ভুলতে পারি না তোমায়
আফছানা খানম অথৈ
কনিকা মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী।কোন এক বিকেলে দেখা হলো লাইব্রেরীতে আদিত্য’র সঙ্গে। আদিত্য ও মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র।দুজনের সামনে ফাইনাল এক্সাম।তাই দুজনে বই কিনতে গিয়েছিল লাইব্রেরীতে। আর অমনি দেখা দেখি চোখা চোখি তারপর আলাপ পরিচয়।এরপর থেকে দুজনের মাঝে ফোনালাপন চ্যটিং ড্যাটিং চলছে রীতিমত।শুধু তাই নয় দুজন দুজনের প্রতি খুব দুর্বল হয়ে পড়ে।কিন্তু কেউ কাউকে খোলাখুলিভাবে ভালোবাসার কথা বলতে পারছে না।আদিত্য’র ভয় সে গরীব কনিকা যদি তাকে ফিরিয়ে দেয় তাহলে চিরদিনের মতো বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে।কনিকার ভিতরে ও একই ভয় কাজ করছে যদি আদিত্য তাকে পছন্দ না করে।
একদিন কনিকার সই মায়া বলল,
হাই কনিকা ভালোবাসা কতদূর এগুলো?
নারে আমার কপালটাই খারাপ।
কনিকা কেনো কি হয়েছে?
আর বলিস না এখনো ভালোবাসা শুরু করতে পারিনি।তাছাড়া আদিত্য যদি আমাকে পছন্দ না করে?
বলিস কী তোর মতো সুন্দরী রাজ কন্যাকে সে পছন্দ করবে না।তার কিসের এত দেমাগ। এর একটা বিহিত করা দরকার। চল দেখি।
কনিকাকে টেনে হেঁচড়ে আদিত্য’র কাছে নিয়ে যেতে উদ্যত হলো মায়া।তখনি কনিকা বলল,
প্লিজ মায়া থাম থাম,জোর করে ভালোবাসা হয় না।আসলে ও আমাকে কিছু বলেনি।আমি এমনি কথাটা বললাম আর কি।আমি চাই ওর মুখ থেকে প্রথম ভালোবাসার কথাটা শুনতে। কিন্তু আদিত্য কেন যে এত ভাব নিচ্ছে বুঝি না।নাকি অন্য কাউকে….।
কনিকা তাইতো বলি আর দেরী না করে ভালোবাসার কথাটা বলে ফেল। তা না হলে পাখি অন্য ডালে গিয়ে বাসা বাঁধবে।
না না মায়া তা হতে পারে না।আমি আদিত্যকে খুব ভালোবাসি।তাকে ছাড়া আমি বাঁচব না।
তাহলে বলছ না কেনো সই?
মায়া তুই ঠিক বলেছিস।আর দেরী করা যাবে না।আজই প্রোপোস করব।
ওকে সই তাই কর।
কনিকা আর দেরী করলো না,ছুটে গেল আদিত্য’র কাছে।আদিত্য তাকে দেখে বলল,
হাই কনিকা তুমি?তুমি কিন্তু বহু বছর বাঁচবে।
কনিকা হেসে উঠে বলল,
তাই নাকি?
হুম তাই।
কী করে বুঝলে?
তোমার কথা বলতে না বলতে তুমি এসে হাজির।তোমার আয়ু কিন্তু বেড়ে গেল।
আদিত্য আমি এসব কুসংস্কার বিশ্বাস করি না।পার্কে চলো তোমার সাথে কথা আছে।
হুম চলো।
দুজন একই বেঞ্চিতে পার্কে গিয়ে বসল।কারো মুখে কোন কথা নেই।দুজন থবনে হারিয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর আদিত্য বলল,
কনিকা চুপচাপ কেনো,কিছু বল?
আগে তুমি বল?
না আগে তুমি বল?
এমনিভাবে পার হলো কমিনিট।তারপর কনিকা বলল,
আদিত্য তুমি বুঝে ও না বুঝার ভান করছ।তাই আমি কথাটা বলতে বাধ্য হলাম।যেদিন তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়, সেদিনই তোমাকে আমার ভালো লাগে।কিন্তু এতদিন বলি বলি করেও বলা হয়নি।কিন্তু আজ না বলে পারলাম না।আদিত্য আমি তোমাকে ভালোবাসি।তুমি আমার জীবন, তুমি আমার মরন।বাঁচতে হলে তোমাকে নিয়ে বাঁচব।এর ব্যতিরেকে নয়।
আদিত্য খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
কনিকা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না?আবার বলো?
