ভুয়া লটারি
আফছানা খানম অথৈ
সাহেদ এম.এ পাশ। বর্তমানে বেকার। বিভিন্ন পদে চাকরীর জন্য ইন্টারভিউ দেয়া শুরু করেছে, দু’চারটা ইন্টারভিউতে তো চাকরী হবে না, কমছে কম শতাধিক দিতে হবে। এরপরও হবে কি না সন্দেহ। বর্তমানে চাকরীর যে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই। কে কত বেশি ঘুষ দিতে পারবে, উর্ধবতন মহলে কার কত আত্নীয়-স্বজন, আছে। তার উপরে উর্ধবতন মহলের হ্যালো হ্যালো তো আছেই।
এই সব কড়া শাসন ক’জনে মানতে পারে? আর ক’জনেরি চাকরী হয়? এই জন্য অনেক মেধাবী ছেলে মেয়ে বেকারত্ব জীবন যাপন করছে। আর অনেক বোকা ছেলে মেয়ে বিভিন্ন পদে বহাল তরিকতে আছে। টিচিং এর ক্ষেত্র প্রায় দেখা যায় ছাত্র ছত্রীদেরকে ঠিকমত যুক্তবর্ণ বানান শেখাতে পারে না। ইংরেজি অংকের কথাতো বাদ এ দিলাম। এধরনের অনেক টিচার নিয়োগ আছেন গভঃমেন্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। আর মেধাবি ছেলে মেয়ে দেখলে তারা উপহাস করে বলে ভালো স্টুডেন্ট হয়ে কি করলি? আমরা শেষ বেঞ্চের ছাত্র হয়ে ও এখন গভঃমেন্ট কর্মকর্তা। আর তোরা,এখনো বেকার,সবই কপাল বুঝলি!সবই কপাল!
আর বর্তমানে চাকরী হয়ে গেছে সোনার হরিনের মতো। যা মধ্যবিত্ত ও গরীব পরিবারের ছেলে মেয়েদের পক্ষে দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনি এক অসহায় পরিবারের ছেলে সাহেদ।সে আশা বুকে নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তার ধারণা একদিন তার চাকরী হবে। আজও একটা ইন্টারভিউ দিয়ে বাসায় ফিরেছে।এখনও জামা কাপড় পাল্টাইনি। তখনি তার মোবাইল ফোনে রিং বেজে উঠল। সে ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতে অপর প্রান্ত থেকে বলে উঠল,
আপনি খুব lucky পাঁচ লাখ টাকা পুরুষ্কার পেয়েছেন।
এই সামান্য কটা কথা বলে তিনি ফোন রেখে দিলেন। হঠাৎ অপরিচিত লোকের কণ্ঠে পাঁচ লাখ টাকা পুরুষ্কারের কথা কেমন জানি রহস্যময় মনে হলো। তাই সে জানতে চাইল।
হ্যালো ভাই আপনি কে?কোথা থেকে বলছেন?
আমাকে চিনবেন না। আমি গ্রামিন ফোনের অফিস থেকে বলছি।
প্রতিত্তুরে সাহেদ বলল,
তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু পাঁচ লাখ টাকা পুরুষ্কার, তার মানে কি?
লোকটি মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠে হেসে উঠে বলে,
ও সেই কথা, বুঝিয়ে বলছি শুনুন। প্রতি বছর গ্রাহকদের জন্য গ্রামিন ফোনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠান ও লটারীর ড্র দিয়ে থাকেন। যে সব ভাগ্যমানেরা ড্রতে উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন, কোম্পানি তাদেরকে টাকা দিয়ে পুরুষ্কৃত করে থাকেন। আপনি সেই ভাগ্যমানের একজন।
লোকটির সাজানো গোছানো কথা সাহেদের মনে বিশ্বাসের আলো সৃষ্টি করল। সে আপন মনে বলে, লোকে বলে যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন। যাক এতদিন পর আল্লাহ মুখ তুলে চেয়েছেন।টাকার জন্য চাকরী ধরতে পারছি না। বিগত বছরে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ও ঘুষ দিতে পারি নাই বিধায় চাকরী হয়নি।এবার পাঁচ লাখ টাকা আগাম দিয়ে দেব। দেখি আমার চাকরী কে ঠেকায়? ভাবনার রাজ্য জয় করে এবার সে লোকটির কাছে ফোন দিয়ে জানতে চাইল,
হ্যালো ভাই সবকথা তো শুনলাম। এবার বলুন টাকার জন্য আমাকে কোথায় যেতে হবে?
