অধ্যায় ১:
স্বপ্ন ছিল, বাস্তব হলো নাআমার দাদু একটা গল্প বলতেন।
“এক দেশে ছিল এক নদী, তার নাম গঙ্গা। তার পাড়ে ছিলো এক রাজ্য—সোনা ফলে, ধান ফলে, আর মন খোলে।”
আমি বিশ্বাস করতাম। কেন যেন মনে হতো সেই রাজ্যটা বাংলাই।
পরে যখন জানতে পারলাম—বাংলা একসময় পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী অঞ্চলগুলোর একটি ছিল, তখন আমি চুপ করে গিয়েছিলাম।
ভাবছিলাম, তাহলে আজ আমরা এখানে কেন?
আমার এক শিক্ষক বলতেন,
“যে জাতি নিজের ইতিহাস জানে না, সে ভবিষ্যতের দরজা খুলতে পারে না।”
আমরা হয়তো জানি, কিন্তু মানি না।
১৮ শতকে বাংলার GDP ( একটি দেশের ভেতরে এক বছরে যত পণ্য ও সেবা তৈরি হয়, সব কিছুর মোট মূল্যই হলো সেই দেশের GDP।)
ছিল পুরো ব্রিটেনের থেকেও বেশি।
ঢাকায় তৈরি হতো মসলিন, যেটা বাতাসেও উড়ত।
মুর্শিদাবাদে বসে নব্য নবাবরা বিশ্ব বাণিজ্য নিয়ে কথা বলত।
সিরাজউদ্দৌলার শহরে গর্জে উঠত তরুণদের কণ্ঠ—“আমরা রাজা, আমাদের শাসন আমাদেরই।”
তারপর কী হলো?
ব্রিটিশরা এলো—তারা বন্দুক নিয়ে এলো না।তারা এলো ব্যবসার ছদ্মবেশে।
আমরা যেহেতু অতিথিপরায়ণ জাতি, তাই পত্রমিতালির মতো আমরা তাদের ডেকে নিলাম ঘরে।
তারপর ধীরে ধীরে আমাদের চাবিকাঠি তাদের হাতে দিয়ে দিলাম।
আমরা তখনও বুঝিনি—যে চাবি দিয়ে বন্ধ দরজা খোলা যায়, সেই চাবি দিয়েই জাতির কপালও তালাবন্ধ হয়ে যেতে পারে।শোষণের সেই যন্ত্রএকটা সময় ছিল যখন তাঁতিদের হাত কেটে দেওয়া হতো। কারণ তারা যেন আর সূক্ষ্ম কাপড় বুনতে না পারে।
একটা সময় ছিল যখন বাংলার কৃষকদের জোর করে নীল চাষ করানো হতো। তারা ফসল তুলতে পারত না, নিজেদের সন্তানদের খাওয়াতে পারত না।
আমরা তখনও ভাবতাম, “শাসকরা জানেন তারা কী করছেন।”
আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম শাসিত হতে।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—আমরা এখনো কেন উন্নত হতে পারিনি?
তখনকার দোষ ছিল ইংরেজদের, এখন?
আমরা স্বাধীন।
আমরা স্বাধীনতারও সুবর্ণজয়ন্তী পালন করে ফেলেছি।
তবু এখনো রিকশাওয়ালার ছেলে চিকিৎসা পায় না, কৃষকের ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া স্বপ্ন হয়ে থাকে।
তাহলে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা ইতিহাসে যেমন ছিল, তেমনি আজ আমাদের ভেতরেও।
যে জাতি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না, তার ভবিষ্যৎ শুধু বক্তৃতায় সুন্দর হয়—বাস্তবে না
চলো, প্রশ্ন করি। উত্তর খুঁজি।
পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা দেখব— “ঔপনিবেশিকতার পর আমরা কী করেছি? শোষণ গেছে, কিন্তু শোষকের মনোভাব কি রয়ে গেছে?”
এই অধ্যায়ের নাম:
অধ্যায় ২: শাসক বদলেছে, শাসনের ধরন বদলায়নি
স্বাধীনতা মানে কী?
একদিন সকালে ঘুম ভেঙে যদি দেখা যায়, দেশের নাম পাল্টে গেছে, পতাকার রং বদলেছে, মানুষ উৎসবে মেতে উঠেছে—তবু যদি মানুষের চেহারায় অভাব, হতাশা, আর অনিশ্চয়তা থাকে—তবে কি সেটাই স্বাধীনতা?
আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি ১৯৪৭-এ, আর সত্যিকারের রক্তঝরা স্বাধীনতা ১৯৭১-এ।
দুটি সময়েই আমরা একরকম স্বপ্ন দেখেছিলাম—শোষণ থাকবে না, দুর্নীতি থাকবে না, সবাই সমান হবে, বাঙালি হবে তার নিজের ভাগ্যগড়ার কারিগর।
কিন্তু বাস্তবটা কেমন?
স্বাধীন দেশে পরাধীন মানুষ
স্বাধীনতার পর আমরা নিজেরাই নিজেদের শাসক হলাম।
কিন্তু শাসকের ভাষা বদলালেও, ব্যবহার বদলাল না।
প্রথমেই এল রাজনৈতিক বিভাজন।
এক দল আরেক দলকে বিশ্বাস করল না, বরং সুযোগ পেলেই টেনে নামাল।
নেতারা ভাবলেন—দেশ মানে দল, আর দল মানে নিজ পরিবার।
শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশাসন—সব জায়গায় গুটিকয়েক মানুষের রাজত্ব।
আমরা এক নতুন ধরনের ঔপনিবেশিকতা দেখলাম—নিজেদের তৈরি।
দুর্নীতি: বাঙালির অঘোষিত ধর্ম
একবার একটা ফাইল নিয়ে সরকারি অফিসে গিয়েছিলাম।
কাজটা সহজ ছিল, কিন্তু সবাই বলল, “একটু চা-পানির ব্যবস্থা করলে সহজ হবে।”
চা-পানির মানে আমি জানতাম। সেটাকে বলে উৎকোচ।
এই ‘উৎকোচ’ এখন এমন পর্যায়ে গেছে, যেখানে একজন সৎ লোককে সবাই বোকা ভাবে।
একবার এক ট্রেন যাত্রায় একজন লোক বলল, “সরকারি চাকরি মানে ফ্রি ইনকাম।”
আমি বললাম, “সবাই তো দুর্নীতিপরায়ণ নয়।”
সে হেসে বলল, “তুমি খুব ভালো মানুষ, তাই এসব কথা বলো। কিন্তু বাস্তব জানো না।”
এ কথা শুনে আমার বুকটা কেমন যেন ভারী হয়ে গেল।
নেতা-নেত্রী অনেক, দায়িত্ববান কই?
আমাদের দেশে নেতা অনেক। বক্তৃতাও অনেক।
কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থে কাজ করেন, তারা লোকচক্ষুর আড়ালে।
একবার এক কৃষি অফিসার নিজেই মাঠে গিয়ে ধান কাটা শেখাচ্ছিলেন।
লোকজন বলল, “পাগল অফিসার। এত কষ্ট করে লাভ কী?”
আমরা পাগল বলি যাদের কাছে বিবেক আছে।
আমরা চেয়েছিলাম, স্বাধীন দেশে দায়িত্ববান নেতৃত্ব।
পেয়েছি—নিজস্ব স্বার্থে ডুবে থাকা মুখোশধারী কিছু ‘ব্যবস্থাপক’।
মানসিকতার দাসত্ব
আমরা আজও শিক্ষায় স্বাধীন না।
আমাদের শিক্ষা মানে পরীক্ষায় পাস, চাকরি পাওয়া, পেট চালানো।
চিন্তা করার, প্রশ্ন করার, কিছু বদলানোর সাহস—এসব এখন ব্যতিক্রম।
আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বলি, “এই দেশে কিছু হবে না।”
এই কথাটা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর।
কারণ, একটা জাতি যখন বিশ্বাস করে যে সে উন্নত হতে পারবে না, তখন আর কেউ তাকে উন্নত করতে পারে না।
তবু কিছু মানুষ আছে
সবখানে আঁধার হলেও, আলো ঠিকই জ্বলে ওঠে।
একজন সৎ পুলিশ অফিসার, একজন গ্রামের স্কুলশিক্ষক, একজন গার্মেন্টস কর্মী—তারা হাল ছাড়েন না।
তারা জানেন, জাতি শুধু নেতার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে না, দাঁড়িয়ে থাকে সাধারণ মানুষের কাঁধে।
শেষে
আমরা স্বাধীন হয়েছি, কিন্তু স্বাধীনতার অর্থ বুঝিনি।
আমরা শাসক বদলেছি, কিন্তু শাসনের মনোভাব পাল্টাতে পারিনি।
সেই মনোভাব বদলানোটা এখন আমাদের প্রজন্মের কাজ।
তুমি, আমি—আমাদের হাতেই এখন ভবিষ্যতের চাবি।
পরবর্তী অধ্যায়ের নাম:
“আমরা কাকে উন্নয়ন বলি?”