ওকে সুইট হার্ট বলছি।আদিত্য আমি তোমাকে ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি।
ওকে সুইট হার্ট সো হ্যাপি।
কেনো কেনো?
আমার জান আমাকে ভালোবাসে তাই।
আদিত্য তুমি আমাকে ভালোবাস না?
হুম জান বাসি।কিন্তু এতদিন ভয়ে বলতে পারিনি।আজ ভয়কে জয় করেছি।
I love you কনিকা I love you.
তুমি আমার জীবন, তুমি আমার মরন।বাঁচতে হলে তোমাকে নিয়ে বাঁচব,এর ব্যতিরেকে নয়।
সত্যি?
হুম সত্যি।চলো এখন ফেরা যাক।
ওকে সুইট হার্ট চলো।
ভালোবাসা পাকা করে দুজন স্ব স্ব বাসায় ফিরে গেল।এর ফাঁকে দুজনের ফাইনাল এক্সাম শেষ হলো।কনিকার ফাইনাল এক্সাম শেষ এবার মা-বাবা তার বিয়ে নিয়ে ভাবছেন।ঘটক ডেকে কনিকার বায়োডাটা দিয়ে দিলেন।আশিক চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে বলে কথা রুপে গুনে লেখাপড়া কোনদিকে কমতি নেই।বলতে না বলতে এক ডজন পাত্রের বায়োডাটা ও পিকচার নিয়ে ঘটক মশাই হাজির।আশিক চৌধুরী এক এক করে সকল পাত্রের বায়োডাটা ও পিকচার দেখলেন।দেখে শুনে বাচাই করে একটা পছন্দ করলেন।ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ সাহেবের একমাত্র ছেলে মেরিল ইঞ্জিনিয়ার রিফাত মোশারফকে।কথা এক রকম পাকা হলো।আগামীকাল তারা কনিকাকে দেখতে আসবে।কনিকা আদিত্য’র সঙ্গে ফোনে কথা বলছে এমন সময় মায়ের আগমন।মাকে দেখে কনিকা ফোন রেখে দিলো।পরক্ষণে মা বলল,
কনিকা কার ফোন?
মা আমার সই মায়া।
ও তাই।শোন কনিকা কাল কোথাও যাবি না?
কেনো মা?
কাল পাত্রপক্ষ তোকে দেখতে আসবে।খুব ভালো সমন্ধ,পাত্র স্মার্ট ভদ্র,শিক্ষিত মেরিল ইঞ্জিনিয়ার।এই দেখ ছেলের ছবি।
সাফিয়া চৌধুরী মেয়ের হাতে পিকটা দিয়ে নিজের কাজে মন দিলেন।এদিকে কনিকা আদিত্যকে ফোন করে সবকিছু জানাল।সবকথা শোনার পর আদিত্য মজা করে বলল,
কনিকা মন্দ কি বিয়ে করে ফেল। অনেক সুখী হবে।
কনিকা রাগে বোম হয়ে বলল,
আদিত্য তুমি এমন কথা বলতে পারলে?এই তোমার ভালোবাসা?
