কেঁদে বলে,
অরুপ আমি তোমাকে বড় বিশ্বাস করেছিলাম।আর তুমি আমার বিশ্বাসের মুল্য এভাবে দিলে?তুমি আমাকে ছেড়ে দাও তবুও এমন জঘন্য প্রস্তাব দিওনা।
অরুপ নাছোড় বান্দা আঁখির কোন অনুরোধ রাখল না।বসের সঙ্গে রাত কাটানোর হুকুম দিলো।আঁখি রাজী না হলে তাকে খুব মারধর করে বসকে তার কাছে রেখে সে অন্য রুমে চলে যাই।এভাবে সাত দিন পার হলো।অরুপ আঁখিকে নিয়ে তার গন্তব্য স্থলে ফিরে গেল।সেখানে ভাড়া বাসায় তারা থাকে।কিন্তু সেখানে ঘটল আরেক কাণ্ড।
এখানে কিন্তু বস নেই।এখানে সিরিয়াল অনুযায়ী প্রতিরাতে অরুপের বন্ধুরা আসে।অরুপ কিন্তু এর ধারে কাছে ও নেই।গোপন সুত্রে জানতে পারে অরুপ আরেকটা মেয়ের সাথে প্রেমের রিলেশনে জড়িয়ে পড়েছে।আঁখিকে বিয়ে করেছে শো মাত্র।কি আর করা আঁখি না পারে কইতে,না পারে সইতে।দিনের পর দিন এই জঘন্য নির্যাতন আর তার ভালো লাগছে না।যখনি সে প্রতিবাদ করে তখনি অরুপ তাকে মারধর করে ও বিয়ের আগের এবং বস ও তাদের বন্ধুদের সাথে রাত কাটানো নোংরা ভিডিও গুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়ে তাকে চরিত্রহীনা ও পতিতা বানানোর কথা বলে। কি আর করা আঁখি বার বার কেঁদে কেঁদে তার কাছে মুক্তি চাই।অরুপ তাকে মুক্তি ও দেইনা,বউ হিসেবে ও মেনে নেয়না।এমণি যন্ত্রণার মধ্যে চলছে আঁখির দিনকাল।মাঝে বছর খানেক কেটে গেল।অরুপের বাবা আর আঁখির মা মারা গেল।অসহায় আঁখির পাশে দাঁড়ানোর আর কেউ রইল না।মাঝে মাঝে তাদের ঝগড়া ও মারামারি দেখলে আত্মীয় স্বজনেরা মিট করে দিতো।কিন্তু আসল সত্য কেউ এখনো জানে না।কেন তাদের ভিতরে মারামারি, মনোমালিন্য।
এভাবে আর কতদিন, আঁখি আর সহ্য করতে পারলো না।ঠিক তার আপনজনের কাছে সব সত্য প্রকাশ করলো।তারপর আইনগত ভাবে আঁখি অরুপকে ডিপোর্স দিলো এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলো।অরুপ কিন্তু থেমে নেই আঁখিকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য কড়া হুমকি দিচ্ছে।শুধু তাই নয় মামালা তুলে না নিলে তাদের আর ও বেশী সর্বনাশ করবে বলে জানায়।অর্থাৎ মা মেয়েকে এক সঙ্গে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।আঁখি তার মা ভয়ে থত্থর কাফে।
কোন বুদ্ধি তাদের মাথায় কাজ করছে না।শেষে বাধ্য হয়ে তারা মামলা তুলে নেয়ার জন্য একজন মহিলা আইন জীবির সঙ্গে বুঝতে যায়।উনার কাছে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল ঘটনা প্রকাশ করে।উনি তাদেরকে বলেন,
আঁখি তুমি ভয় পেয়ো না।মামলা তুলে নেয়ার দরকার নেই।এ সমস্ত জঘন্য অপরাধীদের কঠিন সাজা হওয়া দরকার।অপরাধী যে কেউ হোক সাজা তার হবে।আমি তোমাকে হেল্প করবো।
আইন জীবির কথা অনুযায়ী আঁখি কাজ করে চলেছে।মহিলা আইন জীবি এই কেচটাকে নিজের মনে করে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে জরুরী ওয়ারেন্ট জারী করে।পুলিশ কিন্তু থেমে নেই,অপারেশনে বের হলো।চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে অরুপকে এরেস্ট করে নিয়ে আসল।সে পুলিশ সুপারের কাছে হাত জোড় করে বলে,
স্যার আমি নির্দোষ,আঁখি যা বলেছে সব মিথ্যে,আমি ওকে সত্যি ভালোবাসি।আমাদের রিয়েল লাভ।
পুলিশ সুপার কি আর থেমে থাকে কড়া চোখ রাঙিয়ে বলল,
তুমি আবারো মিথ্যে বললে,একটা শিক্ষিত লোক হয়ে এমন জঘন্য কাজ…।ছিঃ ছিঃ….।
এই বলে পুলিশ সুপার মারতে শুরু করে,মারতে মারতে একেবারে রক্তাক্ত,তারপর অরুপ মুখ খুলল,সকল সত্য প্রকাশ করলো।বলল,
স্যার আমি বিরাট ভুল করেছি।আমি আঁখিকে দিয়ে “বিয়ের নামে দেহ ব্যবসা” করেছি।আমি আর এমণ ভুল করবো না।আমাকে ক্ষমা করে দিন।
পুলিশ সুপার কি আর থেমে থাকে,আইন অনুযায়ী তার সাজা হলো।তার যাবৎজ্জীবন কারাদণ্ড হলো।

বি: দ্র: গল্পটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা।একজন নারীর করুণ আত্নকাহিনী।সব মেয়েরা “কেয়ারফুল” বিয়ের পূর্বে ছেলেদের মিথ্যে প্রলোভনে নিজেকে ধবংসের পথে ঠেলে দিবে না।বিশেষ করে দৈহিক মিলন থেকে বিরত থাকবে।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

সুপুরুষ ও কাপুরুষ

ছেলেবেলায় ভালো পড়াশোনায় ছিলো সুমন। তাই এমনিতেই মহিলা মহলের প্রিয় ছিলো সমুন। কিন্তু আজকাল , সুমন পাড়ায় জিমে ঘাম ঝরাচ্ছে।

আমায় দুঃখ দাও আমায় কষ্ট দাও

তুমি আমার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার খেলা খেলছ। জানি আমি, এতে তুমি আনন্দে আছ, তবু আমি তোমায় কিছুই বলি না। কারণ

উদঘাটন

উদঘাটন      ❝সেদিনের পর থেকে আজও চিন্তিত থাকে সুকান্ত। সে কোনোদিনও সেই স্মৃতি ভুলতে পারবেনা❞ রহস্য আর রহস্যময় মানুষ

Leave a Reply