চল শুরু করি…
অধ্যায় ৩: আমরা কাকে উন্নয়ন বলি?
সন্ধ্যায় এক আত্মীয় বাড়ি গেলাম। তাঁর ছেলে খুব গর্ব করে বলল,
“দেখো ভাইয়া, আমাদের এলাকায় এখন ফ্লাইওভার হচ্ছে, বড় বড় শপিংমল হচ্ছে, ওয়াই-ফাইও ফ্রি।”
আমি হাসলাম।
জিজ্ঞেস করলাম, “তোমাদের পাশের পাড়া সেই নালাটা ঠিক হলো?”
সে মাথা নিচু করে বলল, “না ভাইয়া, গত বৃষ্টিতে বাসায় হাঁটু পানি উঠছিল।”
এটাই আমাদের উন্নয়ন—চকমকে, কিন্তু গায়ে ধুলো মাখা।
উন্নয়ন মানে কী?
আমরা উন্নয়ন মানে বুঝি উঁচু দালান, দামি গাড়ি, রাস্তার পাশে আলোর মালা।
কিন্তু উন্নয়ন মানে তো শুধুই ইট, পাথর আর প্লাস্টার না।
উন্নয়ন মানে, একজন খেটে খাওয়া মানুষ যেন তার সন্তানকে শিক্ষিত করতে পারে।
উন্নয়ন মানে, গ্রামের মেয়েটা যেন ঢাকায় এসে নিরাপদে কলেজে যেতে পারে।
উন্নয়ন মানে, চিকিৎসা যেন ভাগ্যের বিষয় না হয়।
আমরা এখন উন্নয়নের ভেতর ছবি খুঁজি, আত্মা খুঁজি না।
নগর উন্নয়ন বনাম গ্রামীণ বাস্তবতা
ঢাকা শহরের মেট্রোরেল চলছে। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
কিন্তু ঢাকা থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরে গাজীপুরের একটা গ্রামে এখনো ডাক্তারের চেম্বার নেই।
একজন নারী প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে, আর তার স্বামী নৌকা খুঁজছে পার হবার জন্য।
উন্নয়ন যদি শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক হয়, তবে সেটা সজ্জা হতে পারে, সমাধান না।
চাকরি মানে উন্নয়ন?
অনেকেই বলেন, “এখন তো ছেলে-মেয়েরা বিদেশে যাচ্ছে, ডলার পাঠাচ্ছে—এটাই উন্নয়ন!”
হ্যাঁ, ওরা বিদেশে যাচ্ছে।
কিন্তু কেন যাচ্ছে?
কারণ, এই মাটিতে যোগ্যতার মূল্য নেই।
কারণ, ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না, যোগাযোগ ছাড়া প্রমোশন হয় না।
আমরা উন্নয়ন বলছি, কারণ আমাদের তরুণেরা পরদেশে গিয়ে পরিশ্রম করছে, কিন্তু এদেশে তাদের মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই।
এই উন্নয়নকে আমরা যদি গর্ব ভাবি, তবে সেটা আত্মপ্রবঞ্চনা।
উন্নয়ন মানে সচেতনতা
একজন সচিবের ছেলেও যদি স্কুলে একই পানির কল থেকে খায়, যেখান থেকে গার্মেন্টসকর্মীর মেয়েটা খায়—সেটাই উন্নয়ন।
একজন জনপ্রতিনিধি যদি নিজের ছেলেকে সরকারি হাসপাতালেই ভর্তি করে—সেটাই উন্নয়ন।
উন্নয়ন তখনই সত্যি হয়, যখন সেটা কাগজে না, বাস্তবে ছোঁয়া যায়।
উন্নয়ন মানে সংস্কৃতি ও মনন
একটা জাতি তখনই উন্নত হয়, যখন সে গান গাইতে পারে।
যখন তার নাটক, কবিতা, বই বিক্রি হয়।
যখন সে অন্যের সংস্কৃতিকে অনুকরণ করে না, বরং নিজেরটা নিয়েই গর্ব করে।
আজ আমরা উন্নয়নের নামে কাচের টাওয়ার বানিয়েছি, কিন্তু মনের দরজায় এখনো তালা।
শেষে
উন্নয়ন শব্দটা বড়ই মায়াবী।
চকমকে শব্দ।
কিন্তু এর ভেতর যদি জীবন না থাকে, মানুষ না থাকে, চোখের পানি না শুকায়—তবে সেটা শুধু বিলবোর্ড, ইতিহাস নয়।
পরবর্তী অধ্যায়:
“আমাদের মূল সমস্যা কোথায়?”
– শিক্ষা? দুর্নীতি? নাকি আমাদের মানসিকতা?
চল লিখে ফেলি—
অধ্যায় ৪: আমাদের মূল সমস্যা কোথায়?
একদিন এক বৃদ্ধ মানুষকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
“চাচা, আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় আফসোস কী?”
তিনি এক চুমুক চায়ে ভিজিয়ে বললেন,
“যে জাতিকে ভালোবেসে সারাজীবন কাটালাম, তারা নিজেরাই নিজেদের পেছনে টেনে ধরে।”
বুঝলাম, আমাদের সমস্যাটা শুধু সিস্টেমে না—মনোজগতে।
১. শিক্ষা, না বোঝার শিক্ষা
আমরা শিক্ষা পেয়েছি—বোর্ডের বই, গাইড বই, কোচিং সেন্টার আর GPA-৫।
কিন্তু চিন্তা করতে শিখিনি।
একটা ছেলে যদি প্রশ্ন করে, “কেন?”—শিক্ষক বলেন, “বেশি কথা বলিস না।”
একটা মেয়ে যদি বলে, “আমি ডাক্তার না হয়ে লেখক হতে চাই”—বাড়ির লোক বলে, “লেখালেখি খেয়ে বাঁচা যায়?”
আমাদের শিক্ষা প্রশ্নকে দমন করে, মুখস্থকে উৎসাহ দেয়।
যেখানে ‘চিন্তা’ নেই, সেখানেই ‘চিন্তাহীন’ জাতি জন্ম নেয়।
২. দুর্নীতি, পাপ নয়—প্রথা
কোনো একজন ঘুষ নিলেই সে চোর না।
কিন্তু যখন সবাই নেয়, তখন সেটা নিয়ম হয়ে যায়।
আমরা ছোটবেলায় শিখেছি, “সততা শ্রেষ্ঠ নীতি।”
কিন্তু বড় হয়ে দেখেছি—সততা হলে ফাইল আটকে যায়, আর মিথ্যা বললে প্রমোশন হয়।
একজন বাবা তার ছেলেকে শিখিয়ে দেন—
“দেখ, চাকরি করতে হলে একটু ম্যানেজ করতেই হয়।”
এটাই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শিক্ষা।
৩. পরনির্ভরতা: ‘উপরের দিক’ দেখবো
আমরা সব কিছুতে দেখি “উপরে কী বলে!”
নিজের বিবেক, যুক্তি, নীতিবোধ—এসব যেন পুরনো জিনিস।
একজন মানুষ হাসপাতালের সামনে মারা গেলেও লোকজন ভাবে,
“আমি তো দায়ী না।”
কিন্তু জাতি কখনও উন্নত হয় না, যদি প্রতিটা মানুষ ভাবে, “আমার কিছু করার নেই।”
৪. কুৎসা আর বিভক্তির রাজনীতি
আমাদের রাজনীতি এখন দলের জন্য, দেশের জন্য নয়।
আমরা শুনি— “তুই ওদের দলে?”
“তুই ওইটায় ভোট দিবি?”
“তুই তো দেশদ্রোহী!”