প্লিজ সুইট হার্ট রাগ করো না।জাস্ট আমি একটু মজা করলাম।সরি সরি।
আদিত্য শোন।
সুইট হার্ট বল।
আমি এক্ষণি আসছি।তুমি রেডি থেকো।
ওকে সুইট হার্ট।
মা-বাবা কাজের বুয়া সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।আর এই সুযোগে কনিকার পলায়ন।আদিত্য তার বন্ধুদের নিয়ে বিয়ের সবকিছু রেডি করে রেখেছে।কনিকা যাওয়ার সাথে সাথে বিয়ের কাজ শেষ।আপাতত তারা এক বন্ধুর বাসায় উঠল।এদিকে রাত শেষ হতে না হতে কনিকার পলায়নের খবর মা-বাবা জেনে গেল।লোকে শুনলে বদনাম রটে যাবে। তাই কাউকে কিছু না বলে আশিক চৌধুরী থানায় জিডি করলেন।চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কনিকাকে খুঁজে বের করার আলটিমেটাম দিলেন পুলিশ কর্তৃপক্ষকে। আশিক চৌধুরীর মেয়ে বলে কথা পুলিশ কর্তৃপক্ষ কি আর থেমেথাকে। দলবল নিয়ে বের হলো।চব্বিশ ঘন্টা পার হয়ে গেল পুলিশ কর্তৃপক্ষ এখনো তাদের খোঁজ পেলো না।আশিক চৌধুরী ফোনে দিলেন এক কড়া ধমক,
আপনারা কি করেন? চব্বিশ ঘন্টা পার হয়ে গেল, এখনো আমার মেয়ের কোন খবর নেই?
প্লিজ চৌধুরী সাহেব শান্ত হউন।আমরা তো বসে নেই।চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
আমি কোন কথা শুনতে চাই না।যত টাকা লাগে আমি দেব।তাড়াতাড়ি আমার মেয়েকে উদ্ধার করুণ।
ওকে চৌধুরী সাহেব টেনশন নিয়েন না,তাই হবে।
পুলিশ সুপার প্রতি থানায় কনিকার ছবি পাঠিয়ে দিলো।শুধু তাই নয় কনিকাকে দেখামাত্রই যেন পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসে সেই নির্দেশ দিলেন।
এদিকে কনিকা আদিত্যকে নিয়ে শফিং করতে বের হলো।ঠিক তখনি পুলিশের নজরে পড়ল।পুলিশ পকেটে রাখা ছবিটার সঙ্গে মিল আছে কিনা দেখল ঠিক মিলে গেলে।তখনি পুলিশ সুপারের কাছে ফোন করলো।তিনি তাৎক্ষণিকভাবে দলবল নিয়ে কনিকাকে ধরে ফেললেন।তখনি কনিকা বলল,
আপনারা, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
তোমার বাবার কাছে।
কনিকা স্পষ্ট ভাষায় জবাব দিলো,
আমি আমার বাবার কাছে যাব না।স্বামীর কাছে যাব।
সেটা আপনার বাবার কাছে গিয়ে বলবেন।আমাদের দায়িত্ব আপনাকে আপনার বাবার হাতে তুলে দেয়া। অতএব বিষয়টা বুঝতে পারছেন।আর কথা না বাড়িয়ে আমাদের সাথে চলুন।
না আমি যাব না?
যেতে আপনাকে হবে।
আদিত্যকে মেরে রক্তাত্ব করে কনিকাকে এক প্রকার জোর করে তারা তার বাবার কাছে নিয়ে গেল।বাবা-মা মেয়েকে পেয়ে খুব খুশি।মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মা-বাবা দুজনে কেঁদে কেঁদে বলেন,
মা তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে, তোকে ছাড়া কি আমরা থাকতে পারি।তুই এতদিন কোথায় ছিলে?
মা আমি আদিত্যকে ভালোবাসি।যখনি দেখলাম তোমরা আমার বিয়ে ঠিক করেছ,তখনি আমি পালিয়ে যাই এবং আদিত্যকে বিয়ে করি।আদিত্য আমার স্বামী,আমি তার কাছে ফিরে যেতে চাই।
কথাটা শুনামাত্রই আশিক চৌধুরীর রাগ চরমে উঠে গেল।তিনি কড়া ভাষায় বললেন
কনিকা আমি এসব বিয়ে মানি না।তোমার বিয়ে আমার পছন্দ করা ছেলের সঙ্গে হবে।
মেয়ে ও থামবার পাত্রী নয়।বাবার মুখের উপর বলে দিলো,
না বাবা তা কখনো হবে না।আদিত্য আমার স্বামী,আমি তাকে ছাড়া আর কাউকে স্বামীকে হিসেবে মেনে নিতে পারবো না?
সত্যি?
জ্বি বাবা সত্যি।
তাহলে আমার সমস্ত সম্পত্তি থেকে তোমাকে বঞ্চিত করবো?
