অদ্ভুত বন্টন

0

                                               অদ্ভুত বন্টন

 

এক গ্রাম্য লোক শহরে একজনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেL শহরে ব্যক্তিটি গ্রাম ব্যক্তিকে আন্তরিকতার সঙ্গে সমাদর করে বাড়িতে স্বাগত জানালেন। গ্রাম্য লোকটি শহর দেখবে এবং শহর ঘুরবে। এবং কয়েকটা দিন শহরে ভদ্রলোকের বাসাতেই থাকবে। এবং সেখানে খাবার-দাবার খাবেন। ভদ্রলোকের পরিবারের সদস্য ছয় জন। স্ত্রী, দুইটি ছেলে এবং দুইটি মেয়ে আর তিনি তারা মোট ছয়জন। গ্রাম্য লোককে মেহমানদারী করানোর জন্য স্ত্রীকে আস্ত বড় একটি মুরগির রোস্ট করতে বললো। মুরগির রোস্ট করা হলো। দুপুরের সবাই খাবার টেবিলে উপস্থিত।তার পরের ঘটনাটা ভদ্র লোকটির  কাজ থেকেই শুনি, আমি, আমার  স্ত্রী, দুই ছেলে,দুই মেয়ে, এবং গ্রাম্য লোকটি ।এ সময় বাচ্চাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য আমি একটু মজা করতে চাইলাম। মুরগিটি গ্রাম্য লোকটির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, আপনি এটা আমাদের মাঝে বন্টন করে দিন। এতগুলো মানুষের মাঝে একটা আস্ত মুরগি সবার মন রেখে ভাগ করে দেওয়া কম ঝামেলার কাজ নয়।তার অসহায়ত্ব দেখে ছেলে-মেয়েরা নিশ্চয় ভিশন আনন্দ পাবে।এ কথা ভেবে মুরগিটি তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ছিলাম। তিনি মুরগিটি কাছে টেনে নিয়ে বললেন, আমি সুন্দর একটা  যৌক্তিক বন্টন করে দিতে পারি। কিন্তু তাতে কি আপনারাসন্তুষ্ট হতে পারবেন ? আমি সরল কন্ঠে বললাম, কেন নয়। অবশ্যই আপনার যৌক্তিক বন্টনে আমরা সন্তুষ্ট থাকবো। আপনি বন্টন করে দিন।তিনি একটা ছুরি দিয়ে মুরগির মাথাটা কেটে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, মুরগির মাথাটা পরিবারে মাথার জন্য। দুইটি ডানা কেটে দুটি ছেলে দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, দুই ডানা দুই ছেলের জন্য একেবারেই যৌক্তিকপূর্ণ।দুইটি পা কেটে দুই মেয়ের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, দুই মেয়ের জন্য দুটি পা মিলেছে ভালো। এরপর মুরগির পেছনের ফুলে থাকা অংশটি কেটে আমার স্ত্রীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, পিছনে অংশ পিছনের ব্যক্তির জন্য খুব ভালো মিলেছে । অবশেষে সম্পূর্ণ মুরগিটি নিজের জন্য নিয়ে বললেন, সিনার  গোশত হলো পরিদর্শক এর জন্য ।আমি এই ভিশন যৌক্তিক বন্টন দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমার উদ্দেশ্য সফল হলো না। আমার মুরগির খামার আছে। মুরগির অভাব নেই। আমি পরের দিনই স্ত্রীকে বললাম, তুমি আজ পাঁচটি মুরগি রোস্ট করবে। দেখি ব্যাটা গ্রাম্য কেমন করে আমাদের মাঝে সমান যৌক্তিক বন্টন করে দেয়।