গল্প রাজাকার আফছানা খানম অথৈ

0

রাজাকার

আফছানা খানম অথৈ

১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ কমিটি গঠন করা হয়।গ্রামের ছেলে রফিক’র নের্তৃত্বে বৈঠক বসে ইউনিয়ন পরিষদে।বৈঠকে আলোচনা হয় মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে এবং কারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবে তাদের তালিকা তৈরী করা হয়।কিছু সংখ্যক ছেলে নিয়ে রফিক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়।এদিকে গ্রামের হারিছ মোল্লা ও গ্রামে বৈঠক বসায় রাজাকারের পক্ষ হয়ে শান্তি কমিটি গঠনের জন্য।অল্পকিছু লোক তার দলে যোগ দেয় এবং তাকে শান্তি কমিটির মেম্বার নির্বাচিত করে।এরপর থেকে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের খবর পাকিস্তানি মিলিটারিদের কাছে প্রকাশ করতেন।আর তারই সহযোগীতাতে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী দ্রুত গ্রামে প্রবেশ করে।হারিছ মোল্লা একে একে মুক্তিবাহিনীদের বাড়ি দেখিয়ে দেয় আর মিলিটারিরা তাদের মা-বাবাকে মেরে বাড়িঘর জালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে।
হারিছ মোল্লা গোপনসুত্রে জানতে পারলো মাস্টারের ছেলে রফিক’র নের্তৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা কমিটি গঠন করা হয়।তিনি আর থেমে থাকলেন না।পাকিস্তানি মিলিটারিদের নিয়ে রফিকের বাড়িতে অবস্থান করলেন।রফিকের মা রাতের অন্ধকারে নিবু নিবু আলোতে ভাত রান্না করছেন আর বাবা নিউজ পেপার পড়ছেন।তখনি মিলিটারি হায়নার দল দরজায় ধাক্কা দেয়।দরজা খুলতে দেরী হলে তারা দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে সঙ্গে হারিছ মোল্লা ও আছেন।হারিছ মোল্লা ঈশারায় দেখিয়ে দেয় রফিকের বাবা-মা দুজনকে।মিলিটারি হায়নাদের দল আর দেরী করলো না।রফিকের বাবা-মা দুজনকে কষে বেঁধে ফেলল।বুকের উপর গুলি তাক করে বলল,
বল তোর বেটা মুক্তি বাহিনী কোথা হে,
জোর গলায় মা-বাবা দুজনে উত্তর দিলো,
বলবো না।
মিলিটারি হায়নার দল ক্রুদ্ধ হয়ে বলল,
বলবি না,গুলি ফায়ার হে।
তবুও বলবো না।
মিলিটারি হায়নার দল আর দেরী করলো না।গুলি ফায়ার করে দিলো।রফিকের মা-বাবা দুজনে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে গেল।কাতরাতে কাতরাতে বলল,
হারিছ মোল্লা রাজাকারের বাচ্চা রাজাকার তোকে কেউ ছাড়বে না।
হারিছ মোল্লা হা হা হো হো করে হেসে উঠে বলল,
আরে মাস্টার তোমরা বাঁচলে তো?
এই রাজাকার হারিছ মোল্লা মনে রাখিস এক মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে হাজার মুক্তিযোদ্ধার জন্ম হবে।এই বাংলার মানুষ তোদের মতো রাজাকারদের কোনদিন ক্ষমা করবে না।
তিনি আর কিছু বলতে পারলেন না ঘটনাস্থলে মারা গেলেন।রফিক মা-বাবার মৃত্যু সংবাদ শুনে আর ও বিদ্রোহী হয়ে উঠল।বিদ্রোহী স্বরে বলল,
রাজাকার হারিছ মোল্লা তোকে আমি ছাড়ব না।
ক্যাম্পের সবাই বলল,
