ঝিরঝির বৃষ্টিতে এক জোড়া সাদা কদম ফুলকে ভিজতে দেখে মাহতাবের মুনিয়ার কথা মনে পড়ে গেল। বৃষ্টিতে কদমফুল জোড়া দেখতে কত যে সুন্দর লাগছে। যদি ওরা কথা বলতে পারতো তাহলে হয়তো রিমঝিম বৃষ্টি ও হালকা বাতাসের দোলায় ওদের মনের চমৎকার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারত। মাহাতাব মনে মনে বিড়বিড় করতে শুরু করল।… আজ মুনিয়াকে পেলে কদমফুল জোড়ার মত আমাদের মনেও আনন্দের ঢেউ খেলতো। মুনিয়া, আমার একমাত্র স্ত্রী। চাকরির কারণে আজ আমি কত দূরে! শুক্রবার ছুটির দিন। কিন্তু কিছুই করার নেই। রিমঝিম বৃষ্টিতে আজ বাড়িতে থাকলে মুনিয়া সকাল হতে হতেই এক কাপ চা হাতে ধরিয়ে দিয়ে একগাল হেসে জিজ্ঞাসা করতো,
ওগো প্রিয়! আজ খিচুড়ি রান্না করি?
আর সঙ্গে সঙ্গেই আমি বলে উঠতাম,
:এমন বাদলও দিনে তোমার হাতের রান্না খিচুড়ি ছাড়া কি আর চলে? বৃষ্টি আর খিচুড়ি পারফেক্ট কম্বিনেশন।
একথা বলতে বলতে বেলকনিতে যত্ন করে লাগানো আমার প্রিয় বেলিগাছ থেকে একগুচ্ছ বেলি ফুল এনে মুনিয়ার মাথায় গেঁথে দিতাম। আর বলতাম,
:আমার প্রিয় বেলিফুল খোপায় পড়ে আমার সঙ্গে আজীবন থেকো। মুনিয়া অমনি মুখের ভঙ্গিমা পরিবর্তন করে বলতো,
হয়েছে! হয়েছে! এখন বেলি ফুলের যে রান্নাঘরে যেতে হবে।
বলেই পালিয়ে যেতো। বড্ড লাজুক মুনিয়া। দূরে থেকেও আমার ভাবনা চিন্তা পুরোটা জুড়ে শুধুই ও। স্ত্রীরা আল্লাহ তায়ালার অন্যতম বড় নিয়ামত। সে নিয়ামত কাছে না থাকলে তার অনুপস্থিতি বড্ড টের পাওয়া যায়।
আবার কবে যে বড় একটা ছুটি আসবে! তখন ছাদে আবার দুজন একসাথে ভিজবো। কদমফুল জোড়ার মতো তখন আমাদের মনেও আনন্দের ঢেউ বইবে!
মাহতাব ভাই! এইযে মাহতাব ভাই! কোথায় হারিয়ে গেলেন। হঠাৎই মেসের ছোটভাই হাসিবের ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল মাহতাবের।
:কি আবার ভাবীর কথা ভাবছেন!
মাহতাব লজ্জায় পড়ে গেল! কথা ঘুরিয়ে বলল,
: কি বলবি বল?
:আজ কিন্তু বুয়া আসবে না। অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
: এ আর নতুন কি? তোর ভাবী থাকলে কি আর এতো কষ্ট করা লাগতো? বলতে বলতে মাহতাব আবার ভাবনায় পড়ে গেল।
হাসিব এবার আর তার ভাবনায় বাধা দিল না। এমন বৃষ্টির দিনে কেউ কি তার সঙ্গীকে ভুলে থাকতে পারে?
সবুজ পাতার ফাঁকে হালকা বাতাসে দুলতে থাকা কদম জোড়া বার বার উঁকি দিচ্ছিল। নীরবে নিভৃতে তারাও অনেকের ভালোবাসার রিমাইন্ডার!
ভালো লিখেছেন কবি
ধন্যবাদ