দারোগা বাড়ি (মো.রিমেল)

0

দারোগা বাড়ি
প্রথম পর্ব
মো.রিমেল

বাড়ি থেকেঅ

র্জুন,নিলয়দের আওয়াজ শোনা গেল।নিজেকে রুখতে পারলাম না।দ্রুত একটা গেঞ্জি আর হাফ-প্যান্ট পরে বেরিয়ে যাওয়ার সময়

চিরচেনা কণ্ঠ,,,

“কই যাস? পড়া শেষ হয়েছে?”।মা যেতে যাও না,বিকালে পড়াশুনা ভালো লাগে না।দারোগা বাড়ি খেলতে যাচ্ছি।রাতে বাকিগুলো শেষ করমো।”

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সরকারী হাই স্কুল মাঠের উত্তরদিকে দারোগা বাড়ি।ছোট্ট ছেলেমেয়েরা বিকেল হলে খেলার আসর জমায় দারোগার বাড়ির উঠোনে।এই বাড়ির একজন পুলিশের দারোগা পদে কাজ করতো।তাই সবার কাছে চোখ বন্ধ করে বাড়িটিকে এককথায় দারোগা বাড়ি নামে সম্বোধন করে।বাড়িটি আয়তনে অনেক বড় ছিল।
গোল্লাছুট খেলা শুরু হয়ে গেছে।দেরিতে আসায় নিজের উপরে ও একটু রাগ হলো।এখন দিন ছোট।সন্ধ্যা নামতে আধা ঘন্টা বাকি।১-২ বার খেলা যায়।নিরব অর্জুনদের খেলা দেখছি আর ভেবে যাচ্ছি কখন কোনো একটা দলে খেলবো।

একটু পরে অন্য দল চিৎকার দিয়ে বলে”গোল্লা বের হয়ে গেছে ধর ধর,,,,”সবাই গোল্লার পিছনে দৌড়াযাচ্ছে।একজন দুইজন পাশ কাটিয়ে গোল্লা ছুটেই চলছে।গোল্লা অন্য প্রান্তে যাওয়ার সময় এতো বেশি দৌড় দিয়েছিল যে দাড়োগা বাড়ির পূ্র্বদিকের রাস্তার ধারের বেড়া ভেঙ্গে বেড়া সহ রাস্তায় পড়ে গেল।
রৌদ্দউজ্জ্বল দিন যেন কালো মেঘে ডেকে গেল।দারোগাবাড়িতে যেন কোনো কোলাহল নেই।নিস্তব্ধতা চারদিকে।সবাই ডরে খেলা বাকি রেখে চলে যেতে শুরু করল।
অর্জুন,মেঘবালক দাড়া।তর কি হয়েছে মন খারাপ কেন?
দুর বেটা আজকে ত খেলতেই পারলাম না।তার মধ্যে বেড়াটা ও ভেঙ্গে গেল।
সবাই ত চলে গেল।এই বেড়া যদি এমনে পড়ে থাকে তাহলে দারোগা বাড়িতে আর খেলতে দিবে না।চল তুই,নিলয় আর আমি মিলে ঠিক করে দেই।
দারোগা বাড়িতে কোনো এক আত্মীয় থাকতো।নাম ছিল পলাশ।বাড়ির বারান্দায় তাকে দেখা গেল।তাই দ্রুত আমরা কাজে লেগে পড়লাম।বাড়ির দিক দিয়ে মেঘবালক আর নিয়ল ও অর্জুন
রাস্তার দিক থেকে বেড়া উঠালো।তারপরে ইট ও ছিড়ে যাওয়া দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেধে দিল সবাই।

সকাল বেলা।আজকে স্কুল বন্ধ।রাস্তায় ছেলেমেয়েরা হই হুল্লোর করছে।
তারা সবাই বান্দরের ফুল টোকাটে ব্যস্ত।দারোগাবাড়ির পূর্বদিকে বেড়ার পাশে একটি বড় আম গাছ আছে।আম গাছে এই বান্দরের ফুলগুলো ফুটেছে।আসলে এই ফুলগুলো মূলত ধাইরা ফুল।যেগুলো নভেম্বর ডিসেম্বরের দিকে আম গাছটার কিছু ডাল জুড়ে ছড়িয়ে আছে।একপ্রকারের পরজীবী গাছের ফুল।তবে তাদের উচ্ছাস আনন্দের শেষ নেই।