কর বাবা এতে আমার কোন আপত্তি নেই।তবুও বলব আমি আদিত্যকে ভালোবাসি,আদিত্য আমার স্বামী।
এবার আশিক চৌধুরী চিৎকার করে বলল,
স্টপ কনিকা আমি বেঁচে থাকতে এই ফুটপাতের আদিত্যকে কখনো জামাই হিসেবে মেনে নেব না।তুমি জান আমার ক্ষমতার দাপট কতটুকু?
যদি আমার কথা না শুন আদিত্যকে চিরদিনের মতো দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেব।আমি এক্ষণি কালু ডাকাতের কাছে ফোন দিতেছি।
বলতে না বলতে আশিক চৌধুরী আদিত্যকে মারার জন্য কালু ডাকাতকে কন্টাক করলেন।কনিকা কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না।চোখ থেকে জল পড়ছে অনবরত।শেষ বাধ্য হয়ে কেঁদে কেঁদে বলল,
প্লিজ বাবা আদিত্যকে জানে মেরো না।তুমি আমাকে যা বলবে আমি তাই করবো।
সত্যি বলছিস তো,নাকি অভিনয়?
সত্যি বলছি বাবা আদিত্য’র প্রাণ ভিক্ষা দাও?আমি তোমার পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করবো।
আবার বেঁকে বসবি নাতো?
জ্বি না বাবা তুমি বিয়ের আয়োজন কর।
আশিক চৌধুরী মহাধুমধাম করে নিজের পছন্দের ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিলেন।কনিকা শত সহস্র বিরহ ব্যথা বুকে নিয়ে রিফাত মোশারফ’র সঙ্গে সংসার করে চলেছে ঠিকই, কিন্তু মনে এক বিন্দু শান্তি ও নেই।কারণ মনের মধ্যে একজনকে রেখে অন্য জনের সংসার করা কত যে কষ্টের তা সে ছাড়া অন্য কেউ বুঝে না।কোনমতে সংসার করে চলেছে কনিকা।
এদিকে আদিত্যকে রক্তাত্ব অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা হাসপাতালে ভর্তি করায়।খবর পেয়ে তার অন্তরঙ্গ বন্ধু সাজু ছুটে যাই তার কাছে।তার টেককেয়ার ও ডাক্তারের চিকিৎসায় প্রায় দুসপ্তাহ পর আদিত্য সুস্থ হয়ে উঠল।তারপর কনিকার খবর নিতে জানতে পারল তার অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে।কথাটা শুনামাত্রই তার ভিতরের আকাশটা হু হু করে কেঁদে উঠল।কনিকার সঙ্গে কাটানো দিন গুলো রোমান্থন হয়ে তার হৃদয় দুয়ারে ভেসে উঠল।তার কোনকিছু ভালো লাগছে না।শুধু প্রিয়তমার স্মৃতি বার বার হৃদয় দুয়ারে ভেসে উঠছে।সে গুম মেরে শুয়ে আছে।সাজু বলল,
দোস্ত খেতে উঠ।
দোস্ত আমার খিদে নেই, খাব না?
বললে হলো।উঠ বলছি।
বললাম তো আমি খাব না?
সাজু বহু চেষ্টা করেও আদিত্যকে খাওয়াতে পারলো না।সে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
এদিকে কনিকা আদিত্য’র টেনশনে অসুস্থ হয়ে পড়লো।রাত দুপুরে একদিন অজ্ঞান হয়ে পড়লো।দ্রুত হাসপাতাল ইমারজেন্সি চিকিৎসা শুরু হলো।কিছুক্ষণ পর কনিকার জ্ঞান ফিরে আসল।ডাক্তার কনিকার স্বামীকে চেম্বারে ডেকে নিয়ে বললেন,
আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবো।সঠিক জবাব দেবেন কিন্তু।
জ্বি করুণ।
আপনারা কি দাম্পত্য জীবনে অসুখী?