লোকটি মিষ্টি হেসে বলে,
বলছি বলছি, শুনুন,আপনাকে সরাসরি গ্রামিন ফোনের অফিসে চলে আসতে হবে। তবে তার আগে একটা কাজ করতে হবে।
বলুন কি কাজ?
অফিসিয়াল খরচ বাবৎ পঞ্চাশ হাজার টাকা আমাদের নাম্বারে ফেক্সিলোড করতে হবে।অনেক ঝামেলা আপনার নামে কাগজপত্র করতে হবেতো তাই। যত তাড়াতাড়ি টাকা পাঠাবেন ততই মঙ্গল। শেষে আমাকে দোষ দিতে পারবেন না। এখন রাখি। পরে কথা হবে।
পঞ্চাশ হাজার টাকার কথা শুনে সাহেদ চিন্তায় পড়ল।তবুও কেন যানি হাসি খুশি ভাব, সুখী সুখী লাগছে।সুখের জোয়ার বইছে বুকের মধ্যখানে।তখনি বাবা জিজ্ঞেস করল,
সাহেদ তোকে যে খুব খুশি খুশি লাগছে,ব্যাপার কি?
উৎফুল্ল হৃদয়ে জবাব দিলো সাহেদ, বাবা ব্যপার একটা আছে, আমি পাঁচ লাখ টাকা পুরুষ্কার পেয়েছি,আমাদের আর অভাব থাকবে না। এই টাকা দিয়ে আমি বড় একটা চাকরী ধরব।তারপর অনেক অনেক টাকার মালীক হব।
আশ্চার্য স্বরে জিজ্ঞেস করল বাবা,
সত্যি বলছিস তো সাহেদ?
হাসি মাখা মুখে জবাব দিলো, সাহেদ,,
জ্বী বাবা সত্যি। তবে একটা কথা, খরচ বাবৎ পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগবে।
খরচের টাকার কথা শুনে বাবার বুক ধড়ফড় করে উঠল। তিনি কারণ জানতে চাইলে সাহেদ বলল,
বাবা তুমি এতকিছু বুঝবে না। আগে টাকা যোগাড় করে দাও। তারপর সব বুঝিয়ে বলব।
বাবা ভেবেচিন্তে দেখলেন টাকা ধার দেয়ার মতো তেমন কোন আত্নীয়-স্বজন নেই।আত্নীয়-স্বজন নেই তাতে কি হয়েছে? একজন ধনকুবের তো আছেন তাদের কাছাকাছি। যিনি ১৯৭১ সালে রাজাকার পাকিস্তানের দ্বোসর,ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের শত্রু, তাদের গোপন খবর মিলিটারিদের কাছে লেনদেন করতেন। আর প্রতি বাড়ির হাড়ির খবর মানে ইয়্যং মেয়ে কোন কোন বাড়িতে আছে তার তথ্য সংগ্রহ করে ক্যাম্পে গিয়ে বলতেন এবং তাদেরকে কিভাবে ধরে নেয়া যায় তার সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতেন। আর সুযোগ বুঝে বাড়ি ঘর লুটপাট করতেন।তাই রাতারাতি বড় লোক হয়ে উঠলেন। তিনি মিলিটারিদের দ্বোসর হয়ে অনেক জঘন্যতম মানবতা বিরোধী কাজ করেছিলেন।এবার বর্তমান প্রসঙ্গ আসি। তিনি পূর্বে ছিলেন রাজাকার রিটন। আর এখন হয়েছেন সমাজ সেবক জনাব রিটন রহমান সাহেব।
বর্তমানে তিনি অনেক টাকার মালিক। গাড়ি, বাড়ি, ব্যাংক ব্যলেন্স, ব্যবসা বাণিজ্য অনেক কিছু।
লোকে এখন তাকে অনেক সম্নান দিয়ে কথা বলে। কারণ নতুন প্রজন্ম জানে না তার পূর্বের ইতিহাস। বর্তমানে তিনি সমাজ সেবক সেজে মুখুশের আড়ালে নারী পাচার, শিশু পাচার, মদ গাজা হিরোইন, পাছে কড়া সুদের ব্যবসা ও করে চলেছেন। প্রতিদিন দু’চার দশজন বিভিন্ন বিপদে পড়ে তার কাছে আসে। তিনি ও যাকে যেভাবে পারেন কায়দা করে শোষণ করেন। আজও বিপদে পড়ে তার বাড়িতে উপস্থিত হলেন সাহেদের পিতা নুর হোসেন। তাকে দেখা মাত্রই রাজাকার রিটন বলে উঠল,
কি ব্যপার নুর হোসেন, এতদিন পর কি মনে করে?
দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে উত্তর দিলো নুর হোসেন,
বড় বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি।আমার ছেলের পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগবে। কর্জ নিতে এসেছি। আমি মাসে মাসে সুদ দিয়ে দেব। কোন সমস্যা হবেনা।
অনেক দিন পর এমন একটা সুযোগ তা কি হাত ছাড়া করা যায়। ভেবেচিন্তে রাজাকার রিটন বলল,
টাকা দিতে পারি এক শর্তে।
বলুন কি শর্ত।
টাকা পয়সার ব্যাপার, প্রমাণ স্বরুপ তোমার বাডির দলিল আমার কাছে বন্ধক রাখতে হবে।
যেহেতু টাকার প্রয়োজন শর্ত না মেনে উপায় কি?তাই তিনি জরুরী ভিত্তিতে দলিল নিয়ে আসলেন। রাজাকার রিটন এক প্রকার খুশিতে নেচে নেচে ভিতর মহলে চলে গেলেন। তারপর সিন্ধুক খুলে পঞ্চাশ হাজার টাকার একটা বান্ডিল, আর তিনশত টাকার একটা স্টাম্প, যা দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হয় তা নিয়ে তার সামনে এসে বসলেন। নুর হোসেন দলিল দিয়ে টাকা চাইতে তিনি বললেন,
এই কাগজে একটা দস্তত দাও।
নুর হোসেনের মাথায় টাকার চিন্তা তাই আসল নকল যাচাই না করে সই দিয়ে টাকা নিয়ে গেলেন। রিটন আর দেরি করল না। সরাসরি চলে গেল সাবঃরেজিষ্টার অফিসে। তারপর নুর হোসেনের সই দেয়া স্টাম্পে দাগ খতিয়ান উল্লেখ করে তার নামে দলিল লিখে নিলেন। মানে নুর হোসেনের বর্তমান বাড়ির মালীক এখন রাজাকার রিটন। তিনি সবকিছু রেডি করে আপাতত চুপচাপ। কারণ তিনি ঝোপ বুঝে কোপ মারবেন।এই অপেক্ষায় আছেন।
এদিকে টাকা পাওয়া মাত্রই সাহেদ চলে গেল ফেক্সিলোড অফিসে। টাকা লোড করে সাহেদ লোকটিকে ফোন করে বলল,
হ্যালো ভাই আমি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। এবার বলুন টাকার জন্য আমাকে কোথায় যেতে হবে?
লোকটি মিষ্টি হেসে বলে,
অফিসিয়াল ব্যপার, এ বছর পঞ্চাশ জন পুরুষ্কার পেয়েছে। প্রত্যেকের নামে আলাদা আলাদা কাগজ পত্র করতে হবে। একটু সময় লাগবে। সপ্তাহ খানেক লাগতে পারে। সবকিছু রেডি করে আপনাকে জানাব। এখন রাখি।
এদিকে ঘটল আরেক মজার ঘটনা। কৃপনের হাড্ডি সজিল এক সময় ছিল দিন মজুর। ক্ষেতে খামারে কাজ করে জীবিকার্জন করতেন। যৌতুকের দেয়া টাকায় ভিসা কিনে বিদেশ চলে যান। তারপর মোটামুটিভাবে টাকা পয়সা ইনকাম করতে শুরু করেন।এরপর থেকে তার বাড়ির লোকজনের দেমাগ বেড়ে যায়।কারণ তারা এখন বড় লোক । কিছু জমিজমা কিনলেন, ঘর দুয়ার পাক্কা করলেন।মানে তিনি এখন বড় লোকের দলে।