আমার স্ত্রী তাই করলো। পরের দিন পাঁচটি মুরগি তার নিকট দিয়ে বললাম, আমাদের মাঝে সুন্দর একটা বন্টন করে দিন। লোকটি আমার দিকে কৌতূহলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, জনাব কি গতকালের বন্টনে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন? আমি মুখে হাসি রেখে বললাম, না না না অসন্তুষ্ট হবো কেন। আপনি একটি অসাধারণ বন্টন দেখিয়েছেন। আমি খুশি, আজকে সেভাবে বন্টন করে দেখিয়ে দিন তো। লোকটি আবারো একটু হেসে দিয়ে বলল, জনাব বন্টন কি  জোড়ায় জোড়ায় মিলিয়ে দেবো, নাকি বেজোড়। আমি তার কথাই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পরে গেলাম। মুরগি পাঁচটা, আমি ছেলে মেয়ে, এবং স্ত্রী এবং মেহমানের মিলিয়ে সাতজন।এটা ভেবে বলে ফেললাম ,আপনি বেজোড় করেই  বন্টন করে দেন। লোকটি আমার  আর  স্ত্রী  দিকে একটি মুরগির বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আপনি আপনার স্ত্রীর এবং মুরগি মিলে বেজোড় তিনজন। আরেকটি মুরগি ছেলেদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, একটি মুরগির সঙ্গে মিলে  তোমরাও হয়ে গেলে  বেজোড় তিনজন। মেয়ে দুইটির দিকে আরেকটি মুরগি বাড়িয়ে দিয়ে বলল, একটি মুরগির সঙ্গে মিলে তোমরাও হয়ে গেলে বেজোড় তিনজন। এরপর নিজের দিকে দুটি মুরগি টেনে নিয়ে বলল, আমি এবং দুটি মুরগি মিলে আমরাও হয়ে গেলাম বেজোড় তিনজন। লোকটি আমার দিকে চোখ বাঁকা করে বলল,বন্টন মিলেছে না জানাব?আমি হতভম্বের মতো তার হাতে ধরা দুটি মুরগির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমার মুখে আর কোন কথা  আসতে ছিলো না। আমার অবস্থা দেখে তিনি বিচলিত হয়ে বলে উঠলো,বন্টনে কি কোনো সমস্যা হয়েছে। আপনার মনে হয় আমার এভাবে বেজোড় ভাগ করা পছন্দ হয়নি।আমি মনের দুঃখ মনেই চাপা রেখে মুখে একটা মুচকি হাসি এনে বললাম, না না সমস্যা নেই।বন্টন খুব সুন্দর হয়েছে। এবারও আমার উদ্দেশ্য সফল হলো না। পরেরদিন দুপুরে আবার এরকমের পাঁচটা মুরগি দিয়ে বললাম, আজ আপনি জোড়ায় জোড়ায় ভাগ করে দিন। লোকটির এবারের বন্টনের ব্যবস্থা ছিল আরো ভয়াবহ। দেখে আমার দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা হলো। তিনি করলেন কি প্রথমে মাত্র একটি মুরগী আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আপনি আপনার দুই ছেলে এবং একটি মুরগী মিলে আপনার জোড়া চার।আরেকটি মুরগি আমার স্ত্রীর দিকে বাড়ি দিয়ে বলল,  আপনিও আপনার দুই মেয়ে এবং মুরগিটি মিলে আপনারাও হয়ে গেলেন চার।আর এদিকে আমি এবং তিনটি মুরগি মিলে হয়ে গেলাম চার। একেবারে সবগুলো জোড়ায় জোড়ায় মিলে গেছে। এরপর লোকটি আর কোন কথা না বলে আরামে একটি মুরগী রানে কামড় দিয়ে বলল, আল্লাহ তোমার অসীম শুকরিয়া। এত জটিল বন্টন আমাকে তুমি এত সহজে সমাধান করার তৌফিক দিয়েছো। সকল প্রশংসা তোমারই। ছেলে-মেয়ে আমার স্ত্রী গ্রাম্য লোকটির ভঙ্গি দেখে হাসিতে ফেটে পরলো। বলাই বাহুল্য যে সে হাসিতে যোগ দেয়ার মত মনের অবস্থা আমার ছিল না। এমন অদ্ভুত বন্টন  আমার বাপের জন্মেও দেখিনি। এ কেমন যৌক্তিক বন্টন।

 


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Md Muhiuddin

Author: Md Muhiuddin

এসো বাংলা ভাষা চর্চা করি।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to “অদ্ভুত বন্টন”

Leave a Reply