(৯)
প্রায় এক সপ্তাহ ইনস্টিটিউটে যাই না। মনের সাথে যুদ্ধ করে এই সিদ্ধান্তে পৌছি, যা হলো এই, আমি এমন কোন আচরণ করব না, এমন কোন কথা বলবো না কাউকে, এমন কোন ভাব করবো না যাতে কেউ আমাকে অনিকের সাথে জড়িয়ে কিছু বলতে পারে।
আর বললেই বা কি? যে যাই বলুক অনিকের সাথে পরিচয়ের আগে আমি যেরকম ছিলাম এখনো সে রকম আছি এই মনোভাবে থাকার চেষ্টা করবো।
কেন যে অনিকের সাথে আমার পরিচয় হল? আমার জীবনটা উল্টাপাল্টা করে দিল!
আজ ইনস্টিটিউটে যাবো গিয়ে স্যারদের বলে আসবো আর ইনস্টিটিউটে আসতে পারবো না। ক্লাস টেস্ট এক্সেম দিয়েছি। অনেক ইমপ্রুভ হয়েছে। কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের স্যার বলেছিলেন আর যা শিখার রয়েছে ওইগুলো বাসায় প্রাকটিস করলে শিখা হয়ে যাবে। কলেজে ভর্তি হব এর জন্য প্রিপারেশান নিতে।
গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রিক্সার অপেক্ষা করছি ভাগ্য ভালো চার পাঁচ মিনিট অপেক্ষার পর রিক্সা পেয়ে গেছি। রিক্সা নিয়ে এসেছিলেন একজন প্রতিবেশি। দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি রিক্সা থেকে নেমে রিক্সা দিয়ে দেন। সামনেই উনার বাসা হেঁটেই যেতে পারবেন বাকি পথ। প্রতিবেশিকে ধন্যবাদ জানিয়ে উঠে পড়ি রিক্সায়। ড্রাইভার চললো সামনে এগিয়ে। গলির মোড়ে আসতেই দেখি নিহাকে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে যেখানে নিথর দাঁড়িয়ে থাকতো। নিহা অনিকের চাচাতো বোন।
এই নিহা, কোথায় যাবি?
ইনস্টিটিউটে যাব, তুই কোথায় যাচ্ছিস?
আমিও যাবো। এসো একসাথে যাই?
নিহা এসে রিক্সায় উঠলে ড্রাইভারকে
উদ্দেশ্য করে বলি- চলেন ড্রাইভার সাহেব!
কিছুসময় নিরব থেকে নিহা শুরু করে-গত পরশু ইনস্টিটিউটে গিয়েছিলাম, শুনলাম তুই এক সপ্তাহ ধরে যাসনি, কেন?
কূলাউড়ার খালামনি এসেছিলেন। অনেকদিন পর খালামনিকে পেয়ে যেতে ভালো লাগেনি।
শুধু খালামনি? আর খালাতো ভাই-টাই আসেনি? বলেই নিহা উচ্ছ হাসি দেয়।
আমি ও একটু হেসে বলি- আমার চার বছরের ছোট একটা ভাই এসেছে, নাম রাহি। আর এক জন বউ নিয়ে বিদেশে থাকেন।
ও আচ্ছা, তা যাক বাবা অনিক ভাইয়া বাঁচলেন!
অনিক ভাইয়া বাঁচলেন মানে?
না কিছু না এমনি বললাম। আচ্ছা শুন, সেদিন অনিক ভাইয়া তর রেজাল্টের কথা আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন।
কোনদিন?
যেদিন ইনস্টিটিউটে মিষ্টি নিয়ে যাস। তুই আসার একটু পর অনিক ভাইয়া গিয়েছিলেন। আমরা ইংলিশ ক্লাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম হঠাৎ দেখি ভাইয়াকে।
তারপর?
তারপর আর কি আমাদের ক্লাস রুমে এলেন কুশল বিনিময় করলেন। সবার রেজাল্টের খবর জানলেন। special ভাবে তর রেজাল্টের খবর জানতে চাইলেন।
এরপর?
আরো বললেন অধরা আজ আসেনি? আমরা বললাম এসেছিল তার ক্লাস শেষ চলে গেছে।
আর কিছু?
হ্যাঁ আর বললেন অধরা কোন দিন আসবে ইনস্টিটিউটে? আমরা বললাম আল্লাহ ভালো জানেন!
তারপর?
আমি আগ্ৰহ নিয়ে একটার পর একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছি, কারণ নিহার মুখে কথা শুনতে বেশ লাগছে।
নিহা যেভাবে কখনও চুখ বড় করে কখনও বা ছোট করে কখনও ঠোঁট বাকিয়ে কথা বলছে আমি বেশ ইনজয় করছি।
তারপর কি আর বলার আছে, বেচারা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। এই বলে নিহা লম্বা শ্বাস ছাড়লো।
বেচারার কষ্ট দেখে তর কি খুব কষ্ট হয়রে।
(একটু মুচকি হেসে)
হ্যাঁ হয়, তর হয় না?
না আমার হয় না, তুই এক কাজ কর অনিক ভাইয়ার গলায় ঝুলে পড়, তাহলে আর দূরে থেকে কষ্ট পেতে হবে না । পাশে থেকে কষ্ট শেয়ার করে নেবে।
সে অন্য একজনকে মন দিয়ে বসে আছে। আমার সাথে কি আর শেয়ার করবে?
একবার চেষ্টা করে দেখ না? আর সে অন্য একজন কে মন দিয়ে বসে আছে সে কথা কি সে তকে বলেছে?
কাউকে মন দিয়েছে সে রকম কিছু বলেনি, তবে ভাবে বুঝা যায় তাই আমি চেষ্টা করতে যাবো না বাবা।
এতক্ষণে রিক্সা ইনস্টিটিউটে চলে এসেছে। আর কথা না বাড়িয়ে ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ি দুজন।
প্রথমে দুজনে কম্পিউটারের ক্লাস করি। এরপর নিহা ইংরেজী ক্লাস করার জন্য অন্যরুমে চলে যায়।
আমার ক্লাস শেষ অফিস রুমে গিয়ে স্যারদের সাথে কথা বলে বিদায় নিয়ে চলে আসি। নিচে নেমে আসছি দ্বিতীয় তলায় আসতেই অনিকের সাথে দেখা। থমকে দাঁড়াই একপাশে গিয়ে। অনেক দিন পর দেখা তাই অনিক উৎকন্ঠা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে- অধরা তুমি? কেমন আছ? এক সপ্তাহ ইনস্টিটিউটে আসনি কেন?
আমি তখনও নিরব!
তুমি কথা বলছো না কেন?
আমি কোন কথা বলতে পারছি না, অপলক চোখে নিচের সিঁড়ির দিকে চেয়ে আছি।
অনিক আবার বলছে-তুমি এখনি বাসায় যাচ্ছ?
এবার চোখ তুলে অনিকের মুখের দিকে চেয়ে ছোট একটা উত্তর দিলাম- হ্যাঁ।
এরপর ধীরে ধীরে এক পা এক পা করে সিঁড়ি ফেলে নিচে নেমে এলাম। একটা রিক্সা ডেকে রিক্সায় উঠে পিছন ফিরে তাকিয়েছিলাম তখনো অনিক রাস্তার দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ভালো লিখেছেন কবি