বিজ্ঞান, সাহিত্য, ক্রিকেট—সবকিছুতেই দলবাজি।
একজন ভালো কাজ করলে প্রশ্ন করি, “তার পরিচয় কী?”
এই বিভাজন আমাদের শক্তিকে খেয়ে ফেলছে। আমরা একসঙ্গে ভাবতেই পারি না।
৫. সম্মানের মূল্যায়ন নয়, দামের বিচার
একজন শিক্ষক রিকশা চালাচ্ছেন—লোকে হেসে বলছে, “বেচারা।”
একজন টিকটকার লাখ লাখ টাকা আয় করছে—লোকে বলছে, “উফফ! স্টার।”
আমরা কাজের নয়, রেজাল্টের পুজারি।
আমরা চরিত্রের নয়, চেহারার পূজারি।
এবং এটাও এক ভয়ঙ্কর ব্যাধি।
তাহলে মূল সমস্যা কোথায়?
সমস্যা আমাদের ভিতরে।
আমরা শুধু চাই উন্নয়ন, কিন্তু দায়িত্ব নিতে চাই না।
আমরা চাই সৎ নেতা, কিন্তু নিজেরাই অসৎ হয়ে ঘুষ দিই।
একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি—
বাজারে ঠকাচ্ছি, লাইনে কাটছি, ট্রাফিক রুল ভাঙছি, আবার বলছি “দেশের কিছু হবে না।”
দেশ আসলে কী?
তুমি, আমি, আমরা—এই ‘আমাদের’ আচরণই তো একটা দেশের চরিত্র।
শেষে
বিপ্লব শুরু হয় বাইরে থেকে না—ভেতর থেকে।
একটা জাতির ভিতরে যখন আত্মসমালোচনার শক্তি আসে, তখনই উন্নতি শুরু হয়।
আর সেটা শুরু করতে হবে—এখনই। এখান থেকেই।
পরবর্তী অধ্যায়:
“আশা কোথায়?”
– সবকিছু এত খারাপ হলে, আমরা আশার আলো কোথায় দেখবো?
অধ্যায় ৫: আলো আসছিলো… আমরা চোখ বন্ধ করেছিলাম:
একজন মানুষ জানালার পাশে বসে আছে।
বাইরে আলো ফুটছে—রোদ হালকা হেসে বলছে,
“চলো, আজ বদলাই!”সে জানালার পর্দা সরায় না।
সে শুধু বলে,
“এখানে আলো আসে না।”
১. আমাদের দৃষ্টি সমস্যা:
আমরা আলো খুঁজি,কিন্তু চশমা নষ্ট।
চোখে জমেছে ঘুম আর অভ্যাসের ধূলা।
একজন তরুণ মেয়ের মধ্যে দেশ বদলানোর শক্তি আছে—আমরা বলি,
“এত কিছু না ভেবে বিয়ে করো।”
একজন তরুণ বলেছে, “আমি ঘুষ ছাড়াই টিকে থাকতে চাই।”
আমরা বলি,
“স্বপ্ন দেখো, কিন্তু বোকা হইও না।”
আলো ঠিকই আসে,
আমরা চোখ বন্ধ করে রাখি
২. শেকড় থেকে গাছ জন্মায় না, কারণ…
আমরা ইতিহাস জানি না,
শুনে শুনে মুখস্থ করি।
আমরা বিশ্বাস করি,বাঙালি সাহসী না—
যদিও ইতিহাস বলে,বাঙালির রক্তে আছে বিদ্রোহ।
যেখানে শিশুরা শেখে,
“তুই পারবি না,”
সেখানে মানুষ হেরে যায়নিজের জন্মের আগেই।
আলো যদি হৃদয়ে পৌঁছাতে না পারে,
সে আলো বাতির নিচে অন্ধকারই রয়ে যায়।
৩. একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু ফুল দিলে হয় না
আমরা শহীদ মিনারে ফুল দিই,
কিন্তু নিজেই ভুল বানানে চিঠি লিখি।
আমরা ভাষার জন্য মরেছি,
কিন্তু ভাষার প্রতি ভালোবাসা এখন স্ট্যাটাসের বিষয়।
আলো পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল,
আমরা সামনে মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রেখেছিলাম।
৪. স্বপ্ন বিক্রি করে বেঁচে থাকার বাজার
একজন বলেছিল, “আমি সমাজ বদলাবো।”
তাকে একদিন চাকরি দেওয়ার নাম করে বলল, “সিস্টেমে ঢুকো।”
সে ঢুকে গেল।
আজ সে আর আলো খোঁজে না,সে শুধু ভাবে,
“ভালো হতে গিয়ে কেউ বাঁচে না।”
এভাবে আলো হারায় না,আমরাই তাকে দূর করিশেষে, এক চিলতে কথা:
যারা সব দেখে, তবু কিছু বলে না,
তারা একদিন বুঝে ফেলে—আলো আসার দরকার নেই,আঁধারেই অভ্যস্ত হওয়া সহজ।এই অধ্যায় আলো না আসার গল্প না,
আলো থাকতেও না দেখতে চাওয়ার গল্প।
পরবর্তী অধ্যায়:
“আলো দেখলে কী করবো?”
– একেবারে বাস্তবপরায়ণ পরামর্শ নিয়ে আলোচনা: ব্যক্তিগত বদল, সামাজিক আ
চরণ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব ইত্যাদি।
চল তাহলে…
—
অধ্যায় ৬: আলো দেখলে কী করবো?
রাতে কেউ ঘরে আলো জ্বালে,
কিন্তু চোখে আলো পড়তেই সে চোখ ঢেকে ফেলে—
“এই আলোটা একটু বেশি।”
এখানেই ভুল।
আলো দেখলে ভয় পাওয়া নয়,
সামনে হাঁটতে হয়।
—
১. শুরু হোক নিজের ঘর থেকে
আমরা সবসময় বলি,
“ওরা ঠিক হলে দেশ ঠিক হবে।”
এবার বলি—
“আমি ঠিক হলে অন্তত একটা কোণা আলোকিত হবে।”
• ঘরে কেউ মিথ্যা বললে থামাও।
• অফিসে কেউ অন্যায় করলে মুখ খোলো।
• বাজারে ঠকালে প্রতিবাদ করো।
তুমি একা নও,
তোমার মতো আরেকজনও সাহস পাবে।
—
২. ছোট ছোট কাজ, বড় বদল
তুমি ট্রাফিক আইন মানো—
হয়তো একজন শিশু দেখে শিখবে।
তুমি লাইনে দাঁড়াও—
হয়তো একজন বৃদ্ধ কষ্ট কম পাবে।
তুমি বউয়ের স্বপ্ন শুনো—
হয়তো সে আবার গান গাইতে চাইবে।
আলো কখনও বড় কিছুর অপেক্ষা করে না—
একটা মোমবাতিই তো রাত বদলায়।
—
৩. প্রশ্ন করো—অন্ধ আনুগত্য নয়
আমাদের শিক্ষা, ধর্ম, রাজনীতি—সবকিছুর মধ্যে প্রশ্ন হারিয়ে গেছে।
• শিক্ষক কী পড়াচ্ছেন, বুঝছ তো? না কেবল মুখস্থ?
• ধর্ম মানছ—কিন্তু তার মানে জানো?
• যাকে নেতা বানিয়েছ—সে কী সত্যিই তোমার প্রতিনিধিত্ব করে?
যখন প্রশ্ন ফিরবে,
তখন উত্তর খুঁজতে সবাই ব্যস্ত থাকবে।
৪. সম্মান দাও—তবেই পাবে
একজন কুলি সকাল ৬টায় ঘুম ভাঙায় তোমার বাসায় জিনিস পৌঁছাতে।
একজন শিক্ষক সকাল ৮টায় ক্লাস নেয়,
তুমি তাকে সম্মান দাও?
একজন তরুণ মেয়ে হিজাব পরে অফিস করে—
তাকে কি তুমি “ব্যাকডেটেড” বলো?
