মুসলিমরা সম্বোধনের ক্ষেত্রে আসসালামু আলাইকুম বলে থাকে। ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের মাঝেও শ্যালম(হিব্রু ভাষায় সালামের সমার্থক শব্দের) প্রচলন আছে। এই লেখাটিতে সালামের বৈশিষ্ট্য, প্রচলিত ব্যবহার এবং প্রকৃত অর্থ তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
প্রচলিত প্রয়োগ
বাংলাদেশে আসসালামু আলাইকুম কথাটি সাধারণত বয়সে বা, পদমর্জাদায় বড় কাউকে সম্মান দেখানোর জন্য ব্যবহার করা হয়(ব্যতিক্রমও আছে)। অনেকে জোর করে তার অধীনস্থদের কাছ থেকে সালাম আদায় করেন। এর ব্যতিক্রমও নিশ্চয়ই আছে। বয়সে বড় কেউ চাইলে ছোটদেরও সালাম দিতে পারে।
আসসালামু আলাইকুম স্যার, কেমন আছেন
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেখলেই ছাত্রছাত্রীরা সম্মানসূচক সম্বোধন হিসেবে এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করেন। এছাড়া রাজনৈতিক নেতা, পদমর্জাদায় বড় কোন কর্মকর্তা বা, এলাকার মুরুব্বিদের দেখলেও ইসলাম ধর্মের অনুসারিরা সাধারণত আসসালামু আলাইকুম বলে।
আসসালামু আলাইকুম অর্থ
আসসালামু আলাইকুম অর্থ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আরবের খ্রিস্টানেরাও সালাম দিয়ে অভ্যস্ত। তাই, এটাকে শুধু মুসলিমদের সম্বোধন বলাটাও বোধহয় ঠিক হবে না। তবে, পূণ্যকাজ হিসেবে সারা বিশ্বের মুসলিমেরাই সালামের অনুশীলন করে থাকে। নিঃসন্দেহে অন্য কারো কল্যাণ কামনাই সেরা সম্বোধনগুলোর একটি।
আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত আছে যে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করে বলেন, যাও ফেরেশতাদের দলকে সালাম দাও এবং তোমার সালামের কি উত্তর দেয় মন দিয়ে শুন। এটিই হবে তোমার আর তোমার সন্তানদের জন্য সালাম। সে অনুযায়ী আদম গিয়ে বলেন, “আস্সালামু আলাইকুম” (অৰ্থ: আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। ফেরেশতারা উত্তর দেন, “ওয়া-আলাইকুমুস সালাম ওয়া-রহমাতুল্লাহি” (অৰ্থ: আপনাদের উপর শান্তি এবং আল্লাহর দয়া বর্ষিত হোক)। এক্ষেত্রে ফেরেশতারা রাহমাতুল্লাহ শব্দটি বৃদ্ধি করেন।”
সালাম এর জবাব
“ওয়া-আলাইকুমুস সালাম ওয়া-রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু (وَعَلَيْكُمُ ٱلسَّلَامُ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ ,) এর অর্থ হচ্ছে- “এবং তোমাদের উপর শান্তি এবং আল্লাহর করুণা ও তাঁর নেয়ামতসমূহ বর্ষিত হোক”)।
হাদিসে আছে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, কার সালামের অভিবাদন “শুরু” করা উচিত। উত্তরে তিনি বলেছিলেন:
“আরোহী ব্যক্তি পায়ে হাঁটা ব্যক্তিকে, পায়ে হাঁটা ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোককে সালাম দেবে” (সহীহ-আল-বুখারী, ৬২৩৪; মুসলিম, ২১৬০)
পবিত্র কুরআনে আছে,
“তবে যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে অভিবাদন স্বরূপ, যা আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নির্দেশ বিশদভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা বুঝতে পার।” (আন নূর ২৪:৬১)
কুরআনে আরো বলা হয়েছে,
“আর যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয় (সালাম দেওয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ কর। ” [আল-নিসা ৪:৮৬]
তবে, মুসলিমরা অমুসলিমদের সালাম দিবে কি না, এটা নিয়ে ভিন্নমত আছে। কেউ কেউ মনে করেন অমুসলিমদের(হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ বা, অন্য কাউকে) সালাম দেয়া উচিত নয়।
কেউ কেউ মনে করেন সালাম দেয়া উচিত নয় এই কথা রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেছিলেন কিছু বাজে লোকের ব্যাপারে যারা অমুসলিম ছিল এবং তারা শান্তির বদলে মুসলিমদের মৃত্যু কামনা করতো। অন্য সবাইকে সালাম দেয়া যাবে। কারণ, অন্য হাদিসে পরিচিত এবং অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
ভুল ধারণা নিরসন
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বয়ঃকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্পসংখ্যক অধিকসংখ্যককে সালাম দেবে। (বুখারি, হাদিস : ৬২৩১)
এটা থেকে বোঝা যায় যে বয়সে যারা ছোট তাদের উচিত বয়সে বড়দের, এবং সংখ্যায় যারা কম তাদের উচিত সংখ্যায় বেশী মানুষকে সালাম দেয়া। এবং কোন কিছুতে আরোহন করলে তার উচিত পায়ে হেটে যাওয়া ব্যক্তিকে সালাম দেয়া বা, কেউ হাটলে তার উচিত বসে থাকা ব্যক্তিকে সালাম দেয়া।
হজরত আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! দুজন লোকের মধ্যে সাক্ষাৎ হলে কে প্রথম সালাম দেবে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার বেশি নিকটবর্তী। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৯৪)
এটা থেকে বোঝা যায় যে, বেশী ধার্মিক সে সবাইকে সালাম দিবে। তাই, বয়সে ছোট হোক বা, বড় সবাইকে আগে সালাম দেয়া যেতে পারে। আরো বেশী জানার জন্য কোন আলেমের শরণাপন্ন হতে পারেন বা, নিজে কোরআন, হাদিস পড়ে দেখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
- বই রিভিউ: হাদিসের নামে জালিয়াতি
- ইহুদী শব্দের অর্থ কি?
- খ্রিস্টান ধর্মের ইতিহাস, উদ্ভব ও বিকাশ
- বৌদ্ধ ধর্ম দর্শন ও বুদ্ধের শিক্ষা
- ইহুদি ধর্মের ইতিহাস, বিশ্বাস ও উৎপত্তি
- গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইসমূহ
আসসালামুয়ালাইকুম