সবাই পলাশ ভাইকে খুব ভয় করে।মাঝে মধ্যে তিনি এমন ধমক সুরে কথা বলে যেটা এলাকার ছেলেমেয়েরা পছন্দ করে না।তাই কামনা করে এই দারোগা বাড়ি থেকে পলাশ ভাই চলে গেলে বাচি।
বাড়ির দক্ষিণে পুকুরপাড়ের পাশে একটা বরই গাছ আছে।বরুই ফুল দেখা যাচ্ছে।গতবারের ঘটনা,এই বরইগাছের বরুই অর্ধ-পাকা অবস্হায় মানুষ ত দুরের কথা কোনো পশু পাখি ও ছুয়ে দেখবে না।
রবই গুলো কাঁচা বা অর্ধ-পাকা অবস্হায় খাওয়ার সময় গলায় আটকে যায়।তবে পাকা বরই খেতে নেহাত মন্দ নয়।গাছের তলায় তেমন বরই দেখা যায় না।কারণ সব বরই গাছ থেকে সোজা পুকুরের পানিতে পড়ে।

অর্জুন,নিলয় ও আমাকে বলল দেখ পানিতে অনেকগুলো পাকনা বরই ভাসতেছে।চল তুলে আনি।পাকলে এই গাছের বরই গুলো মজা হয়।
আমি পুকুরপাড়ে কিছু লাঠি দেখতে পেয়ে একটা নিয়ে আসলাম।
আমি বললাম আমাকে নিলয় ধরবি।বরই গাছের শিকরে পা রেখে
লাঠি দিয়ে দুই-তিনটা বরই পাড়ের দিকে আনলাম।নিলয় একটা খালি চিপসের প্যাকেটে নিল।

আরো কিছু বরই দেখা যাচ্ছে পুকুরের কিছুটা মাঝামাঝি।বললাম অর্জুন তুই শক্ত করে আমার বা হাত ধরবি।ডান হাতে লাঠি দিয়ে
আমি বাকিবরই গুলোকে পাড়ের দিকে ঠেলে দেমু।

দর হাত অর্জুন।একটু সামনের দিকে আয়।আরেকটু,,,
এ সময়ে নিয়ল একটা ইট মারল পানিতে। ইট বরইগুলোর সামনে পড়াতে আরো পেছনে চলে গেল বরইগুলো।
নিয়ল কি করলি এইডা,,তরে কইসে ইটা দিতি বেটা।
এদিকে একজন এসে বলল,অর্জুন তর মা ডাকছে।অর্জুন কে বললাম চলে গেলে প্যাকেট টা রেখে যা।
অর্জুন,আমি গেলাম।আমার জন্য রাখিস।একা একা খাইস না।
তারপরে আবারো শুরু আমাদের চেষ্টা,
একটু পা বাড়া অর্জুন আরেকটু হলে বরইগুলো আসবে।
আরেকটু পা বাড়া,,আরেকটু,,,

এভাবে আরেকটু আরেকটু করতে করতে দুইজনেই পানিতে পড়ে গেলাম।অর্জুন,উঠ বেটা পানি ঠান্ডা লাগছে।আমি ত উঠলাম।
দাড়া ভিজে যেহেতু গিয়েছি বরুই নিয়ে যাবো।

এদিকে পুকুরপাড়ে দারোগা বাড়ির দাদি আসল।বলল,কেরে পানিতে।
দাদি আমরা।তরা কি করস,
দাদি বরই।কতগুলো পাইসত?
প্যাকেটে।পরে দেখে কিছুটা বকে কইল এই ঠান্ডা পানিতে কি করস যা বাড়িত যা।পরে বরই প্যাকেট নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

মো. রিমেল

Author: মো. রিমেল

আমি মো.রিমেল সাম্প্রতিক ও সাহিত্য বিষয়ক বিভিন্ন লেখালেখি করে থাকি।কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

প্রতি দান

রাতে থেকে বৃষ্টি হচ্ছিলো, কিছুক্ষণ,বৃষ্টি থেমেছে সবে। সকাল কখন হয়েছে চম্পা জানে না। চম্পা শুনেছে, ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র

অ্যাথেনার অলৌকিক হার্প

অনেক অনেক বছর আগে, প্রাচীন গ্রিসের এক ছোট্ট গ্রামে বাস করত এক কিশোরী মেয়ে—নাইরা। সে দরিদ্র ছিল, কিন্তু তার গলায়

নীলচোখা জলপরী

শঙ্খনদী গ্রামের সকাল সবসময় সমুদ্রের শব্দ দিয়ে শুরু হয়। মাটির ঘরগুলোর চালের ফাঁক দিয়ে বাতাস ঢোকে, আর বাতাসের সাথে ভেসে

সময়ের দরজা

মেঘে ঢাকা এক বিকেল। পুরান ঢাকার সরু গলির ভেতরে, ধুলো ধরা এক প্রাচীন বইয়ের দোকানে ঢুকল আরসোহা। ইতিহাসের ছাত্রী সে,

Leave a Reply