যে জাতি সম্মান দিতে জানে না,সে জাতি উন্নত হতে পারে না।
৫. বই পড়ো—নিজের জন্য, জাতির জন্য।একটা গল্প বদলায় মন,একটা কবিতা বদলায় হৃদয়,একটা গবেষণা বদলায় দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রতিদিন ৫ পৃষ্ঠা পড়ো—
নিজের কাছে, সমাজের কাছে দায়বদ্ধ থাকার জন্য।
শেষে বলি—উন্নয়ন রাজপথ না, মনপথ
তুমি রাস্তায় ফ্লাইওভার দেখলে উন্নয়ন ভাবো,
কিন্তু মনে যদি সহনশীলতা না থাকে,
তবে ওই ফ্লাইওভারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকবে সহিংসতা।
আলো মানে শুধু ল্যাম্পপোস্ট না,
আলো মানে—ভালো হওয়ার চেষ্টা।
পরবর্তী অধ্যায়:
“যদি আমি একা থাকি?”
– সমাজে যখন কেউ পরিবর্তনের পথে হাঁটে, তখন তারা প্রায়ই একা পড়ে যায়।
পরের অধ্যায় হবে সেই ‘নীরব একাকীত্ব’ আর সাহস নিয়ে—যা বদলের আগের মূল্য।
অধ্যায় ৭: যদি আমি একা থাকি?
রাস্তাটা অনেক লম্বা।
হাঁটতে হাঁটতে পিছনে তাকালে বোঝা যায়—
কেউ নেই।
শুধু নিজের পায়ের শব্দ।
এই অধ্যায় সেইসব মানুষদের জন্য—
যারা ভালো থাকতে চায়,
ভালো কিছু করতে চায়,
কিন্তু পাশে কেউ থাকে না।
১. একা মানেই ভুল না,তুমি যদি বলো,
“আমি ঘুষ নেব না”—সাথের মানুষ বলবে,
“তুই পাগল!”
তুমি যদি বলো,
“ভালোবাসা মানে সম্মান”—
লোক হাসবে।তুমি যদি বলো,
“আমি সমাজ বদলাতে চাই”—
লোক বলবে,
“তুই কে রে?”
তবু, তুমি থামো না।
কারণ ইতিহাসে যারা একা ছিল,
তাদের সাথেই একদিন একটা জাতি দাঁড়িয়েছে।
২. একাকীত্ব কষ্টের নয়—গভীরতার নাম
রাতে যখন শহর ঘুমায়,
তুমি একা বসে ভাবো—
“কেউ বোঝে না আমায়।”
এই না বোঝার মধ্যেই জন্ম নেয় সাহস।
কারণ সবার বোঝা লাগবে না,
শুধু নিজের মনটা পরিষ্কার থাকা চাই।
তুমি যদি জানো, তুমি ঠিক—
তবে অন্যের না বোঝা ক্ষতি করতে পারে না।
৩. শুরুর সব মানুষই একা ছিল
– রবীন্দ্রনাথ যখন কবিতা লিখতেন, তখনো কুৎসা হত।
– জসিম উদ্দিন মাঠে বসে “নকশি কাঁথার মাঠ” লিখতেন,
লোক বলত—
“এইসব গ্রামীণ গীতিকবিতা কে পড়বে?”
– একজন শিক্ষক যখন ছেলেমেয়েদের বলল,
“তোমরা একদিন দেশের নেতৃত্ব দেবে”—
সে একাই বলেছিল।
কিন্তু সময় একা মানুষের পাশে দাঁড়ায়,
যদি সে নিজের পাশে থাকে।
৪. একা হাঁটো, দেখবে ছায়া তৈরি হয়
তুমি যখন একা চলে যাও ঠিক পথে,
তোমার পেছনে একটা নিঃশব্দ ছায়া হাঁটে—
তা হলো “আশা”।একসময় সে ছায়া রূপ নেয় আরেকজনের সাহসে।
তুমি একা থাকো,
কিন্তু তুমি অন্য কারও একাকীত্ব ভাঙার কারণ হয়ে উঠো।
৫. মোমবাতির আলোয় শুরু হয় ভোর
একটা মানুষ রাত জেগে চিঠি লিখছে—
নিজের ভবিষ্যতের কাছে।
সে লিখছে,
“আমি এখন একা।কিন্তু আমি থামবো না।”
ভবিষ্যত একদিন উত্তর দেবে—
“তোমার কারণে আমরা আজ আলোয় হাঁটছি।”
শেষের কথা
একাকীত্ব ভয় নয়।এটা সেই দরজা—
যেখান দিয়ে আলো চুপচাপ ভিতরে ঢোকে।তুমি শুধু দরজাটা খোলা রেখো।
পরবর্তী অধ্যায়:
“আমরা আর কী কী ভুল করছি?”
– জাতীয়ভাবে যেসব ভুল আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে: নেতৃত্বের ব্যর্থতা, শিক্ষা
ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা, মিডিয়ার ভূমিকা, এবং সাংস্কৃতিক বিচ্যুতি—এসব নিয়ে বাস্তব ও সরল আলোচনা।
অধ্যায় ৮: আমরা আর কী কী ভুল করছি?
কেউ প্রশ্ন করলে আমরা বলি,
“দেশটা আর চলে না।”
কিন্তু কেউ জিজ্ঞেস করলে—
“তুমি কী করেছ?”
আমরা চুপ করে থাকি।
আমরা আসলে নিজেদের কিছু ভুল চোখে দেখি না,
আর অন্যের ভুল দিয়ে একেকটা দেয়াল তুলে ফেলি।
এই অধ্যায়ে আমরা নিজেদের মুখোমুখি দাঁড়াবো।
একটু আয়নায় তাকিয়ে বলবো—
“আমরা কোথায় কোথায় গলতি করছি?”
১. নেতৃত্ব নয়—নেতা খোঁজাই ভুল হয়ে গেছে
আমরা নেতা খুঁজি রঙ দেখে, ধর্ম দেখে,
কিন্তু খুঁজি না দায়িত্ব দেখে।
– কেউ কথা ভালো বললেই তাকে অনুসরণ করি,
– কেউ গলা চড়ালেই ভাবি, “বাহ, সে সাহসী।”
আমরা ভুলে যাই—
সত্যিকারের নেতৃত্ব হলো: চুপচাপ কাজ করে যাওয়া।
যার নেতৃত্বে একজন বৃদ্ধ নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে,
সেই আসলে নেতা।
২. শিক্ষার চেহারা বদলেছে, মন বদলায়নি
আমরা সার্টিফিকেট তৈরি করি,
কিন্তু মানুষ তৈরি করি না।
– একজন ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে,
তবু জানে না সত্য-মিথ্যা চেনা কত জরুরি।
– একজন মেয়ে গোল্ডেন A+ পায়,
তবু জানে না নিজের সম্মান কিভাবে রক্ষা করতে হয়।
আমরা পড়াই—
“উন্নয়ন কি?”
কিন্তু শেখাই না—
“সততা কি?”
৩. মিডিয়া মানে এখন শুধু ‘সংবাদ না, সংবেদন’
টিভি খুললেই এক ভয়:
– কে কাকে কাঁদালো,
– কে কীভাবে প্রেম ভাঙলো,
– কার বাসায় কার লাশ!
সংবাদ থেকে সত্য উধাও।
সত্যি কথা বললে TRP কমে যায়।
আর আমরা এসব দেখে ভাবি—
“এই তো বাস্তবতা।”
বাস্তবতা আসলে আরও সরল,
যেটা আমরা দেখতে চাই না।
৪. সংস্কৃতির নামে ‘উগ্রতা’ বেচি
একসময় নাটক দেখলে মনে হতো—
“জীবনটা এরকম হোক।”
এখন নাটক দেখে ভাবি—
“জীবনটা এরকম কেন?”
আমরা গান বানাই,যার কথা বোঝা যায় না।
চলচ্চিত্র বানাই,যেখানে নায়কও নায়ক না।সংস্কৃতি মানে নাচ-গান নয়,
সংস্কৃতি মানে—মনুষ্যত্বের চর্চা।
৫. দায় স্বীকারে অনীহা
সবকিছুর দোষ “অন্য”র।
– সরকার খারাপ।
– রাস্তা খারাপ।
– শিক্ষক খারাপ।
– পরিবেশ খারাপ।
কিন্তু একবারও বলি না,
“আমি কি ভালো?”