সজিলের ছেলে মেয়েও স্কুলে লেখা পড়া শুরু করল। তার বড় মেয়ে মিনা ইন্টারমিডিয়েট ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। একদিন গাড়ি ষ্টেশনে সাহেদের সঙ্গে তার দেখা হয়। তারপর দু’জনার আলাপ পরিচয়। জানা শুনার পর্ব শেষ। এরপর ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা। দু’জনার মাঝে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। যাকে এক কথায় বলা চলে প্রেম। মোটামুটিভাবে দু’জনার গোপন অভিসারে দেখা সাক্ষাৎ হয়। প্রতিদিনের মতো আজও তারা বেড়াতে গেল নদীর ধারে। দু’জন পাশাপাশি বসে পড়ল।বাবাও সেই মুহূর্তে জমি দেখতে গেল। তখনি দু’জনকে একসঙ্গে দেখতে পেলেন।
বাবার মেজাজ বিগড়ে গেল।তিনি আর থেমে থাকতে পারলেন না। মেয়েকে টেনে হেঁচড়ে বাড়িতে নিয়ে আসলেন।
তারপর উগ্র গতিতে ছুটে গেলেন সাহেদের বাবার কাছে। ভাগ্যিস পথে দেখা হয়ে গেল। তিনি দোকানে বসে বসে চা খাচ্ছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে কৃপনের হাড্ডি সজিল চোখ রাঙ্গিয়ে আঙ্গুল উঠিয়ে কড়া ধমকের স্বরে বলে,
এই ছোট লোকের বাচ্চা তোর ছেলের এত বড় সাহস আমার মেয়েকে ডিস্টার্ব দেয়। ফের যদি কখনও দেখি আমার মেয়েকে ডিস্টার্ব দিয়েছ,পা দুটো ভেঙ্গে পঙ্গু করে দেব।
এবার সাহেদের বাবার পালা। সে ও থেমে থাকল না।সে আরও কড়া, মুখ ভ্যাংচিয়ে বলে,
তুই কাকে ছোট লোক বললি বদলার বাচ্চা বদলা। ইটের বোঝা আর মাটির ওঁয়া টানতে টানতে তোর মাথার চুল উঠে গেল। গাঁ থেকে এখনও ছোট লোকের গন্ধ যায়নি। আর তুই কিনা আমাকে বলছিস ছোট লোক। আমার এম.এ পাশ ছেলেকে কখনও তোর মতো বদলার মেয়ে বিয়ে করাবো না।বলে দিলাম।
সজিল আরও ফুলে উঠল। দু’জন দু’জনকে ইচ্ছে মতো অপমান করল।দোকান ভর্তি লোকজন তাদের সেই অপমানের দৃশ্য তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল।সাহেদের বাবা বাড়িতে গিয়ে কেঁদে কেঁদে ছেলেকে সব অপমানের কথা বুঝিয়ে বলল।রাগে ক্ষোভে সাহেদ মিনার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল।
এদিকে সাহেদের লটারীর খবর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল। এক কান দুকান, রাজার কান, মানে কৃপনের হাড্ডি সজিলের কানে গিয়ে জোরালোভাবে বেজে উঠল।তিনি খুশিতে গদগদ।আপন মনে বলে, কেন যে সেইদিন সাহেদের বাবাকে এমন কড়াকড়া কথা বলেছিলাম।
যাক যা হবার হয়েছে। এবার হাতে হাত মিলিয়ে সব ঠিক করে ফেলব। যেমন করে হোক সাহেদকে জামাই বানাতে হবে।যায় সব মিটমাট করে পেলি।
কথায় বলেনা,যে গাড় ধরতে জানে সে পাও ধরতে জানে। লোভী ও কৃপন লোকের মধ্যে এই প্রবাদ প্রযোজ্য।তাই কৃপন সজিল সব অপমান উপেক্ষা করে চলে গেল সাহেদের বাবার সঙ্গে হাত মেলাতে। ঐদিনের মতো তার সঙ্গে দোকানে দেখা হলো। তাকে দেখামাত্রই হাসি মুখে বলে উঠলেন,
হোসেন ভাই কেমন আছেন? শুনেছি সাহেদ নাকি পাঁচ লাখ টাকা পেয়েছে।
কথাটা কি সত্যি?
