লাল পাঞ্জাবি
আফছানা খানম অথৈ
অয়নের বয়স সাত আট বছর হবে।তার সখ ঈদে একটা লাল পাঞ্জাবী কিনবে।কিন্তু টাকা কোথায় পাবে?তার মা-বাবা বেঁচে নেই।এই জগতে সে বড় একা,আপন বলতে তেমন কেউ নেই।ভবঘুরের মতো সারাদিন ঘুরে বেড়াই।একটা দুটো টাকার জন্য লোকের দুয়ারে ধর্না ধরে।কেউ দেয়, কেউ দেয় না।কেউ আবার দুচারটা কড়া কথা শুনিয়ে তাড়িয়ে দেয়।রাতে থাকার জায়গা নেই।ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকে।এভাবে কেটে যায় অয়নের জীবন।তার সমবয়সী ছেলেরা ঈদের জামা কিনেছে।তা দেখে তার ও সখ জেগেছে লাল পাঞ্জাবি কিনার।সে একটা দুটা টাকা জমিয়ে শদুয়েক টাকা করল।তারপর শফিংমলে গেল।তাকে দেখে দোকানদার বলল,
এই তুমি এখানে কী করছ?
আমি একটা লাল পাঞ্জাবি কিনব?
তোমার যে অবস্থা তা দেখে মনে হয় না,তুমি পাঞ্জাবি কিনতে পারবে?
ক্যান পারবো না।আমি টাকা এনেছি তো?
কত টাকা এনেছ?
দুশো টাকা
দোকানদার খিলখিল করে হেসে উঠে বলে,
এই দামের পাঞ্জাবি আমাদের দোকানে নেই।তুমি যাও বলছি।
না আমি যাবো না।আমাকে ওই লাল পাঞ্জাবিটা দেন।
তুমি জান এই পাঞ্জাবির দাম কত?
না জানি না।
এই পাঞ্জাবির দাম দুই হাজার টাকা।
বলেন কী এতটুক পাঞ্জাবির দাম এত টাকা?
তো আর বলছি কী?বিরক্ত না করে যাও বলছি।
মামা আমি খুব গরীব। এই দুনিয়ায় আমার কেউ নেই।দেন না মামা এই পাঞ্জাবিটা আমাকে দুশো টাকায়।
না পারবো না।
দেন না মামা,দেন না..।
অয়ন হাত জোড় করে কেঁদে কেঁদে তার কাছে পাঞ্জাবিটা কিনতে চাইছে।দোকানদার নাছোড়বান্দা তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে।কড়া ধমক দিয়ে বলছে,
এটা ফকির মিছ কিনের মার্কেট না।এখানে ভি আই পি লোকেরা কেনাকাটা করে।তোরমতো টোকাইর বাচ্চার জামা কাপড় এখানে নেই।তোর সাহস কী করে হলো এখানে ঢোকার?ভালো চাস তো কেটে পড়।তা না হলে…।
অয়ন চোখের জল মুছতে মুছতে বেরিয়ে পড়লো।তারপর গেল আরেক মার্কেটে সেখানে একই অবস্থা।এরপর গেলো আরেক মার্কেটে সেখানে একই অবস্থা।অবশেষে একবুক দু:খ নিয়ে ফিরে গেল গন্তব্যস্থলে। কেনা হলো না তার আর লাল পাঞ্জাবি।পরা হলো না ঈদের দিন লাল পাঞ্জাবি।ছেঁড়া জামা পরে সে ঈদ পালন করলো।
ঃসমাপ্তঃ