অথচ এই প্রশ্নটা জাতির উন্নতির একমাত্র চাবিকাঠি।
শেষের কথা
আমরা যদি ভুলগুলোকে ভালবাসার চোখে না দেখি,
তবে ভুল শুধরাবে না।
শুধু আঙুল উঠবে—পরিচয় হারাবে।
তাই আগে স্বীকার করো—
তারপর বদলাও।
**পরবর্তী অধ্যায়:
“আসলে উন্নয়ন মানে কী?”**
– রাস্তাঘাট, ভবন, মোবাইল অ্যাপ নয়—একটা জাতির উন্নয়ন আসলে কোথা থেকে শুরু হয়? উন্নয়ন কীভাবে মাপে একটি জাতিকে, আর কীভাবে মেপে ফেলি আমরা নিজেরাই?
অধ্যায় ৯: আসলে উন্নয়ন মানে কী?
আমরা মাঝে মাঝে ভুলে যাই—
একটা দেশের উন্নয়ন মানে শুধু উঁচু বিল্ডিং না,
ফাইভজি ইন্টারনেট না,
বা মেট্রোরেল না।
উন্নয়ন আসলে একটা “মানসিকতা”র নাম।
যেখানে মানুষ আগে বদলায়,
তারপর রাস্তা।
১. উন্নয়ন যদি হয় শুধু চোখের জন্য, মগজের জন্য নয়?
রাস্তায় আলো আছে,কিন্তু মন অন্ধকার।
লিফট আছে,কিন্তু মানুষ উপরে ওঠার শিষ্টাচার জানে না।
একটা শহরে যতই টাওয়ার উঠুক,
যদি ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে শুধু বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে,
তবে ওই শহরের “ভবিষ্যৎ” কোথায়?
উন্নয়ন হলো তখনই,যখন একজন কাঁচা ঘরের ছাত্রও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখে।
২. উন্নয়ন মানে ধৈর্যের গল্প
একটা গাছ ফল দিতে সময় নেয়।
তুমি কি তাকে প্রতিদিন টান দাও?
আমরাও উন্নয়ন চাই তাড়াতাড়ি।
চাই—
আজই মেধাবী সমাজ,কালই নোবেল জয়।
কিন্তু উন্নয়ন হয়—
একজন শিক্ষক যখন ক্লাসে দাঁড়িয়ে ২০টা বছর কাটান,
একজন কিশোর যখন লাইব্রেরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটায়,
একজন সরকারি কর্মচারী যখন ঘুষ না নিয়ে কাজ শেষ করেন।
এসব ধৈর্যের ফসল—বড় উন্নয়ন।
৩. উন্নয়ন মানে: সম্মান জানাতে শেখা
উন্নয়ন তখনই শুরু হয়,
যখন এক রিকশাওয়ালাকে “আপনি” বলা শুরু করি।
যখন একজন নারীর পর্দা দেখে আমরা কৌতূহল না,সম্মান দেখাই।
যখন আমরা বলি—
“তুমি কাজের মেয়ে না, তুমি একজন মানুষ।”
উন্নয়ন মানে—দেখতে শেখা, বুঝতে শেখা, সহ্য করতে শেখা।
৪. উন্নয়ন মানে শুধু সরকার না—আমি, আপনি, আমরা
প্রতিবার সরকার বদলালে বলি—
“এইবার বুঝি বদল আসবে।”
কিন্তু নিজের ঘরে প্লাস্টিক ফেলি,
লাইনে দাঁড়াতে পারি না,
বাসে মহিলা উঠলে সিট দিই না।
এই না বদলানোতেই লুকানো আছে—
“উন্নয়নের বন্ধ্যাত্ব।”
একটা জাতি তখনই উন্নত হয়,
যখন সে নিজের আয়নায় মুখোমুখি দাঁড়াতে শেখে।
৫. উন্নয়ন মানে বিশ্বাস—সিস্টেমে, স্বপ্নে, মানুষের ভেতর
যে দেশ সকালে জানে না কীভাবে দিন চলবে,
তবু সন্ধ্যায় নতুন কিছু গড়তে চায়,
সে দেশ উন্নত হবেই—
ধীরে ধীরে, কিন্তু নিশ্চিতভাবে।
তুমি যদি নিজের জায়গা থেকে ঠিক থাকো,
তবে একদিন চারপাশও ঠিক হয়ে যাবে।
শেষের কথা
উন্নয়ন একধরনের শব্দ নয়—
এটা একধরনের নীরব বিপ্লব।
যেখানে প্রতিদিন, প্রতিটি মানুষ
নিজেকে একটু একটু করে বদলায়।
আর সেই বদলেই গড়ে ওঠে—
একটা বড় জাতি।
**পরবর্তী অধ্যায়:
“বাঙালির ‘আলো’ কোথায়?”**
– এত সব কষ্ট, বিপর্যয়, হতাশার মাঝেও কী এমন আছে বাঙালির ভেতরে, যা তাকে বারবার টেনে তোলে? কী সেই ‘আলো’ যা কখনো নিভে যায় না?
চল লিখে ফেলি—
অধ্যায় ১০: বাঙালির ‘আলো’ কোথায়?
অনেকেই বলে,
“এই জাতির কিছু হবে না।”
আর আমি তখন একটু হেসে বলি,
“আপনি তাহলে বাঙালিকে ঠিক চিনেন না।”
কারণ এই জাতি হেরে গেলেও উঠে দাঁড়ায়।মরে গেলেও গল্প হয়ে বেঁচে থাকে।
এই অধ্যায়ে আমরা খুঁজবো—
বাঙালির সেই আলো,
যেটা সব দুঃসময়েও নিভে যায় না।
১. ‘আলো’ মানে প্রতিরোধ—১৯৭১ এর মতো
একটা জাতি,যারা বই দিয়ে নয়,
রক্ত দিয়ে নিজেদের পরিচয় লিখেছে—
তারা কি কখনো নিভে যেতে পারে?
৭১-এর সেই মা,
যে নিজের ছেলেকে বলেছিলেন,
“তুই যুদ্ধে যা।”
সেই চোখে ছিল যে আলো,
আজও সেই আলো আমাদের চোখে আছে—
শুধু আমরা খুঁজে দেখি না।
২. ‘আলো’ মানে ভাষার জন্য বুক পেতে দেওয়া
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি—”
এই এক লাইনেই পুরো জাতির আত্মার ছবি আঁকা।
একটা জাতি,যারা ভাষার জন্য গুলি খেয়েছে,তারা কি শব্দ হারাতে পারে?
আমরা হারাই না।
আমরা শুধু মাঝে মাঝে চুপ করে যাই—
আবারও চিৎকারের জন্য প্রস্তুত হই।
৩. ‘আলো’ মানে সংস্কৃতির দাপট, হাসির ঔজ্জ্বল্য
পহেলা বৈশাখে রাস্তায় যে রঙ মাখা যায়,তার কোনো তুলনা হয় না।
আমাদের গানে, গল্পে, নাটকে,
একটা জাতির “আলোকিত দিক” থাকে।
– হুমায়ূন আহমেদ যখন “হিমু” লেখেন,
– লালন যখন বলেন, “সব লয়ে লয় মিলে…”,
– অথবা কোনো বুড়ো নৌকোয় বসে গেয়ে ওঠেন, “পুবালি বাতাসে…”
সেইসবেই তো জ্বলছে আলো।
আমাদের ভেতরের আলো।
৪. ‘আলো’ মানে একে অপরকে আগলে রাখা
– বন্যায় মানুষ সাঁতার কাটে কারো খাবার পৌঁছে দিতে,
– বাসের ভেতর একজন ছেড়ে দেয় সিট,
– পাশের ঘরের কেউ বলে, “চিন্তা কইরেন না আপা, আমি আছি।”
এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে
একটা জাতির আলো।
বাঙালি যতই কাঁদুক,
একটা সময় পরে সে বলে—
“চল, আবার শুরু করি।”
৫. আলো কখনও নিভে না—শুধু সময় চায়
আলো যদি একেবারে নিভে যেত,
তবে এত অপমান, এত দুর্নীতি, এত লোভের মাঝেও
আমরা এত গল্প লিখতে পারতাম না।
আমরা আলোর জাতি।
শুধু সেটা মাঝেমধ্যে ধুলোমাখা হয়ে যায়।ঝেড়ে ফেললেই আবার আলো ফোটে।
শেষের কথা
বাঙালি হার মানতে জানে না।বাঙালি কাঁদতে জানে,তবু কাঁদতে কাঁদতেই হাসতে শিখে ফেলে।
এই জাতির আলো কখনোই নিভবে না-
কারণ এই আলো আসলে “ভেতর” থেকে জ্বলে।
**পরবর্তী অধ্যায়:
“আমরা কীভাবে শুরু করবো বদল?”**
– এতসব কথা হলো। কিন্তু এবার সময়—কাজে নামার। আমরা সাধারণ মানুষরা কীভাবে বদল শুরু করতে পারি, আজ থেকেই?
