গল্প
মিথ্যে অপবাদ
আফছানা খানম অথৈ
ভালোবেসে বিয়ে করেছেন রাকিব ও মুনিয়া।মুনিয়ার বাবা মা এ বিয়ে মেনে না নিলেও রাকিবের বাবা মা পুত্রবধুকে সাদরে বরন করে নিয়েছেন।ভালোই কাটছে তাদের দিনকাল।কিছুদিন মা-বাবার সঙ্গে তাকার পর রাকিব বউকে নিয়ে তার গন্তব্যস্থানে ফিরে গেল।
বেশ ভালোই আছে তারা।খাচ্ছে দাচ্ছে ঘুমাচ্ছে আমোদ ফুর্তি করছে।মাঝে মাঝ বিভিন্ন জাগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।ভালোবাসা যেন তাদের মাঝে উপছে পড়ছে।
কিন্তু কিছুকিছু মা-বাবা সন্তানের ভালো চান না।সন্তান সুখে থাক এটা তাদের সহ্য হয় না।মুনিয়ার মা-বাবা ও তাই চান। মুনিয়াকে কিভাবে আলাদা করা যায় এই নিয়ে প্ল্যান করে।একদিন খবর পাঠাই তার মা খুব অসুস্থ,মেয়েকে দেখতে চাই।
মা অসুস্থ মেয়ে কি না এসে পারে?মুনিয়া খুব দ্রুতগতিতে মাকে দেখার জন্য ছুটে আসল।কিন্তু সে কী!
মা অসুস্থার ভান করে শুয়ে আছেন? এই সত্যটা প্রকাশ হওয়ার পর মুনিয়া স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চাইলে,মা কড়াকড়িভাবে নিষেধ করেন।শুধু তাই নয় মুনিয়াকে বলে রাকিবকে ডিভোর্স দিতে। মুনিয়া কিছুতেই রাজী হয় না।তাকে শারীরিক ও মানসিক টর্চার করে,বন্দী করে রাখা হয়।
এদিকে রাকিব মুনিয়ার কাছে ফোন করে তাকে পায়না।মুনিয়ার ফোন বন্ধ।শ্বশুর বাড়ির কোনো খবরাখবর সে পাচ্ছে না।সে মুনিয়ার চিন্তায় অস্থির।হঠাৎ তার শ্বাশুড়ি ফোন করে বলে,
রাকিব তুমি আমার মেয়েকে ডিভোর্স দাও?
কেনো মা?
এত প্রশ্ন না করে যা বলেছি,তাই কর।
জ্বি না মা,আমি কখনো মুনিয়াকে ডিভোর্স দেবনা।
কেনো দেবে না?
আমি মুনিয়াকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি।আমি কখনো তাকে ডিভোর্স দেব না।
না দিলে আমি তোমার নামে নারী নির্যাতনের মামলা দেব।
তবুও আমি মুনিয়াকে ডিভোর্স দেব না।
এমনিভাবে দুজনের মাঝে অনেক কথাকাটাকাটি হয়।রাকিব কিছুতেই মুনিয়াকে ডিভোর্স দিতে রাজী হয় না।
এদিকে মুনিয়া বন্দিঘরে আবদ্ধ।কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না।সে বের হওয়ার সুযোগ খুঁজছে।কেঁদে কেঁদে বহুবার মায়ের কাছে মুক্তি চাইছে।মায়ের এককথা,
রাকিবকে ডিভোর্স দিলে বের হতে পারবি।এর ব্যতিরেকে নয়।
গভীররাত সবাই ঘুমাচ্ছে।কাজের মেয়ে তাকে পাহারা দিচ্ছে যাতে সে বের হতে না পারে।সে তাকে কাকুতি মিনতি করে বলার পর সে তাকে বের হতে দিলো। এই সুযোগে সে বেরিয়ে গেল।দ্রুত স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করলো।
স্বামী তাকে পেয়ে খুব খুশি।বউকে সাদরে বরন করে নিলো।
এরই মধ্যে রাকিবের প্রমোশন হলো।চাকরীর পদোন্নতি হলো।কেনো জানি সে অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠল।অফিসের এক নারী কলিগের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল।আগেরমতো বউকে সময় দিতে পারে না।এমন কি বাজার সদাই পর্যন্ত করার সময় তার হয়ে উঠে না।এই নিয়ে বউয়ের সাথে মাঝেমাঝে কথাকাটাকাটি হয়,আবার মিট হয়।
এভাবে আর কতোদিন, একদিন সে তার মাকে এসব কথা বলে।মা পেয়েছে একটা সুযোগ এবার মেয়েকে বলছে চলে যাওয়ার জন্য।শুধু তাই নয় জামাইকে অনেক হামকি ধুমকি দেয়।জেল হাজতের ভয় দেখায়।
রাকিব রাগে আগুন হয়ে বাসায় ফিরে।তারপর এসব বিষয় নিয়ে বউয়ের সঙ্গে কথাকাটাকাটি করে।দুজনের রাগের মাত্রা চরম লেভেলে উঠে যায়।রাকিব এক সময় মুনিয়ার গায়ে হাত তোলে।মুনিয়া সহ্য করতে না পেরে মায়ের কাছে ছুটে যাই।
এদিকে রাকিব তার অফিসের কলিগ চম্পাকে নিয়ে সময় কাটায়, হোটেল রেস্টুরেন্ট বিভিন্ন জাগায় ঘুরাফেরা কর।এক সময় সে তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে,এবং তাকে ভালোবেসে ফেলে।বউয়ের এখন আর তেমন প্রয়োজন অনুভব করে না।
এদিকে মুনিয়ার বাবা-মা বিচার ডাকেন।রাকিব তার বড় ভাইকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়।মুনিয়া অভিযোগ তুলে তার অফিসের কলিগের সাথে তার সম্পর্ক।তাই তাকে আগের মতো ভালোবাসে না।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রাকিব বলে,
সব মুনিয়ার মিথ্যে বানোয়াট গল্প।আমার কারো সাথে রিলেশন নেই।বরং মুনিয়ার রিলেশন আছে।সে আমার অবর্তমানে অন্যজনের সাথে সম্পর্ক করে।শুধু তাই নয় মুনিয়ার পেটে তার বাচ্চা ছিলো যা সে কিছুদিন আগে নষ্ট করে ফেলে।আমি এর বিচার চাই?