রফিক ভাই আগে দেশ স্বাধীন হোক তারপর এই সমস্ত রাজাকারদের কুকুরের মতো গুলি করে মারবো।
ঠিক বলেছ মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা, আগে দেশ স্বাধীন।তারপর রাজাকার…।
সারা বাংলাদেশে এক যোগে যুদ্ধ চলছে।মাঠে ঘাটে রাস্তায় সব জাগাতে মানুষের লাশ আর লাশ।মানুষের রক্তে বাংলার পথে ঘাটে প্রান্তর লাল রঙ্গে রঞ্জিত।বাংলার মানুষ আরও বিদ্রোহী হয়ে উঠল।যতই দিন যাচ্ছে ততই যুদ্ধ আরও রক্তাক্ত্ব হয়ে উঠছে।বলতে না বলতে যুদ্ধের মেয়াদ দীর্ঘ নয় মাস হয়ে গেল।পাকিস্তানি সেনাপক্ষ দেখল বাঙালি সেনাদের সাথে আর তারা ফেরে উঠবে না।তখনি বাঙালি সেনা প্রধানের কাছে ১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পন করলো।রেডিও টিভিতে এক যোগে জয়ের গান গেয়ে উঠল,
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনল যারা আমরা তোমাদের ভুলব না।।
……………………………………।
গান শুনার সাথে সাথে সবাই পতাকা হাতে বাংলার বিজয়ের গান গেয়ে উঠল।এক যুদ্ধ শেষ হলো। এবার আর এক যুদ্ধ শুরু হলো।সকল মুক্তিবাহিনী মিলে রাজাকার মারতে শুরু করলো।রফিক তার দলবল নিয়ে হাজির হলো গ্রামে। এসে দেখে হারিছ মোল্লা পতাকা হাতে বলছে জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু।তখনি রফিক বলল,
এই রাজাকার হারিছ মোল্লা পতাকা হাতে নিলি ক্যান।
তওবা তওবা রফিক কী বলো আমি রাজাকার হমু ক্যান। নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলাম।পতাকা নিবোনাতো কি করবো?
বলীস কী রাজাকার হারিছ মোল্লা, এতোদিন ছিলি পাকিস্তানি সেনাদের আমলা শান্তি কমিটির মেম্বার। এখন হয়েছিস মুক্তিযোদ্ধা আর কত মিথ্যা বলবি?তোদের মতো রাজাকার বেঁচে থাকলে দেশ কলুষিত হবে।মুক্তিযোদ্ধারা শান্তিতে থাকতে পারবে না।তোর কারনে আমার মা-বাবা বেঁচে থাকতে পারেনি।আজ আমি তোকে নিজের হাতে গুলি করবো।রফিক আর নিজেকে স্থির রাখতে পারল না।বুলেট ফায়ার করে দিলো।”রাজাকার” হারিছ মোল্লা মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লো।হারিছ মোল্লার মতো অনেক “রাজাকার”এখনো বাংলার আনাছে কানাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
ঃসমাপ্তঃ


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

প্রতি দান

রাতে থেকে বৃষ্টি হচ্ছিলো, কিছুক্ষণ,বৃষ্টি থেমেছে সবে। সকাল কখন হয়েছে চম্পা জানে না। চম্পা শুনেছে, ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র

অ্যাথেনার অলৌকিক হার্প

অনেক অনেক বছর আগে, প্রাচীন গ্রিসের এক ছোট্ট গ্রামে বাস করত এক কিশোরী মেয়ে—নাইরা। সে দরিদ্র ছিল, কিন্তু তার গলায়

নীলচোখা জলপরী

শঙ্খনদী গ্রামের সকাল সবসময় সমুদ্রের শব্দ দিয়ে শুরু হয়। মাটির ঘরগুলোর চালের ফাঁক দিয়ে বাতাস ঢোকে, আর বাতাসের সাথে ভেসে

সময়ের দরজা

মেঘে ঢাকা এক বিকেল। পুরান ঢাকার সরু গলির ভেতরে, ধুলো ধরা এক প্রাচীন বইয়ের দোকানে ঢুকল আরসোহা। ইতিহাসের ছাত্রী সে,

One Reply to “গল্প রাজাকার আফছানা খানম অথৈ”

Leave a Reply