অধ্যায় ১১: আমরা কীভাবে শুরু করবো বদল?
পরিবর্তন শুধু বড়লোকদের কাজ না,
না-ই বা নেতাদের একার হাতে।
বদল শুরু হয়—
একটা ছোট সিদ্ধান্তে, একটা ছোট ‘না’ বলা থেকে।
এই অধ্যায়ে আমরা জানবো—
আমি, তুমি, আমরা—এই বদলের পথিক কিভাবে হতে পারি।
১. নিজেকে বদলানোই সবচেয়ে বড় বিপ্লব আয়নার সামনে দাঁড়াও।
নিজেকে একবার জিজ্ঞাসা করো—
– আমি কি আমার কাজ ঠিকভাবে করি?
– আমি কি কাউকে ঠকাই?
– আমি কি ঘুষ ছাড়া চলতে পারি?
– আমি কি সত্যি বলতে ভয় পাই?
যদি হ্যাঁ না হয়,তবে বদলটা সেখান থেকেই শুরু।
যখন একটা মানুষ সৎ হয়, তখন চারপাশে আলো ছড়াতে শুরু করে।
২. শিশুদের মাঝে যে জাতির ভবিষ্যৎ
তোমার বাচ্চাকে “তুই চুপ কর” না বলে শেখাও—
“তুই নিজের মত বল।”
তার হাতে মোবাইল নয়, একটা বই দাও।
তার মাথায় ভয় নয়,স্বপ্ন ঢোকাও।
যে জাতি তার পরবর্তী প্রজন্মকে ভালো মানুষ বানাতে চায়,
সে জাতি হারতে পারে না।
৩. কাজের জায়গায় আমি যদি ঠিক থাকি…
ধরো তুমি অফিসে কাজ করো।
তোমার ফাইল সময়মতো জমা দাও।
তুমি চুপচাপ নিজের দায়িত্ব পালন করো।
– তুমি কারো ওপর চিৎকার করো না,
– কাউকে ছোট করো না,
– তোমার অধীনস্থদের সম্মান দাও।
তুমি একাই একটা আলো হয়ে উঠবে।
আর এক একটা আলো মিলেই তৈরি হবে—নতুন একটা ভোর।
৪. প্রতিবাদ মানেই রাস্তায় নামা না—সঠিক পথে হাঁটা
– বাজারে কেউ চিটিং করলে তাকে বলো “না”
– বাসে হর্ন বাজালে গায়ে না মেখে চোখে চোখ রাখো
– স্কুলে কেউ দুর্নীতি করলে প্রশ্ন করো
প্রতিবাদ মানে “না” বলা, চোখ সরিয়ে না ফেলা।
তুমি যখন প্রতিবাদ করতে শেখো—
তখনই বদলের শুরু হয়।
৫. বিশ্বাস রেখে পাশে দাঁড়ানো
একটা জাতি তখনই বদলায়,
যখন তারা একে অপরকে ভরসা করতে শেখে।
– অন্যের সফলতায় হিংসে না করে উৎসাহ দাও
– কারো দুঃখে হাসি না, পাশে দাঁড়াও
– কাউকে ভুল করতে দেখলে তাকে শিক্ষা দাও, অপমান না
বদল আসে ভালোবাসা দিয়ে।
শেষের কথা
বদল একদিনে হয় না,একজন দিয়ে হয় না।
কিন্তু যদি আমি আজ বদলাই,তুমি কাল বদলাও,
আর আমরা একসাথে বলি—
“এইবার আমরা শুরু করবো।”
তাহলে ইতিহাস বদলাতে খুব একটা সময় লাগবে না।
“ভবিষ্যতের বাঙালি: কেমন হতে পারি আমরা?”
– যদি আমরা আজ বদলাই, তাহলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হতে পারে? কীভাবে গড়ে উঠতে পারে এক নতুন জাতি?আপনাদের কাছে প্রশ্ন রইল আমার।
চলো, তাহলে শুরু করি আমাদের ঘুমিয়ে থাকা স্বর্ণের গল্প।
অধ্যায় ১২: “মাটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা স্বর্ণ”
– আমাদের পায়ের নিচেই রাজত্ব ছিল, কিন্তু কেউ সেই দরজায় কড়া নাড়েনি
একদিনের এক গল্প
একবার এক বৃদ্ধ চাষি মরে গেল।
তার ছেলেরা জমি নিয়ে ঝগড়া করছিল।
কে কতটা পাবে, কে ভালো জায়গাটা নেবে।
কেউ জানলো না,
মাটি চাষির কানে একবার ফিসফিস করেছিলো—
“আমার নিচে আছে সোনা, কেউ একবারও খুঁড়লো না।”
আমাদের দেশও ঠিক তেমন।
আমরা আকাশ দেখি, নদী দেখি, ধানক্ষেত দেখি—
কিন্তু মাটির নিচে চোখ রাখি না।
১. কক্সবাজারের বালু কি শুধু সূর্যাস্তের ছবি তোলার জন্য?
না।
এই বালুতে আছে এমন খনিজ যা দিয়ে বানানো যায়
– বিমান
– পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর
– স্পেস রকেটের অংশ
– আধুনিক অস্ত্র
– এমনকি মোবাইল ফোনের চিপস
মনাজাইট নামক এক বালুর কণায় থাকে
থোরিয়াম – ভবিষ্যতের পরমাণু জ্বালানি।
এখনও মানুষ ইউরেনিয়াম নিয়ে ঝামেলায় আছে,
কিন্তু থোরিয়াম?
শান্ত, সস্তা, শক্তিশালী।
এটা যেন ভবিষ্যতের “দুধেভাতে মানুষ”।
২. বঙ্গোপসাগরের বুকের নিচে লুকিয়ে থাকা ধন
যেখানে সবাই শুধু মাছ ধরে,
আমরা সেখানে খুঁজছি পলিমেটালিক নোডিউল।
ছোট ছোট পাথরের মতো দেখতে,
কিন্তু ভিতরে নিকেল, তামা, কোবাল্ট, দস্তা—
পৃথিবীর সবচেয়ে দামী প্রযুক্তির উপাদান।
যেটা দিয়ে গাড়ি চলে, ব্যাটারি চলে, রকেট চলে।
তুমি বলো—
এই সাগরের নিচে যদি স্বর্ণের মতো ধন থাকে,
তবে আমরা এখনো শুধু মাছ ধরতেই ব্যস্ত কেন?
৩. আমাদের থোরিয়াম—আমাদের চাঁদের আলো
পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকটি দেশেই
মনাজাইটের ভান্ডার আছে।
আমাদের উপকূলের বালুতে যখন
একটা ছোট কণা রেডিও অ্যাকটিভ,
তখন বিজ্ঞানীরা চমকে ওঠে।
এটাই তো ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।
কিন্তু দুঃখের কথা—
আমরা এখনো সেই চাবি হাতে নিইনি।
আমরা এখনো কপাল চাপড়াই, অথচ ভান্ডার পায়ের নিচে।
৪. যদি কেউ জাগে, তবে রাজত্ব জেগে উঠবে
একটা মজার কথা বলি?
যে দেশগুলো এখন “তৃতীয় বিশ্ব”,
তারা হয়তো পায়ের নিচের সম্পদ চিনেই না।
আর যারা “প্রথম বিশ্ব” হয়েছে,
তারা প্রথমে নিজের মাটি চিনেছে।
তুমি যদি এই খনিজ, এই সম্ভাবনা নিয়ে ভাবো—
তুমি যদি শুধু ভাবা থেকে কাজেও নামো—
তাহলে একদিন হয়তো তোমাকেই কেউ বলবে,
“এই লোকটাই প্রথম বুঝেছিল, আমাদের মাটি ঘুমিয়ে আছে।”
শেষ কথা:
আমরা শুধু বিদেশ থেকে জিনিস কিনে আনছি,
অথচ নিজের বালুতে রকেটের জ্বালানি আছে!আমাদের শুধু একটু চোখ দরকার,
একটু সাহস দরকার,
আর দরকার একজন—
যে বলবে,
“আমি খুঁড়ে দেখবো,
হয়তো এখানে ঘুমিয়ে আছে আগামীর সোনা।”
**পরবর্তী অধ্যায় :
“কীভাবে ঘুমন্ত স্বর্ণকে জাগানো যায়?”