জ্বি না।বরং কনিকাকে পেয়ে আমি খুব সুখী।তবে একটা কথা আছে,বিয়ের পর থেকে দেখছি সে একা একা কি যেন ভাবে।প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যায়।
ও সিউর আমাদের অনুমান কিন্তু মিথ্যে না।আমাদের ডাক্তারি বিদ্যায় যা বুঝার বুঝেছি।আপনার স্ত্রীর জীবনে আপনার আগে অন্য কেউ এসেছিল।তাকে কেউ জোর পূর্বক কেড়ে নিয়েছে।অথবা কোন কারনে হারিয়েছে।কিন্তু সে এখনো তাকে ভুলতে পারছে না।যা তাকে খুব মানসিকভাবে আহত করে তুলেছে।যা সে সহ্য করতে পারছে না।
ডাক্তার সাহেব তা বুঝলাম।কিন্তু এর ট্রিটমেন্ট…।
রিফাত সাহেব এর ট্রিটমেন্ট মেডিসিনে হবে না।এর ট্রিটমেন্ট হলো,আদর সোহাগ ভালোবাসা ও সুন্দর আচরণ।আপনি আপনার ভালোবাসা দিয়ে তার মন জয় করতে চেষ্টা করুণ।তবে সে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারবে,এর ব্যতিরেকে নয়…।
তবে সাবধান যদি কখনো তার অতীত সম্পর্কে জানতে পারেন তাকে টেনশনমুলক কিছু বলতে পারবেন না।যদি বলেন ব্রেন আউট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।তো আর একটা কথা যদি পারেন তাকে নিয়ে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দর্শনীয় কোথাও বেড়াতে যান। যা তার ভালো লাগে এবং মন ফ্রেস হয়।
ওকে ডাক্তার সাহেব তাই হবে।
ডাক্তারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রিফাত বউকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসল।
এদিকে আদিত্য আর আদিত্য নেই।প্রিয়তমার শোকে পাথর।আগের মতো কথাবার্তা খাওয়া দাওয়া হাসি আনন্দ কিছুই তার মাঝে নেই।পাগলের বেশে আজ এখানে কাল ওখানে ঘুরে বেড়াই।সবাই পাগল ভাবে।কারো মায়া হলে কিছু খেতে দেয়।আবার কেউ দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়।এমনিভাবে অনাদর অবহেলায় জর্জরিত আদিত্য’র জীবন।
এদিকে কনিকা ও দাম্পত্য জীবনে সুখী না।শরীর স্বাস্থ্য ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে।রিফাত ডাক্তাররের কথা অনুযায়ী কনিকাকে নিয়ে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে গেল।দুজন সারাদিন বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়ায়,সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে আসে।এমনিভাবে কেটে গেলে সাতদিন।অষ্টম দিন কনিকা ও রিফাত হোটেলে ফেরার পথে দেখে হোটেলের সামনে অনেক লোকের ভিড়, লোকজন জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কারো মুখে কোন কথা নেই।রিফাত ঠেসাঠেসি করে একজনকে জিজ্ঞেস করলো,
ভাই এখানে এত লোকের ভিড় কেনো?
ভাই এখানে একটা পাগল মরে পড়ে আছে।
কথাটা শুনে কনিকা বলল,
তাই নাকি। রিফাত চলো তো দেখি।
কনিকা ছুটে এলো পাগলের কাছে।এসে একি দেখল, এতো পাগল না তার ভালোবাসার মানুষ আদিত্য। যাকে বাঁচানোর জন্য সে বাবার পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করলো।কিন্তু সে কি বেঁচে আছে, আদৌ না…।
কথাটা ভাবতেই কনিকার মাথায় সপ্ত আকাশ ভেঙে পড়লো।আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে সে ডুকরিয়ে কেঁদে উঠল।কনিকা পকেটে হাত দিতে পেল একটা চিরকুট তাতে লেখা,
কনিকা তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা,পারলে তুমি আমাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করতে।আমি কিন্তু পারিনি। শত চেষ্টা করেও “ভুলতে পারি না তোমায়”।চিরকুট পড়ার পর কনিকার কান্নার মাত্রা আরও বেড়ে গেল।রিফাত সবকিছু বুঝতে পেরে বলল,
কনিকা এভাবে কাঁদলে হবে, ওকে দাফন করতে হবে না?
ঠিক আছে ওর বাবা -মাকে খবর দাও।
রিফাত আদিত্য’র বাবা-মায়ের কাছে খবর পাঠাল।তারা এসে আদিত্যকে নিয়ে গেল এবং ছহিছালামতে দাফন করলো।
ঃসমাপ্তঃ