রাকিবের মুখে এমন বানোয়াট গল্প শুনে মুনিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।সে রাগে আগুন হয়ে বলে,
কী বললে তুমি! আমি পরকীয়া করি,বাচ্চা নষ্ট করেছি?
হুম করেছ।
তুমি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বল,যা বলেছ সব সত্যি কি না?
হ্যাঁ সব সত্যি।
ঠিক আছে।তুমি যখন আমাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়েছে।তখন আমি ও চাপচাপ জানিয়ে দিচ্ছি,আমি তোমার মতো একজন মিথ্যাবাদীর সঙ্গে আর সংসার করব না।আমি তোমাকে ডিভোর্স দেব।
ঠিক আছে তাই দাও।
কথা মোতাবেক কাজ হলো।রাকিব মুনিয়ার সত্যি ডিভোর্স হয়ে গেল।
রাকিব খুশিমনে ফিরে এলো চম্পার কাছে।তারপর তার কাছে সব সত্য প্রকাশ করলো।এবং বিয়ের প্রস্তাব দিলো।
চম্পা চমকে উঠে বলল,
রাকিব তুমি আমার কলিগ।সেই হিসাবে আমি তোমার সাথে সময় কাটিয়েছি,আড্ডা দিয়েছি,গল্প করেছি।কিন্তু তুমি এসব কী বলছ?
চম্পা আমি সিরিয়াস, সত্যিই তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
রাকিব ভাই একথা আর মুখ দিয়ে উচ্চারণ করবেন না।
কেনো কোনো সমস্যা?
হ্যাঁ অনেক সমস্যা।আমি বিবাহিতা,আমার দুছেলে মেয়ে।তাছাড়া আমি একজন কলিগ হিসাবে আপনাকে দেখি আর কিছু না।
বলো কী?
হুম যা সত্যি তাই বলেছি।আপনারা পুরুষেরা বোকা এবং লোভী। মেয়ে মানুষ দেখলে তাকে কাছে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন।তার সমন্ধ্যে ভালোমতো যাছাই বাছাই করেন না।সে সিঙ্গেল কি না?তার রিলেশন আছে কি না ?ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব যাছাই না করে বিয়ে বা প্রেম করার কারণে আপনারা প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এরপর সবদোষ দেখান মেয়েদের।আসলে আপনারা তো খারাপ মেয়ের পাল্লায় পড়েন বেশি।যার কারণে সব সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।একটা কথা মনে রাখবেন ভালো মেয়েরা কখনো পরকীয়া করেনা।বিবাহিতা পুরুষের সাথে রিলেশন করেনা।আজকের পর থেকে একটা কথা মনে রাখবেন,যেসব মেয়েরা স্বামী থাকা সত্বে পরকীয়া করে অথবা সেসব পুরুষেরা স্ত্রী থাকা সত্বেও পরকীয়া করে তারা আর যাই হোক কখনো ভালো মানুষ হতে পারেনা।
আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে চরম অন্যায় করেছেন।সতীসাধী স্ত্রীকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছেন।আপনার স্ত্রী আপনাকে খুব ভালোবাসত।আপনার জন্য পরিবারের লোকজন তাকে ত্যাজ্য করেছে।তবুও সে শুধু আপনাকে ভালোবেসেছে।আর আপনি কিনা সেই স্ত্রীকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছেন।।আপনি আর যাই হোক ভালো মানুষের কাতারে পড়েন না।আপনি চিট,প্রতারক, মিথ্যাবাদী। আপনার সাজা হওয়া দরকার।আমি কেনো? কোনো নারী আর আপনাকে বিশ্বাস করবে না।
মুনিয়া আপনি ঠিক বলেছেন।আমি বিরাট ভুল করেছি।যে স্ত্রী আমার জন্য পরিবারের সবার সাথে সম্পর্ক চিন্ন করেছে, আমি তাকে “মিথ্যে অপবাদ” দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি।আমি সবার উদ্দেশ্য বলব,তোমরা কেউ আমার মতো ভুল করোনা। স্ত্রীকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেস।বিশ্বাস করো যত্ন করো।কখনো মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দিওনা।কখনো পরনারীর দিকে কুদৃষ্টিতে তাকিওনা।পরকীয়া করো না।তাহলে আমার মতো ফল ভোগ করবে।আজ আমি একটা সত্য কথা বলি, আমার স্ত্রী ছিল খুব ভালো।ওর মতো স্ত্রী পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।কিন্তু আমি আমার ভুলের কারণে তাকে হারিয়েছি।আমি কিন্তু এখনো তাকে ভালোবাসি।সারাজীবন ভালোবেসে যাব।যার জাগায় আর কোনো নারীকে বসাতে পারবো না।আমি সারাজীবন আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে যাব।আমি যে ভুল করেছি তা ক্ষমারযোগ্য নয়।
ঃসমাপ্তঃ