মানবতার ফেরিওয়ালা
আফছানা খানম অথৈ
স্বপ্না খাতুন যশোর জেলায় এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিলেন।খুব ভালোভাবে লেখাপড়া শেষ করেন।ছোট বেলা থেকে তিনি ছিলেন উদার ও সত্যবাদী।প্রায় সময় নিজের খাবার অনাহারীর মুখে তুলে দিতেন।শিক্ষা জীবন শেষ করে সমাজে সেবক হিসেবে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন।সকালে বের হন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেন।সারাদিন বাইকে করে বিভিন্ন জাগায় ঘুরে গরীব দু:খীদের খুঁজে বেড়ান।যখনি কাউকে সামনে পান,এগিয়ে গিয়ে তার জীবন কাহিনী শুনেন।তারপর সাধ্যমত টাকা পয়সা ও ভালোবাসা দিয়ে সাহায্য করেন।তারা দুহাত তুলে তার জন্য দোয়া করেন।অভাবগ্রস্ত মানুষদের টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করা তার একটা আনন্দ।যখনি কাউকে সাহায্য করতে পারেন,তখনি নিজেকে সুখী মনে করেন।
প্রতিদিন তার সাহায্যের তালিকায় দু’চারজন থাকেন।শহরের আনাচেকানাচে ঘুরে ঘুরে গরীব দু:খীদের খুঁজে বের করেন।তারপর যার যা প্রয়োজন তাই দিয়ে সাহায্য করেন।বস্ত্রহীনকে বস্ত্র কিনে দেন।বাচ্চাদের আদর করে কোলে নেন।তাদের চাহিদা অনুযায়ী খাবার জিনিস খেলনা কিনে দেন।তাদের মুখে হাসি ফোটান।গরীব বৃদ্ধ রিক্সাচালকদের টাকা দেন,খাবার কেনার জন্য,কাপড় কেনার জন্য। বিশেষ করে ফুটপাতে বসে যেসব গরীব লোকেরা দোকান করেন সামান্য ফল, শাক সবজি, বাদাম,লিচু ইত্যাদি বিক্রি করেন তাদের সবকিছু বেশি দামে কিনে অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দেন।রোগীদের ঔষধ কিনে দেন।অনাহারীর মুখে খাবার তুলে দেন।ঈদের দিনেও তিনি বসে নেই,পাড়ায়,রাস্তায়, মহল্লায় ঘুরে ঘুরে গরীব দু:খীদের মাঝে গোস্ত বিলান,সেলামি দেন।সবার মুখে হাসি ফোটান।
একজন গরীব অসহায় মহিলা ময়লা থেকে প্লাস্টিক বোতল, কৌটা, ইত্যাদি কুড়িয়ে এনেছেন বিক্রির জন্য।তিনি তার কাছে গেলেন।তারপর কিছু টাকা দিয়ে বললেন,
আজ থেকে আর আপনি এসব করবেন না।এই টাকা দিয়ে একটা ব্যবসা করবেন।মহিলাটা এক গাল মিষ্টি হেসে বলল,
আমি এই টাকা দিয়ে কয়েকটা মুরগি পুষবো।মুরগি ডিম দিবে।তাতে আমার সংসার চলবে।
ঠিক আছে আপনার যা মন চাই কইরেন।।
সে বাইকে করে যাওয়ার পথে দেখল এক বৃদ্ধ লোক হামাগুড়ি দিয়ে যাচ্ছে।সে তার পাশে গেল।তারপর জানতে চাইল,তিনি কি চান?
বৃদ্ধ লোকটি বলল,
মা আমি হাটতে পারি না।যদি একটা হুইল চেয়ার হতো ভালো হত।
তিনি আর দেরী করলেন না।পরদিন একটা হুইল চেয়ার কিনে তাকে দিয়ে আসলেন।তিনি খুব খুশি হলেন,এবং তার জন্য দোয়া করলেন।
এক বৃদ্ধ মহিলা ভিক্ষা করছেন।তিনি তার কাছে গেলেন।তারপর একটা ওজন মাপার মেশিন ও কিছু টাকা তার হাতে দিয়ে বলল,
কাল থেকে আর ভিক্ষা করবেন না।এই ওজন মাপার মেশিন নিয়ে বসবেন।লোকে ওজন মেপে পাঁচ দশ টাকা যা দিবে চলবে।আর ভিক্ষা করা লাগবে না।
এক যুবক পঙ্গু সে ভিক্ষা করছে।তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
আপনাকে যদি আমি কিছু মুলধন দিহ, ব্যবসা করতে পারবেনতো?
যুবকটি একগাল মিষ্টিহেসে বলল,
জ্বি আপু পারব।
তিনি আর দেরী করলেন না।একটা গরীব ছেলে কিছু পেয়েরা নিয়ে বসে আছে।তিনি তার কাছ থেকে দিগুন টাকা দিয়ে পেয়ারা কিনে ওই পঙ্গু লোকটাকে দিয়ে আসলেন। সঙ্গে ওজন মাপার একটা ডিজিটাল মেশিন ও দিলেন।এভাবে তিনি গরীব দু:খীদের সাহায্য করেন।
যশোরের কারবালা এতিমখানায় ও তিনি বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দেন।
এবারের সিলেটের বন্যায় ও তিনি থেমে থাকেননি।রেইন কোট পরে নৌকায় করে সাহায্য নিয়ে ওদের কাছে হাজির হলেন।জীবনের মায়া না করে সবার ঘরে ঘরে পৌছে দিলেন ত্রাণ সামগ্রী।
তার একটা বিষয় সবাইকে অবাক করে,সেটা হলো তিনি গরীব দু:খী মানুষদের সাথে হাসিমুখে কথা বলেন,তাদের মাথায় ভালোবাসার হাত বুলিয়ে দেন।আপন করে নেন।তাদের দু:খগুলো শেয়ার করেন।যখনি কোন অভাবীকে দেখেন তখনি ছুটে যান এই “মানবতার ফেরিওয়ালা” স্বপ্না খাতুন।স্যালুট মানবতার ফেরিওয়ালা স্বপ্না আপুকে।
আপু তোমার জীবন ধন্য
নিজেকে উৎসর্গ করেছ
মানবতার জন্য।
