আল্লাহ তাআলা মানুষের পথ প্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ প্রেরণ করেছেন এবং তাদের উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। সে সমস্ত কিতাবে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সঠিক পথ বর্ণনা করেছেন। প্রত্যেক মুসলমানের উপর আসমানী গ্রন্থ সমূহের উপর ঈমান রাখা জরুরি। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,
হে মুমিনগণ! তোমরা ঈমান আন আল্লাহ্র প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি, এবং সে কিতাবের প্রতি যা আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন। আর সে গ্রন্থের প্রতিও যা তার পূর্বে তিনি নাযিল করেছেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্, তাঁর ফিরিশ্তাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও শেষ দিবসের প্রতি কুফরী করে সে সুদূর বিভ্রান্তিতে পতিত হলো। [সূরা নিসা, আয়াত: ১৩৬]
আসমানী কিতাবের সংখ্যা কত
অনেকের ধারণা, সর্বমোট আসমানী কিতাব হচ্ছে ১০৪-টি। কিন্তু সঠিক কথা হচ্ছে, পবিত্র কুরআন ও প্রধান হাদীসগ্রন্থগুলোতে আসমানী কিতাবের সংখ্যা ঠিক কত তার উল্লেখ নেই। তবে কোনো কোনো ইমামগণের বক্তব্য থেকে জানা যায়, আল্লাহ তা’আলা নবী রাসূলগণের প্রতি সর্বমোট ১০৪-টি আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন। তন্মধ্যে ৪টি হলো প্রধান ও বড় বড়, যার আলোচনা কুরআনেও এসেছে। আর বাকি ১০০-টি হলো, ছোট ছোট। এগুলোকে সহীফাও বলা হয়।
কিন্তু প্রধান আসমানী গ্রন্থ চারটি সঠিক হলেও বাকি ১০০-টির ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। মূলত এই তথ্যটি সঠিক নয়। এই মর্মে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, ইমামগণ সে হাদীসটিকে দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন। [দেখুন- সহীহ ইবনে হিব্বান: ২/৭৯, টীকা ১]
তবে এ কথা সত্য যে, প্রধান চারটি আসমানী কিতাব ছাড়াও ছোট ছোট অনেক সহীফা রয়েছে। এবং এগুলোর উপর ঈমান রাখা জরুরী। কিন্তু কুরআন হাদীসে এই সহীফাগুলোর নাম বর্ণিত হয়নি এর সংখ্যাও নির্দিষ্ট জানা যায়নি।
প্রধান চারটি আসমানী কিতাবের নাম
১. তাওরাত। ২. যাবূর ৩. ইনজীল। ৪. কুরআন।
তাওরাত ও তার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
তাওরাত মূসা আ. এর ওপর অবতীর্ণ আসমানী কিতাব। কুরআনে তাওরাত শব্দটি মোট ১৬ বার এসেছে। তাওরাত সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন-
إِنَّا أَنْزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ ۚ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ هَادُوا وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ وَكَانُوا عَلَيْهِ شُهَدَاءَ ۚ فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا ۚ وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
বাংলা অনুবাদঃ আমি তওরাত অবর্তীর্ন করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে ফয়সালা দিতেন। কেননা, তাদেরকে এ খোদায়ী গ্রন্থের দেখাশোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তাঁরা এর রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াত সমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্যে গ্রহণ করো না, যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের। (সূরাঃ আল মায়িদাহ, আয়াতঃ ৪৪)
আরো এসেছে-
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تُحَاجُّونَ فِي إِبْرَاهِيمَ وَمَا أُنْزِلَتِ التَّوْرَاةُ وَالْإِنْجِيلُ إِلَّا مِنْ بَعْدِهِ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
বাংলা অনুবাদঃ হে আহলে কিতাবগণ! কেন তোমরা ইব্রাহীমের বিষয়ে বাদানুবাদ কর? অথচ তওরাত ও ইঞ্জিল তাঁর পরেই নাযিল হয়েছে। তোমরা কি বুঝ না? (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ৬৫)
এক কিতাব অন্য কিতাবের সত্যায়নকারী
وَمُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَلِأُحِلَّ لَكُمْ بَعْضَ الَّذِي حُرِّمَ عَلَيْكُمْ ۚ وَجِئْتُكُمْ بِآيَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ
বাংলা অনুবাদঃ আর এটি পূর্ববর্তী কিতাব সমুহকে সত্যায়ন করে, যেমন তওরাত। আর তা এজন্য যাতে তোমাদের জন্য হালাল করে দেই কোন কোন বস্তু যা তোমাদের জন্য হারাম ছিল। আর আমি তোমাদের নিকট এসেছি তোমাদের পালনকর্তার নিদর্শনসহ। কাজেই আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার অনুসরণ কর। (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ৫০)
এ ব্যাপারে আরো বলা হয়েছে
نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنْزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ
বাংলা অনুবাদঃ তিনি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন সত্যতার সাথে; যা সত্যায়ন করে পূর্ববর্তী কিতাবসমুহের। (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ৩)
তাওরাত সম্পর্কে কুরআনে আরো এসেছে
وَيُعَلِّمُهُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَالتَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ
বাংলা অনুবাদঃ আর তাকে তিনি শিখিয়ে দেবেন কিতাব, হিকমত, তওরাত, ইঞ্জিল। (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ৪৮)
قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلَىٰ شَيْءٍ حَتَّىٰ تُقِيمُوا التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ ۗ وَلَيَزِيدَنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ طُغْيَانًا وَكُفْرًا ۖ فَلَا تَأْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
বাংলা অনুবাদঃ বলে দিনঃ হে আহলে কিতাবগণ, তোমরা কোন পথেই নও, যে পর্যন্ত না তোমরা তওরাত, ইঞ্জিল এবং যে গ্রন্থ তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তাও পুরোপুরি পালন না কর। আপনার পালনকর্তার কাছ থেকে আপনার প্রতি যা অবর্তীণ হয়েছে, তার কারণে তাদের অনেকের অবাধ্যতা ও কুফর বৃদ্ধি পাবে। অতএব, এ কাফের সম্প্রদায়ের জন্যে দুঃখ করবেন না। (সূরাঃ আল মায়িদাহ, আয়াতঃ ৬৮)
وَلَوْ أَنَّهُمْ أَقَامُوا التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِمْ مِنْ رَبِّهِمْ لَأَكَلُوا مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ أَرْجُلِهِمْ ۚ مِنْهُمْ أُمَّةٌ مُقْتَصِدَةٌ ۖ وَكَثِيرٌ مِنْهُمْ سَاءَ مَا يَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদঃ যদি তারা তওরাত, ইঞ্জিল এবং যা প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, পুরোপুরি পালন করত, তবে তারা উপর থেকে এবং পায়ের নীচ থেকে ভক্ষণ করত। তাদের কিছুসংখ্যক লোক সৎপথের অনুগামী এবং অনেকেই মন্দ কাজ করে যাচ্ছে। (সূরাঃ আল মায়িদাহ, আয়াতঃ ৬৬)
وَقَفَّيْنَا عَلَىٰ آثَارِهِمْ بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ ۖ وَآتَيْنَاهُ الْإِنْجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ وَمُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةً لِلْمُتَّقِينَ
বাংলা অনুবাদঃ আমি তাদের পেছনে মরিয়ম তনয় ঈসাকে প্রেরণ করেছি। তিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন। আমি তাঁকে ইঞ্জিল প্রদান করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। এটি পূর্ববতী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়ন করে পথ প্রদর্শন করে এবং এটি খোদাভীরুদের জন্যে হেদায়েত উপদেশ বানী। (সূরাঃ আল মায়িদাহ, আয়াতঃ ৪৬)
যাবূর ও তার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
যাবূর দাঊদ আ. এর ওপর অবতীর্ণ আসমানী কিতাব। কুরআনে যাবূর শব্দটি মোট ৩ বার এসেছে। যাবূর সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন-
