অনেক অনেক বছর আগে, প্রাচীন গ্রিসের এক ছোট্ট গ্রামে বাস করত এক কিশোরী মেয়ে—নাইরা। সে দরিদ্র ছিল, কিন্তু তার গলায় ছিল অসাধারণ সুরের জাদু। যখনই সে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে গান গাইত, সমুদ্রের ঢেউ থেমে যেত, পাখিরা উড়ে এসে বসত, আর গ্রামবাসী দূর থেকে শুনতে আসত।
কিন্তু গ্রামে সবাই নাইরাকে ভালোবাসত না। গ্রামের ধনী ব্যবসায়ী ক্যালিক্স সবসময় হিংসে করত। সে ভাবত, “একজন দরিদ্র মেয়ে যদি এত সম্মান পায়, তবে আমার ধন-সম্পদের মূল্য কী?” তাই সে সুযোগ পেলেই নাইরাকে অপমান করত।
একদিন রাতে, নাইরা পাহাড়ের চূড়ায় গান গাইছিল। হঠাৎ আকাশে বজ্রপাত হলো, আর দূরে অ্যাথেনা—জ্ঞান ও কলার দেবী—নেমে এলেন। তিনি নাইরার কণ্ঠ শুনে বললেন,
“হে মেয়ে, তোমার সুর স্বর্গেরও হৃদয় ছুঁয়েছে। আমি তোমাকে দেব একটি হার্প (সঙ্গীতযন্ত্র), যেটি যখন বাজাবে, শুধু মানুষ নয়, দেবতাদেরও আকর্ষণ করবে।”
নাইরা বিস্মিত চোখে হার্পটি হাতে নিল। হার্পটি ছিল সোনার তারে বাঁধা, আর প্রতিটি তার যেন তারা খচিত আকাশের আলোয় ঝলমল করছিল।
পরদিন যখন নাইরা সেই হার্প বাজাল, গ্রামজুড়ে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ল। অসুস্থ মানুষ সুস্থ হতে শুরু করল, শুকনো জমিতে বৃষ্টি নামল, আর ক্যালিক্সের অহংকার ভেঙে গেল।
ক্যালিক্স ঠিক করল হার্প চুরি করবে। এক রাতে সে নাইরার কুটিরে ঢুকে হার্প নিয়ে গেল। কিন্তু যতই সে বাজাতে চেষ্টা করল, তার থেকে কোনো সুর বের হলো না। বরং আকাশ কালো হয়ে গেল, ঝড় উঠল, বজ্রপাত ক্যালিক্সকে আঘাত করল। হার্পটি বাতাসে ভেসে গিয়ে আবার নাইরার কাছে ফিরে এল।
অ্যাথেনা আবার আকাশে দেখা দিলেন। তিনি বললেন,
“এই হার্প কেবল সেই বাজাতে পারবে, যার হৃদয়ে হিংসা নেই, লোভ নেই, শুধু নির্মল ভালোবাসা আছে।”
সেদিন থেকে নাইরা শুধু গ্রাম নয়, চারপাশের শহরেও সম্মানিত হলো। তার সঙ্গীত ছড়িয়ে দিল শান্তি আর প্রেম। গ্রিকরা বিশ্বাস করতে লাগল, নাইরার গানে দেবীর আশীর্বাদ আছে।
—
নৈতিক শিক্ষা
এই গল্প আমাদের শেখায়—সত্যিকার প্রতিভা বা উপহার কেবল সেই মানুষই পায়, যার হৃদয় নির্মল ও সদয়। হিংসা বা লোভ কখনো সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে পারে না, বরং ধ্বংস ডেকে আনে।