মাথা নেড়ে সাঁয় দিলো নুর হোসেন,
হ্যাঁ সত্যি।
লোভী সজিল কায়দা করে বলে,
ভাই সেদিন রাগের মাথায় আমি অনেক কড়া কথা বলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। একথা বলে তিনি তার হাত চেপে ধরলেন। নুর হোসেন অবাক! তিনি কোন কথা না বলে করমর্দন করলেন। আর এই সুযোগে তিনি বলেন,
ভাই বলছিলাম কি সাহেদ ও মিনা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসে। আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে আমি তাদের দুহাত এক করে দিতে চাই।
চাপ চাপ জবাব দিল নুর হোসেন,
আপনি যতই বড় লোক হন কখনো আপনার মেয়েকে আমার ছেলের বউ করবো না। তাছাড়া আপনার এই জঘন্য অপমানের কথা কখনো ভুলব না।
সরাসরি অপমান কৃপন সজিল বুঝতে পারল। তাই আর কিছু না বলে লজ্জায় মাথা নিচু করে বাড়ি ফিরে গেল। দোকান ভর্তি লোকজন সজিলের এই দৃশ্য দেখে হাসি তামাসায় মেতে উঠল।একজন বলে,
কি বুঝেন মিয়ারা,লোভী সজিল, সাহেদের লটারীর কথা শুনে মেয়ে বিয়ে দিতে মাফ চাইল। হা হা হো হো….।
এর ফাঁকে সাতদিন পার হল। সাহেদ লোকটির কাছে ফোন দিলো, ফোন বন্ধ। এরপর বাধ্য হয়ে সরাসরি গ্রামিন ফোনের অফিসে ফোন দিল। রিসিভ করে ম্যানেজার বলে উঠল।
হ্যালো আমি শাহিন বলছি, আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
আমার লটারীর টাকা কিভাবে পেতে পারি?
কিসের লটারী?
এই যে,কিছুদিন আগে লটারীর ড্র হল তার টাকা।
আমাদের অফিসে কোন লটারীর ড্র হয়নি। আপনি ভুল শুনেছেন।
ম্যানেজারের উত্তর শুনে সাহেদের বুক ধড়ফড় করে উঠল।রীতিমত হৃদকম্প শুরু হয়ে গেল। তারপর লটারীর ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা দিলো।সবকথা শুনার পর ম্যানেজার বলল,
আপনার কথা শুনে মনে হল, আপনি অনেক বড় বাটপারের পাল্লায় পড়েছেন।শুধু আপনি নয়, আপনার মত অনেকে আমাদের কাছে রিপোর্ট করেছে এবং প্রতারণার স্বীকার হয়েছে। কেন যে আপনারা এমন ভুল করেন। যখন প্রয়োজন তখন ফোন করেন না। যখন অপ্রয়োজন তখন ফোন করেন।যদি ফেক্সিলোড করার আগে ফোন করতেন, তাহলে এতবড় সর্বনাশ হতো না। সাবধান ভবিষ্যতে এধরনের অপরিচিত নাম্বারের ফোনের কথা আর কখন ও বিশ্বাস করবেন না।
সাহেদ আর স্থীর থাকতে পারল না।হায় কি করলাম!হায় কি করলাম! না বুঝে একি করলাম।
অসহ্য যন্ত্রণায় ছটপট করছে।
এদিকে সাহেদের দুঃসংবাদ দ্রুত গতিতে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল। ঠিক রাজাকার রিটনের কানে খবর পৌছতে আর দেরী হলো না। অমনি তিনি দলবল নিয়ে সাহেদের বাবা নুর হোসেনের বাড়িতে উপস্থিত হলো। সাহেদের বাবা কেঁদে কেঁদে বলে,
রিটন ভাই আমার সর্বনাশ হয়ে গেল। আমার সবশেষ।
হোসেন আলীকে শান্তনা দেয়ার পরিবর্তে সে বলে উঠল,
নুর হোসেন আমি অতশত বুঝি না, আমার টাকা শোধ করার মতো, কোন সামর্থ্য তোমার নেই। তাই বলছি টাকার পরিবর্তে বাড়ি ছেড়ে দাও।
নুর হোসেন কেঁদে উঠে বলে,
ভাই এই সব আপনি কি বলছেন! বাড়ি ছেড়ে দিলে আমরা কোথায় থাকব?
সে সব আমি বুঝি না। বাড়ি ছাড়তে বলেছি, ছেড়ে দাও। তা না হলে আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হব। কারণ তোমার বাড়ির দলিল এখন আমার কাছে বন্ধক। তাছাড়া বাড়ির মালীক এখন আমি।
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল হোসেন আলী
কড়া ধমক দিয়ে রিটন বলল,
তাকিয়ে আছ কেন?তাড়াতাড়ি বের হও। তানা হলে লোকজন দিয়ে বের করে দেব।
বলতে না বলতে তার ভাড়া করা ভিলেন বাহিনী ঘরে ঢুকে জিনিস পত্র বের করে তাদেরকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো। এমনিভাবে “ভুয়া লটারির” পাল্লায় পড়ে সর্বহারা হলো সাহেদের পরিবার।
