অণুগল্প : নীল দরিয়া । লেখিকা : সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি

0

 

ছোট্ট অন্বেষ স্কুলের মাঠে একা একা বসে ছিলো। হঠাৎ তার নজরে শহুরে বালক শুভ্র এলো। তার সাজসজ্জা অন্বেষকে ভাবঘুরে বানিয়ে তুললো। সাময়িক পর কিছু একটা ভেবে অন্বেষ শুভ্রর কাছে গিয়ে নিজের ইচ্ছে প্রকাশ করতে লাগলো।

❝বলি সন্ধি করবে আমার সাথে?
লাভ বৈকি হবে না ক্ষতি
কেন জানো?
তবে শুনো বলি-

নিত্যনতুন খেলবো দুজন❞

শুভ্র তব পেল না আগ্রহ। তাই তো উল্টো ঘুরে পা বাড়ালো। তখন আবার অন্বেষ বাবু কমড়ে দুই হাত রেখে পথ আটকে রুখে দাঁড়ালো।

❝আরে আরে শুনো আরো
পরেই তুমি যেতে পারো।❞

ছোট্ট শুভ্র তবুও বললো না কথা। তবে থেমে ঠিকই নিরবে অন্বেষকে কথা বলার অনুমতি দিলো। আর অন্বেষ বাবু এই সুযোগটা লুফে নিলো।

❝আম কুড়োবো ঝড়ের মাঝে
ভাগাভাগি করবো দুজন
শর্ষে আর নূন টি মেখে

কথার ছলে নানা রকম
দুষ্টুমিতে মাতবো দুজন
চাদের সঙ্গে কইবো কথা
গুনবো তারা আচ্ছা মতোন

ফল কুড়োবো বাগান থেকে
মাঝেমধ্যে করবো চুরি
রহিম চাচা দেখবে যখন
পালাবো দুজন হাতটা ধরি

বলি বন্ধু হবে তুমি আমার?❞

শুভ্র এখনো চুপ। তা দেখে আমাদের ছোট্ট অন্বেষ বাবু নিজের কপাল চাপড়ালো। তারপর আবার বলতে লাগলো-

❝দেখবো স্বপন দুজন মিলে
হারাবো আমরা তার’ই ভীরে
ফুলের সাথে করবো মোরা
আলিঙ্গনের চুক্তি খানা

বলি আরো শুনবে?
শুনো তবে-

অজানাকে জানতে হলে
পা মিলিয়ে পা চালাবো
ইস্কুলের ওই গন্ডিটাতে
মাঝেমধ্যে হাতের লেখা
ভুলে আমরা যাবো মেলা

রাতে যখন ফিরবো বাসায়
জ্বর উঠবে মনে আমার
নতুন ফন্দি আটবো তখন
তুমি আমি দুজন মিলে।❞

আমাদের ছোট্ট শুভ্রও কিন্তু কম নয়। মুখের উপর বলে দিলো,❝ফাকিবাজ।❞
আর তা শুনেই অন্বেষ বাবুর মনে জেদ চাপলো। সন্ধি তো সে করবেই। তাই সে আবার শুরু করলো

❝আগে শুনো বাপু
তারপরে কথা বলো
হ্যাঁ যা বলছিলাম!

মাষ্টার মশাইয়ের মার থেকে
পালাবো আবার দুজন মিলে
ছুটবো আমরা হন্ন হয়ে
নীল দরিয়ায় পৌছে যেতে।

জানো সেথা আছে কি কি?
শুনে মুগ্ধ হবে তুমি
সেথায় আছে দুটো আকাশ
ভাবো, কি চমৎকার!❞

এবার ছোট্ট শুভ্র কিছুটা ভাবুক স্বরে জিজ্ঞেস করলো,❝দুটো আকাশ?❞
আর তা দেখে অন্বেষ বাবু বিজয়ের হাসি হাসলো।

❝হ্যাঁ দুটো আকাশ।
একটা আছে মাথার উপর
যা আমরা সবাই দেখি
দ্বিতীয়টা নদীর জলে
আকাশের ওই প্রতিচ্ছবি।

আরো আছে অনেক কিছু
ফুলের বাহার, প্রজাপতি
সৌন্দর্য্যে ভরপুর বিস্তৃত সেই জায়গা খানি। ❞

ছোট্ট শুভ্র এবার জানতে চাইলো,❝কোথায় সেথা?❞

❝যদি সেথা যেতে চাও
তবে সন্ধির হাত বাড়াও।❞

শুভ্র এবার হাত বাড়িয়ে বললো,❝চল তবে।❞
আর তা দেখে অন্বেষ বাবুও হাত মিলালো। আর দুজন দুজনের হাত ধরে চলতে লাগলো বর্ননাকৃত সৌন্দর্য্যে ঘেরা সেই নীল দরিয়ার উদ্দেশ্যে।

~সমাপ্ত


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Sumaiya Akter Bristy

Author: Sumaiya Akter Bristy

❝শুভ্রচিন্তার উদ্ভব ঘটে যার কথা ভেবে সে যদি মোহ হয় দোষ বা কি তাতে?❞ ~Sumaiya Akter Bristy

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

প্রতি দান

রাতে থেকে বৃষ্টি হচ্ছিলো, কিছুক্ষণ,বৃষ্টি থেমেছে সবে। সকাল কখন হয়েছে চম্পা জানে না। চম্পা শুনেছে, ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র

অ্যাথেনার অলৌকিক হার্প

অনেক অনেক বছর আগে, প্রাচীন গ্রিসের এক ছোট্ট গ্রামে বাস করত এক কিশোরী মেয়ে—নাইরা। সে দরিদ্র ছিল, কিন্তু তার গলায়

নীলচোখা জলপরী

শঙ্খনদী গ্রামের সকাল সবসময় সমুদ্রের শব্দ দিয়ে শুরু হয়। মাটির ঘরগুলোর চালের ফাঁক দিয়ে বাতাস ঢোকে, আর বাতাসের সাথে ভেসে

সময়ের দরজা

মেঘে ঢাকা এক বিকেল। পুরান ঢাকার সরু গলির ভেতরে, ধুলো ধরা এক প্রাচীন বইয়ের দোকানে ঢুকল আরসোহা। ইতিহাসের ছাত্রী সে,

4 Replies to “অণুগল্প : নীল দরিয়া । লেখিকা : সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি”

Leave a Reply