إِنَّا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ كَمَا أَوْحَيْنَا إِلَىٰ نُوحٍ وَالنَّبِيِّينَ مِنْ بَعْدِهِ ۚ وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَعِيسَىٰ وَأَيُّوبَ وَيُونُسَ وَهَارُونَ وَسُلَيْمَانَ ۚ وَآتَيْنَا دَاوُودَ زَبُورًا
বাংলা অনুবাদঃ আমি আপনার প্রতি ওহী পাঠিয়েছি, যেমন করে ওহী পাঠিয়েছিলাম নূহের প্রতি এবং সে সমস্ত নবী-রসূলের প্রতি যাঁরা তাঁর পরে প্রেরিত হয়েছেন। আর ওহী পাঠিয়েছি, ইসমাঈল, ইব্রাহীম, ইসহাক, ইয়াকুব, ও তাঁর সন্তাবর্গের প্রতি এবং ঈসা, আইয়ুব, ইউনূস, হারুন ও সুলায়মানের প্রতি। আর আমি দাউদকে দান করেছি যবুর গ্রন্থ। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ১৬৩)
তিনি আরো বলেন-
وَرَبُّكَ أَعْلَمُ بِمَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ النَّبِيِّينَ عَلَىٰ بَعْضٍ ۖ وَآتَيْنَا دَاوُودَ زَبُورًا
বাংলা অনুবাদঃ আপনার পালনকর্তা তাদের সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞাত আছেন, যারা আকাশসমূহে ও ভুপৃষ্ঠে রয়েছে। আমি তো কতক পয়গম্বরকে কতক পয়গম্বরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি এবং দাউদকে যবুর দান করেছি। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ৫৫)
অন্যত্র আরও এসেছে-
وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُورِ مِنْ بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ
বাংলা অনুবাদঃ আমি উপদেশের পর যবুরে লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাগণ অবশেষে পৃথিবীর অধিকারী হবে। (সূরাঃ আম্বিয়া, আয়াতঃ ১০৫)
ইনজীল ও তার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
ইনজীল ‘ঈসা আ. এর ওপর অবতীর্ণ আসমানী কিতাব। কুরআনে ইনজীল শব্দটি মোট ১২ বার এসেছে। ইনজীল সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَلْيَحْكُمْ أَهْلُ الْإِنْجِيلِ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فِيهِ ۚ وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
বাংলা অনুবাদঃ ইঞ্জিলের অধিকারীদের উচিত, আল্লাহ তাতে যা অবতীর্ণ করেছেন। তদানুযায়ী ফয়সালা করা। যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী। (সূরাঃ আল মায়িদাহ, আয়াতঃ ৪৭)
তিনি আরো বলেন-
الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ النَّبِيَّ الْأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوبًا عِنْدَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالْأَغْلَالَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ ۚ فَالَّذِينَ آمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنْزِلَ مَعَهُ ۙ أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
বাংলা অনুবাদঃ সেসমস্ত লোক, যারা আনুগত্য অবলম্বন করে এ রসূলের, যিনি উম্মী নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকর্মের, বারণ করেন অসৎকর্ম থেকে; তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুসমূহ এবং তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়ে দেন এবং বন্দীত্ব অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল। সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। (সূরাঃ আল আ’রাফ, আয়াতঃ ১৫৭)
আরো এসেছে-
مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ۖ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا ۖ سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ ۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ ۚ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ ۗ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
বাংলা অনুবাদঃ মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন । তওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে আনন্দে অভিভুত করে-যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন। (সূরাঃ আল ফাতহ, আয়াতঃ ২৯)