– কেবল আবিষ্কার করলেই তো হবে না। ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান, নেতৃত্ব—এই সব দরকার।
অধ্যায় ১৩: “ঘুমন্ত স্বর্ণকে জাগানোর কৌশল”
– আমাদের হাতে আছে মানচিত্র, কিন্তু আমরা দরজা খুলি না
একটা বাস্তব কথা দিয়ে শুরু করি।
একটা দেশ তখনই জাগে,
যখন সে নিজেই নিজের ঘুম ভাঙাতে শেখে।
বাইরের কেউ এসে তো আর ঘুমের মধ্যে হাতে লণ্ঠন ধরিয়ে দেয় না।
তাই, এখন প্রশ্ন—
বাংলাদেশ কিভাবে তার খনিজ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে?
১. প্রথম কাজ: খনিজের মানচিত্র তৈরি
আমরা এখনো জানি না—
কোথায়, কী পরিমাণে, কী গুণের খনিজ আছে।
বলা হয়,
“পুকুরে মাছ আছে, কিন্তু কেউ জাল ফেলে না।”
আমাদের বিজ্ঞানীরা কিছু জায়গা চিহ্নিত করেছেন,
কিন্তু সেগুলো এখনো গবেষণার খাতা বা ফাইলের মধ্যে বন্দি।
যা করতে হবে:
- পুরো দেশের খনিজ মানচিত্র তৈরি করা
- কোথায় কতটা Monazite, Thorium, Zircon আছে, তার বিজ্ঞানসম্মত জরিপ
এটা হবে ঘুমন্ত ধনের ঠিকানার খোঁজ।
২. দ্বিতীয় কাজ: গবেষণা ও প্রযুক্তি
ধরো, তুমি একটা হীরার খণ্ড পেয়েছো,
কিন্তু কাটতে বা পালিশ করতে পারো না—
তাহলে সেই হীরা কি দামি?
তেমনি, আমাদের খনিজ আছে,
কিন্তু সেটা কাজে লাগানোর প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানী দরকার।
যা করতে হবে:
- University/Tech Institute-গুলোতে Mineralogy & Rare Earth Lab
- বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত Bangladeshi খনিজ বিজ্ঞানী গড়ে তোলা
- বেসরকারি খাতে গবেষণার সুযোগ
৩. তৃতীয় কাজ: রাজনৈতিক সদিচ্ছা
এইটা আসলে সবচেয়ে কঠিন।
মাটি ঘুমিয়ে থাকলে কারও সমস্যা নেই।
কিন্তু মাটি জেগে উঠলে,
অনেকের ঘুম হারাম হয়ে যায়।
কারণ, খনিজ মানে শুধু সম্পদ নয়—
ক্ষমতা, রাজনীতি, লোভ।
যা করতে হবে:
- একটি স্বচ্ছ, রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ খনিজ নীতি
- স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে উন্নয়ন
- জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার—নয়তো বিদেশি কোম্পানির দখলে চলে যাবে
৪. চতুর্থ কাজ: পরিবেশ ও ভবিষ্যতের চিন্তা
সোনা তুলে যদি নদী শুকিয়ে যায়,
তাহলে সে সোনা বিষ হয়ে যাবে।
যা করতে হবে:
- পরিবেশবান্ধব খনিজ উত্তোলন
- স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প জীবনব্যবস্থা
- পরবর্তী প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা
৫. পঞ্চম কাজ: তরুণদের স্বপ্নে দেওয়া যায় আগুন
আমাদের তরুণরা হয় বিদেশে চলে যাচ্ছে,
না হয় চাকরি খুঁজছে।
কিন্তু তারা যদি জানে—
এই দেশের মাটিতে আছে এমন কিছু,
যা ভবিষ্যতের জ্বালানি, রকেট, মেডিক্যাল যন্ত্রের মূল উপাদান—
তাহলে তারা নিজের দেশকে নিয়ে ভাববে।
একজন তরুণ শুধু একটা চাকরি নয়,একটা খনিজ বিপ্লব শুরু করতে পারে।
শেষ কথাটা মনে রাখো:
স্বর্ণ যদি মাটির নিচে ঘুমায়,
তাহলে তাকে ডাকতে হয়—
“জাগো, সময় এসেছে।”
আমরা এখন সেই সময়েই দাঁড়িয়ে আছি।
পরবর্তী অধ্যায় :
“সেই দিন আসবে যখন…
বাংলাদেশ রপ্তানি করবে প্রযুক্তির মূল উপাদান,
বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে আমাদের দিকে!”
অধ্যায় ১৪: “সেই দিন আসবে যখন…”
– বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে এক ক্ষুদ্র দেশের দিকে, যাকে তারা আগে শুধু দরিদ্র বলেই চিনতো
একটা কল্পনা করি চলো।
ঢাকা থেকে এক ফ্লাইট উঠছে—
গন্তব্য জার্মানি।
কিন্তু যাত্রীরা কোনো ব্যবসায়ী নয়, না কোনো প্রবাসী।
তারা বাংলাদেশ সরকারের খনিজ বিশেষজ্ঞ দল।
তাদের হাতে চুক্তি—
Monazite-এর থোরিয়াম রপ্তানি।
বিশ্বের একমাত্র নিরাপদ পারমাণবিক জ্বালানি এখন বাংলাদেশ দিচ্ছে!
একজন বৃদ্ধ সাংবাদিক পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলে,
> “বাংলাদেশ! যাদের একসময় মনে করা হতো চাষাভুষোর দেশ,
তারাই এখন বিশ্ব শক্তির জ্বালানি জোগায়?”
কিভাবে সম্ভব হলো এটা?
কারণ তারা ঘুম ভাঙিয়েছে।
তারা বুঝেছে—
সোনা যদি পায়ের নিচে থাকে,
তাহলে মাথা নিচু করে হাঁটা পাপ।
১. প্রযুক্তির বাংলাদেশ
একদিন তুমি হাঁটছো রাজশাহীর দিকে।
দেখলে, বিস্তীর্ণ এক খনি এলাকা।
তরুণরা কাজ করছে রোবট দিয়ে, ড্রোন উড়ছে খনিজ বিশ্লেষণে,আর এক বালুর কণা বিশ্লেষণ করে তৈরি হচ্ছে
মোবাইল চিপ, পারমাণবিক ব্যাটারি, স্পেস স্যুটের উপাদান।
বিশ্বের সব বড় কোম্পানি
চিঠি পাঠাচ্ছে—
> “বাংলাদেশ, আমাদের জন্য আরেকটু সরবরাহ বাড়াতে পারো?”
২. বাঙালির মাথা নিচু নয় আর
কোনোদিন ভাবছো,
“জুতার ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতে করতে
ছেলেটা কি বড় হবে?”
এখন সে ছেলেটাই
Bangladesh Mineral Technology Institute-এর গবেষক।
তার তৈরি ফিউশন-টেক থোরিয়াম ব্যাটারি
NASA-র স্যাটেলাইটে ব্যবহৃত হচ্ছে।
৩. রাজনীতি যেখানে স্বপ্ন রক্ষা করে
রাজনীতি আর দলবাজির মধ্যে নয়,
এখন সব দলের শ্লোগান একটাই—
“খনিজ সম্পদ জাতীয় গর্ব”
সংসদের এক বৈঠকে মন্ত্রী বলে,
> “আমরা কৃষি দিয়ে টিকেছিলাম,
তৈরি পোশাক দিয়ে এগিয়েছিলাম,
আর এখন খনিজ দিয়ে নেতৃত্ব দেবো।”
৪. যারা ফিরছে দেশে
ব্রেন ড্রেইন বলে একটা শব্দ ছিল একসময়।
তোমরা বিদেশে চলে যেতে—ভালো পড়াশোনার জন্য, জীবনের জন্য।
এখন আমেরিকার MIT-এর বাঙালি প্রফেসর ফিরে এসেছে।
সে খুলেছে
“Bangladesh Institute of Rare Earth Research”
তুমি দাঁড়িয়ে ভাবো,
> “বাহ! মানুষ ফিরেও আসে যখন দেশে স্বপ্ন জাগে।”
৫. গ্রামের ছেলেটা স্বপ্ন দেখে
একটা গল্প দিয়ে শেষ করি।
এক গ্রামে এক বালক, তার হাতে শুধু একটা ছোট খনন যন্ত্র আর একটা খাতা।
সে মাটি খুঁড়ছে,লিখে রাখছে কিসে কী আছে।
সেই ছেলেটাই একদিন হবে
‘বাংলাদেশ খনিজ জাগরণের জনক’—
যেমনটা ভারতের আছে বিজ্ঞানীদের নিয়ে,আমাদেরও থাকবে খনিজ নায়কদের গল্প।
শেষ কথা:
> “বাঙালি যখন নিজের মাটি চিনেছে,
তখন সে শুধুই ধানচাষি ছিল না,
সে ছিল ভবিষ্যতের কারিগর।”
সেই দিন খুব দূরে নয়।
“তরুণদের জন্য খনিজ বিপ্লবের রোডম্যাপ”
– কিভাবে আজকের তরুণেরা এটা শুরু করতে পারে?
