“আমি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি”-এধরনের কথা সচরাচর শোনা যায়। কিন্তু অনেক সময় শব্দটার গুরুত্ব না বুঝেই তা বলে ফেলে অনেকে।উদ্যোক্তারা মূলত মেধা,শ্রম এবং কোন বিষয় নিয়ে লেগে থাকার মানসিকতা নিয়ে নিজের মত করে ব্যবসা দাঁড় করায় যা অন্যের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে।
উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন যতটা মনে স্পৃহা জাগায় ততটাই পরিশ্রম করে সেই স্বপ্ন আগলে রেখে এগোতে হয়। যেখানে উদ্যোক্তা হওয়াই অনেক ঝুঁকিপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত সেখানে নারীদের মধ্য থেকে কারো সফল উদ্যোক্তা হওয়ার দৃষ্টান্ত সত্যিই মনোমুগ্ধকর বিষয়। এমনই এক দৃঢ়চেতা নারীর সফলতার গল্প তুলে ধরতে চাই।
মানুষ স্বপ্নীল না হলে কখনো উদ্যোক্তা হতে পারে না, আমাদের সাহিদা বেগমও এক পেঁয়াজ চাষির কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই শুরু করেছিলেন তার চাষাবাদ। তিনি নিজেও স্বীকার করেন যে পেঁয়াজের বীজ চাষ অত্যন্ত কষ্টসাধ্য কাজ কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি এবং হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর কৃষক। তিনি নওগাঁ,পাবনা এবং সিরাজগঞ্জ এলাকার প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক নিয়ে তার কাজ সম্পন্ন করে থাকেন।বিএডিসির(ফরিদপুর কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন)শীর্ষ পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী কৃষকদের তালিকার তিনি একজন।
কেবল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তিনি ক্ষান্ত হননি বরং তিনি তার কৃষি শ্রমিকদের জন্য নিজ হাতে রান্না করেন।
তেমন কোনো স্বপ্ন নিয়ে পথচলা শুরু না হলেও শ্বশুরবাড়ি এসে গৃহস্থালি কাজ শিখতে থাকেন। ধীরে ধীরে কৃষি কাজের আগ্রহ আসার পর কাজটা কঠিন মনে হলেও তিনি তা চালিয়ে গেছেন এবং তার স্বামী সব সময় তাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। ২০ শতাংশ জমি থেকে উৎপাদন শুরু হলেও তা ২৪ একর জমি পর্যন্ত গিয়েছে এবং আগামী বছর তিনি ৩৫ একর জমিতে চাষ করতে চান।
একনিষ্ঠ ভাবে কাজে লেগে থাকার কারণে তার আয় বছরে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু হলেও তা ক্রমাগত বেড়েছে এবং এ বছর তা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি টাকায়! অবিশ্বাস্য হলেও তার “খান বীজ” নামক মোড়কজাত পেঁয়াজ বীজের চাহিদা পাবনা, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ,গোপালগঞ্জ ,নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জে ব্যাপক।
করোনাকালীন সময় তিনি তাঁর কিছু শ্রমিক হারিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন তবে তার এলাকার কিছু কর্মহীন হয়ে যাওয়া নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়ে তার কাজ সামলে নিয়েছেন।এমনকি তার এলাকার অনেকেই এখন বেকারত্ব ঘোচাতে তার দেখাদেখি পেঁয়াজের বীজ চাষ নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে এবং সাফল্য পাচ্ছে।
সাহিদা বেগমের এমন সাফল্য সত্যিই অভূতপূর্ব এবং প্রশংসনীয়! তাদের মত সাহসী উদ্যোক্তারা আমাদের মত সাধারণ মানুষের জন্য গর্ব এবং অনুপ্রেরণার উৎস।
সাহিদা বেগমদের মতো মানুষদের দেখলেই বোঝা যায়- হাল না ছাড়াই সাফল্যের মূলমন্ত্র। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে, তারা হারার আগে হারে না(ক্রিকেটে ওরাই সবচেয়ে সফল)। একজন উদ্যোক্তার প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে যেকোন বাধাই হার মানতে বাধ্য। এরকম উদাহরণ সব উদ্যোক্তাকেই অনুপ্রাণিত করে।
আপনাকে ধন্যবাদ, লেখাটির জন্য।
অসাধারণ লেখা!
ভালো লিখেছেন কবি