কুরআন ও তার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
কুরআন সম্পর্কে অতি সংক্ষিপ্ত আলোচনা: কুরআন হচ্ছে প্রধান চার আসমানী কিতাবসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব। কুরআন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও আল্লাহ তা’আলার প্রিয় বন্ধু ও হাবীব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর অবতীর্ণ আসমানী কিতাব। কুরআন পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবসমূহকে রহিতকারী। কুরআনে কুরআন শব্দটি মোট ৬৯ বার এসেছে। কুরআন সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَمَا كَانَ هَٰذَا الْقُرْآنُ أَنْ يُفْتَرَىٰ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَٰكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ
বাংলা অনুবাদঃ আর কোরআন সে জিনিস নয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কেউ তা বানিয়ে নেবে। অবশ্য এটি পূর্ববর্তী কালামের সত্যায়ন করে এবং সে সমস্ত বিষয়ের বিশ্লেষণ দান করে যা তোমার প্রতি দেয়া হয়েছে, যাতে কোন সন্দেহ নেই-তোমার বিশ্বপালনকর্তার পক্ষ থেকে। (সূরাঃ ইউনুস, আয়াতঃ ৩৭)
কুরআনের বৈশিষ্ট্য
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ ۚ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلَافًا كَثِيرًا
বাংলা অনুবাদঃ এরা কি লক্ষ্য করে না কোরআনের প্রতি? পক্ষান্তরে এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও পক্ষ থেকে হত, তবে এতো অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখতে পেত। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৮২)
কুরআন অবতীর্ণ কোন মাসে শুরু হয়
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَان
বাংলা অনুবাদঃ রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১৮৫)
কুরআন শ্রবণের আদব
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
বাংলা অনুবাদঃ আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়। (সূরাঃ আল আ’রাফ, আয়াতঃ ২০৪)
প্রশ্নোত্তর পর্ব
প্রশ্ন: বাইবেল কি আসমানি কিতাব?
উত্তর: না। খ্রিস্টানরা বাইবেলকে আসমানী কিতাব বলে; অথচ বাইবেল হচ্ছে ইনজীলের এর বিকৃত রূপ। এতে তারা নিজেদের মতো করে কমবেশি করেছে। নিজস্ব বানানোর সব কথা ঢুকিয়েছে। এমন কি বাইবেলের বিভিন্ন সংস্করণ রয়েছে এক সংস্করণের সাথে অন্য সংস্করণের কোন মিল নেই। কাজেই তা আসমানী কিতাব হতে পারে না। আর পবিত্র কুরআন থেকে জানা যায়, কুরআন ব্যতীত আল্লাহ তাআলা কোনো গ্রন্থকে সংরক্ষিত রাখেননি। আর তিনি কুরআন ব্যতীত অন্য গ্রন্থকে সংরক্ষণ করার দায়িত্বও নেননি।
প্রশ্ন: আসমানী কিতাব কার উপর নাযিল হয়েছে?
উত্তর: বড় ৪ খানা কিতাব চারজন প্রসিদ্ধ রাসুলের উপর নাযিল হয়েছে। তারা হলেন-
১. হযরত মূসা আলাইহিস সালাম। ২. হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম। ৩. হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম। ৪. হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
মুসা আলাইহিস সালাম এর উপর তাওরাত অবতীর্ণ হয়। দাউদ আলাইহিস সালামের উপর যাবূর অবতীর্ণ হয়। ঈসা আলাইহিস সালামের উপর ইনজীল অবতীর্ণ হয়। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়।
বলা হয়ে থাকে, অবশিষ্ট ১০০ খানা কিতাব ৪ জন নবীর উপর নাযিল হয়। তারা হলেন-
হযরত আদম আ. এর উপর নাজিল হয় ১০ (দশ) খানা।
হযরত শিস আ. এর উপর নাজিল হয় ৫০ (পঞ্চাশ) খানা।
হযরত ইব্রাহিম আ. এর উপর নাজিল হয় ১০ (দশ) খানা।
হযরত ইদ্রিস আ. এর উপর নাজিল হয় ৩০ (ত্রিশ) খানা।
তবে উপরে আমরা যেমনটা বলে এসেছি; তা হলো, এই তথ্যটি সঠিক নাও হতে পারে।
প্রশ্ন: বেদ কি আসমানী কিতাব?
উত্তর: কস্মিনকালেও নয়। ভিয়েতনামে কোন আসমানে কিতাব রয়েছে কোরআন হাদিসের কোথাও তা বর্ণিত হয়নি। বেদ হচ্ছে হিন্দু গুরুদের লিখিত হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ।
লিখনে: লুবাব হাসান সাফওয়ান