অধ্যায় ১৫: “তরুণদের জন্য খনিজ বিপ্লবের রোডম্যাপ”
– যেখানে চাকরির খোঁজ থেমে গিয়ে নেতৃত্ব শুরু হয়
তুমি হয়তো এখন ক্যাম্পাসে বসে আছো।
চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছো,
মাথায় চিন্তা—
“এই দেশ নিয়ে তো কিছুই হয় না!”
কিন্তু জানো কি,
দেশ পাল্টানো সব সময় শুরু হয়
তোমার মত একজন ক্লান্ত তরুণের মাথায়
একটা ‘অসম্ভব’ স্বপ্ন থেকে।
তাই আজকের অধ্যায়ে আমরা একদম হাতেকলমে জানবো—
বাংলাদেশের তরুণরা কিভাবে খনিজ বিপ্লবের সেনানী হতে পারে।
১. জানো, শেখো, প্রশ্ন করো
তোমার প্রথম কাজ—
জানার খিদে তৈরি করা।
কোথা থেকে শুরু করবে?
- “Rare Earth Minerals”, “Monazite”, “Thorium Fuel” – এগুলো গুগলে সার্চ দাও
- YouTube-এ বাংলাদেশে কয় ধরনের খনিজ পাওয়া যায়, সে নিয়ে ভিডিও দেখো
- Geological Survey of Bangladesh (GSB)-এর রিপোর্ট পড়ো
- জেনে রাখো – তোমার মাটির নিচে কী ঘুমিয়ে আছে
প্রতিদিন যদি ১৫ মিনিট খনিজ নিয়ে পড়ো,
একবছরে তুমি হবে এই বিষয়ের একজন mini-expert।
২. বন্ধুরা মিলে একটি “Mineral Study Circle” গড়ো
রকিব হাসান নের তিন গোয়েন্দা গল্পে কিছু চরিত্র মিলে কাণ্ড ঘটায়,তেমনই, তোমার ৪–৫ জন বন্ধু মিলে একটা গ্রুপ গড়ো—
নাম দাও “খনিজ বিপ্লব দল”, বা “Mineral Youth Squad”।
বা নাম নাই দিলে। তবে কাজ করো
তাদের কাজ কী হবে?
- প্রতি সপ্তাহে খনিজ নিয়ে আলোচনা
- এলাকার মাটি কোথায় কী আছে খুঁজে দেখা
- বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট ওয়ার্কশপ করা
- সাংবাদিক বা ব্লগার হয়ে লেখা শুরু করা
তুমি হয়তো ভাবছো, “এতে হবে কী?”
ইতিহাস বলে, বিপ্লব সবসময় ক্লাসরুমের বাইরে, চায়ের দোকানে বসে শুরু হয়।
৩. প্রজেক্ট বানাও – একটা খনিজ ম্যাপ তোমার এলাকার
তোমার শহর, গ্রামের মাটি কেমন?
পাশে নদী আছে? পাহাড়? বালুচর?
জিওলজি নিয়ে না পড়লেও তুমি
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে, কিছু ছোট পরীক্ষা করে,
একটা “Local Mineral Map” তৈরি করতে পারো।
তুমি যদি রাজশাহীর, কক্সবাজারের, খুলনার, দিনাজপুরের—
যেকোনো জায়গার ছেলে হও,
তাহলেও মাটির একটা গল্প তোমার হাতেই ধরা।
৪. ইউটিউব/সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও বানাও
তুমি যদি ভালো কথা বলতে পারো,
তাহলে ভিডিও বানাও এই টপিকে:
- “বাংলাদেশের অজানা খনিজ সম্পদ”
- “Monazite কী?”
- “তরুণদের জন্য খনিজ বিপ্লবের সুযোগ”
প্রথমে হয়তো ১০০ জন দেখবে।
তবে তুমিই একদিন হবে
‘Bangladesh GeoInfluencer’।
৫. চাকরি না খুঁজে উদ্যোগ গড়ো
তোমার একটা ছোট কোম্পানি হতে পারে,
যারা কাজ করে—
- খনিজ তথ্য বিশ্লেষণে
- স্থানীয় পর্যায়ে ছোট গবেষণায়
- বিদেশি সংস্থার সাথে সংযোগে
তুমি শুধু ডিগ্রির পেছনে না দৌড়ে
“Geo Startup” গড়তে পারো!
৬. তরুণদের জন্য জাতীয় দাবি
তুমি চাইলে একটা ক্যাম্পেইন চালাতে পারো:
- “বাংলাদেশ খনিজ নীতিমালা চাই”
- “খনিজ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট স্থাপন করো”
- “রপ্তানির আগে স্থানীয় শিল্প গড়ে তোলো”
তুমি ছাত্র, কিন্তু তোমার কণ্ঠে যদি যুক্তি থাকে,
নির্বাচনী মঞ্চেও তুমি কথা বলতে পারো।
শেষ কথা:
“এই বিপ্লব হবে পাথর ভেঙে নয়,
হবে চিন্তা গড়ে।”
তুমি যদি এখন শুরু করো,
তাহলে ৫–১০ বছর পর
তোমার নাম হয়তো থাকবে
“বাংলাদেশ খনিজ জাগরণের মূল নেতাদের” তালিকায়।
উপসংহার
“যেখানে শেষ, সেখানেই শুরু।”
একসময় আমাদের বলা হতো—
“তোমরা শুধু কৃষক, শুধু শ্রমিক, শুধু পোশাক রপ্তানির জাতি।”
কেউ ভাবেনি,এই বাংলার মাটির নিচে ঘুমিয়ে আছেবিশ্বের ভবিষ্যৎ জ্বালানি, প্রযুক্তি আর সম্ভাবনার আলো।
আমরা শুধু অন্ধকারে ছিলাম না—আমরা চোখ বুজে ছিলাম।
এই বইতে আমরা সেই চোখ খোলার চেষ্টা করেছি।
প্রতিটি পাতায় আমরা খুঁজেছি—
বাংলাদেশের খনিজ সম্ভাবনা, আমাদের ঘুমন্ত শক্তি, আর তরুণদের জাগরণের গল্প।
আমরা জানি,সব কিছু একদিনেই বদলায় না।কিন্তু সব কিছু একদিনই বদলে যায়—
যদি কেউ প্রশ্ন তোলে,যদি কেউ স্বপ্ন দেখে,আর যদি কেউ সেই স্বপ্নকে ছুঁতে দ্রুত না, ধীরে ধীরে দৌড়ায়।
এই বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় ছিল
একটা পথ—
যেখানে শেষ নেই,শুধু একটা শুরু আছে।
তোমার হাতে। আমার হাতে। আমাদের সবার হাতে।
এই উপসংহারে একটা প্রশ্ন রেখে যাই—
> “তুমি যদি জানো তোমার পায়ের নিচে সোনা আছে,
তবে তুমি আর কবে হাঁটবে মাথা নিচু করে?”
বাংলাদেশ ঘুমিয়ে আছে না, জেগে উঠছে।
তুমি কি সেই জাগরণের একজন?
যদি তাই হয় তাহলে আসো আমরা সবাই মিলে কাজ করি এবং অন্যকে উৎসাহ প্রদান করি। আমাকেও তোমাদের দলের সঙ্গী করে নাও।
